০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯৫, আহত বহু: বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 39

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি ক্যাফে, একটি স্কুল, একটি হাসপাতাল এবং একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। সোমবার রাতের এই হামলাগুলো চালানো হয় কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই। হামলার সময় ওইসব স্থানে নারী, শিশু, সাংবাদিকসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ফলে যুদ্ধের নৃশংসতা ও মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর রূপ নিয়েছে।

 

উত্তর গাজার সমুদ্রতীরবর্তী জনপ্রিয় ক্যাফে ‘আল-বাকা’-তে হামলার সময় একটি শিশুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করা হলে অন্তত ৩৯ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাবও রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরিফ বলেন, “এই জায়গার কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। শিশুদের জন্মদিন চলছিল এখানে। আমরা ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি।”

আরও পড়ুন: “জাতি হিসাবে গর্ববোধই অধিক মূল্যবান”, শহিদদের জানাজায় ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির মন্তব্য

 

আরও পড়ুন: পারমাণবিক ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ নেই ইরানের: স্পষ্ট বার্তা আরাগচির

এরপর গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলে হামলা চালানো হয়। সেখানে কয়েকশ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। একজন আশ্রয়প্রার্থী হামাদা আবু জারাদে জানান, “হামলার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে আমাদের সরে যেতে বলা হয়। আমরা জানি না কোথায় যাবো। গত ৬৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমরা কোনো সাহায্য পাইনি।”

আরও পড়ুন: খামেনিকে হত্যার ছক! সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ইসরাইলি গুপ্তঘাতক দল — বিস্ফোরক দাবি ইসরাইলি মন্ত্রীর

 

মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় অবস্থিত আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের ভেতরেও বোমা ফেলা হয়। হাসপাতালে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। বোমা বিস্ফোরণের পর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়াতে থাকেন। আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, “এই হাসপাতালে এর আগেও অন্তত ১০ বার হামলা হয়েছে। প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এটি আরেকটি মারাত্মক আঘাত।”

 

খান ইউনিসে বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে চালানো আরেক হামলায় নিহত হন অন্তত ১৫ জন, আহত হন ৫০ জনের বেশি। তারা সবাই খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। মে মাসের শেষ দিক থেকে এসব কেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিনই হামলা চলছে। এখন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলিতে হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০০ জন, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।

 

এদিকে ইসরায়েলের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ দাবি করেছে, সেনাদের নিরস্ত্র ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সেনা স্বীকার করেছেন, কোনো হুমকি না থাকলেও তাদের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও সহিংসতার নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস সূত্রে খবর, আল-আকসা হাসপাতালের ভেতরে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত একটি তাঁবুতেও বোমা বর্ষণ করা হয়। এতে রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন আরও বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে তারা গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর ‘পদ্ধতিগত ও পরিকল্পিত হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজায় ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯৫, আহত বহু: বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়

আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি ক্যাফে, একটি স্কুল, একটি হাসপাতাল এবং একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। সোমবার রাতের এই হামলাগুলো চালানো হয় কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই। হামলার সময় ওইসব স্থানে নারী, শিশু, সাংবাদিকসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ফলে যুদ্ধের নৃশংসতা ও মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর রূপ নিয়েছে।

 

উত্তর গাজার সমুদ্রতীরবর্তী জনপ্রিয় ক্যাফে ‘আল-বাকা’-তে হামলার সময় একটি শিশুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করা হলে অন্তত ৩৯ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাবও রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরিফ বলেন, “এই জায়গার কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। শিশুদের জন্মদিন চলছিল এখানে। আমরা ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি।”

আরও পড়ুন: “জাতি হিসাবে গর্ববোধই অধিক মূল্যবান”, শহিদদের জানাজায় ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির মন্তব্য

 

আরও পড়ুন: পারমাণবিক ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ নেই ইরানের: স্পষ্ট বার্তা আরাগচির

এরপর গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলে হামলা চালানো হয়। সেখানে কয়েকশ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। একজন আশ্রয়প্রার্থী হামাদা আবু জারাদে জানান, “হামলার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে আমাদের সরে যেতে বলা হয়। আমরা জানি না কোথায় যাবো। গত ৬৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমরা কোনো সাহায্য পাইনি।”

আরও পড়ুন: খামেনিকে হত্যার ছক! সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ইসরাইলি গুপ্তঘাতক দল — বিস্ফোরক দাবি ইসরাইলি মন্ত্রীর

 

মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় অবস্থিত আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের ভেতরেও বোমা ফেলা হয়। হাসপাতালে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। বোমা বিস্ফোরণের পর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়াতে থাকেন। আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, “এই হাসপাতালে এর আগেও অন্তত ১০ বার হামলা হয়েছে। প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এটি আরেকটি মারাত্মক আঘাত।”

 

খান ইউনিসে বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে চালানো আরেক হামলায় নিহত হন অন্তত ১৫ জন, আহত হন ৫০ জনের বেশি। তারা সবাই খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। মে মাসের শেষ দিক থেকে এসব কেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিনই হামলা চলছে। এখন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলিতে হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০০ জন, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।

 

এদিকে ইসরায়েলের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ দাবি করেছে, সেনাদের নিরস্ত্র ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সেনা স্বীকার করেছেন, কোনো হুমকি না থাকলেও তাদের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও সহিংসতার নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস সূত্রে খবর, আল-আকসা হাসপাতালের ভেতরে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত একটি তাঁবুতেও বোমা বর্ষণ করা হয়। এতে রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন আরও বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে তারা গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর ‘পদ্ধতিগত ও পরিকল্পিত হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।