০৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিন সরকারের বিরল মাটির নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপীয় শিল্পে ধাক্কা, উৎপাদন বন্ধের মুখে একাধিক সংস্থা

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 130

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: চিন সরকারের নতুন রফতানি নিষেধাজ্ঞার জেরে সংকটে পড়েছে ইউরোপীয় প্রযুক্তি শিল্প। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির মতো একাধিক ক্ষেত্রে উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কিছু ইউরোপীয় কোম্পানি। বিশেষ করে যেসব পণ্যের জন্য ‘বিরল মাটি’ অপরিহার্য, সেই সব উৎপাদনে বড়সড় প্রভাব পড়ছে।

চিন ৪ এপ্রিল যে নতুন রফতানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করেছে, তাতে ডিসপ্রোসিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, লুটেটিয়াম, সামারিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম, টারবিয়াম ও ইট্রিয়াম,এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই পদক্ষেপকে অনেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’-এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেও দেখছেন। তবে এই মার্কিন-চিন সংঘাতের ‘ক্রসফায়ারে’ পড়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় শিল্প।

চিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেম্বার অফ কমার্স ইতিমধ্যেই বেজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডাম ডানেট জানিয়েছেন, বহু ইউরোপীয় কোম্পানি এখন চিনা আমদানি অনুমতির জন্য লাইসেন্সের অপেক্ষায়। কিছু ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই উৎপাদন স্থগিত করতে হয়েছে। ডানেট জানান, অনুমতি পেতে গেলে অনেক সময় এমন সংবেদনশীল তথ্য জমা দিতে বলা হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত ঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে অনেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদনে অনিচ্ছুক।

ইতিমধ্যেই ইইউ এই ইস্যুতে চিনের সঙ্গে ‘জরুরি বৈঠক’ করেছে, এবং জুলাইয়ে হতে চলা ইইউ- চিন শীর্ষ সম্মেলনের আগে বিষয়টি মেটানোর লক্ষ্যেই চলছে একাধিক স্তরের আলোচনা। ফ্রান্সের প্যারিসে ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ এবং চিনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইউরোপের অন্যতম বড় গাড়ি নির্মাতা সংগঠন জার্মানির একটি লবি গ্রুপ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার জেরে গাড়ি শিল্পে উৎপাদন বিঘ্ন, বিলম্ব এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৮০ % বিরল খনিজ উপাদান চিনের মাধ্যমেই সরবরাহ হয়। এই খনিজগুলি আধুনিক প্রযুক্তির মেরুদণ্ড, মোবাইল ফোন, সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইন, ইলেকট্রিক গাড়ি সব কিছুতেই এদের ব্যবহার অপরিহার্য।

এই পরিস্থিতি ইউরোপকে আরো একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, সরবরাহ চেইনের বৈচিত্র্যকরণ এখন আর বিলাসিতা নয়; এটা অত্যন্ত জরুরি। বিকল্প উৎস যেমন আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় খনিজ খনি উন্নয়নে বিনিয়োগ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তিতে জোর দেওয়া ও স্থানীয় রিসোর্স ব্যবহারের পথ এখন খুঁজতে হবে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

চিন সরকারের বিরল মাটির নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপীয় শিল্পে ধাক্কা, উৎপাদন বন্ধের মুখে একাধিক সংস্থা

আপডেট : ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: চিন সরকারের নতুন রফতানি নিষেধাজ্ঞার জেরে সংকটে পড়েছে ইউরোপীয় প্রযুক্তি শিল্প। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির মতো একাধিক ক্ষেত্রে উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কিছু ইউরোপীয় কোম্পানি। বিশেষ করে যেসব পণ্যের জন্য ‘বিরল মাটি’ অপরিহার্য, সেই সব উৎপাদনে বড়সড় প্রভাব পড়ছে।

চিন ৪ এপ্রিল যে নতুন রফতানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করেছে, তাতে ডিসপ্রোসিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, লুটেটিয়াম, সামারিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম, টারবিয়াম ও ইট্রিয়াম,এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই পদক্ষেপকে অনেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’-এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেও দেখছেন। তবে এই মার্কিন-চিন সংঘাতের ‘ক্রসফায়ারে’ পড়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় শিল্প।

চিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেম্বার অফ কমার্স ইতিমধ্যেই বেজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডাম ডানেট জানিয়েছেন, বহু ইউরোপীয় কোম্পানি এখন চিনা আমদানি অনুমতির জন্য লাইসেন্সের অপেক্ষায়। কিছু ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই উৎপাদন স্থগিত করতে হয়েছে। ডানেট জানান, অনুমতি পেতে গেলে অনেক সময় এমন সংবেদনশীল তথ্য জমা দিতে বলা হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত ঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে অনেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদনে অনিচ্ছুক।

ইতিমধ্যেই ইইউ এই ইস্যুতে চিনের সঙ্গে ‘জরুরি বৈঠক’ করেছে, এবং জুলাইয়ে হতে চলা ইইউ- চিন শীর্ষ সম্মেলনের আগে বিষয়টি মেটানোর লক্ষ্যেই চলছে একাধিক স্তরের আলোচনা। ফ্রান্সের প্যারিসে ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ এবং চিনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইউরোপের অন্যতম বড় গাড়ি নির্মাতা সংগঠন জার্মানির একটি লবি গ্রুপ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার জেরে গাড়ি শিল্পে উৎপাদন বিঘ্ন, বিলম্ব এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৮০ % বিরল খনিজ উপাদান চিনের মাধ্যমেই সরবরাহ হয়। এই খনিজগুলি আধুনিক প্রযুক্তির মেরুদণ্ড, মোবাইল ফোন, সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইন, ইলেকট্রিক গাড়ি সব কিছুতেই এদের ব্যবহার অপরিহার্য।

এই পরিস্থিতি ইউরোপকে আরো একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, সরবরাহ চেইনের বৈচিত্র্যকরণ এখন আর বিলাসিতা নয়; এটা অত্যন্ত জরুরি। বিকল্প উৎস যেমন আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় খনিজ খনি উন্নয়নে বিনিয়োগ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তিতে জোর দেওয়া ও স্থানীয় রিসোর্স ব্যবহারের পথ এখন খুঁজতে হবে।