১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি না অন্য কারণ?

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার
  • / 57

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: আহমদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। কেউ মনে করছেন, পাখির সঙ্গে ধাক্কা লেগেই বিপর্যয়। আবার কারও মতে যান্ত্রিক ত্রুটি।যদিও ফ্লাইটরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০ ফুট উপরে ছিল সেই সময়েই সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

তারপর থেকে বিমানটি মিনিটে ৪০০ ফুট গতিতে নীচে নেমে এসে ডাক্তারদের হস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে। বিমান যখন দ্রুতগতিতে নীচে নেমে আসছিল, সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাইলটের হাতে এক মিনিটও সময় ছিল না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: DNA পরীক্ষায় শনাক্ত ৯ মৃতদেহ, এক যাত্রীর দেহ তুলে দেওয়া হল পরিবারের হাতে

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সেই সময়ে সেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬২৫ ফুট উঁচুতে ছিল। যদি বিমান ৩৫ হাজার ফুট উপরে থাকত, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কিছুটা সময় পেতেন পাইলট এবং ত্রুু সদস্যেরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রানওয়ে ছেড়ে ওড়ার পর মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় বিমানটি উঠেছিল। ফলে পাইলট কোনও কিছু করার সুযোগই পাননি। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, ‘পাখির ধাক্কায় দু’টি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের

তবে তদন্তে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সামনে আসবে। ব্ল্যাকবক্সে হয়তো আসল তথ্য লুকিয়ে রয়েছে। যদি একাধিক পাখি ফ্লাইটটিতে ধাক্কা দেয় সে ক্ষেত্রে হতে পারে তা ৬ থেকে ৭ মিনিটের বেশি উড়তে পারেনি এবং পড়ে যায়। এই বিমানটি অপেক্ষাকৃত নতুন। মাত্র ১১ বছরের। তাই যান্ত্রিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কম।’

আরও পড়ুন: আমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার জের, ড্রিমলাইনারের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখার চিন্তা কেন্দ্রের

এক সূত্র উদ্ধৃত করে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘হিন্দুস্থান টাইমস’ জানিয়েছে, সম্প্রতি বিমানটির সংস্কারের কাজ হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে জানা যাচ্ছে, ফ্লাইটটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল (ইঞ্জিনিয়ারিং ফল্ট)। যদিও এ নিয়ে সরকার বা ফ্লাইট সংস্থার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আর একটি সূত্র যা দাবি করেছে তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। বছর খানেক আগেই নাকি এমন বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আমদাবাদে যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেটি আমেরিকার বোয়িং সংস্থার একটি বিমান।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে স্যাম স্যালেপোর নামের এক ব্যক্তি চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। স্যাম বোয়িংয়ে কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আমেরিকার সেনেটের একটি কমিটির সামনে হাজিরা দেন তিনি। সেখানে বোয়িংয়ের তৈরি বিমানের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন করা হয় স্যামকে। কখনও বিমানের চাকা খুলে যাচ্ছে, কখনও যন্ত্রাংশ খুলে পড়ছে, কখনও আবার দেহে ফাটল ধরছে কেন জানতে চাওয়া হয়। বিশেষ করে ৭৮৭ সিরিজের যে বিমানগুলি, তার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

এতে স্যাম জানান, বিমান তৈরিতে শর্টকাটের রাস্তা ধরা হচ্ছে। চাহিদার জোগান দিতে আপস করা হচ্ছে গুণমানের সঙ্গে। দীর্ঘ ১৭ বছর কর্মরত ছিলেন স্যাম। সমস্যার কথা জানাতে গেলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন শ্যাম।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান মাঝ আকাশে থাকাকালীন দরজার প্লাগ খুলে যায়। তদন্তে জানা যায়, প্লাগে যে চারটি বোল্ট বসানোর কথা, সেগুলি ছিল না। বিমান সংস্থার হাতে বিমানটি তুলে দেওয়ার আগে প্লাগ বসানো হলেও, বোল্ট দিয়ে তা আটকানো হয়নি বলে উঠে আসে তদন্তে। এর পরও এমন একাধিক ঘটনা সামনে আসে। আর তাতেই বোয়িং-এর বিমানের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই সময় সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হন স্যাম। তিনি জানান, যাত্রী নিরাপত্তার কথা বলতে গেলে তাঁকে ভর্ৎসনা করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি না অন্য কারণ?

আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: আহমদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। কেউ মনে করছেন, পাখির সঙ্গে ধাক্কা লেগেই বিপর্যয়। আবার কারও মতে যান্ত্রিক ত্রুটি।যদিও ফ্লাইটরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০ ফুট উপরে ছিল সেই সময়েই সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

তারপর থেকে বিমানটি মিনিটে ৪০০ ফুট গতিতে নীচে নেমে এসে ডাক্তারদের হস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে। বিমান যখন দ্রুতগতিতে নীচে নেমে আসছিল, সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাইলটের হাতে এক মিনিটও সময় ছিল না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: DNA পরীক্ষায় শনাক্ত ৯ মৃতদেহ, এক যাত্রীর দেহ তুলে দেওয়া হল পরিবারের হাতে

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সেই সময়ে সেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬২৫ ফুট উঁচুতে ছিল। যদি বিমান ৩৫ হাজার ফুট উপরে থাকত, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কিছুটা সময় পেতেন পাইলট এবং ত্রুু সদস্যেরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রানওয়ে ছেড়ে ওড়ার পর মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় বিমানটি উঠেছিল। ফলে পাইলট কোনও কিছু করার সুযোগই পাননি। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, ‘পাখির ধাক্কায় দু’টি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের

তবে তদন্তে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সামনে আসবে। ব্ল্যাকবক্সে হয়তো আসল তথ্য লুকিয়ে রয়েছে। যদি একাধিক পাখি ফ্লাইটটিতে ধাক্কা দেয় সে ক্ষেত্রে হতে পারে তা ৬ থেকে ৭ মিনিটের বেশি উড়তে পারেনি এবং পড়ে যায়। এই বিমানটি অপেক্ষাকৃত নতুন। মাত্র ১১ বছরের। তাই যান্ত্রিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কম।’

আরও পড়ুন: আমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার জের, ড্রিমলাইনারের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখার চিন্তা কেন্দ্রের

এক সূত্র উদ্ধৃত করে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘হিন্দুস্থান টাইমস’ জানিয়েছে, সম্প্রতি বিমানটির সংস্কারের কাজ হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে জানা যাচ্ছে, ফ্লাইটটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল (ইঞ্জিনিয়ারিং ফল্ট)। যদিও এ নিয়ে সরকার বা ফ্লাইট সংস্থার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আর একটি সূত্র যা দাবি করেছে তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। বছর খানেক আগেই নাকি এমন বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আমদাবাদে যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেটি আমেরিকার বোয়িং সংস্থার একটি বিমান।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে স্যাম স্যালেপোর নামের এক ব্যক্তি চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। স্যাম বোয়িংয়ে কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আমেরিকার সেনেটের একটি কমিটির সামনে হাজিরা দেন তিনি। সেখানে বোয়িংয়ের তৈরি বিমানের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন করা হয় স্যামকে। কখনও বিমানের চাকা খুলে যাচ্ছে, কখনও যন্ত্রাংশ খুলে পড়ছে, কখনও আবার দেহে ফাটল ধরছে কেন জানতে চাওয়া হয়। বিশেষ করে ৭৮৭ সিরিজের যে বিমানগুলি, তার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

এতে স্যাম জানান, বিমান তৈরিতে শর্টকাটের রাস্তা ধরা হচ্ছে। চাহিদার জোগান দিতে আপস করা হচ্ছে গুণমানের সঙ্গে। দীর্ঘ ১৭ বছর কর্মরত ছিলেন স্যাম। সমস্যার কথা জানাতে গেলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন শ্যাম।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান মাঝ আকাশে থাকাকালীন দরজার প্লাগ খুলে যায়। তদন্তে জানা যায়, প্লাগে যে চারটি বোল্ট বসানোর কথা, সেগুলি ছিল না। বিমান সংস্থার হাতে বিমানটি তুলে দেওয়ার আগে প্লাগ বসানো হলেও, বোল্ট দিয়ে তা আটকানো হয়নি বলে উঠে আসে তদন্তে। এর পরও এমন একাধিক ঘটনা সামনে আসে। আর তাতেই বোয়িং-এর বিমানের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই সময় সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হন স্যাম। তিনি জানান, যাত্রী নিরাপত্তার কথা বলতে গেলে তাঁকে ভর্ৎসনা করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।