১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওবিসি বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিতাদেশ আদালতের, প্রশ্নের মুখে ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া  

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 36

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ওবিসি মামলা বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের জারি করা বিজ্ঞপ্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে।

১৪০টি জনজাতিকে নিয়ে রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তি ছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিতেই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি মান্থার রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বলেন, ”কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না? আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী অর্ধেক কাজ করেছেন। তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফেরত গেছেন। এটা কেন? বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের ৪-৫টি বিজ্ঞপ্তিতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।”

অন্যদিকে, রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বক্তব্য, ”আগেও বলা হয়েছিল ওবিসি শ্রেণিভুক্ত ৬৬টি সম্প্রদায়কে নিয়ে পদক্ষেপ করুন। আপনারা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করছেন। তখন বলেছিলাম ঠিক আছে, তাহলে সেই পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করবেন না।” কিন্তু সেই নির্দেশও অমান্য হয়েছে বলে জানিয়েছে উচ্চ আদালত। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের আবেদন মানেননি দুই বিচারপতি। বলা হয়েছে, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

আরও পড়ুন: ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় হাই কোর্টের অন্তর্বর্তী রায়: কলেজ ভর্তি ও চাকরির নিয়োগে কোনও বাধা নেই

রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ”বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল, সার্ভে হয়েছে তখন কেন প্রশ্ন উঠল না? আমরা অ্যাডমিশন করতে পারছি না। যদি আমাদের সিদ্ধান্ত ঠিক প্রমাণিত হয় তখন?” এরই পাল্টা বিচারপতি মান্থার বক্তব্য, ”যে ৪-৫টা নোটিফিকেশন এসেছে এটা তো আদালতের নির্দেশ অবমাননা বোঝায়। লেজিসলেটিভ প্রসেসও ভেঙেছেন আপনারা।” রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ”এটি লেজিসলেটিভ ব্যাপার নয়। পার্লামেনটারি ডেমোক্রেটিক সিস্টেম। বিষয়টাই আলাদা। ২৫ বছর আমার সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে।”

আরও পড়ুন: BREAKING, ওবিসি মামলায় নয়া জট, হাইকোর্টে নতুন মামলা, তড়িঘড়ি নয়া ওবিসি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ

এদিনই কলেজে ভর্তির জন্য খুলে গিয়েছে পোর্টাল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, বুধবার সকাল থেকে পড়ুয়ারা ওই পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন জানাতে পারবেন। কিন্তু আদালতের এই স্থগিতাদেশের পরে ওবিসি সমস্যা নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় জট থেকেই গেল। ১৮ জুন থেকে প্রথম পর্যায়ে ১ জুলাই পর্যন্ত আবেদন জমা দেওয়া যাবে পোর্টালে।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসসি, এসটি ও ওবিসি কোটায় স্থগিতাদেশ বোম্বে হাইকোর্টের

আবেদন জমা করা গেলেও ভর্তি কী পদ্ধতিতে হবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কলেজে ভর্তি এবং চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরে ওবিসি পড়ুয়ারা কী সুযোগ সুবিধা পাবেন সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবেদন জমা করা গেলেও, ভর্তির সময় পড়ুয়ারা কত শতাংশে ভিত্তিতে ভর্তি হতে পারবেন। কতটা কাটঅফ থাকবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

চাকরির ক্ষেত্রে ১০০ পয়েন্ট রোস্টারেও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেই কলেজে ভর্তির পাশাপাশি চাকরি ক্ষেত্রে নিয়োগেও এই বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। যাঁদের নিয়োগ করা হবে, তাঁদের মধ্যে ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্তরা কীভাবে নিয়োগ পাবেন। কত শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতে তাঁরা চাকরি পাবেন সেই বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। আগামী ২৪ জুলাই ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে জায়গা পেয়েছে ১৪০টি জনজাতি। ওবিসি এ ও বি বিভাগে যথাক্রমে ৪৯টি এবং ৯১টি শ্রেণি রয়েছে। আরও ৫০টি শ্রেণীকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এতেই এবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। চাকরির ক্ষেত্রে ১০০ পয়েন্ট রোস্টারেও স্থগিতাদেশ।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ওবিসি বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিতাদেশ আদালতের, প্রশ্নের মুখে ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া  

আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ওবিসি মামলা বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের জারি করা বিজ্ঞপ্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে।

১৪০টি জনজাতিকে নিয়ে রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তি ছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিতেই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি মান্থার রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বলেন, ”কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না? আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী অর্ধেক কাজ করেছেন। তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফেরত গেছেন। এটা কেন? বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের ৪-৫টি বিজ্ঞপ্তিতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।”

অন্যদিকে, রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বক্তব্য, ”আগেও বলা হয়েছিল ওবিসি শ্রেণিভুক্ত ৬৬টি সম্প্রদায়কে নিয়ে পদক্ষেপ করুন। আপনারা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করছেন। তখন বলেছিলাম ঠিক আছে, তাহলে সেই পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করবেন না।” কিন্তু সেই নির্দেশও অমান্য হয়েছে বলে জানিয়েছে উচ্চ আদালত। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের আবেদন মানেননি দুই বিচারপতি। বলা হয়েছে, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

আরও পড়ুন: ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় হাই কোর্টের অন্তর্বর্তী রায়: কলেজ ভর্তি ও চাকরির নিয়োগে কোনও বাধা নেই

রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ”বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল, সার্ভে হয়েছে তখন কেন প্রশ্ন উঠল না? আমরা অ্যাডমিশন করতে পারছি না। যদি আমাদের সিদ্ধান্ত ঠিক প্রমাণিত হয় তখন?” এরই পাল্টা বিচারপতি মান্থার বক্তব্য, ”যে ৪-৫টা নোটিফিকেশন এসেছে এটা তো আদালতের নির্দেশ অবমাননা বোঝায়। লেজিসলেটিভ প্রসেসও ভেঙেছেন আপনারা।” রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ”এটি লেজিসলেটিভ ব্যাপার নয়। পার্লামেনটারি ডেমোক্রেটিক সিস্টেম। বিষয়টাই আলাদা। ২৫ বছর আমার সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে।”

আরও পড়ুন: BREAKING, ওবিসি মামলায় নয়া জট, হাইকোর্টে নতুন মামলা, তড়িঘড়ি নয়া ওবিসি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ

এদিনই কলেজে ভর্তির জন্য খুলে গিয়েছে পোর্টাল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, বুধবার সকাল থেকে পড়ুয়ারা ওই পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন জানাতে পারবেন। কিন্তু আদালতের এই স্থগিতাদেশের পরে ওবিসি সমস্যা নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় জট থেকেই গেল। ১৮ জুন থেকে প্রথম পর্যায়ে ১ জুলাই পর্যন্ত আবেদন জমা দেওয়া যাবে পোর্টালে।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসসি, এসটি ও ওবিসি কোটায় স্থগিতাদেশ বোম্বে হাইকোর্টের

আবেদন জমা করা গেলেও ভর্তি কী পদ্ধতিতে হবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কলেজে ভর্তি এবং চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরে ওবিসি পড়ুয়ারা কী সুযোগ সুবিধা পাবেন সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবেদন জমা করা গেলেও, ভর্তির সময় পড়ুয়ারা কত শতাংশে ভিত্তিতে ভর্তি হতে পারবেন। কতটা কাটঅফ থাকবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

চাকরির ক্ষেত্রে ১০০ পয়েন্ট রোস্টারেও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেই কলেজে ভর্তির পাশাপাশি চাকরি ক্ষেত্রে নিয়োগেও এই বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। যাঁদের নিয়োগ করা হবে, তাঁদের মধ্যে ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্তরা কীভাবে নিয়োগ পাবেন। কত শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতে তাঁরা চাকরি পাবেন সেই বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। আগামী ২৪ জুলাই ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে জায়গা পেয়েছে ১৪০টি জনজাতি। ওবিসি এ ও বি বিভাগে যথাক্রমে ৪৯টি এবং ৯১টি শ্রেণি রয়েছে। আরও ৫০টি শ্রেণীকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এতেই এবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। চাকরির ক্ষেত্রে ১০০ পয়েন্ট রোস্টারেও স্থগিতাদেশ।