৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ও ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে তৃণমূলের আপত্তি, নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধিদল

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 310

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক পরিমার্জন (Special Intensive Revision বা SIR) প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই প্রসঙ্গে নতুন কিছু নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কমিশন, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার দিল্লির নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।

সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চির বরাইক, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও অরূপ বিশ্বাস। প্রতিনিধি দল দাবি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি করে এসআইআর প্রক্রিয়া পরিচালিত হোক। তাদের আশঙ্কা, বর্তমান নির্দেশিকাগুলির মাধ্যমে ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্তির আগেই ‘যোগ্যতা যাচাই’য়ের নামে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে।

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “কমিশন আগে বলেছিল কেউ যেন বাদ না পড়েন। কিন্তু এখনকার প্রক্রিয়ায় মনে হচ্ছে, আগে যোগ্যতা যাচাই হচ্ছে, তার পরে অন্তর্ভুক্তি।” তিনি বলেন, “আমরা দাবি করেছি, ২০২৪ সালের তালিকা থেকেই এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। নতুন ভোটারদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক ৫০-৬০ বছর বয়সিদের কীভাবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছি।”

আরও পড়ুন: জয়নগরের ময়দায়, এস ইউ সি আই-এর হাতে থাকা মহিলা সমবায় সমিতির ক্ষমতায় এলো শাসক তৃনমূল দল

মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ করেন, কমিশনের নতুন নির্দেশিকায় ২০০৩ সালের পরে জন্মগ্রহণকারীদের জন্ম সনদ জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, ২০২৪ সালের তালিকায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নতুন করে কোনও নথি জমা দেওয়ার দরকার নেই। শুধু নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হওয়া উচিত।”

আরও পড়ুন: এসআইআর-এর বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া ব্লকের প্রতিবাদ অব্যাহত, পোস্টারে মোদি ও নির্বাচন কমিশনের কার্টুন প্রদর্শন

তৃণমূল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, মনোনয়ন জমার ৪৫ দিন আগেও নাম তোলার সুযোগ থাকলে জাল ভোটার অন্তর্ভুক্তির প্রবণতা বাড়তে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে ৪৫০০ ভুয়ো ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার অভিযোগও করেছে তারা। এ নিয়ে কমিশনের কাছে রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিহারে রাতারাতি ১.২৬ কোটি ভোটার মুছে দিল নির্বাচন কমিশন: সাকেত

এছাড়া ভোট গ্রহণের দিন বুথের ভেতর কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। ফিরহাদ বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রভাবমুক্ত ভোট করানো জরুরি। যদি বাহিনী মোতায়েন হয়, তবে রাজ্য পুলিশের উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভেতরে কোনও বাহিনী ঢুকতে পারবে না।”

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে তৃণমূল জানায়, আধার নম্বর ও ভোটার কার্ড সংযুক্তিকরণ যেন কোনও অবস্থাতেই বাধ্যতামূলক না হয়। সেই সঙ্গে, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের গতিবিধিও যেন নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচন কমিশন, এমন দাবিও জানানো হয়েছে।

এই অবস্থায় বিহারসহ অন্যান্য রাজ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটার তালিকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত এই দাবি-আপত্তি ভবিষ্যতের ভোট প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ও ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে তৃণমূলের আপত্তি, নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধিদল

আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক পরিমার্জন (Special Intensive Revision বা SIR) প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই প্রসঙ্গে নতুন কিছু নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কমিশন, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার দিল্লির নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।

সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চির বরাইক, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও অরূপ বিশ্বাস। প্রতিনিধি দল দাবি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি করে এসআইআর প্রক্রিয়া পরিচালিত হোক। তাদের আশঙ্কা, বর্তমান নির্দেশিকাগুলির মাধ্যমে ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্তির আগেই ‘যোগ্যতা যাচাই’য়ের নামে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে।

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “কমিশন আগে বলেছিল কেউ যেন বাদ না পড়েন। কিন্তু এখনকার প্রক্রিয়ায় মনে হচ্ছে, আগে যোগ্যতা যাচাই হচ্ছে, তার পরে অন্তর্ভুক্তি।” তিনি বলেন, “আমরা দাবি করেছি, ২০২৪ সালের তালিকা থেকেই এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। নতুন ভোটারদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক ৫০-৬০ বছর বয়সিদের কীভাবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছি।”

আরও পড়ুন: জয়নগরের ময়দায়, এস ইউ সি আই-এর হাতে থাকা মহিলা সমবায় সমিতির ক্ষমতায় এলো শাসক তৃনমূল দল

মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ করেন, কমিশনের নতুন নির্দেশিকায় ২০০৩ সালের পরে জন্মগ্রহণকারীদের জন্ম সনদ জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, ২০২৪ সালের তালিকায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নতুন করে কোনও নথি জমা দেওয়ার দরকার নেই। শুধু নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হওয়া উচিত।”

আরও পড়ুন: এসআইআর-এর বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া ব্লকের প্রতিবাদ অব্যাহত, পোস্টারে মোদি ও নির্বাচন কমিশনের কার্টুন প্রদর্শন

তৃণমূল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, মনোনয়ন জমার ৪৫ দিন আগেও নাম তোলার সুযোগ থাকলে জাল ভোটার অন্তর্ভুক্তির প্রবণতা বাড়তে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে ৪৫০০ ভুয়ো ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার অভিযোগও করেছে তারা। এ নিয়ে কমিশনের কাছে রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিহারে রাতারাতি ১.২৬ কোটি ভোটার মুছে দিল নির্বাচন কমিশন: সাকেত

এছাড়া ভোট গ্রহণের দিন বুথের ভেতর কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। ফিরহাদ বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রভাবমুক্ত ভোট করানো জরুরি। যদি বাহিনী মোতায়েন হয়, তবে রাজ্য পুলিশের উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভেতরে কোনও বাহিনী ঢুকতে পারবে না।”

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে তৃণমূল জানায়, আধার নম্বর ও ভোটার কার্ড সংযুক্তিকরণ যেন কোনও অবস্থাতেই বাধ্যতামূলক না হয়। সেই সঙ্গে, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের গতিবিধিও যেন নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচন কমিশন, এমন দাবিও জানানো হয়েছে।

এই অবস্থায় বিহারসহ অন্যান্য রাজ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটার তালিকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত এই দাবি-আপত্তি ভবিষ্যতের ভোট প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।