০২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জোহরান মামদানির জয়ে আমেরিকায় ফের ইসলামোফোবিয়ার হাওয়া

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
  • / 71

মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির জয়ের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামোফোবিক মন্তব্যের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজ থেকে সীমান্ত পার করা মানুষের মতোই, আমেরিকান মুসলিমদেরও যেন এখন আবার কড়া নজরে রাখা হচ্ছে।

মামদানি দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত একজন মুসলিম আমেরিকান। তার রাজনৈতিক এজেন্ডার মূল লক্ষ্য ছিল নিউইয়র্ক শহরকে সকলের জন্য বসবাসযোগ্য ও সাশ্রয়ী করে তোলা। তিনি গৃহভাড়া কমানো, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সমতা আনা ও পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল, তার নীতিনির্ধারণ নয়, বরং তার ধর্ম ও সংßৃñতি নিয়েই মূলত হামলা শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের গ্রেফতারির হুমকির পাল্টা জবাব জোহরানের, “আমি ভয় পাওয়ার পাত্র নই”

ডানপন্থী প্রচারক ও রাজনীতিকদের একটি বড় অংশ তাকে ‘জিহাদিস্ট’, ‘খিলাফত কায়েমকারী’, এমনকি ‘তৃতীয় বিশ্বের মানুষ’ বলে আক্রমণ করেছেন। কংগ্রেস সদস্য ব্র্যান্ডন গিল একধাপ এগিয়ে মামদানির হাতে খেয়ে বিরিয়ানির একটি ভিডিও পোস্ট করেন এবং মন্তব্য করেন, তসভ্য দেশে এমনভাবে খাওয়া যায় না।দ;এই উক্তি শুধু সাংßৃñতিক বর্ণবাদই নয়, বরং এই আক্রমণের মধ্যে রয়েছে স্পষ্টভাবে এক মুসলিমবিরোধী মনোভাব।

কেউ কেউ তো মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন। অন্যদিকে, মার্জোরি টেইলর গ্রিন স্ট্যাচু অফ লিবার্টির একটি বোরকা পরা ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করেন, যা অনেকেই ব্যঙ্গের নামে স্পষ্ট ইসলামবিদ্বেষ বলে অভিহিত করেছেন।

শুধু ডানপন্থী নেতারাই নয়, কিছু উদারপন্থী রাজনীতিকও মামদানির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এমনকি নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সেনেটর কির্সটেন গিলিব্র্যান্ড তাকে ‘গ্লোবাল জিহাদের’ উল্লেখ করার মিথ্যা অভিযোগ করেন, পরে যদিও তার অফিস থেকে জানানো হয়;তিনি তভুল করে ফেলেছিলেনদ।

এই আক্রমণ শুধু মামদানি নয়, গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু বছর ধরে মুসলিমরা নানা সময় বিভেদ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে নজরদারি, গুজব, সন্দেহ আর রাষ্ট্রীয় দমন নীতির উদাহরণ রয়েছে।

ওই সময় নিউইয়র্ক পুলিশ মুসলিমদের মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলির ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালায়। পরবর্তীতে যদিও সেই প্রোগ্রাম বন্ধ হয় এবং কিছুটা বিচারিক সুরাহাও হয়, কিন্তু মুসলিমদের মনে আঘাত থেকে যায়।

ইতিহাস আবার যেন ফিরে আসছে। নিউইয়র্কের মুসলিমরা প্রতিবছর ঈদের সময় ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্কে নামাজ পড়েন। বহুদিন ধরেই এটি ছিল ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতীক। কিন্তু এবার ডানপন্থী নেতারা সেই দৃশ্যকেই ‘অভ্যন্তরীণ হুমকি’ হিসেবে প্রচার করছেন। কিছু ডানপন্থী প্রভাবশালী ব্যক্তি এই দৃশ্যকে তআমেরিকার দখলদ বলে ব্যাখ্যা করেছেন, যা স্পষ্টভাবে ভয়ের রাজনীতি তৈরি করার প্রচেষ্টা।

তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। মুসলিম সম্প্রদায় আগের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত এবং প্রতিক্রিয়াশীল। তারা নিজেদের কণ্ঠস্বর আরও দৃঢ়ভাবে তুলতে শিখেছেন। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সদস্য শাহানা হানিফ বলেন, তআমি আবার ৯/১১-পরবর্তী সময়ের স্মৃতি পাচ্ছি। আমি তখন শিশু ছিলাম, এখনো সেই ঘৃণা ফিরে এসেছে। কিন্তু আজ আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী।দ

সমাজকর্মী আসাদ দানদিয়া বলেন, তএই নির্বাচনে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মুসলিম ভোটার অংশগ্রহণ হয়েছে। এটা প্রমাণ করে, আমরা শুধু ভুক্তভোগী নই, আমরা লড়তেও জানি। এবার আর চুপ করে থাকার সময় নয়।দ

আসলে ইসলামোফোবিয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি আমেরিকার সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচ্ছন্নভাবে থেকে যাওয়া এক গভীর সমস্যা। ইসলাম-বিরোধী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, যেমন শরিয়া আইন প্রয়োগের ভুয়ো আশঙ্কা বা ইসলামিক ‘দখল’, নানা সময় ডানপন্থীদের হাতিয়ার হয়েছে। নেতিবাচক মিডিয়া চিত্র, জনপ্রিয় সংßৃñতিতে মুসলিমদের নেতিবাচক চরিত্রে দেখানো, এবং রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের সন্দেহের চোখে দেখা;এসব বহু দশক ধরে চলে আসছে। মামদানি সেই ধারার সাম্প্রতিকতম শিকার।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জোহরান মামদানির জয়ে আমেরিকায় ফের ইসলামোফোবিয়ার হাওয়া

আপডেট : ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার

মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির জয়ের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামোফোবিক মন্তব্যের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজ থেকে সীমান্ত পার করা মানুষের মতোই, আমেরিকান মুসলিমদেরও যেন এখন আবার কড়া নজরে রাখা হচ্ছে।

মামদানি দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত একজন মুসলিম আমেরিকান। তার রাজনৈতিক এজেন্ডার মূল লক্ষ্য ছিল নিউইয়র্ক শহরকে সকলের জন্য বসবাসযোগ্য ও সাশ্রয়ী করে তোলা। তিনি গৃহভাড়া কমানো, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সমতা আনা ও পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল, তার নীতিনির্ধারণ নয়, বরং তার ধর্ম ও সংßৃñতি নিয়েই মূলত হামলা শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের গ্রেফতারির হুমকির পাল্টা জবাব জোহরানের, “আমি ভয় পাওয়ার পাত্র নই”

ডানপন্থী প্রচারক ও রাজনীতিকদের একটি বড় অংশ তাকে ‘জিহাদিস্ট’, ‘খিলাফত কায়েমকারী’, এমনকি ‘তৃতীয় বিশ্বের মানুষ’ বলে আক্রমণ করেছেন। কংগ্রেস সদস্য ব্র্যান্ডন গিল একধাপ এগিয়ে মামদানির হাতে খেয়ে বিরিয়ানির একটি ভিডিও পোস্ট করেন এবং মন্তব্য করেন, তসভ্য দেশে এমনভাবে খাওয়া যায় না।দ;এই উক্তি শুধু সাংßৃñতিক বর্ণবাদই নয়, বরং এই আক্রমণের মধ্যে রয়েছে স্পষ্টভাবে এক মুসলিমবিরোধী মনোভাব।

কেউ কেউ তো মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন। অন্যদিকে, মার্জোরি টেইলর গ্রিন স্ট্যাচু অফ লিবার্টির একটি বোরকা পরা ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করেন, যা অনেকেই ব্যঙ্গের নামে স্পষ্ট ইসলামবিদ্বেষ বলে অভিহিত করেছেন।

শুধু ডানপন্থী নেতারাই নয়, কিছু উদারপন্থী রাজনীতিকও মামদানির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এমনকি নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সেনেটর কির্সটেন গিলিব্র্যান্ড তাকে ‘গ্লোবাল জিহাদের’ উল্লেখ করার মিথ্যা অভিযোগ করেন, পরে যদিও তার অফিস থেকে জানানো হয়;তিনি তভুল করে ফেলেছিলেনদ।

এই আক্রমণ শুধু মামদানি নয়, গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু বছর ধরে মুসলিমরা নানা সময় বিভেদ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে নজরদারি, গুজব, সন্দেহ আর রাষ্ট্রীয় দমন নীতির উদাহরণ রয়েছে।

ওই সময় নিউইয়র্ক পুলিশ মুসলিমদের মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলির ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালায়। পরবর্তীতে যদিও সেই প্রোগ্রাম বন্ধ হয় এবং কিছুটা বিচারিক সুরাহাও হয়, কিন্তু মুসলিমদের মনে আঘাত থেকে যায়।

ইতিহাস আবার যেন ফিরে আসছে। নিউইয়র্কের মুসলিমরা প্রতিবছর ঈদের সময় ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্কে নামাজ পড়েন। বহুদিন ধরেই এটি ছিল ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতীক। কিন্তু এবার ডানপন্থী নেতারা সেই দৃশ্যকেই ‘অভ্যন্তরীণ হুমকি’ হিসেবে প্রচার করছেন। কিছু ডানপন্থী প্রভাবশালী ব্যক্তি এই দৃশ্যকে তআমেরিকার দখলদ বলে ব্যাখ্যা করেছেন, যা স্পষ্টভাবে ভয়ের রাজনীতি তৈরি করার প্রচেষ্টা।

তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। মুসলিম সম্প্রদায় আগের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত এবং প্রতিক্রিয়াশীল। তারা নিজেদের কণ্ঠস্বর আরও দৃঢ়ভাবে তুলতে শিখেছেন। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সদস্য শাহানা হানিফ বলেন, তআমি আবার ৯/১১-পরবর্তী সময়ের স্মৃতি পাচ্ছি। আমি তখন শিশু ছিলাম, এখনো সেই ঘৃণা ফিরে এসেছে। কিন্তু আজ আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী।দ

সমাজকর্মী আসাদ দানদিয়া বলেন, তএই নির্বাচনে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মুসলিম ভোটার অংশগ্রহণ হয়েছে। এটা প্রমাণ করে, আমরা শুধু ভুক্তভোগী নই, আমরা লড়তেও জানি। এবার আর চুপ করে থাকার সময় নয়।দ

আসলে ইসলামোফোবিয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি আমেরিকার সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচ্ছন্নভাবে থেকে যাওয়া এক গভীর সমস্যা। ইসলাম-বিরোধী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, যেমন শরিয়া আইন প্রয়োগের ভুয়ো আশঙ্কা বা ইসলামিক ‘দখল’, নানা সময় ডানপন্থীদের হাতিয়ার হয়েছে। নেতিবাচক মিডিয়া চিত্র, জনপ্রিয় সংßৃñতিতে মুসলিমদের নেতিবাচক চরিত্রে দেখানো, এবং রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের সন্দেহের চোখে দেখা;এসব বহু দশক ধরে চলে আসছে। মামদানি সেই ধারার সাম্প্রতিকতম শিকার।