জগন্নাথ মন্দিরের পূজাচারের কপিরাইট নিচ্ছে ওড়িশা সরকার
- আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, রবিবার
- / 146
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রীতিনীতি ও ধর্মীয় আচার কপিরাইটের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে ওড়িশা সরকার। এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন পুরীর সাম্মানিক রাজা ও জগন্নাথ মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব। সংবাদ সংস্থা PTI-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মন্দিরের প্রাচীন সংস্কৃতি, পূজা-পদ্ধতি এবং রথযাত্রা-স্নানযাত্রার মতো ধর্মীয় আচারের উপর একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই এই উদ্যোগ।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় নির্মিত নতুন জগন্নাথ মন্দিরকে ‘জগন্নাথধাম’ বলে অভিহিত করায় ওড়িশা সরকার সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তৈরি ওই মন্দিরের নামকরণ ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি ইতিমধ্যেই মমতাকে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন। অভিযোগ, “ধাম” শব্দটি সাধারণত জগন্নাথ, রাম, কৃষ্ণ বা শিবের পবিত্র আবাসভূমির জন্য ব্যবহৃত হয়। পুরীর ঐতিহাসিক ধর্মীয় গুরুত্ব ছাপিয়ে অন্যত্র ‘জগন্নাথধাম’ বলাকে ঐতিহ্যের লঙ্ঘন বলেই মনে করছে ওড়িশা।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের পূজাচারের দায়িত্বে রয়েছে ইসকন (ISKCON)। ইসকন নিয়েও একাধিক আপত্তি তুলেছেন পুরীর গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব। তাঁর অভিযোগ, “ইসকন ইচ্ছামতো তারিখে রথযাত্রা ও স্নানযাত্রা পালন করছে, যা পুরীর তিথি ও নিয়ম লঙ্ঘন করছে। এতে জগন্নাথ ভক্তদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগছে।” দিব্যসিংহ দেব আরও বলেন, “এই সব আচরণ আমাদের পবিত্র সংস্কৃতি ও প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং ইতিমধ্যে মায়াপুরের ইসকন সদর দফতরের সঙ্গেও আলোচনা শুরু হয়েছে।”
পুরী জগন্নাথ মন্দিরের পূজা-পদ্ধতি, রথযাত্রা, স্নানযাত্রার মতো ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠান যাতে অন্য কোথাও বিকৃতভাবে পালন না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে ওড়িশা সরকার কপিরাইট নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। দিব্যসিংহ দেব জানিয়েছেন, “সরকার ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার।”
ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে ‘ধাম’ বিতর্ক যে রাজনৈতিক মাত্রাও নিচ্ছে, তা স্পষ্ট। গজপতি মহারাজ বলেন, “আমরা আশা করি, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছবে। যদি তা না হয়, আমাদের অন্য পথ বেছে নিতে হবে। ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিধি লঙ্ঘন কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।”
দিঘার মন্দিরের ‘ধাম’ নামকরণ এবং ইসকনের স্বাধীন পূজা-পদ্ধতি নিয়ে শুধু প্রশাসন নয়, পুরীর গোবর্ধনপীঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী-সহ বহু জগন্নাথ ভক্তও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, পুরীর ঐতিহ্য ও আচার বিশ্বজুড়ে অনুসরণীয় হলেও তা বিকৃত করে পালন করাটা গ্রহণযোগ্য নয়।




















