মহারাষ্ট্রের ‘লাড়কী বহীণ’ প্রকল্পে দুর্নীতি, ১৪ হাজার পুরুষ প্রতারণা করে নিয়েছেন ভাতা!

- আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার
- / 34
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দরিদ্র ও অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের আর্থিক সহায়তা দিতে মহারাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালে চালু করেছিল ‘লাড়কী বহীণ’ প্রকল্প। তবে এক বছরের মাথায় সেই প্রকল্পে সামনে এল চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির ছবি। নারীকল্যাণে গঠিত এই প্রকল্পের সুবিধা অনৈতিক ভাবে নিয়েছেন ১৪,২৯৮ জন পুরুষ। শুধু তা-ই নয়, নিয়ম ভেঙে ভুয়ো নথিপত্রে আবেদন করে আরও কয়েক লক্ষ অযোগ্য ব্যক্তি সরকারি ভাতা তুলে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১,৬৪০ কোটি টাকা!
২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কিছু আগে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্র সরকার চালু করে ‘লাড়কী বহীণ’ প্রকল্প। পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের অনুকরণে তৈরি এই প্রকল্পে বলা হয়, রাজ্যের ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলারা যাঁদের পরিবারের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম, তাঁদের প্রতি মাসে ₹১,৫০০ করে আর্থিক সাহায্য করা হবে।
সম্প্রতি নারী ও শিশু উন্নয়ন দফতরের এক সমীক্ষা প্রকাশ্যে আনে ভয়াবহ তথ্য। দেখা যাচ্ছে, গত ১০ মাসে ১৪,২৯৮ জন পুরুষ অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় নিজেদের ‘মহিলা’ হিসেবে দেখিয়ে ভাতা নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এঁদের জন্য ২১.৪৪ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, “এই টাকা ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। না দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পর্যবেক্ষণে আরও উঠে এসেছে ভয়াবহ আর্থিক অপব্যবহারের তথ্য:
একই পরিবারে দু’জনের সীমা থাকা সত্ত্বেও, তৃতীয় মহিলা সদস্য হিসাবে আবেদন করেছেন ৭.৯৭ লক্ষেরও বেশি মহিলা। এতে সরকার ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় ₹১,১৯৬ কোটি।
৬৫ বছরের বেশি বয়সি ২.৮৭ লক্ষ মহিলা নিয়ম অমান্য করে সুবিধা নিয়েছেন, যার আর্থিক ক্ষতি ₹৪৩১.৭০ কোটি।
চার চাকার গাড়ি থাকা সত্ত্বেও ১.৬২ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পের আওতায় চলে এসেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের দুর্নীতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাহায্যে এখন পর্যন্ত ৫ লক্ষ অযোগ্য সুবিধাভোগীর নাম বাতিল করা হয়েছে। তবে এখনও প্রায় ২৬.৩৪ লক্ষ অযোগ্য ব্যক্তি এই প্রকল্প থেকে ভাতা পাচ্ছেন, এমনটাই জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী অদিতী তটকরে। জুন মাস থেকে তাঁদের পেমেন্ট সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে এই দুর্নীতির তদন্তে সিট (Special Investigation Team) বা ইডি (Enforcement Directorate)-র হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “কে এদের সাহায্য করল? এর পেছনে কোনও বড় চক্র কাজ করছে কি না, তা অবিলম্বে তদন্ত করে দেখা উচিত।”