১১ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রথম মহাকাশচারী ছিলেন হনুমান: বিজেপি নেতা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৪ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার
  • / 135

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ে আয়োজিত ১০২তম বিজ্ঞান সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা এবং বিমান চালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আনন্দ বোদাস দাবি করেছিলেন, সাত হাজার বছর আগে বৈদিক যুগের ঋসিরা বিমান চালাতে পারতেন। আর সেই বিমানেই তাঁরা এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে ভ্রমণ করতেন। সেই সময়ের বিমান এতটাই উন্নত ছিল যে, ইচ্ছা করলেই মাঝ আকাশে যেখানে সেখানে থেমে যেতে পারত। প্রয়োজনে পিছিয়েও নেওয়া যেত। সামনের দিকের পাশাপাশি পিছন দিকেও উড়তে পারত। বিজ্ঞান সম্মেলনে বোদাসের ৩০ মিনিটের বক্তৃতায় উপস্থিত শ্রোতাদের ‘চক্ষু ছানাবড়া’ হয়ে গিয়েছিল। আর এবার কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর দাবি করলেন, প্রথম মহাকাশচারী ছিলেন হনুমান। শনিবার জাতীয় মহাকাশ দিবস উপলক্ষে হিমাচল প্রদেশের উনায় একটি পিএম শ্রী স্কুলের পড়ুয়াদের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন অনুরাগ।

সেখানে জাতীয় শিক্ষানীতির উপকারিতাও বোঝান তিনি। আর সেখানেই মহাকাশ অভিযানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। ভাষণ দেওয়ার মাঝে পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন করেন—‘কে প্রথম মহাকাশে গিয়েছিলেন?’ পড়ুয়ারা জবাব দেয় নীল আর্মস্ট্রং।

 

আরও পড়ুন: বিজেপি নেতা জগন্নাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

তখন অনুরাগ বলেন, ‘আমার ধারণা হনুমানজি’। এরপরই অনুরাগ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা এখনকার হিসেবে নিজেদের দেখছি। হাজার হাজার বছর আগের ঐতিহ্য না জানলে জ্ঞান, সংস্কৃতিতে আমরা এই জায়গাতেই থাকব। ইংরেজরা যা বুঝিয়েছে তা-ই বুঝব আমরা। তাই প্রধান শিক্ষক এবং আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব, পাঠ্যবইয়ের বাইরে বেরোন, আমাদের দেশের দিকে, ঐতিহ্য, জ্ঞানের দিকে তাকান।

আরও পড়ুন: সোনা চুরির অভিযোগে বিজেপি নেতা গ্রেফতার! ওড়িশায় ধৃত পশ্চিম মেদিনীপুরের যুব মোর্চা নেতাকে ঘিরে রাজনৈতিক তোলপাড়

ওই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন। অনুরাগের বক্তব্যের এই অংশ ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই অনুরাগের তীব্র নিন্দা করেছেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে তিনি পড়ুয়াদের বিভ্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

আরও পড়ুন: অসুস্থ হনুমান চিকিৎসা করাতে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে

তাঁদের প্রশ্ন, এটা সর্বজনবিদিত যে, পৃথিবী থেকে প্রথম মহাকাশে যান ইউরি গ্যাগারিন। তারপরও একজন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী কীভাবে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন? কেউ কেউ আবার পালটা বলেছেন, রামায়ণে সূর্য দেখে হনুমানের লাফ দেওয়ার কাহিনি রয়েছে।

 

একবার সকালে শিশু হনুমান ক্ষুধার্ত ছিলেন এবং সূর্যকে একটি পাকা ও রসালো ফল ভেবে ভুল করেন। তিনি সেটিকে খাওয়ার জন্য লাফ দিয়ে সূর্যের দিকে উড়ে যান। এটাকেই হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন অনুরাগ। তাতেও অবশ্য বিতর্ক কমছে না। নেটিজেনদের বক্তব্য, মোদি সরকারের জমানায় ইতিহাসের গৈরিকরণ হচ্ছে। ইতিহাসের প্রকৃত তথ্যকে বিকৃত করা হচ্ছে। অনুরাগের এই মন্তব্য ইতিহাসের গেরুয়াকরণের পথকেই ইন্ধন দেবে।

 

ঘটনাচক্রে অনুরাগ যখন এই মন্তব্য করছেন, সেই সময়ই দ্বিতীয় ভারতীয় মহাকাশচারী হিসেবে মহাকাশ থেকে ঘুরে এসেছেন শুভাংশু শুক্ল। ভারত নিজস্ব স্পেস স্টেশন গড়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। একদিকে বিজ্ঞানীরা যেখানে একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়ে চলেছেন, সেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার পরিবর্তে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে অনুরাগের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, এই অনুরাগই মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘দেশ কি গদ্দারও কো, গোলি মারো শালো কো।’

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

প্রথম মহাকাশচারী ছিলেন হনুমান: বিজেপি নেতা

আপডেট : ২৪ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ে আয়োজিত ১০২তম বিজ্ঞান সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা এবং বিমান চালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আনন্দ বোদাস দাবি করেছিলেন, সাত হাজার বছর আগে বৈদিক যুগের ঋসিরা বিমান চালাতে পারতেন। আর সেই বিমানেই তাঁরা এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে ভ্রমণ করতেন। সেই সময়ের বিমান এতটাই উন্নত ছিল যে, ইচ্ছা করলেই মাঝ আকাশে যেখানে সেখানে থেমে যেতে পারত। প্রয়োজনে পিছিয়েও নেওয়া যেত। সামনের দিকের পাশাপাশি পিছন দিকেও উড়তে পারত। বিজ্ঞান সম্মেলনে বোদাসের ৩০ মিনিটের বক্তৃতায় উপস্থিত শ্রোতাদের ‘চক্ষু ছানাবড়া’ হয়ে গিয়েছিল। আর এবার কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর দাবি করলেন, প্রথম মহাকাশচারী ছিলেন হনুমান। শনিবার জাতীয় মহাকাশ দিবস উপলক্ষে হিমাচল প্রদেশের উনায় একটি পিএম শ্রী স্কুলের পড়ুয়াদের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন অনুরাগ।

সেখানে জাতীয় শিক্ষানীতির উপকারিতাও বোঝান তিনি। আর সেখানেই মহাকাশ অভিযানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। ভাষণ দেওয়ার মাঝে পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন করেন—‘কে প্রথম মহাকাশে গিয়েছিলেন?’ পড়ুয়ারা জবাব দেয় নীল আর্মস্ট্রং।

 

আরও পড়ুন: বিজেপি নেতা জগন্নাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

তখন অনুরাগ বলেন, ‘আমার ধারণা হনুমানজি’। এরপরই অনুরাগ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা এখনকার হিসেবে নিজেদের দেখছি। হাজার হাজার বছর আগের ঐতিহ্য না জানলে জ্ঞান, সংস্কৃতিতে আমরা এই জায়গাতেই থাকব। ইংরেজরা যা বুঝিয়েছে তা-ই বুঝব আমরা। তাই প্রধান শিক্ষক এবং আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব, পাঠ্যবইয়ের বাইরে বেরোন, আমাদের দেশের দিকে, ঐতিহ্য, জ্ঞানের দিকে তাকান।

আরও পড়ুন: সোনা চুরির অভিযোগে বিজেপি নেতা গ্রেফতার! ওড়িশায় ধৃত পশ্চিম মেদিনীপুরের যুব মোর্চা নেতাকে ঘিরে রাজনৈতিক তোলপাড়

ওই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন। অনুরাগের বক্তব্যের এই অংশ ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই অনুরাগের তীব্র নিন্দা করেছেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে তিনি পড়ুয়াদের বিভ্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

আরও পড়ুন: অসুস্থ হনুমান চিকিৎসা করাতে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে

তাঁদের প্রশ্ন, এটা সর্বজনবিদিত যে, পৃথিবী থেকে প্রথম মহাকাশে যান ইউরি গ্যাগারিন। তারপরও একজন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী কীভাবে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন? কেউ কেউ আবার পালটা বলেছেন, রামায়ণে সূর্য দেখে হনুমানের লাফ দেওয়ার কাহিনি রয়েছে।

 

একবার সকালে শিশু হনুমান ক্ষুধার্ত ছিলেন এবং সূর্যকে একটি পাকা ও রসালো ফল ভেবে ভুল করেন। তিনি সেটিকে খাওয়ার জন্য লাফ দিয়ে সূর্যের দিকে উড়ে যান। এটাকেই হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন অনুরাগ। তাতেও অবশ্য বিতর্ক কমছে না। নেটিজেনদের বক্তব্য, মোদি সরকারের জমানায় ইতিহাসের গৈরিকরণ হচ্ছে। ইতিহাসের প্রকৃত তথ্যকে বিকৃত করা হচ্ছে। অনুরাগের এই মন্তব্য ইতিহাসের গেরুয়াকরণের পথকেই ইন্ধন দেবে।

 

ঘটনাচক্রে অনুরাগ যখন এই মন্তব্য করছেন, সেই সময়ই দ্বিতীয় ভারতীয় মহাকাশচারী হিসেবে মহাকাশ থেকে ঘুরে এসেছেন শুভাংশু শুক্ল। ভারত নিজস্ব স্পেস স্টেশন গড়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। একদিকে বিজ্ঞানীরা যেখানে একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়ে চলেছেন, সেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার পরিবর্তে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে অনুরাগের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, এই অনুরাগই মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘দেশ কি গদ্দারও কো, গোলি মারো শালো কো।’