০৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ভারত সরকারকেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে’, দাবি বামপন্থীদের

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার
  • / 329

কলকাতায় মিছিল বামপন্থীদের

আসিফ রেজা আনসারী: গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি, গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ বহর ‘ফ্লোটিলা’র উপর ইসরাইলি আক্রমণ, অধিকারকর্মীদের আটক ও গ্রেফতারের বিরুদ্ধে দুনিয়াজুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। সেই প্রতিবাদে শামিল হল শহর কলকাতা। শনিবার বিকালে রবীন্দ্র সদন থেকে শুরু হয় বামেদের মিছিল। শেষ হয় ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন প্রবীন সিপিএম নেতা এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সিপিআইয়ের তমোনাশ ভট্টাচার্য, সিপিআইএমএল লিবারেশনের অতুল চক্রবর্তী, ফরওয়ার্ড ব্লকের জীবন পাইন, সিপিএমের কল্লোল মজুমদার প্রমুখ। এছাড়াও অন্যান্য বাম দলগুলি মিছিলে শামিল হয়। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে সরব হন বাম নেতারা।

এ দিনের মিছিলে অংশ নিয়ে বিমান বসু বলেন, যেভাবে ফ্লোটিলা আটকানো হয়েছে এবং অধিকারকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা ভয়ঙ্কর। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ সঠিক ভূমিকা পালন করছে না। খাদ্য এবং ওষুধ নিয়ে যাওয়া কোন জাহাজকে আটকানো যায় না। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই ভারত ১৯৫৪ সালে বান্দুং সম্মেলন থেকে বলেছিল কোন দেশে অন্য কোন দেশের বিষয় নাক গলাতে পারবে না। এখন দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কারণে ভারত সেই অবস্থা থেকে সরে এসেছে। বিমান বসুর অভিযোগ, দক্ষিণপন্থী রাজনীতি মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে পছন্দ করে না, সমর্থনও করে না।

আরও পড়ুন: Israel’s Supreme Court : ফিলিস্তিনি বন্দিদের খেতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার

অন্যদিকে মিছিল শেষে ধর্মতলায় সংক্ষিপ্ত সভায় সাবেক সাংসদ সুজন চক্রবর্তী বলেন, যেভাবে ফিলিস্তিনের সমস্ত অসামরিক ক্ষেত্রগুলিকে বেছে বেছে আক্রমণ করা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দাজনক। ইসরাইলের জায়নবাদী আক্রমণ এবং সেই আক্রমণের পেছনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি মদদ রয়েছে। দুর্ভিক্ষ অপুষ্টিতে ভুগছে গোটা গাজা। বামপন্থীদের দায়িত্ব পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো। এই কলকাতার রাস্তাতেই তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম ভিয়েতনামের স্লোগান হয়েছিল ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আজকের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর একইভাবে আক্রমণের বিরুদ্ধে কলকাতা উদ্বেলিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামকে শেষ করতে পারেনি। বর্তমানে তেমনই ইসরাইল ও আমেরিকার যৌথ আক্রমণের কাছে এই লড়াই নতজানু হবে না। গণহত্যাকারীরা মানবতার শক্তির কাছে পরাজিত হবেই।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack: কাশ্মীরের ঘটনায় সরব PALESTINE

সিপিআইয়ের তমোনাশ ভট্টাচার্য বলেন, মানবতার রক্ষায় পথে না নামলে অপরাধী থেকে যাব, তাই বিবেকের তাড়নায় বামপন্থীরা মিছিলে নেমেছে। লিবারেশনের অতুল চক্রবর্তী বলেন, ভারত সরকারকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সরকারের সদর্থক ভূমিকা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একইভাবে গণহত্যা বন্ধ ও ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সওয়াল করেন জীবন পাইন, কল্লোল মজুমদার। এক পরিসংখ্যান দিয়ে সিপিএম নেতা কল্লোল মজুমদার বলেন, গাজায় ৬০ শতাংশ বাড়ি, ৮৫ শতাংশ স্কুল, ৭০ শতাংশ হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। এটা বিশ্ব সভ্যতার কাছে লজ্জার।

আরও পড়ুন: ফিলিস্থিনিদের সমর্থন, ভারতীয় ছাত্রকে গ্রেফতার করল মার্কিন প্রশাসন

প্রসঙ্গত, এ দিন মিছিলে ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকাও দেখা যায়। অনেকেই ফিলিস্তিনিদের সংহতিতে বিশেষ স্লোগান, পতাকা ও পোস্টার হাতে নিয়ে মিছিলে হাঁটেন। সঙ্গে ছিল বিশাল আকারের ফিলিস্তিনি পতাকা। বয়স্কদের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। মহিলারাদের অংশগ্রহণও নজর কাছে সবার।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ভারত সরকারকেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে’, দাবি বামপন্থীদের

আপডেট : ৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার

কলকাতায় মিছিল বামপন্থীদের

আসিফ রেজা আনসারী: গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি, গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ বহর ‘ফ্লোটিলা’র উপর ইসরাইলি আক্রমণ, অধিকারকর্মীদের আটক ও গ্রেফতারের বিরুদ্ধে দুনিয়াজুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। সেই প্রতিবাদে শামিল হল শহর কলকাতা। শনিবার বিকালে রবীন্দ্র সদন থেকে শুরু হয় বামেদের মিছিল। শেষ হয় ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন প্রবীন সিপিএম নেতা এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সিপিআইয়ের তমোনাশ ভট্টাচার্য, সিপিআইএমএল লিবারেশনের অতুল চক্রবর্তী, ফরওয়ার্ড ব্লকের জীবন পাইন, সিপিএমের কল্লোল মজুমদার প্রমুখ। এছাড়াও অন্যান্য বাম দলগুলি মিছিলে শামিল হয়। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে সরব হন বাম নেতারা।

এ দিনের মিছিলে অংশ নিয়ে বিমান বসু বলেন, যেভাবে ফ্লোটিলা আটকানো হয়েছে এবং অধিকারকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা ভয়ঙ্কর। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ সঠিক ভূমিকা পালন করছে না। খাদ্য এবং ওষুধ নিয়ে যাওয়া কোন জাহাজকে আটকানো যায় না। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই ভারত ১৯৫৪ সালে বান্দুং সম্মেলন থেকে বলেছিল কোন দেশে অন্য কোন দেশের বিষয় নাক গলাতে পারবে না। এখন দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কারণে ভারত সেই অবস্থা থেকে সরে এসেছে। বিমান বসুর অভিযোগ, দক্ষিণপন্থী রাজনীতি মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে পছন্দ করে না, সমর্থনও করে না।

আরও পড়ুন: Israel’s Supreme Court : ফিলিস্তিনি বন্দিদের খেতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার

অন্যদিকে মিছিল শেষে ধর্মতলায় সংক্ষিপ্ত সভায় সাবেক সাংসদ সুজন চক্রবর্তী বলেন, যেভাবে ফিলিস্তিনের সমস্ত অসামরিক ক্ষেত্রগুলিকে বেছে বেছে আক্রমণ করা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দাজনক। ইসরাইলের জায়নবাদী আক্রমণ এবং সেই আক্রমণের পেছনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি মদদ রয়েছে। দুর্ভিক্ষ অপুষ্টিতে ভুগছে গোটা গাজা। বামপন্থীদের দায়িত্ব পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো। এই কলকাতার রাস্তাতেই তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম ভিয়েতনামের স্লোগান হয়েছিল ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আজকের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর একইভাবে আক্রমণের বিরুদ্ধে কলকাতা উদ্বেলিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামকে শেষ করতে পারেনি। বর্তমানে তেমনই ইসরাইল ও আমেরিকার যৌথ আক্রমণের কাছে এই লড়াই নতজানু হবে না। গণহত্যাকারীরা মানবতার শক্তির কাছে পরাজিত হবেই।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack: কাশ্মীরের ঘটনায় সরব PALESTINE

সিপিআইয়ের তমোনাশ ভট্টাচার্য বলেন, মানবতার রক্ষায় পথে না নামলে অপরাধী থেকে যাব, তাই বিবেকের তাড়নায় বামপন্থীরা মিছিলে নেমেছে। লিবারেশনের অতুল চক্রবর্তী বলেন, ভারত সরকারকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সরকারের সদর্থক ভূমিকা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একইভাবে গণহত্যা বন্ধ ও ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সওয়াল করেন জীবন পাইন, কল্লোল মজুমদার। এক পরিসংখ্যান দিয়ে সিপিএম নেতা কল্লোল মজুমদার বলেন, গাজায় ৬০ শতাংশ বাড়ি, ৮৫ শতাংশ স্কুল, ৭০ শতাংশ হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। এটা বিশ্ব সভ্যতার কাছে লজ্জার।

আরও পড়ুন: ফিলিস্থিনিদের সমর্থন, ভারতীয় ছাত্রকে গ্রেফতার করল মার্কিন প্রশাসন

প্রসঙ্গত, এ দিন মিছিলে ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকাও দেখা যায়। অনেকেই ফিলিস্তিনিদের সংহতিতে বিশেষ স্লোগান, পতাকা ও পোস্টার হাতে নিয়ে মিছিলে হাঁটেন। সঙ্গে ছিল বিশাল আকারের ফিলিস্তিনি পতাকা। বয়স্কদের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। মহিলারাদের অংশগ্রহণও নজর কাছে সবার।