অন্ধ্রে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনা, জ্বলন্ত বাসের ভিতরে আগুনে ঝলসে মৃত ২৫
- আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার
- / 119
পুবের কলম, অমরাবতী: মর্মান্তিক দুর্ঘটনা অন্ধ্রে। লাক্সারি বাসে আগুন লেগে মৃত্যু অন্তত ২৫ জনের। আহত বহু। অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনাটি ঘটে। কুর্নুল জেলায় ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির।
এর ফলে বাসের সামনের অংশে আটকে যায় মোটরসাইকেলটি। ওই অবস্থাতেই চলতে থাকে বাস। সেই সময়েই দাউ দাউ করে আগুন ধরে বাসটিতে। এই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে একটি যাত্রীবোঝাই লাক্সারি বাস বেঙ্গালুরুর দিকে রওনা দিয়েছিল। ভোররাতে কুর্নুল জেলার চিন্নেতকুর গ্রামের কাছে বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ হাইওয়েতে একটি মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। তাতে বাসটিতেই আগুন ধরে যায়। নিমেষে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা বাস।
বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বেশিরভাগ যাত্রী দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসারও সময় পাননি। ফলে আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় একের পর এক অসহায় যাত্রীর। বিশেষজ্ঞদের কথায়, বাসটিতে আগুন না লাগলে এত মানুষকে প্রাণ হারাতে হতো না।
Private bus carrying 40 passengers going from Hyderabad to Bengaluru caught fire in Kurnool mandal of AP in the wee hours of Friday. pic.twitter.com/ObPYyd1fQp
— The Siasat Daily (@TheSiasatDaily) October 24, 2025
ওই বাসের মধ্যেই ছিলেন হারিকা। তিনি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ঘুম ভাঙে চিৎকারে। চোখ খুলেই দেখেন, চারদিকে আগুন, ধোঁয়া। ঝলসে গিয়েছেন একাধিক সহযাত্রী। বাসের পিছনের দিকের ভাঙা দরজা দিয়ে তিনি ঝাঁপ দিয়ে কোনও রকমে জীবন বাঁচান।
সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় চালক ও খালাসি-সহ বাসটিতে অন্তত ৪০-৪২ জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে ২০ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। ১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যেও বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এক যাত্রী জানিয়েছেন, ‘আমি হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলাম। ভোর তিনটের দিকে আমাদের সামনে একটি বাইক এসে পড়ল।’ তিনি জানিয়েছেন তার কয়েক মুহূর্ত পরেই বাসটিতে আগুন ধরে যায়। ধোঁয়ার কারণে দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তিনি আর কিছুই দেখতে পাননি, চোখের সামনেই বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে কুর্নুল জেলার পুলিশ জানাচ্ছে, বাসটির সঙ্গে মোটরবাইকটির ধাক্কা লাগার পরে বাইকের জ্বালানির ট্যাঙ্ক খুলে যায়। আর তা থেকে জ্বালানি গড়িয়ে পড়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাসের জ্বালানির ট্যাঙ্কেও বিস্ফোরণ ঘটে এবং তাতে আগুন ধরে যায়। এর ফলে বাস থেকে নামার সুযোগও ছিল না অধিকাংশ যাত্রীর।
কুর্নুলের জেলাশাসক গুডিপতি শিবনারায়ণ জানান, কাভেরি ট্রাভেলসের বাসে ৪১ জন যাত্রী ছিলেন। ভোর ৩টে থেকে ৩টে ১০-এর মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলের সঙ্গে বাসটির ধাক্কায় বাইকের জ্বালানির ট্যাঙ্কে আগুন লাগে। সেই কারণেই হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখনও তদন্ত চলছে।
এদিকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “কুর্নুলের দুর্ঘটনায় আমি স্তম্ভিত। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।” রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও ওই দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে বলেন, “ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি মর্মাহত। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। সরকার আহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সম্ভাব্য সবরকমভাবে পাশে থাকবে।”
মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু এক্স বার্তায় লিখেছেন, ‘কুর্নুল জেলার চিন্না টেকুর গ্রামের কাছে ভয়াবহ বাস অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমি মর্মাহত। যাঁরা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। সরকারি কর্তৃপক্ষ আহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদান করবে।’

















































