গাজায় প্রায় দুই বছরের হামলা, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির প্রতি আস্থা কমেছে, বহু সরকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে এবং বিভিন্ন ফোরামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। ইউরোপ–আমেরিকাসহ বহু দেশে বেসামরিক হতাহতের জন্য ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠনগুলোও বয়কটের আহ্বান তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে তেল আবিব গভীর বৈশ্বিক বৈধতা সংকটে পড়েছে। নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে অধিকৃত ফিলিস্তিনে পর্যটন ও বিনিয়োগও কমে গেছে।
এই সংকট কাটাতে ইসরায়েলি সরকার এবার বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিশ্বব্যাপী নিজেদের অনুকূলে বয়ান ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’আর ২০২৬ সালের বাজেটে ২.৩৫ বিলিয়ন শেকেল—প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার—বিশ্বব্যাপী প্রচারণা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য বরাদ্দে সম্মত হয়েছেন।
সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এ বাজেট দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা, বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের সঙ্গে কাজ, বিদেশি রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের অধিকৃত অঞ্চলে ভ্রমণ করানোসহ নানা ধরনের ‘জনসংযোগ’ কর্মসূচি পরিচালিত হবে। বিশেষত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রচারণা জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতোমধ্যে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে কিছু ইনফ্লুয়েন্সার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে ইসরায়েলের পছন্দসই বয়ান প্রচারের কাজে লাগানো হচ্ছে। এ প্রচারের মূল লক্ষ্য—অধিকৃত ভূমিকে আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটনগন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা।
এছাড়া গাজা সংকট নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনকে দুর্বল করা বা প্রশ্নবিদ্ধ করাও এই পরিকল্পনার অংশ। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল রাজনৈতিক বা সামরিক আচরণ বদল না করে জনসংযোগ কৌশল দিয়ে আন্তর্জাতিক মতামত পাল্টাতে বেশি মনোযোগী।
তবে বহু বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, এ ধরনের ক্যাম্পেইন দিয়ে ইসরায়েলের ক্ষতিগ্রস্ত ভাবমূর্তি পুনর্গঠন সম্ভব নয়; বরং বাস্তব ঘটনাগুলোই এখন বিশ্বের সামনে সবচেয়ে শক্তিশালী ‘বিবেক’ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
































