২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রজাতন্ত্র দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়ল গান্ধির পছন্দের গান

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২৩ জানুয়ারী ২০২২, রবিবার
  • / 96

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ ­ সব ইতিহাস কি এইভাবেই মুছে দেওয়া হবে? ৫০ বছর ধরে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলা অমর জওয়ান জ্যোতির অনির্বাণ শিখাকে শুক্রবার  নিভিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই শিখা মিশিয়ে দেওয়া হয় ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’এর সঙ্গে। এই ঘটনার ঠিক পরের দিনই কেন্দ্রীয় সরকারের ফের নয়া ঘোষণা– প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে বাদ দেওয়া  হবে স্তোত্র ’এবাইড উইথ মি’  ( ঞ্চত্র’)। প্রতি বছর ২৯ জানুয়ারি দিল্লির বিজয় চকে প্রজাতন্ত্র দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের বিটিং রিট্রিটের পর ’এবাইড উইথ মি’ (About   With me) দিয়েই প্রজাতন্ত্র দিবস শেষ হয়।

যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করতেই ব্যবহার করা  হত ’এবাইড উইথ মি’।  মহাত্মা গান্ধির অত্যন্ত প্রিয় ছিল এই স্তবগানের সুর।১৮৪৭ সালে হেনরি ফ্রান্সিস লাইট এই গানটি লিখেছিলেন। সুরকার উইলিয়াম হেনরি মঙ্ক এই গানটিতে সুর দিয়েছিলেন। এ বছর বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠানের জন্য যে ২৫টি ধুনের  তালিকা দেওয়া হয়েছে– সেখানে নেই ’এবাইড উইথ মি’।

আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ রাষ্ট্রপতির, উঠে এল রামমন্দির প্রসঙ্গ

এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ৪৪টি ব্যাগলার– ১৬ জন ট্রাম্পেটার্স এবং ৭৫ জন ড্রামার সহ ৬টি ব্যান্ড থাকছে। অনুষ্ঠানে ২৬টি গানের ধুন বাজানো হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী– নৌবাহিনী– বায়ুসেনা  এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। ১৯৫০ সাল থেকে থেকে প্রায় প্রতি বছরই এই গানটির ধুন  দিয়ে বিটিং রিট্রিটের অনুষ্ঠান শেষ হত। সরকারের দাবি ইন্ডিয়া গেটে যা লেখা রয়েছে তা আসলে আমাদের উপনিবেশিক অতীতের পরিচয় বহন করে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে  ভারত পরাধীন ছিল।স্বাভাবিক কারণেই তদানীন্তন ভারতীয় সেনা ব্রিটিশদের হয়েই কাজ করেছিল।

আরও পড়ুন: হাওড়ার শিবপুর পুলিশ লাইনে পালিত প্রজাতন্ত্র দিবস

প্রশ্ন হল– যদি সরকার এইভাবে ইতিহাস মুছতে চায়– তাহলে দেশের ইতিহাস কি ২০১৪ থেকে লেখা হবে? এতদিন পর্যন্ত মুসলিম স্থাপত্য এবং মুসলিম শাসকদের সময়কার ঐতিহ্যমন্ডিত জায়গাগুলোর নাম মুছে দেওয়া হচ্ছিল। অনেকের অভিযোগ দীর্ঘদিন দিন ধরে আরএসএস এটাই চাইছে। তাদের যেমন মুসলিমে আপত্তি– তেমনই গান্ধিতেও আপত্তি। গান্ধিকে খুন করার দিন আরএসএস মিষ্টি বিলি করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই গান্ধির পছন্দের স্তবগানের সুর মুছে দিতে আরএসএসের শিষ্য বিজেপি যে বাড়তি উৎসাহী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।গত ২০২০ সালেও এই স্তবগানকে বাদ দেওয়া নিয়ে হইচই হয়– তখন সেটা স্থগিত রাখা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: বহু বিতর্কের মাঝেও ব্লকবাস্টার ‘পাঠান’, উচ্ছ্বসিত শাহরুখ প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানালেন দেশবাসীকে

এবারের অনুষ্ঠান শুরু হবে ফ্যানফেয়ার বাই বাগলার্স দিয়ে। তার পর বীর সৈনিক বাজাবে মাসড ব্যান্ড। ছটি সুর ব্যাগপাইপার এবং ড্রাম ব্যান্ড বাজাবে। সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের ব্যান্ড তিনটি সুর বাজাবে।  তার পর এয়ারফোর্সের ব্যান্ড চারটি সুর বাজাবে। তার মধ্যে একটি বিশেষ হল লড়াকু সুর– নেপথ্যে ফ্লাইট লিউটেন্যান্ট এল এস  রূপচন্দ্র।

নৌসেনার ব্যান্ড চারটি সুর বাজাবে– তার পর সেনার মিলিটারি ব্যান্ড তিনটি সুর বাজাবে। কেরালা– সিকি এ মাল এবং হিন্দ কি সেনা। মাসড ব্যান্ড আরও তিনটি সুর বাজাবে অনুষ্ঠানের শেষে। তার মধ্যে রয়েছে নেতাজির বিখ্যাত কদম কদম বাড়ায়ে যা– ড্রামার্স কল এবং  মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ।

 

অনুষ্ঠান শেষ হবে সারে জাহাঁ সে আচ্ছা দিয়ে। গোটা অনুষ্ঠানে ৪৪ জন বাগলার্স– ১৬  জন ট্রাম্পেটার্স এবং ৭৫ জন ড্রামার্স অংশ নেবেন। মূলত প্রজাতন্ত্র দিবসের সপ্তাহব্যাপী উদযাপনের শেষে বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠান হয় প্রতি বছর। প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয় ২৪ জানুয়ারি থেকে। তবে এবছর নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে উদযাপন।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

প্রজাতন্ত্র দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়ল গান্ধির পছন্দের গান

আপডেট : ২৩ জানুয়ারী ২০২২, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ ­ সব ইতিহাস কি এইভাবেই মুছে দেওয়া হবে? ৫০ বছর ধরে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলা অমর জওয়ান জ্যোতির অনির্বাণ শিখাকে শুক্রবার  নিভিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই শিখা মিশিয়ে দেওয়া হয় ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’এর সঙ্গে। এই ঘটনার ঠিক পরের দিনই কেন্দ্রীয় সরকারের ফের নয়া ঘোষণা– প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে বাদ দেওয়া  হবে স্তোত্র ’এবাইড উইথ মি’  ( ঞ্চত্র’)। প্রতি বছর ২৯ জানুয়ারি দিল্লির বিজয় চকে প্রজাতন্ত্র দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের বিটিং রিট্রিটের পর ’এবাইড উইথ মি’ (About   With me) দিয়েই প্রজাতন্ত্র দিবস শেষ হয়।

যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করতেই ব্যবহার করা  হত ’এবাইড উইথ মি’।  মহাত্মা গান্ধির অত্যন্ত প্রিয় ছিল এই স্তবগানের সুর।১৮৪৭ সালে হেনরি ফ্রান্সিস লাইট এই গানটি লিখেছিলেন। সুরকার উইলিয়াম হেনরি মঙ্ক এই গানটিতে সুর দিয়েছিলেন। এ বছর বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠানের জন্য যে ২৫টি ধুনের  তালিকা দেওয়া হয়েছে– সেখানে নেই ’এবাইড উইথ মি’।

আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ রাষ্ট্রপতির, উঠে এল রামমন্দির প্রসঙ্গ

এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ৪৪টি ব্যাগলার– ১৬ জন ট্রাম্পেটার্স এবং ৭৫ জন ড্রামার সহ ৬টি ব্যান্ড থাকছে। অনুষ্ঠানে ২৬টি গানের ধুন বাজানো হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী– নৌবাহিনী– বায়ুসেনা  এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। ১৯৫০ সাল থেকে থেকে প্রায় প্রতি বছরই এই গানটির ধুন  দিয়ে বিটিং রিট্রিটের অনুষ্ঠান শেষ হত। সরকারের দাবি ইন্ডিয়া গেটে যা লেখা রয়েছে তা আসলে আমাদের উপনিবেশিক অতীতের পরিচয় বহন করে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে  ভারত পরাধীন ছিল।স্বাভাবিক কারণেই তদানীন্তন ভারতীয় সেনা ব্রিটিশদের হয়েই কাজ করেছিল।

আরও পড়ুন: হাওড়ার শিবপুর পুলিশ লাইনে পালিত প্রজাতন্ত্র দিবস

প্রশ্ন হল– যদি সরকার এইভাবে ইতিহাস মুছতে চায়– তাহলে দেশের ইতিহাস কি ২০১৪ থেকে লেখা হবে? এতদিন পর্যন্ত মুসলিম স্থাপত্য এবং মুসলিম শাসকদের সময়কার ঐতিহ্যমন্ডিত জায়গাগুলোর নাম মুছে দেওয়া হচ্ছিল। অনেকের অভিযোগ দীর্ঘদিন দিন ধরে আরএসএস এটাই চাইছে। তাদের যেমন মুসলিমে আপত্তি– তেমনই গান্ধিতেও আপত্তি। গান্ধিকে খুন করার দিন আরএসএস মিষ্টি বিলি করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই গান্ধির পছন্দের স্তবগানের সুর মুছে দিতে আরএসএসের শিষ্য বিজেপি যে বাড়তি উৎসাহী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।গত ২০২০ সালেও এই স্তবগানকে বাদ দেওয়া নিয়ে হইচই হয়– তখন সেটা স্থগিত রাখা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: বহু বিতর্কের মাঝেও ব্লকবাস্টার ‘পাঠান’, উচ্ছ্বসিত শাহরুখ প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানালেন দেশবাসীকে

এবারের অনুষ্ঠান শুরু হবে ফ্যানফেয়ার বাই বাগলার্স দিয়ে। তার পর বীর সৈনিক বাজাবে মাসড ব্যান্ড। ছটি সুর ব্যাগপাইপার এবং ড্রাম ব্যান্ড বাজাবে। সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের ব্যান্ড তিনটি সুর বাজাবে।  তার পর এয়ারফোর্সের ব্যান্ড চারটি সুর বাজাবে। তার মধ্যে একটি বিশেষ হল লড়াকু সুর– নেপথ্যে ফ্লাইট লিউটেন্যান্ট এল এস  রূপচন্দ্র।

নৌসেনার ব্যান্ড চারটি সুর বাজাবে– তার পর সেনার মিলিটারি ব্যান্ড তিনটি সুর বাজাবে। কেরালা– সিকি এ মাল এবং হিন্দ কি সেনা। মাসড ব্যান্ড আরও তিনটি সুর বাজাবে অনুষ্ঠানের শেষে। তার মধ্যে রয়েছে নেতাজির বিখ্যাত কদম কদম বাড়ায়ে যা– ড্রামার্স কল এবং  মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ।

 

অনুষ্ঠান শেষ হবে সারে জাহাঁ সে আচ্ছা দিয়ে। গোটা অনুষ্ঠানে ৪৪ জন বাগলার্স– ১৬  জন ট্রাম্পেটার্স এবং ৭৫ জন ড্রামার্স অংশ নেবেন। মূলত প্রজাতন্ত্র দিবসের সপ্তাহব্যাপী উদযাপনের শেষে বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠান হয় প্রতি বছর। প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয় ২৪ জানুয়ারি থেকে। তবে এবছর নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে উদযাপন।