২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বখ্যাত কানপুরের চামড়া শিল্প ধ্বংসের পথে, কমে গেছে ৮ লাখ কর্মসংস্থান

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শনিবার
  • / 12

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ উত্তর প্রদেশের কানপুর জেলা দেশের চামড়া শিল্পের বৃহত্তম কেন্দ্র। কানপুর শহর ভারতের মোট চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির  প্রায় ২০ শতাংশ অবদান রাখে। এখানকার তৈরি পণ্য আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। জুতো, বেল্ট, পার্স, পোশাক, স্যান্ডেলের মতো বিভিন্ন ধরণের  চামড়াজাত পণ্য  কানপুরের চামড়া শিল্পে তৈরি হয়। কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত কানপুরের চামড়া শিল্প আজ ধ্বংসের পথে।

২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার গঙ্গা নদীর দূষণের কথা উল্লেখ করে কারখানা বন্ধ বা উৎপাদন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরপর থেকে কানপুরে চামড়ার ব্যবসা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এখানকার চামড়া শিল্প এখন বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে চলে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, ৪০২টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১৪৩টি অসম্পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করছে। ৩ বছরে চামড়ার ব্যবসা কমেছে ২০ হাজার কোটি টাকা, কমেছে ৮ লাখ কর্মসংস্থান।

আরও পড়ুন: উত্তপ্ত কানপুর, প্রশাসনের বুলডোজ অভিযানে পুড়ে মৃত্যু মা ও মেয়ের

কানপুরের জাজমউতে প্রায় ৪০২টি ট্যানারি রয়েছে তবে গত কয়েক বছর থেকে মাত্র ১৪৩টি ট্যানারি চলছে। এই ট্যানারিগুলোও নোটবাতিল কর্মসূচির পর এবার  করোনার  দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে। করোনার মান অনুযায়ী মাত্র ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ  করছেন, যার ফলে উৎপাদনের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবসা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশের কানপুরে বিরলপ্রজাতির শকুন উদ্ধার

কানপুরে  ট্যানারি বন্ধের কারণে ব্যাপক হারে বেকারত্ব বাড়ছে। ২০১৮-২০১৯ সালে কানপুর চামড়া ব্যবসায় ১০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২ লক্ষে। কানপুরের চামড়া শিল্পের ব্যবসা ক্রমাগত কমছে, ২০১৮-২০১৯  সালে ব্যবসা ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা যা ২০১৯-২০২০ সালে ২৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ক্রমহ্রাসমান ব্যবসা ২০২০-২০২১ সালে ১০ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

আরও পড়ুন: শৈত্যপ্রবাহ : উত্তর প্রদেশের কানপুরে ৬ দিনে মৃত ১০০  

কানপুরে একটি ট্যানারিতে কাজ দেখাশোনা করা দানিশ নামে এক ব্যক্তি বলেন, গঙ্গায় দূষণ বন্ধ করার অনুশীলনে, এনজিটি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কানপুরের চামড়ার ব্যবসার উপর ক্র্যাক ডাউন করেছে, যার ফলে জাজমউয়ের বেশিরভাগ ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে। দানিশ বলেন, ট্যানারি মালিকরা যাদের টাকা ছিল তারা ট্যানারিগুলোকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করতে পেরেছে, কিন্তু যাদের কাছে টাকা ছিল না তারা বন্ধ করে দিয়েছে।

মুহাম্মাদ আরশি নামে একজন ট্যানারি মালিক বলেন, কানপুরের চামড়া শিল্প জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার মনে করে যে ট্যানারিগুলো গঙ্গার দূষণের জন্য দায়ী, যদিও কানপুর শহরের অনেক খোলা ড্রেনের নর্দমার নোংরা সরাসরি গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। আসলে গঙ্গা নদীতে শিল্পের পানি যাচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে সরকার চামড়া শিল্পের ময়লা বন্ধ করতে কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। এতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি ট্যানারি শিল্পে ইতিবাচক ফল দেখাতে পারেনি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিশ্বখ্যাত কানপুরের চামড়া শিল্প ধ্বংসের পথে, কমে গেছে ৮ লাখ কর্মসংস্থান

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ উত্তর প্রদেশের কানপুর জেলা দেশের চামড়া শিল্পের বৃহত্তম কেন্দ্র। কানপুর শহর ভারতের মোট চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির  প্রায় ২০ শতাংশ অবদান রাখে। এখানকার তৈরি পণ্য আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। জুতো, বেল্ট, পার্স, পোশাক, স্যান্ডেলের মতো বিভিন্ন ধরণের  চামড়াজাত পণ্য  কানপুরের চামড়া শিল্পে তৈরি হয়। কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত কানপুরের চামড়া শিল্প আজ ধ্বংসের পথে।

২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার গঙ্গা নদীর দূষণের কথা উল্লেখ করে কারখানা বন্ধ বা উৎপাদন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরপর থেকে কানপুরে চামড়ার ব্যবসা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এখানকার চামড়া শিল্প এখন বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে চলে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, ৪০২টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১৪৩টি অসম্পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করছে। ৩ বছরে চামড়ার ব্যবসা কমেছে ২০ হাজার কোটি টাকা, কমেছে ৮ লাখ কর্মসংস্থান।

আরও পড়ুন: উত্তপ্ত কানপুর, প্রশাসনের বুলডোজ অভিযানে পুড়ে মৃত্যু মা ও মেয়ের

কানপুরের জাজমউতে প্রায় ৪০২টি ট্যানারি রয়েছে তবে গত কয়েক বছর থেকে মাত্র ১৪৩টি ট্যানারি চলছে। এই ট্যানারিগুলোও নোটবাতিল কর্মসূচির পর এবার  করোনার  দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে। করোনার মান অনুযায়ী মাত্র ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ  করছেন, যার ফলে উৎপাদনের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবসা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশের কানপুরে বিরলপ্রজাতির শকুন উদ্ধার

কানপুরে  ট্যানারি বন্ধের কারণে ব্যাপক হারে বেকারত্ব বাড়ছে। ২০১৮-২০১৯ সালে কানপুর চামড়া ব্যবসায় ১০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২ লক্ষে। কানপুরের চামড়া শিল্পের ব্যবসা ক্রমাগত কমছে, ২০১৮-২০১৯  সালে ব্যবসা ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা যা ২০১৯-২০২০ সালে ২৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ক্রমহ্রাসমান ব্যবসা ২০২০-২০২১ সালে ১০ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

আরও পড়ুন: শৈত্যপ্রবাহ : উত্তর প্রদেশের কানপুরে ৬ দিনে মৃত ১০০  

কানপুরে একটি ট্যানারিতে কাজ দেখাশোনা করা দানিশ নামে এক ব্যক্তি বলেন, গঙ্গায় দূষণ বন্ধ করার অনুশীলনে, এনজিটি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কানপুরের চামড়ার ব্যবসার উপর ক্র্যাক ডাউন করেছে, যার ফলে জাজমউয়ের বেশিরভাগ ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে। দানিশ বলেন, ট্যানারি মালিকরা যাদের টাকা ছিল তারা ট্যানারিগুলোকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করতে পেরেছে, কিন্তু যাদের কাছে টাকা ছিল না তারা বন্ধ করে দিয়েছে।

মুহাম্মাদ আরশি নামে একজন ট্যানারি মালিক বলেন, কানপুরের চামড়া শিল্প জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার মনে করে যে ট্যানারিগুলো গঙ্গার দূষণের জন্য দায়ী, যদিও কানপুর শহরের অনেক খোলা ড্রেনের নর্দমার নোংরা সরাসরি গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। আসলে গঙ্গা নদীতে শিল্পের পানি যাচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে সরকার চামড়া শিল্পের ময়লা বন্ধ করতে কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। এতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি ট্যানারি শিল্পে ইতিবাচক ফল দেখাতে পারেনি।