০৩ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের তুলনায় ভারতে আদিবাসী ও দলিতদের আয়ু কম! একটি সমীক্ষা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৩ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 37

পুবের কলম,ওয়েবডেস্কঃ উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের তুলনায় ভারতে আদিবাসী ও দলিতদের আয়ু কম! ভারতে করা একটি সরকারি সমীক্ষা থেকে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য সামনে এল। ৯টি রাজ্যের ২০ লক্ষ মানুষের ওপরে এই সমীক্ষা চালানো হয়। ভারতের বার্ষিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার ডেটা ব্যবহার করে গবেষকরা অসম, বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
আয়ু কম হওয়ার পিছনে এই সমীক্ষার দাবি মূলত জাতি বিদ্বেষ ও অর্থনৈতিক কারণ।

সমীক্ষায় আরও দাবি করা হয়েছে, উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের তুলনায় আদিবাসীদের মধ্যে চার বছরের বেশি, দলিতদের মধ্যে তিন বছর এবং মুসলিমদের মধ্যে এক বছরের আয়ুষ্কালের পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ এত কম কেন, এর জন্য দায়ী কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ! একটি সমীক্ষা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমির রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মের সময়ে কম আয়ু লক্ষ্য করা যায়। আদিবাসী ও উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে পার্থক্য মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩.৭ বছর ও পুরুষদের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর।

আরও পড়ুন: মহাকাশে যাচ্ছেন প্রথম আদিবাসী নারী নভশ্চর

বলা যেতে পারে, দলিত ও আদিবাসীদের আয়ু পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর মতোই করুণ। সামগ্রিক ব্যবধানগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমসাময়িক কালো-সাদা ব্যবধান এবং ইসরায়েলে আরব-ইহুদি ব্যবধানের মতোই স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: গত তিন বছর ধরে সন্তান দত্তক নেওয়ার অপেক্ষায় ১৬ হাজার দম্পতি: একটি সমীক্ষা

এখন প্রশ্ন উঠছে যে, প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীগুলি ওপরে এই আয়ুষ্কাকালের পার্থক্য কি অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরে নির্ভর করে?

অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীতা ব্যাস, বার্কলেতে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার পায়েল হাতি, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশিস গুপ্তার রিপোর্ট অনুযায়ী এর জন্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণ দায়ী নয়। এর পিছনে আছে জাতিবৈষম্য, এবং শোষণের মতো সামাজিক ব্যাধির প্রভাব।
২০২০ সালে মুম্বইয়ের ইন্টারন্যাশনাল ফর পপুলেশন সায়েন্স’র করা একটি সমীক্ষায় একই ধরনের তথ্য সামনে আসে। তবে সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, আয়ুষ্কালের পার্থক্য আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়।
প্রসঙ্গত, আধুনিক সমাজে দলিতদের অস্পৃশ্য বলে মনে করার রীতি এখনও ভারতের অনেক রাজ্যে দেখা যায়। দলিতদের সঙ্গে একআসনে বসে ভোজন করা এখনও সামাজিক অপরাধ বলে গণ্য হয় একশ্রেণির সমাজে। একসময়ে উচ্চবিত্ত হিন্দুদের মধ্য দলিতদের ছায়া মাড়ানো ছিল পাপ।
ভারতে এখনও দলিত, নিচুবর্ণ জাতির তকমা দিয়ে পিটিয়ে খুনের মতোও ঘটনার খবরও শোনা যায়। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সেই বর্ণ বৈষম্যের কথা আবার নতুন করে সামনে এল।

ইউক্রেনে নিহত ছাত্র ভারতীয় ছাত্র নবীন শেখারাপ্পার বাবা জানিয়েছেন, একে তো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে পড়ার খরচ সামলানো মুশকিল। সেইসঙ্গে আছে জাতিগত বৈষম্য। সাংবাদিকের মাধ্যমে নিহত নবীনের বাবা আবেদন রাখেন, কলেজগুলি থেকে যেন জাতপাতের বৈষম্যকে দূরে রাখা হয়। নবীনের অপর দুই বন্ধু খারকিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া অমিত ভেঙ্কটেশ বৈশ্য ও সুমন শ্রীধরের বাবাও জানিয়েছেন, ভারতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে খরচ সামলানো মুশকিল সেই সঙ্গে রয়েছে জাতি বিদ্বেষের প্রভাব। তাই ভালো মার্কস থাকা সত্ত্বেও বিদেশে পাঠাতে হয়েছে পড়াশোনা করতে।

এদিকে এই পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের নিয়ে এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য, ইউক্রেনে সেই ভারতীয় পড়ুয়ারাই পড়তে যায় যাদের ভারতের পরীক্ষায় পাশ করার যোগ্যতা নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের তুলনায় ভারতে আদিবাসী ও দলিতদের আয়ু কম! একটি সমীক্ষা

আপডেট : ৩ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্কঃ উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের তুলনায় ভারতে আদিবাসী ও দলিতদের আয়ু কম! ভারতে করা একটি সরকারি সমীক্ষা থেকে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য সামনে এল। ৯টি রাজ্যের ২০ লক্ষ মানুষের ওপরে এই সমীক্ষা চালানো হয়। ভারতের বার্ষিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার ডেটা ব্যবহার করে গবেষকরা অসম, বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
আয়ু কম হওয়ার পিছনে এই সমীক্ষার দাবি মূলত জাতি বিদ্বেষ ও অর্থনৈতিক কারণ।

সমীক্ষায় আরও দাবি করা হয়েছে, উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের তুলনায় আদিবাসীদের মধ্যে চার বছরের বেশি, দলিতদের মধ্যে তিন বছর এবং মুসলিমদের মধ্যে এক বছরের আয়ুষ্কালের পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ এত কম কেন, এর জন্য দায়ী কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ! একটি সমীক্ষা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমির রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মের সময়ে কম আয়ু লক্ষ্য করা যায়। আদিবাসী ও উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে পার্থক্য মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩.৭ বছর ও পুরুষদের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর।

আরও পড়ুন: মহাকাশে যাচ্ছেন প্রথম আদিবাসী নারী নভশ্চর

বলা যেতে পারে, দলিত ও আদিবাসীদের আয়ু পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর মতোই করুণ। সামগ্রিক ব্যবধানগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমসাময়িক কালো-সাদা ব্যবধান এবং ইসরায়েলে আরব-ইহুদি ব্যবধানের মতোই স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: গত তিন বছর ধরে সন্তান দত্তক নেওয়ার অপেক্ষায় ১৬ হাজার দম্পতি: একটি সমীক্ষা

এখন প্রশ্ন উঠছে যে, প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীগুলি ওপরে এই আয়ুষ্কাকালের পার্থক্য কি অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরে নির্ভর করে?

অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীতা ব্যাস, বার্কলেতে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার পায়েল হাতি, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশিস গুপ্তার রিপোর্ট অনুযায়ী এর জন্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণ দায়ী নয়। এর পিছনে আছে জাতিবৈষম্য, এবং শোষণের মতো সামাজিক ব্যাধির প্রভাব।
২০২০ সালে মুম্বইয়ের ইন্টারন্যাশনাল ফর পপুলেশন সায়েন্স’র করা একটি সমীক্ষায় একই ধরনের তথ্য সামনে আসে। তবে সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, আয়ুষ্কালের পার্থক্য আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়।
প্রসঙ্গত, আধুনিক সমাজে দলিতদের অস্পৃশ্য বলে মনে করার রীতি এখনও ভারতের অনেক রাজ্যে দেখা যায়। দলিতদের সঙ্গে একআসনে বসে ভোজন করা এখনও সামাজিক অপরাধ বলে গণ্য হয় একশ্রেণির সমাজে। একসময়ে উচ্চবিত্ত হিন্দুদের মধ্য দলিতদের ছায়া মাড়ানো ছিল পাপ।
ভারতে এখনও দলিত, নিচুবর্ণ জাতির তকমা দিয়ে পিটিয়ে খুনের মতোও ঘটনার খবরও শোনা যায়। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সেই বর্ণ বৈষম্যের কথা আবার নতুন করে সামনে এল।

ইউক্রেনে নিহত ছাত্র ভারতীয় ছাত্র নবীন শেখারাপ্পার বাবা জানিয়েছেন, একে তো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে পড়ার খরচ সামলানো মুশকিল। সেইসঙ্গে আছে জাতিগত বৈষম্য। সাংবাদিকের মাধ্যমে নিহত নবীনের বাবা আবেদন রাখেন, কলেজগুলি থেকে যেন জাতপাতের বৈষম্যকে দূরে রাখা হয়। নবীনের অপর দুই বন্ধু খারকিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া অমিত ভেঙ্কটেশ বৈশ্য ও সুমন শ্রীধরের বাবাও জানিয়েছেন, ভারতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে খরচ সামলানো মুশকিল সেই সঙ্গে রয়েছে জাতি বিদ্বেষের প্রভাব। তাই ভালো মার্কস থাকা সত্ত্বেও বিদেশে পাঠাতে হয়েছে পড়াশোনা করতে।

এদিকে এই পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের নিয়ে এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য, ইউক্রেনে সেই ভারতীয় পড়ুয়ারাই পড়তে যায় যাদের ভারতের পরীক্ষায় পাশ করার যোগ্যতা নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।