০১ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দাদা হুজুরের বিশিষ্ট খলিফা ও বংশধর পীর তাজাম্মোল হোসেন সিদ্দিকী

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, শনিবার
  • / 760

নুরুল ইসলাম খান : ফুরফুরা শরীফের পীর যুগ সংস্কারক হযরত দাদা হুজুরের প্রবীণ ও বিশিষ্ট খলিফা হলেন পীর আল্লামা শাহ সুফি হযরত তাজাম্মোল হোসাইন সিদ্দিকী রহ.। ২৬ মার্চ শনিবার নদীয়ার শান্তিপুরে তাঁর ৮০তম বাৎসরিক ঈসালে সওয়াব মাহফিল। শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত ভাগিরথী নদীর কোলে ছোট গ্রাম শান্তিপুরে ১২৪৩ বঙ্গাব্দে তাঁর জম্ম। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন পিতা মাওলানা কামাল উদ্দিন হুজুর ইন্তেকাল করেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার মাত্র দেড় বছর বয়সে মমতাময়ী মাও দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। এতিম শিশু তাজাম্মোল বড় হয়ে ওঠেন বড় ভাই মাওলানা পায়মুদ্দিনের স্নেহে।

 

আরও পড়ুন: বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ আবদুল বারি-র ইন্তেকাল

দাদা হুজুরের বংশধর এবং সিদ্দিকী আকবর হযরত আবু বকর সিদ্দীকী রা.-এঁর উত্তরসূরী। নদীয়ার শান্তিপুরে সিদ্দিকী বংশের আগমন হয়েছিল হযরত পীর আল্লামা মুফতি আধুল গনি সিদ্দিকীর হাত ধরে। যিনি হাজী হযরত মোস্তাফা মাদানির আপন ভাই। জানা যায়, দীর্ঘ ২০ দিনের ধর্মীয় বাহাস বা তর্কে বিজয়ী হয়ে রাওতাড়া ফরিদতলায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর কমবেশি ৩৫০ বিঘা জমির সবটাই দখল হয়ে গেছে। তাজাম্মোল সিদ্দিকী হুগলির হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একদিকে দুনিয়ার এলেম হাসিল করেন অন্যদিকে দ্বীনের অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করে ইসলামের নিগূঢ় তত্ত্বের প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ফুরফুরার পীর দাদা হুজুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরে তিনি বাইয়াত গ্রহণ করেন। দাদা হুজুর নিজে তাঁকে খেলাফতনামা প্রদান করেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নড়াইলের সংহিসতার ঘটনা, ‘অশান্তি ইসলাম অনুমোদন দেয় না’, জানালেন বিশিষ্টরা

 

আরও পড়ুন: তুরস্কের বরেণ্য আলেম মাহমুদ এফেন্দির ইন্তেকাল

সুফি সাহেব নামেই সমাজে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি সর্বক্ষণ ‘রাব্বি জিদনি ইলমা’ পড়তেন। অর্থাৎ হে আমার আল্লাহ আমার জ্ঞান ভান্ডার বৃদ্ধি করুন। দাদা পীরের পীর মানিক তলার হযরত ফতেহ আলি ওয়ায়েসী রহ. ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে সুফি সাহেব ভবিষ্যতে অনেক বড় আল্লাহর ওলী এবং তরিকার প্রগাঢ় পণ্ডিত হবেন। দাদা হুজুরের সঙ্গে থেকে জাহিরি ও বাতিনির শিক্ষা গ্রহণ করে জ্ঞানের সমুদ্রে ডুব দেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পীরের সাথে ভ্রমণ করেন। ১৩১০ বঙ্গাব্দে দাদা হুজুর হজ মোবারকে গেলে সুফি সাহেব হুজুর কে কায়েমে মাকাম করে যান। দাদা হুজুরের অবর্তমানে সুফি সাহেব তাঁর এজাজত প্রাপ্ত সমস্ত খলিফাদের তালিম দিতেন। বিখ্যাত সেই খলিফাদের মধ্যে পীর হযরত নেশার উদ্দিন আহমেদ, পীর আল্লামা রুহুল আমিন ও সুফি আধুল মোমেন সাহেব ছাড়াও অনেকেই তালিম নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আধ্যাত্মিক জগতের মহাসমুদ্র বলে সুফি সাহেব কে আ্যখ্যা দিয়েছিলেন সুফি আধুল মোমেন সাহেব রহ.। নিজেকেও সেই মহা সমুদ্রের এক বিন্দু পানি হিসাবে বর্ণনা করেছেন এক পুস্তকে।

 

আধ্যাত্বিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র সুফি সাহেব ছিলেন নম্র ভদ্র ও কোমল হৃদয়ের স্বভাবের ব্যক্তিত্ব। পরোপকারী ও সমাজসেবী এই মনীষী জনহিতকর কাজেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন। দাদা হুজুরের প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানে ওয়ায়েজীন ও জমিয়তে উলামায়ে আসাম ও বাংলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। হাইকোর্টের ফারসি থেকে ইংরেজি অনুবাদের কাজে যুক্ত হন। তারপর আলিপুর কোর্টের সাব রেজিস্ট্রার হিসাবেও কাজ করেছেন। পরবর্তীতে বদলি হয়ে নোয়াখালীর ফেনিতে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বদা নিজেকে দুনিয়ার মুসাফির ভেবে জীবন যাপন করতেন। আল্লাহ-ভোলা মানুষ গুলোকে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য বিরামহীন সংগ্রাম করে গেছেন। পাশে পেয়েছিলেন দাদা হুজুরের মত একজন যুগশ্রেষ্ঠ ওলি এবং তাঁর বিশাল সাজানো সাম্রাজ্য।

 

সেই মহাসাম্রাজ্যর সম্রাট হলেন দাদা হুজুর আর সুফি সাহেব হলেন সেই জগতের দক্ষ এক সেনা পতি। তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি ছিল তাঁর জীবনের মূল বৈশিষ্ট। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ে সুফি সাহেব আমল ইবাদত ও সমাজ সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। তারপর ১৯৩৬ সালে নামায আদায় অবস্থায় আল্লাহু আকবর বলে সিজদায় গেলে সুফি সাহেব আর সাড়া দেননি, ইন্না লিল্লাহি….।

 

প্রবল শীতেও তাঁর জানাজা নামাযে শরিক হয়েছিলেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। তিনি রেখে গেছেন সাত পুত্র ও ছয় কন্যা। হাওড়া রাজখোলা সিদ্দিকীয়া দরবার শরীফ, ফুরফুরা-সীতাপুর সুফিয়া দরবার শরীফ্‌ ও নদীয়ার শান্তিপুর ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তাঁর সন্তানেরা ইসলামের খিদমতে রয়েছেন। ২৬ মার্চ সুফি সাহেবের বাৎসরিক মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উপস্থিত থাকবেন ফুরফুরার পীর সাহেবগণ। জলসার বিশাল ময়দানে একটা মাদ্রাসা নির্মাণের কাজও চলছে।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দাদা হুজুরের বিশিষ্ট খলিফা ও বংশধর পীর তাজাম্মোল হোসেন সিদ্দিকী

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, শনিবার

নুরুল ইসলাম খান : ফুরফুরা শরীফের পীর যুগ সংস্কারক হযরত দাদা হুজুরের প্রবীণ ও বিশিষ্ট খলিফা হলেন পীর আল্লামা শাহ সুফি হযরত তাজাম্মোল হোসাইন সিদ্দিকী রহ.। ২৬ মার্চ শনিবার নদীয়ার শান্তিপুরে তাঁর ৮০তম বাৎসরিক ঈসালে সওয়াব মাহফিল। শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত ভাগিরথী নদীর কোলে ছোট গ্রাম শান্তিপুরে ১২৪৩ বঙ্গাব্দে তাঁর জম্ম। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন পিতা মাওলানা কামাল উদ্দিন হুজুর ইন্তেকাল করেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার মাত্র দেড় বছর বয়সে মমতাময়ী মাও দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। এতিম শিশু তাজাম্মোল বড় হয়ে ওঠেন বড় ভাই মাওলানা পায়মুদ্দিনের স্নেহে।

 

আরও পড়ুন: বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ আবদুল বারি-র ইন্তেকাল

দাদা হুজুরের বংশধর এবং সিদ্দিকী আকবর হযরত আবু বকর সিদ্দীকী রা.-এঁর উত্তরসূরী। নদীয়ার শান্তিপুরে সিদ্দিকী বংশের আগমন হয়েছিল হযরত পীর আল্লামা মুফতি আধুল গনি সিদ্দিকীর হাত ধরে। যিনি হাজী হযরত মোস্তাফা মাদানির আপন ভাই। জানা যায়, দীর্ঘ ২০ দিনের ধর্মীয় বাহাস বা তর্কে বিজয়ী হয়ে রাওতাড়া ফরিদতলায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর কমবেশি ৩৫০ বিঘা জমির সবটাই দখল হয়ে গেছে। তাজাম্মোল সিদ্দিকী হুগলির হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একদিকে দুনিয়ার এলেম হাসিল করেন অন্যদিকে দ্বীনের অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করে ইসলামের নিগূঢ় তত্ত্বের প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ফুরফুরার পীর দাদা হুজুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরে তিনি বাইয়াত গ্রহণ করেন। দাদা হুজুর নিজে তাঁকে খেলাফতনামা প্রদান করেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নড়াইলের সংহিসতার ঘটনা, ‘অশান্তি ইসলাম অনুমোদন দেয় না’, জানালেন বিশিষ্টরা

 

আরও পড়ুন: তুরস্কের বরেণ্য আলেম মাহমুদ এফেন্দির ইন্তেকাল

সুফি সাহেব নামেই সমাজে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি সর্বক্ষণ ‘রাব্বি জিদনি ইলমা’ পড়তেন। অর্থাৎ হে আমার আল্লাহ আমার জ্ঞান ভান্ডার বৃদ্ধি করুন। দাদা পীরের পীর মানিক তলার হযরত ফতেহ আলি ওয়ায়েসী রহ. ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে সুফি সাহেব ভবিষ্যতে অনেক বড় আল্লাহর ওলী এবং তরিকার প্রগাঢ় পণ্ডিত হবেন। দাদা হুজুরের সঙ্গে থেকে জাহিরি ও বাতিনির শিক্ষা গ্রহণ করে জ্ঞানের সমুদ্রে ডুব দেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পীরের সাথে ভ্রমণ করেন। ১৩১০ বঙ্গাব্দে দাদা হুজুর হজ মোবারকে গেলে সুফি সাহেব হুজুর কে কায়েমে মাকাম করে যান। দাদা হুজুরের অবর্তমানে সুফি সাহেব তাঁর এজাজত প্রাপ্ত সমস্ত খলিফাদের তালিম দিতেন। বিখ্যাত সেই খলিফাদের মধ্যে পীর হযরত নেশার উদ্দিন আহমেদ, পীর আল্লামা রুহুল আমিন ও সুফি আধুল মোমেন সাহেব ছাড়াও অনেকেই তালিম নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আধ্যাত্মিক জগতের মহাসমুদ্র বলে সুফি সাহেব কে আ্যখ্যা দিয়েছিলেন সুফি আধুল মোমেন সাহেব রহ.। নিজেকেও সেই মহা সমুদ্রের এক বিন্দু পানি হিসাবে বর্ণনা করেছেন এক পুস্তকে।

 

আধ্যাত্বিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র সুফি সাহেব ছিলেন নম্র ভদ্র ও কোমল হৃদয়ের স্বভাবের ব্যক্তিত্ব। পরোপকারী ও সমাজসেবী এই মনীষী জনহিতকর কাজেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন। দাদা হুজুরের প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানে ওয়ায়েজীন ও জমিয়তে উলামায়ে আসাম ও বাংলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। হাইকোর্টের ফারসি থেকে ইংরেজি অনুবাদের কাজে যুক্ত হন। তারপর আলিপুর কোর্টের সাব রেজিস্ট্রার হিসাবেও কাজ করেছেন। পরবর্তীতে বদলি হয়ে নোয়াখালীর ফেনিতে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বদা নিজেকে দুনিয়ার মুসাফির ভেবে জীবন যাপন করতেন। আল্লাহ-ভোলা মানুষ গুলোকে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য বিরামহীন সংগ্রাম করে গেছেন। পাশে পেয়েছিলেন দাদা হুজুরের মত একজন যুগশ্রেষ্ঠ ওলি এবং তাঁর বিশাল সাজানো সাম্রাজ্য।

 

সেই মহাসাম্রাজ্যর সম্রাট হলেন দাদা হুজুর আর সুফি সাহেব হলেন সেই জগতের দক্ষ এক সেনা পতি। তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি ছিল তাঁর জীবনের মূল বৈশিষ্ট। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ে সুফি সাহেব আমল ইবাদত ও সমাজ সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। তারপর ১৯৩৬ সালে নামায আদায় অবস্থায় আল্লাহু আকবর বলে সিজদায় গেলে সুফি সাহেব আর সাড়া দেননি, ইন্না লিল্লাহি….।

 

প্রবল শীতেও তাঁর জানাজা নামাযে শরিক হয়েছিলেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। তিনি রেখে গেছেন সাত পুত্র ও ছয় কন্যা। হাওড়া রাজখোলা সিদ্দিকীয়া দরবার শরীফ, ফুরফুরা-সীতাপুর সুফিয়া দরবার শরীফ্‌ ও নদীয়ার শান্তিপুর ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তাঁর সন্তানেরা ইসলামের খিদমতে রয়েছেন। ২৬ মার্চ সুফি সাহেবের বাৎসরিক মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উপস্থিত থাকবেন ফুরফুরার পীর সাহেবগণ। জলসার বিশাল ময়দানে একটা মাদ্রাসা নির্মাণের কাজও চলছে।