০৯ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোঁফ রেখে গোবলয়ে উচ্চবর্ণের রোষের শিকার হয়ে প্রাণ দিচ্ছে দলিতরা,

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, শনিবার
  • / 30

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ  পৌরুষের বহিঃপ্রকাশ গোঁফ এটা অনেকেই মনে করেন। এটি একটি  অতি সাধারণ বিষয়। কিন্তু ভারতে বর্ণভেদের রাজনীতি এবং কায়েমি  আধিপত্যবাদের জন্য নিম্নবর্ণ বা দলিতদের কাছে সেটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে মৃত্যুর নামান্তর। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের রজত, গুজরাতের  ভিরামগাম এবং গান্ধিনগরের  সুরেশ  বাঘেলা,  পীযূষ পারমার এবং  রাজস্থানের পালি থেকে জিতেন্দ্র পাল মেঘওয়াল সকলেই গোঁফ রাখার জন্য মূল্য চুকিয়েছেন।দলিতরা গোঁফ রেখে উচ্চবর্ণের সামনে ঘুরে বেড়াতে পারবেননা এটাই অলিখিত নিয়ম।

 

আরও পড়ুন: উচ্চ বর্ণদের হাতে খুন দলিত বালক, দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হল গাছে

এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন মেঘাওয়াল। মেঘাওয়ালের পরিবারের দাবি গোঁফ রাখাটাই তার জন্য সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল। উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরা এতবড় স্পর্ধা মেনে নিতে পারেননি। তাই জীবন দিয়ে মূল্য চোকাতে হয়েছিল এই দলিতকে।

আরও পড়ুন: দলিতরা ইসলাম গ্রহণ করলে পাবে না সংরক্ষণের সুবিধা: হাইকোর্ট

যদিও রাজস্থান পুলিশ জানিয়েছিল  মেঘাওয়ালকে খুন হতে হয়েছিল কারণ  মেঘাওয়াল ওই উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের স্পর্ধা দেখিয়েছিল। এমনকি ২০২০ সালে সে অভিযোগও দায়ের করে। এতটা স্পর্ধা একজন দলিতের হতে পারে সেটা ভালোভাবে নিতে পারেনি ওই উচ্চবর্ণের দল। তাই শেষপর্যন্ত গোঁফ রাখার মাসুল জীবন দিয়ে দিয়েছিল রাজস্থানের দলিত মেঘাওয়াল ।

আরও পড়ুন: যে দলিত মুসলিম বা খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করেছেন তারা তপশিলি জাতির সুবিধা পাবেন না, সুপ্রিম কোর্টকে বলল কেন্দ্রীয় সরকার

শুধু মেঘাওয়াল কেন? গোটা গোবলয় জুড়ে এমন অনেক দলিত ছড়িয়ে আছে। যাদের প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে বিদ্বেষের শিকার হতে হচ্ছে। অথচ এরাই ভোটের সময় নেতাদের ব্যালটবক্স ভর্তি করতে সবচেয়ে বড় ভরসা।নির্বাচনের সময় কাছে আসলে এদের জীবনে ওঠে প্রতিশ্রুতির ঝড়। কিন্তু তারপরে কেন তারা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমসাময়িক জীবন যাত্রার স্পর্ধা দেখায়? তার জন্য অবলীলায় এদের ওপর নেবে আসে মৃত্যু পরোয়ানা।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো তাদের  রিপোর্টে বলেছে যে তফসিলি জাতি (এসসি) এর বিরুদ্ধে সংঘটিত  অপরাধ যার মধ্যে দলিত একটি  বড় অংশ। ২০২০ সালে করোনা  মহামারী বছর হওয়া সত্ত্বেও ৯.৪% বেড়েছে। ২৮টি  রাজ্য এবং নয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১৭টি তে দলিতদের ওপর অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০২০ সালে  দলিতদের বিরুদ্ধে মোট   ৫০,২৯১টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল, ২০১৯   সালে ৪৫,৯৬১টি ছিল৷ ২০২০  সালে ৫০,২৯১টি   মামলার মধ্যে মাত্র ২১৬ টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে৷

 

ইউপিতে দলিতদের   বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক নৃশংসতার  (১২,৭১৪) রিপোর্ট জমা পড়েছে,  তারপরে  বিহার (৭৩৬৮), রাজস্থান (৭০১৭)এবং  মধ্যপ্রদেশ (৬,৮৯৯)।উত্তর প্রদেশের রজতকে আক্রমণ করা হয়েছিল কারণ সে গোঁফ রেখেছিল। ২০২১  সালের জুলাই মাসে ঠাকুর  সম্প্রদায় জোর করে দলিতদের গোঁফ কামাতে বাধ্য করেছিল।, গুজরাতে  গোঁফ রাখার জন্য দলিত পুরুষদের মারধর বা ছুরিকাঘাতের কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে সুরেশ  বাঘেলা এবং পীযূষ পারমার মাত্র দুটি উদাহরণ সামনে এসেছে। এরকম অজস্র ঘটনা ছড়িয়ে আছে যার কোনদিনই সামনে আসেনি।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গোঁফ রেখে গোবলয়ে উচ্চবর্ণের রোষের শিকার হয়ে প্রাণ দিচ্ছে দলিতরা,

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ  পৌরুষের বহিঃপ্রকাশ গোঁফ এটা অনেকেই মনে করেন। এটি একটি  অতি সাধারণ বিষয়। কিন্তু ভারতে বর্ণভেদের রাজনীতি এবং কায়েমি  আধিপত্যবাদের জন্য নিম্নবর্ণ বা দলিতদের কাছে সেটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে মৃত্যুর নামান্তর। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের রজত, গুজরাতের  ভিরামগাম এবং গান্ধিনগরের  সুরেশ  বাঘেলা,  পীযূষ পারমার এবং  রাজস্থানের পালি থেকে জিতেন্দ্র পাল মেঘওয়াল সকলেই গোঁফ রাখার জন্য মূল্য চুকিয়েছেন।দলিতরা গোঁফ রেখে উচ্চবর্ণের সামনে ঘুরে বেড়াতে পারবেননা এটাই অলিখিত নিয়ম।

 

আরও পড়ুন: উচ্চ বর্ণদের হাতে খুন দলিত বালক, দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হল গাছে

এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন মেঘাওয়াল। মেঘাওয়ালের পরিবারের দাবি গোঁফ রাখাটাই তার জন্য সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল। উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরা এতবড় স্পর্ধা মেনে নিতে পারেননি। তাই জীবন দিয়ে মূল্য চোকাতে হয়েছিল এই দলিতকে।

আরও পড়ুন: দলিতরা ইসলাম গ্রহণ করলে পাবে না সংরক্ষণের সুবিধা: হাইকোর্ট

যদিও রাজস্থান পুলিশ জানিয়েছিল  মেঘাওয়ালকে খুন হতে হয়েছিল কারণ  মেঘাওয়াল ওই উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের স্পর্ধা দেখিয়েছিল। এমনকি ২০২০ সালে সে অভিযোগও দায়ের করে। এতটা স্পর্ধা একজন দলিতের হতে পারে সেটা ভালোভাবে নিতে পারেনি ওই উচ্চবর্ণের দল। তাই শেষপর্যন্ত গোঁফ রাখার মাসুল জীবন দিয়ে দিয়েছিল রাজস্থানের দলিত মেঘাওয়াল ।

আরও পড়ুন: যে দলিত মুসলিম বা খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করেছেন তারা তপশিলি জাতির সুবিধা পাবেন না, সুপ্রিম কোর্টকে বলল কেন্দ্রীয় সরকার

শুধু মেঘাওয়াল কেন? গোটা গোবলয় জুড়ে এমন অনেক দলিত ছড়িয়ে আছে। যাদের প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে বিদ্বেষের শিকার হতে হচ্ছে। অথচ এরাই ভোটের সময় নেতাদের ব্যালটবক্স ভর্তি করতে সবচেয়ে বড় ভরসা।নির্বাচনের সময় কাছে আসলে এদের জীবনে ওঠে প্রতিশ্রুতির ঝড়। কিন্তু তারপরে কেন তারা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমসাময়িক জীবন যাত্রার স্পর্ধা দেখায়? তার জন্য অবলীলায় এদের ওপর নেবে আসে মৃত্যু পরোয়ানা।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো তাদের  রিপোর্টে বলেছে যে তফসিলি জাতি (এসসি) এর বিরুদ্ধে সংঘটিত  অপরাধ যার মধ্যে দলিত একটি  বড় অংশ। ২০২০ সালে করোনা  মহামারী বছর হওয়া সত্ত্বেও ৯.৪% বেড়েছে। ২৮টি  রাজ্য এবং নয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১৭টি তে দলিতদের ওপর অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০২০ সালে  দলিতদের বিরুদ্ধে মোট   ৫০,২৯১টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল, ২০১৯   সালে ৪৫,৯৬১টি ছিল৷ ২০২০  সালে ৫০,২৯১টি   মামলার মধ্যে মাত্র ২১৬ টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে৷

 

ইউপিতে দলিতদের   বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক নৃশংসতার  (১২,৭১৪) রিপোর্ট জমা পড়েছে,  তারপরে  বিহার (৭৩৬৮), রাজস্থান (৭০১৭)এবং  মধ্যপ্রদেশ (৬,৮৯৯)।উত্তর প্রদেশের রজতকে আক্রমণ করা হয়েছিল কারণ সে গোঁফ রেখেছিল। ২০২১  সালের জুলাই মাসে ঠাকুর  সম্প্রদায় জোর করে দলিতদের গোঁফ কামাতে বাধ্য করেছিল।, গুজরাতে  গোঁফ রাখার জন্য দলিত পুরুষদের মারধর বা ছুরিকাঘাতের কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে সুরেশ  বাঘেলা এবং পীযূষ পারমার মাত্র দুটি উদাহরণ সামনে এসেছে। এরকম অজস্র ঘটনা ছড়িয়ে আছে যার কোনদিনই সামনে আসেনি।