০৬ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিজেপির ‘অগণতান্ত্রিক নীতিগুলির’ বিরুদ্ধে বিরোধীদের বৈঠক চেয়ে চিঠি মমতার

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, বুধবার
  • / 70

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের সব বিরোধী নেতাকে চিঠি দিয়ে বৈঠকে বসার আহ্বান জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মমতা তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, বিরোধীদের লাগাতার নিশানা করছে মোদি সরকার। এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে। এই এজেন্সিগুলিকে বিরোধীদের দিকে লেলিয়ে দিয়ে বিরোধী স্বর স্তব্ধ করে দিতে চাইছে মোদি সরকার। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের দায়বদ্ধতা স্থির করা। বিরোধী দল হিসেবে এটি আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

 

আরও পড়ুন: গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আহ্বান চিনের

 

আরও পড়ুন: Interim PM Sushila Karki-কে ফোন প্রধানমন্ত্রী মোদির

তাই আমি প্রত্যেক বিরোধী নেতাকে বলব নিজের সুবিধা মতো সময় এবং স্থান নির্বাচন করে বৈঠকে বসুন। কারণ সমস্ত প্রগতিশীল শক্তির কাছে এটি সময়ের দাবি। এই দাবি মেনে আমাদের এক সঙ্গে আসতে হবে যাতে দমনমূলক শক্তির আমরা মোকাবিলা করতে পারি। মমতা লিখেছেন, ‘শাসক দল বিজেপি যেভাবে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আক্রমণ করছে, তা দেখে আমি আশঙ্কিত। এই কারণে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা উচিত। ইডি, সিবিআই, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন এবং আয়কর বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিহিংসামূলক রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধীদের নিশানা, হেনস্থা এবং কোণঠাসা করার জন্য।

আরও পড়ুন: China’s foreign minister: সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় ভারতে আসছেন চিনের বিদেশ মন্ত্রী

 

 

তাঁর চিঠিতে মমতা লিখেছেন, সংসদের সম্প্রতি শেষ হওয়া শীতকালীন অধিবেশনে বিজেপি দিল্লি স্পেশাল পুলিশ (সংশোধন) বিল ২০২১ এবং সিভিসি (সংশোধন) বিল ২০২১-এর উপর শুধু সংখ্যার জোরে ‘বুলডোজার’ চালিয়ে দিয়েছে। এর ফলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট পর্যন্ত করেছিলেন বিরোধী সাংসদরা। এই আইনগুলির ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ইডি এবং সিবিআইয়ের ডিরেক্টরের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা চলে আসবে। এই বিলগুলি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের খোলাখুলি উলঙ্ঘন। আমাদের কর্তব্য বিজেপির কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যবহার বন্ধ করা যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল বিরোধীদের দমন করা।

 

 

যখনই দুয়ারে নির্বাচন কড়া নাড়ে, তখনই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা লিখেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ বিজেপি প্রমাণ করতে চায় তাদের শাসিত রাজ্যগুলিতে সুশাসন রয়েছে অথচ বাস্তব চিত্র ঠিক এর উল্টো। যেভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা আদালতের নির্দেশের অবহেলা করছেন তা আমার কাছে বেদনাদায়ক। মমতা বিচার-ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থাজ্ঞাপন করে লিখেছেন, বহু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা গণতন্ত্রের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক সংকেত। বহুবার দেখা গেছে বিজেপি বিচার-ব্যবস্থার একাংশকে প্রভাবিত করে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করতে উদ্যত হয়েছে। বিজেপির এই সব কুকর্মের জন্য প্রয়োজন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের দায়বদ্ধতা স্থির করা এবং জবাবদিহি তলব করা। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে যেভাবে নিস্তব্ধ করতে উদ্যত বিজেপি সরকার, আমাদের উচিত তাদের সেই উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দেওয়া।

 

 

চিঠি লেখার আগে রবিবার শিলিগুড়িতে এক জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, সরকার ৮০০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পরেও সমস্ত রাজনৈতিক নেতা চুপ করে বসে আছেন। কেউ একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেননি। মমতা সেদিন পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য বিরোধী নেতাদের চিঠি লিখে মমতা বুঝিয়ে দিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে আগামী দিনের লড়াইয়ে তিনি অন্যান্যদের থেকে এককদম এগিয়ে রইলেন।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিজেপির ‘অগণতান্ত্রিক নীতিগুলির’ বিরুদ্ধে বিরোধীদের বৈঠক চেয়ে চিঠি মমতার

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, বুধবার

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের সব বিরোধী নেতাকে চিঠি দিয়ে বৈঠকে বসার আহ্বান জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মমতা তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, বিরোধীদের লাগাতার নিশানা করছে মোদি সরকার। এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে। এই এজেন্সিগুলিকে বিরোধীদের দিকে লেলিয়ে দিয়ে বিরোধী স্বর স্তব্ধ করে দিতে চাইছে মোদি সরকার। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের দায়বদ্ধতা স্থির করা। বিরোধী দল হিসেবে এটি আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

 

আরও পড়ুন: গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আহ্বান চিনের

 

আরও পড়ুন: Interim PM Sushila Karki-কে ফোন প্রধানমন্ত্রী মোদির

তাই আমি প্রত্যেক বিরোধী নেতাকে বলব নিজের সুবিধা মতো সময় এবং স্থান নির্বাচন করে বৈঠকে বসুন। কারণ সমস্ত প্রগতিশীল শক্তির কাছে এটি সময়ের দাবি। এই দাবি মেনে আমাদের এক সঙ্গে আসতে হবে যাতে দমনমূলক শক্তির আমরা মোকাবিলা করতে পারি। মমতা লিখেছেন, ‘শাসক দল বিজেপি যেভাবে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আক্রমণ করছে, তা দেখে আমি আশঙ্কিত। এই কারণে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা উচিত। ইডি, সিবিআই, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন এবং আয়কর বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিহিংসামূলক রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধীদের নিশানা, হেনস্থা এবং কোণঠাসা করার জন্য।

আরও পড়ুন: China’s foreign minister: সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় ভারতে আসছেন চিনের বিদেশ মন্ত্রী

 

 

তাঁর চিঠিতে মমতা লিখেছেন, সংসদের সম্প্রতি শেষ হওয়া শীতকালীন অধিবেশনে বিজেপি দিল্লি স্পেশাল পুলিশ (সংশোধন) বিল ২০২১ এবং সিভিসি (সংশোধন) বিল ২০২১-এর উপর শুধু সংখ্যার জোরে ‘বুলডোজার’ চালিয়ে দিয়েছে। এর ফলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট পর্যন্ত করেছিলেন বিরোধী সাংসদরা। এই আইনগুলির ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ইডি এবং সিবিআইয়ের ডিরেক্টরের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা চলে আসবে। এই বিলগুলি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের খোলাখুলি উলঙ্ঘন। আমাদের কর্তব্য বিজেপির কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যবহার বন্ধ করা যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল বিরোধীদের দমন করা।

 

 

যখনই দুয়ারে নির্বাচন কড়া নাড়ে, তখনই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা লিখেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ বিজেপি প্রমাণ করতে চায় তাদের শাসিত রাজ্যগুলিতে সুশাসন রয়েছে অথচ বাস্তব চিত্র ঠিক এর উল্টো। যেভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা আদালতের নির্দেশের অবহেলা করছেন তা আমার কাছে বেদনাদায়ক। মমতা বিচার-ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থাজ্ঞাপন করে লিখেছেন, বহু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা গণতন্ত্রের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক সংকেত। বহুবার দেখা গেছে বিজেপি বিচার-ব্যবস্থার একাংশকে প্রভাবিত করে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করতে উদ্যত হয়েছে। বিজেপির এই সব কুকর্মের জন্য প্রয়োজন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের দায়বদ্ধতা স্থির করা এবং জবাবদিহি তলব করা। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে যেভাবে নিস্তব্ধ করতে উদ্যত বিজেপি সরকার, আমাদের উচিত তাদের সেই উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দেওয়া।

 

 

চিঠি লেখার আগে রবিবার শিলিগুড়িতে এক জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, সরকার ৮০০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পরেও সমস্ত রাজনৈতিক নেতা চুপ করে বসে আছেন। কেউ একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেননি। মমতা সেদিন পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য বিরোধী নেতাদের চিঠি লিখে মমতা বুঝিয়ে দিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে আগামী দিনের লড়াইয়ে তিনি অন্যান্যদের থেকে এককদম এগিয়ে রইলেন।