০৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মার্কিন দাদাগিরি হটিয়ে ২০৪৯ সালের মধ্যে চিন হবে বিশ্বে সামরিক শক্তিতে সুপারপাওয়ার, বলছে সমীক্ষা

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, বুধবার
  • / 56

Representative image

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ চিন ওখানে একটা দৈত্য ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগানোর কোনো দরকার নেই। কারণ সেটি ঘুম থেকে জেগে উঠলে পৃথিবী কাঁপতে থাকবে।আজ থেকে দুশো বছরেরও বেশি সময় আগে চিন  সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন পৃথিবীর হাজার বছরের ইতিহাসে অন্যতম বুদ্ধিমান সামরিক কমান্ডারদের একজন- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।

আজ ২০২২ এ দাঁড়িয়ে রুশ- ইউক্রেন যুদ্ধের  প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বারবার সামনে আসছে বিশ্বের দুই অমিত শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের পারমানববিক  শক্তির আস্ফালনের দিক।

আরও পড়ুন: চিনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক ট্রাম্পের

কেন এই প্রসঙ্গ  উঠছে, একটু দেখে নেওয়া যাক খুব সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন চলতি মাসের প্রথম দিকে চিনের সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা  ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর একটি সমীক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন  প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়ানোর ব্যাপারে চি নের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আহ্বান চিনের

চিন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  প্রধান সামরিক প্রতিদ্বন্দী সেই কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।  চিনের লাল ফৌজ বা পিপলস লিবারেশন আর্মিকে জিনপিং সরকার চাইছে বিশ্বের সেরা  সেনাবাহিনীতে পরিনত করতে। আগামী ২০৪৯ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে।

আরও পড়ুন: শুল্কযুদ্ধে টানাপোড়েনের মধ্যেই শি জিনপিঙের সঙ্গে ফোনে কথা ট্রাম্পের, যাচ্ছেন চিন 

 

মার্কিন সেনা কর্তারা  মনে করেন, চিন  তার  এমনভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে, যাতে বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার সঙ্গে  যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারে।  এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন  প্রভাব ও শক্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখছে তারা। ২০৪৯ সালকেই এই ক্ষেত্রে তারা পাখির চোখ করছে।

 

চিনের লক্ষ্য  সামরিক শক্তি অর্র্জনের মাধ্যমেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন মিত্রশক্তি  ও নিরাপত্তা অংশীদারদেরকে হটিয়ে দিতে।

পেন্টাগণের দাবি স্যাটলাইটে দেখা যাচ্ছে , চিন ভূগর্ভে অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ এবং উৎক্ষেপণের তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দ্রুত লয়ে।

 

চিন  বিদেশমন্ত্রক স্বাভাবিক ভাবেই পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেছে, এই প্রতিবেদন বাস্তব অবস্থার সঙ্গেও  মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বাস্তবতাকে এড়িয়ে গিয়ে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে।

 

ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইন্টিস্টস-এর পরিচালক হানস ক্রিসটেনসেন চিনের  পরমাণু অস্ত্রের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগকে অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আর কখনও চিনের ধরনের উদ্যোগ দেখিনি। চিন তাদের আগের সব  ক্ষমতাকে  ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ২০০৪ সালে চিন  জানিয়েছিল, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ৫টি দেশের মধ্যে তাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাই সবচেয়ে কম। অথচ নিজেদের সেই কথা আজ চিন নিজেই খেলাপ করছে।

গত দেড় দশকে চিন নিজেদের কার্যত সুপার  পাওয়ারে পরিনত করেছে।

সামরিক খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ। প্রতি বছর বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় করা হয় প্রায় ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ব্যয়ের ৪০ শতাংশই করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে সামরিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ছিল ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

চিনের  সঙ্গে  আমেরিকার  সম্পর্ক দিন দিনই তলানিতে ঠেকছে। ওয়াকিবহাল মহলের কথায় দুই দেশের সম্পর্কটা স্নায়ু যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছে। তবে বিশ্বে মার্কিন  প্রভাব ও শক্তি যেখানে আস্তে আস্তে কমছে, সেখানে চিন তার সামরিক শক্তি দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে। (৪৩২)

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মার্কিন দাদাগিরি হটিয়ে ২০৪৯ সালের মধ্যে চিন হবে বিশ্বে সামরিক শক্তিতে সুপারপাওয়ার, বলছে সমীক্ষা

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ চিন ওখানে একটা দৈত্য ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগানোর কোনো দরকার নেই। কারণ সেটি ঘুম থেকে জেগে উঠলে পৃথিবী কাঁপতে থাকবে।আজ থেকে দুশো বছরেরও বেশি সময় আগে চিন  সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন পৃথিবীর হাজার বছরের ইতিহাসে অন্যতম বুদ্ধিমান সামরিক কমান্ডারদের একজন- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।

আজ ২০২২ এ দাঁড়িয়ে রুশ- ইউক্রেন যুদ্ধের  প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বারবার সামনে আসছে বিশ্বের দুই অমিত শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের পারমানববিক  শক্তির আস্ফালনের দিক।

আরও পড়ুন: চিনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক ট্রাম্পের

কেন এই প্রসঙ্গ  উঠছে, একটু দেখে নেওয়া যাক খুব সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন চলতি মাসের প্রথম দিকে চিনের সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা  ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর একটি সমীক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন  প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়ানোর ব্যাপারে চি নের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আহ্বান চিনের

চিন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  প্রধান সামরিক প্রতিদ্বন্দী সেই কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।  চিনের লাল ফৌজ বা পিপলস লিবারেশন আর্মিকে জিনপিং সরকার চাইছে বিশ্বের সেরা  সেনাবাহিনীতে পরিনত করতে। আগামী ২০৪৯ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে।

আরও পড়ুন: শুল্কযুদ্ধে টানাপোড়েনের মধ্যেই শি জিনপিঙের সঙ্গে ফোনে কথা ট্রাম্পের, যাচ্ছেন চিন 

 

মার্কিন সেনা কর্তারা  মনে করেন, চিন  তার  এমনভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে, যাতে বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার সঙ্গে  যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারে।  এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন  প্রভাব ও শক্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখছে তারা। ২০৪৯ সালকেই এই ক্ষেত্রে তারা পাখির চোখ করছে।

 

চিনের লক্ষ্য  সামরিক শক্তি অর্র্জনের মাধ্যমেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন মিত্রশক্তি  ও নিরাপত্তা অংশীদারদেরকে হটিয়ে দিতে।

পেন্টাগণের দাবি স্যাটলাইটে দেখা যাচ্ছে , চিন ভূগর্ভে অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ এবং উৎক্ষেপণের তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দ্রুত লয়ে।

 

চিন  বিদেশমন্ত্রক স্বাভাবিক ভাবেই পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেছে, এই প্রতিবেদন বাস্তব অবস্থার সঙ্গেও  মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বাস্তবতাকে এড়িয়ে গিয়ে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে।

 

ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইন্টিস্টস-এর পরিচালক হানস ক্রিসটেনসেন চিনের  পরমাণু অস্ত্রের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগকে অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আর কখনও চিনের ধরনের উদ্যোগ দেখিনি। চিন তাদের আগের সব  ক্ষমতাকে  ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ২০০৪ সালে চিন  জানিয়েছিল, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ৫টি দেশের মধ্যে তাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাই সবচেয়ে কম। অথচ নিজেদের সেই কথা আজ চিন নিজেই খেলাপ করছে।

গত দেড় দশকে চিন নিজেদের কার্যত সুপার  পাওয়ারে পরিনত করেছে।

সামরিক খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ। প্রতি বছর বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় করা হয় প্রায় ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ব্যয়ের ৪০ শতাংশই করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে সামরিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ছিল ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

চিনের  সঙ্গে  আমেরিকার  সম্পর্ক দিন দিনই তলানিতে ঠেকছে। ওয়াকিবহাল মহলের কথায় দুই দেশের সম্পর্কটা স্নায়ু যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছে। তবে বিশ্বে মার্কিন  প্রভাব ও শক্তি যেখানে আস্তে আস্তে কমছে, সেখানে চিন তার সামরিক শক্তি দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে। (৪৩২)