২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালবাজারে শোকের আবহেও আলোচিত নাম মুহাম্মদ মানিক

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৮ অক্টোবর ২০২২, শনিবার
  • / 16

ভালোবাসায় ভাসছেন মানিক।

পুবের কলম প্রতিবেদন: শুক্রবার মুহাম্মদ মানিককে (মাল নদীর হড়পা বানে উদ্ধারে লিপ্ত সাহসী সেই যুবক) তাঁর গ্রাম তেশিমুলায় এসে সংবর্ধনা দিল জলপাইগুড়ির লায়েন্স ক্লাব। এছাড়া মানিককে অভিনন্দন জানাতে এসেছে আরও অনেক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি। এখন সকলেই জানেন, মালবাজারের নিকট মাল নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের সময় হঠাৎই হড়পা বানে ঘটে গেছে এক বড় দুর্ঘটনা। প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। আহত অনেকেই। আর মানসিক আতঙ্ক অনেকেরই মন-মস্তিষ্কে ছেয়ে আছে।

কিন্তু এই বিপর্যয়ের মধ্যেও দেখা গেছে মানবিকতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। ওই প্রবল বন্যার স্রোতের মধ্যেও ভেসে যাওয়া মানুষদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ২৮ বছরের যুবক মুহাম্মদ মানিক।

আরও পড়ুন: ফের প্রশংসিত, যোগ্য প্রার্থী হয়েও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর ফেরালেন মালের সেই সাহসী যুবক মহম্মদ মানিক

পুবের কলম-এর সাংবাদিক ইমামা খাতুনকে বৃহস্পতিবার দেওয়া সর্বপ্রথম টেলিফোন সাক্ষাৎকার ও পরে শুক্রবার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরানের সঙ্গে টেলিফোন কথপোকথনে মানিক বলেন, আমি দেখতে পাই কয়েকটি শিশুও ভেসে যাচ্ছে। কিছু না করলে এদের বাঁচার সম্ভাবনা নেই। আমি আমার মোবাইল ফোনটি সঙ্গী মহসিনের হাতে দিয়ে উঁচু জায়গা থেকে সরাসরি পানিতে ঝাঁপ দিই। মনে আছে, ঝাঁপ দেওয়ার আগে চিৎকার করে ঈশ্বরকে ডাকি। গলায় যত জোর আছে তা দিয়ে আওয়াজ তুলে বলি ‘আল্লাহ হু আকবর’। এক একজনকে উদ্ধার করছি আর পবিত্র কুরআন-এর সূরা ও দোয়া পড়ে চলেছি। আমার একমাত্র লক্ষ্য তখন কি করে আরও কয়েকজনকে বাঁচাতে পারি। পানিতে নেমে বুঝতে পারলাম শুধু পানি নয়, তীব্র গতিতে ভেসে আসছে অনেক বড় বড় পাথর ও বোল্ডার। দু-একটি গায়ে লাগলেও আমি পরোয়া করিনি। আরও বহু লোককে বাঁচাতে পারিনি, সেটা আমার দুঃখ। যাদের উদ্ধার করেছি তার মধ্যে রয়েছে দু’টি শিশু এবং একজন তরুণী। যখন পানির তোড় থেকে তরুণীটিকে নিয়ে আসছিলাম তখন মেয়েটির পরনে কোনও কাপড় ছিল না বললেই চলে। কয়জনকে উদ্ধার করতে পেরেছি, তা আমি গুনিনি। দেখছিলাম বহু লোক পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। যাকে সামনে পেয়েছি হাত ধরে পাড়ে আনার চেষ্টা করেছি।’ মানিক আরও জানান, তাঁর ডান পায়ে চোট লেগেছে।

আরও পড়ুন: চা শ্রমিকরা প্রাপ্র্য না পেলে এবার বিজেপি  সাংসদ- বিধায়কদের বাড়ি ঘেরাও হবে, মালবাজারে  বললেন  অভিষেক 

মুহাম্মদ মানিক হলেন মালবাজারের নিকটবর্তী তেশিমুলার বাসিন্দা। তেশিমুলাতে তাঁর একটি গ্রিল তৈরির কারখানা রয়েছে। বন্ধু মহসিনকে নিয়ে মানিক প্রতিমা বিসর্জন দেখতে এসেছিলেন। আর তাতেই যা দেখলেন তা মানিকের সারাজীবন মনে থাকবে।

এখনও গ্রামবাংলা ও ছোট শহরগঞ্জে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়নি। মানিক বললেন, তাঁর একবারও মনে হয়নি এই বিপন্ন মানুষরা বলতে গেলে সবাই হিন্দু। তাঁর মনে হয়েছিল, এরা তো মানুষ। যদি একজনকেও বাঁচাতে পারি আল্লাহ খুশি হবেন। আর যারা মানিককে অভিনন্দন জানাচ্ছে, ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই হচ্ছেন হিন্দু। মানিক যেন কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতার পংক্তিকেই সত্য করে তুলেছে ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম,  ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!’

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মালবাজারে শোকের আবহেও আলোচিত নাম মুহাম্মদ মানিক

আপডেট : ৮ অক্টোবর ২০২২, শনিবার

পুবের কলম প্রতিবেদন: শুক্রবার মুহাম্মদ মানিককে (মাল নদীর হড়পা বানে উদ্ধারে লিপ্ত সাহসী সেই যুবক) তাঁর গ্রাম তেশিমুলায় এসে সংবর্ধনা দিল জলপাইগুড়ির লায়েন্স ক্লাব। এছাড়া মানিককে অভিনন্দন জানাতে এসেছে আরও অনেক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি। এখন সকলেই জানেন, মালবাজারের নিকট মাল নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের সময় হঠাৎই হড়পা বানে ঘটে গেছে এক বড় দুর্ঘটনা। প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। আহত অনেকেই। আর মানসিক আতঙ্ক অনেকেরই মন-মস্তিষ্কে ছেয়ে আছে।

কিন্তু এই বিপর্যয়ের মধ্যেও দেখা গেছে মানবিকতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। ওই প্রবল বন্যার স্রোতের মধ্যেও ভেসে যাওয়া মানুষদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ২৮ বছরের যুবক মুহাম্মদ মানিক।

আরও পড়ুন: ফের প্রশংসিত, যোগ্য প্রার্থী হয়েও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর ফেরালেন মালের সেই সাহসী যুবক মহম্মদ মানিক

পুবের কলম-এর সাংবাদিক ইমামা খাতুনকে বৃহস্পতিবার দেওয়া সর্বপ্রথম টেলিফোন সাক্ষাৎকার ও পরে শুক্রবার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরানের সঙ্গে টেলিফোন কথপোকথনে মানিক বলেন, আমি দেখতে পাই কয়েকটি শিশুও ভেসে যাচ্ছে। কিছু না করলে এদের বাঁচার সম্ভাবনা নেই। আমি আমার মোবাইল ফোনটি সঙ্গী মহসিনের হাতে দিয়ে উঁচু জায়গা থেকে সরাসরি পানিতে ঝাঁপ দিই। মনে আছে, ঝাঁপ দেওয়ার আগে চিৎকার করে ঈশ্বরকে ডাকি। গলায় যত জোর আছে তা দিয়ে আওয়াজ তুলে বলি ‘আল্লাহ হু আকবর’। এক একজনকে উদ্ধার করছি আর পবিত্র কুরআন-এর সূরা ও দোয়া পড়ে চলেছি। আমার একমাত্র লক্ষ্য তখন কি করে আরও কয়েকজনকে বাঁচাতে পারি। পানিতে নেমে বুঝতে পারলাম শুধু পানি নয়, তীব্র গতিতে ভেসে আসছে অনেক বড় বড় পাথর ও বোল্ডার। দু-একটি গায়ে লাগলেও আমি পরোয়া করিনি। আরও বহু লোককে বাঁচাতে পারিনি, সেটা আমার দুঃখ। যাদের উদ্ধার করেছি তার মধ্যে রয়েছে দু’টি শিশু এবং একজন তরুণী। যখন পানির তোড় থেকে তরুণীটিকে নিয়ে আসছিলাম তখন মেয়েটির পরনে কোনও কাপড় ছিল না বললেই চলে। কয়জনকে উদ্ধার করতে পেরেছি, তা আমি গুনিনি। দেখছিলাম বহু লোক পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। যাকে সামনে পেয়েছি হাত ধরে পাড়ে আনার চেষ্টা করেছি।’ মানিক আরও জানান, তাঁর ডান পায়ে চোট লেগেছে।

আরও পড়ুন: চা শ্রমিকরা প্রাপ্র্য না পেলে এবার বিজেপি  সাংসদ- বিধায়কদের বাড়ি ঘেরাও হবে, মালবাজারে  বললেন  অভিষেক 

মুহাম্মদ মানিক হলেন মালবাজারের নিকটবর্তী তেশিমুলার বাসিন্দা। তেশিমুলাতে তাঁর একটি গ্রিল তৈরির কারখানা রয়েছে। বন্ধু মহসিনকে নিয়ে মানিক প্রতিমা বিসর্জন দেখতে এসেছিলেন। আর তাতেই যা দেখলেন তা মানিকের সারাজীবন মনে থাকবে।

এখনও গ্রামবাংলা ও ছোট শহরগঞ্জে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়নি। মানিক বললেন, তাঁর একবারও মনে হয়নি এই বিপন্ন মানুষরা বলতে গেলে সবাই হিন্দু। তাঁর মনে হয়েছিল, এরা তো মানুষ। যদি একজনকেও বাঁচাতে পারি আল্লাহ খুশি হবেন। আর যারা মানিককে অভিনন্দন জানাচ্ছে, ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই হচ্ছেন হিন্দু। মানিক যেন কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতার পংক্তিকেই সত্য করে তুলেছে ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম,  ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!’