০৩ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুকথার স্রোত

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার
  • / 87

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ গুজরাতে নির্বাচনী প্রচারে এসে বিজেপির প্রধান ভোট প্রচারক ও দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছু কথা বলেছেন। তা হল, সম্প্রতি কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদিজিকে ‘১০০ মাথাযুক্ত রাবণ’ বলে অভিহিত করেছেন। মোদিজি বলেন, রামভক্তদের দেশে কাউকে এভাবে ‘রাবণ’ বলা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘‘কে মোদিকে কত অশোভনভাবে আক্রমণ করতে পারে, কংগ্রেস দলে তার প্রতিযোগিতা চলছে। কয়েকদিন আগে একজন কংগ্রেস নেতা বলেছেন, ‘মোদির মৃত্যু হবে কুকুরের মতো’। আর একজন বলেছেন, ‘মোদি মরবে হিটলারের মতো’। কেউ আমাকে রাক্ষস বলছে, কেউ বলছে বারণ। আর একজন বলেছে, ‘আরশোলা’।’’

দিনকয়েক আগে মল্লিকার্জুন খাড়গে আহমদাবাদে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মোদিজি দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাজ করার সময় পাচ্ছেন না। কখনও কর্পোরেশন, কখনও এমএলএ বা এমপি ইলেকশনে তিনি শুধু নিজের কথা বলে যাচ্ছেন। মানুষ যেন শুধু তাঁকে দেখে ভোট দেয়। তিনি কত রূপে আবির্ভূত হবেন? তাঁর কি রাবণের মতো ১০০ মাথা?’ এর জবাব দিতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘আমি খাড়গেজিকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি সেইসব কথাই বলছেন, যা তাঁকে বলতে বলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ওষুধের দোকানের আলমারিতে গোসাপ, উদ্ধার করলেন বন কর্মীরা

 

স্বীকার করতেই হবে, মোদিজি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ এবং কথিত ধর্মগুরুরা যে ধরনের অশালীন, অশ্রাব্য ও ঘৃণা ছড়ানো কথা বলে চলেছেন, তাতে দেশের আবহাওয়া কলুষিত হচ্ছে। এ কাজে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই দায়ী। তার উপর ধর্মগুরুরা গণহত্যার আহ্বান জানিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মোদিজি খাড়গের কথায় মুখ খুললেও এইসব অশালীন ও ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো ভাষণের বিরুদ্ধে কিন্তু মুখ খোলেননি। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এ নিয়ে সকলের কাছে সংযত হওয়ার বার্তা রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি চুপ থেকেছেন। তবে তাঁর উল্লিখিত বক্তব্যে বোঝা যায়, তিনি মোটেই ‘মৌনিবাবা’ নন। কিন্তু ভারতে গত ৮-১০ বছরে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক আক্রমণের অজুহাতে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও মন্তব্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীলরা মুখ খুললে হয়তো আবহাওয়া এতটা দূষিত হত না।

আমাদের দেশে আগে রাজনীতি হয়েছে, নির্বাচন হয়েছে, পৃথিবীর অন্য দেশেও নির্বাচন হয়। কিন্তু কেউই এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেনি। কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। গুজরাতে ২০০২ সালে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি ধ্বংস, জাতি সাফাই অভিযান হয়েছিল, গর্ব করে বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা বলেছেন, ‘ওদের উচিত শিক্ষা দিয়েছি’। ‘ওরা’ বলতে সংখ্যালঘুরা। তাঁরা স্বীকার করে নিচ্ছেন, পুলিশ-প্রশাসন ও দলের ক্যাডার ও সমর্থকরা ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য গণহত্যা চালিয়েছে। এরপর আর কী বলার থাকে!

দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রভৃতি যে ধীরে ধীরে তার অর্থই হারিয়ে ফেলছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, নির্বাচন ও ভোট-রাজনীতির ঊর্ধ্বেও রয়েছে দেশ এবং নাগরিকদের অধিকার ও সম্মান। কিন্তু তা যে পালন করা হচ্ছে না, তাতে অনেকেরই ভূমিকা রয়েছে। এই ট্রাডিশনে কিন্তু মোদিজি নিজেও রয়েছেন।

Tag :

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কুকথার স্রোত

আপডেট : ২ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ গুজরাতে নির্বাচনী প্রচারে এসে বিজেপির প্রধান ভোট প্রচারক ও দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছু কথা বলেছেন। তা হল, সম্প্রতি কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদিজিকে ‘১০০ মাথাযুক্ত রাবণ’ বলে অভিহিত করেছেন। মোদিজি বলেন, রামভক্তদের দেশে কাউকে এভাবে ‘রাবণ’ বলা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘‘কে মোদিকে কত অশোভনভাবে আক্রমণ করতে পারে, কংগ্রেস দলে তার প্রতিযোগিতা চলছে। কয়েকদিন আগে একজন কংগ্রেস নেতা বলেছেন, ‘মোদির মৃত্যু হবে কুকুরের মতো’। আর একজন বলেছেন, ‘মোদি মরবে হিটলারের মতো’। কেউ আমাকে রাক্ষস বলছে, কেউ বলছে বারণ। আর একজন বলেছে, ‘আরশোলা’।’’

দিনকয়েক আগে মল্লিকার্জুন খাড়গে আহমদাবাদে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মোদিজি দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাজ করার সময় পাচ্ছেন না। কখনও কর্পোরেশন, কখনও এমএলএ বা এমপি ইলেকশনে তিনি শুধু নিজের কথা বলে যাচ্ছেন। মানুষ যেন শুধু তাঁকে দেখে ভোট দেয়। তিনি কত রূপে আবির্ভূত হবেন? তাঁর কি রাবণের মতো ১০০ মাথা?’ এর জবাব দিতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘আমি খাড়গেজিকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি সেইসব কথাই বলছেন, যা তাঁকে বলতে বলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ওষুধের দোকানের আলমারিতে গোসাপ, উদ্ধার করলেন বন কর্মীরা

 

স্বীকার করতেই হবে, মোদিজি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ এবং কথিত ধর্মগুরুরা যে ধরনের অশালীন, অশ্রাব্য ও ঘৃণা ছড়ানো কথা বলে চলেছেন, তাতে দেশের আবহাওয়া কলুষিত হচ্ছে। এ কাজে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই দায়ী। তার উপর ধর্মগুরুরা গণহত্যার আহ্বান জানিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মোদিজি খাড়গের কথায় মুখ খুললেও এইসব অশালীন ও ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো ভাষণের বিরুদ্ধে কিন্তু মুখ খোলেননি। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এ নিয়ে সকলের কাছে সংযত হওয়ার বার্তা রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি চুপ থেকেছেন। তবে তাঁর উল্লিখিত বক্তব্যে বোঝা যায়, তিনি মোটেই ‘মৌনিবাবা’ নন। কিন্তু ভারতে গত ৮-১০ বছরে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক আক্রমণের অজুহাতে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও মন্তব্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীলরা মুখ খুললে হয়তো আবহাওয়া এতটা দূষিত হত না।

আমাদের দেশে আগে রাজনীতি হয়েছে, নির্বাচন হয়েছে, পৃথিবীর অন্য দেশেও নির্বাচন হয়। কিন্তু কেউই এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেনি। কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। গুজরাতে ২০০২ সালে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি ধ্বংস, জাতি সাফাই অভিযান হয়েছিল, গর্ব করে বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা বলেছেন, ‘ওদের উচিত শিক্ষা দিয়েছি’। ‘ওরা’ বলতে সংখ্যালঘুরা। তাঁরা স্বীকার করে নিচ্ছেন, পুলিশ-প্রশাসন ও দলের ক্যাডার ও সমর্থকরা ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য গণহত্যা চালিয়েছে। এরপর আর কী বলার থাকে!

দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রভৃতি যে ধীরে ধীরে তার অর্থই হারিয়ে ফেলছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, নির্বাচন ও ভোট-রাজনীতির ঊর্ধ্বেও রয়েছে দেশ এবং নাগরিকদের অধিকার ও সম্মান। কিন্তু তা যে পালন করা হচ্ছে না, তাতে অনেকেরই ভূমিকা রয়েছে। এই ট্রাডিশনে কিন্তু মোদিজি নিজেও রয়েছেন।