১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবার বাল্যবিবাহের দোহাই দিয়ে হিমন্তের মুসলিম বিরোধী অভিযান

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৫ জানুয়ারী ২০২৩, বুধবার
  • / 26

প্রদীপ মজুমদারঃ বাল্যবিবাহের দোহাই দিয়ে এবার মুসলিম বিরোধী আর এক অভিযানে নামছে অসমের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার। নিম্ন ও মধ্য অসমের মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্যবিবাহ এবং নাবালিকা মাতৃত্ব। এমন তথ্য তুলে ধরে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার পুলিশি অভিযান চলবে রাজ্যের জেলায় জেলায়। পুলিশ বাড়িবাড়ি ঘুরে খুঁজে বের করবে বাল্যবিবাহের ঘটনা। ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা।

অসম সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গণমাধ্যমের কাছে জানান, অসমে ৩১ শতাংশ বাল্যবিবাহ সংঘটিত হচ্ছে, যার মধ্যে ১১.৭ শতাংশ নাবালিকা মাতৃত্বের বোঝা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: বুলডোজার, উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে হঠাৎ বাঙালি মুসলিমদের প্রতি ভিন্নসুর হিমন্তর

তিনি বলেন, রাজ্যের জন্য এটা একটা ভয়াবহ ছবি। সুতরাং সরকার হাতগুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত এখন থেকে বাল্যবিবাহ দমন করাই হবে সরকারের অগ্রাধিকার। হিমন্ত জানান, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পুলিশকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘মণিপুরে নাক না গলালেই ভাল’, হিমন্তকে কটাক্ষ চিদম্বরমের

বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী একথাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, নিম্ন ও মধ্য অসমের সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত ১০টি জেলাতেই চলবে এমন পুলিশি অভিযান। সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, ১৮-র কমবয়সী মেয়েকে বিয়ে করলেই পকসো আইনে গ্রেফতার করা হবে। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও।

আরও পড়ুন: অসমে এবার খ্রিষ্টানদের নিশানা, হিমন্ত বললেন কিছুই জানি না!

নিম্ন ও মধ্য অসমের মুসলিম অধ্যুষিত দশ জেলার প্রতিটি জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাল্য বিবাহের খবর পেলেই পুলিশকে জানাতে হবে।

হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্য, ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে জানা গেছে, ধুবড়িতে কম বয়সে মাতৃত্বের বোঝা টেনে নেওয়ার হার ২২ শতাংশ। দক্ষিণ শালমারাতেও ২২ শতাংশ। এটা হলো কম বয়সে মাতৃত্বের বোঝা টেনে চলার খতিয়ান। এর থেকেও উদ্বেগের বিষয় হলো, মাতৃত্বের বোঝা চাপেনি কিন্তু ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে হওয়ার হার ধুবড়িতেই সর্বাধিক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যোরহাট, শিবসাগর, ডিমা হাসাও-এর মত মুসলিম অধ্যুষিত নয়, এমন জেলাতেও বাল্যবিবাহের হার যথেষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু হিমন্তের সরকার পুলিশি অভিযানের ক্ষেত্রে সেই জেলাগুলিকে বাদ দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অসম সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বেছে বেছে কেবলমাত্র মধ্য ও নিম্ন অসমের মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত পুলিশি অভিযান চলবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার অভিযোগ উঠবে-যেটা আন্দাজ করেই হিমন্ত বিশ্বশর্মা আগ বাড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছেন, এই অভিযানে কোনও ধর্ম বা গোষ্ঠী দেখা হবে না। অভিযান চলবে ধর্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই।

হিমন্ত বিশ্বশর্মার ‘ধর্মনিরপেক্ষ’টা ঠিক কেমন সেটা ইতিমধেই সে রাজ্যের মানুষ প্রমাণ পেয়েছেন। জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের ক্ষেত্রেও এমন বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, পুনর্বাসন ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান চলছে বেছে বেছে মুসলিম মহল্লাগুলোতেই। জমির পাট্টা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্রাত্য থেকে গেছে নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মুসলমান পরিবারগুলো।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

এবার বাল্যবিবাহের দোহাই দিয়ে হিমন্তের মুসলিম বিরোধী অভিযান

আপডেট : ২৫ জানুয়ারী ২০২৩, বুধবার

প্রদীপ মজুমদারঃ বাল্যবিবাহের দোহাই দিয়ে এবার মুসলিম বিরোধী আর এক অভিযানে নামছে অসমের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার। নিম্ন ও মধ্য অসমের মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্যবিবাহ এবং নাবালিকা মাতৃত্ব। এমন তথ্য তুলে ধরে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার পুলিশি অভিযান চলবে রাজ্যের জেলায় জেলায়। পুলিশ বাড়িবাড়ি ঘুরে খুঁজে বের করবে বাল্যবিবাহের ঘটনা। ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা।

অসম সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গণমাধ্যমের কাছে জানান, অসমে ৩১ শতাংশ বাল্যবিবাহ সংঘটিত হচ্ছে, যার মধ্যে ১১.৭ শতাংশ নাবালিকা মাতৃত্বের বোঝা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: বুলডোজার, উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে হঠাৎ বাঙালি মুসলিমদের প্রতি ভিন্নসুর হিমন্তর

তিনি বলেন, রাজ্যের জন্য এটা একটা ভয়াবহ ছবি। সুতরাং সরকার হাতগুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত এখন থেকে বাল্যবিবাহ দমন করাই হবে সরকারের অগ্রাধিকার। হিমন্ত জানান, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পুলিশকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘মণিপুরে নাক না গলালেই ভাল’, হিমন্তকে কটাক্ষ চিদম্বরমের

বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী একথাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, নিম্ন ও মধ্য অসমের সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত ১০টি জেলাতেই চলবে এমন পুলিশি অভিযান। সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, ১৮-র কমবয়সী মেয়েকে বিয়ে করলেই পকসো আইনে গ্রেফতার করা হবে। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও।

আরও পড়ুন: অসমে এবার খ্রিষ্টানদের নিশানা, হিমন্ত বললেন কিছুই জানি না!

নিম্ন ও মধ্য অসমের মুসলিম অধ্যুষিত দশ জেলার প্রতিটি জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাল্য বিবাহের খবর পেলেই পুলিশকে জানাতে হবে।

হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্য, ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে জানা গেছে, ধুবড়িতে কম বয়সে মাতৃত্বের বোঝা টেনে নেওয়ার হার ২২ শতাংশ। দক্ষিণ শালমারাতেও ২২ শতাংশ। এটা হলো কম বয়সে মাতৃত্বের বোঝা টেনে চলার খতিয়ান। এর থেকেও উদ্বেগের বিষয় হলো, মাতৃত্বের বোঝা চাপেনি কিন্তু ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে হওয়ার হার ধুবড়িতেই সর্বাধিক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যোরহাট, শিবসাগর, ডিমা হাসাও-এর মত মুসলিম অধ্যুষিত নয়, এমন জেলাতেও বাল্যবিবাহের হার যথেষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু হিমন্তের সরকার পুলিশি অভিযানের ক্ষেত্রে সেই জেলাগুলিকে বাদ দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অসম সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বেছে বেছে কেবলমাত্র মধ্য ও নিম্ন অসমের মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত পুলিশি অভিযান চলবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার অভিযোগ উঠবে-যেটা আন্দাজ করেই হিমন্ত বিশ্বশর্মা আগ বাড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছেন, এই অভিযানে কোনও ধর্ম বা গোষ্ঠী দেখা হবে না। অভিযান চলবে ধর্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই।

হিমন্ত বিশ্বশর্মার ‘ধর্মনিরপেক্ষ’টা ঠিক কেমন সেটা ইতিমধেই সে রাজ্যের মানুষ প্রমাণ পেয়েছেন। জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের ক্ষেত্রেও এমন বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, পুনর্বাসন ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান চলছে বেছে বেছে মুসলিম মহল্লাগুলোতেই। জমির পাট্টা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্রাত্য থেকে গেছে নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মুসলমান পরিবারগুলো।