২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গো-রক্ষকদের হাতে গণপিটুনিতে মৃত্যু রোযাদার ইদ্রিশ পাশার, অভিযুক্ত হিন্দুত্ববাদী নেতার কঠোর শাস্তির দাবি

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৬ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 15

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিজেপি সরকারের জমানায় চতুর্দিকেই বেড়েছে স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের অত্যাচার। বিশেষ করে গো মাংস বিক্রেতা অথবা মাংস বাড়িতে রাখার অপরাধে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনায় বহু মুসলিম যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর এই পাশবিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

 

আরও পড়ুন: লুকমন আনসারি ঘটনার পুনরাবৃত্তি মহারাষ্ট্রে, ‘গো-রক্ষক’দের হাতে পিটিয়ে খুন মুসলিম যুবক

কর্নাটকে এই রকমই নৃশংসতার শিকার হন ইদ্রিশ পাশা নামে এক গরু ব্যবসায়ী। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় তার। মৃতের ভাই জানিয়েছেন, ইদ্রিশকে নৃশংসভাবে মারা হয়েছে। সেই সময় তার ভাই রোযা রেখেছিলেন। ইদ্রিশের শরীরের বিভিন্ন অংশে বৈদ্যুতিক শকের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পুনীত কেরেহাল্লি এবং তার চার সহযোগীকে বুধবার রামনাগ্রা পুলিশ রাজস্থানের বনস্বরা থেকে গ্রেফতার করেছে। তার আগে পর্যন্ত পুলিশ কেরেহাল্লিকে পলাতক ঘোষণা করেছিল। এদিকে গ্রেফতারের আগে, কেরেহাল্লি পাশাকে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমি নিজে থেকে পুলিশের কাছে এসে তদন্তে সহযোগিতা করব। আমি কোনও কিছুতেই ভয় পাই না।’জানা গেছে, অভিযুক্ত পুনীত কেরেহাল্লি হিন্দুত্ববাদী দল আরআরপি দলের সভাপতি, এছাড়াও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটার। সেখানে তিনি গরু উদ্ধারের নানা ধরনের লাইভ ভিডিও শেয়ার করেন। কেরেহাল্লিকে বহু সময় বিজেপি নেতা তেজস্বী সূর্য, কপিল মিশ্র, কে আন্নামালাই ও সিটি রবির সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ভিডিওতে গো-রক্ষার নামে লোকেদের হয়রানি করতেও দেখা গেছে তাকে।

 

ইদ্রিশের ভাই ইউনুস পাশা এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পুনীত কেরেহাল্লির কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ইউনুস বলেছেন, ‘আমার ভাইকে আমরা আর ফিরে পাব না। ভাইয়ের খুনিদের শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না, সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ভাইয়ের মৃত্যুতে তার পরিবারটা পুরো অনাথ হয়ে গেছে। এমন শাস্তি দিতে হবে যা সকলের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। আইনের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে। আমার ভাইয়ের মৃত্যুতে তার বিধবা স্ত্রী ও তার অনাথ হয়ে যাওয়া সন্তানগুলির জন্য ন্যায্য বিচার চাই। ঘটনার দিন ইদ্রিশ গরু কিনতে হাটে গিয়েছিল, অন্যায় কিছু করেনি। ইদ্রিশের সঙ্গে তার ব্যবসার অপর দুই সঙ্গী জাহির ও ইরফানকেও মারধর করা হয়। ওরা পালিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচায়।’

৩৯ বছর ইদ্রিশ পাশা একজন বৈধ লাইসেন্সকারী গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। পাশার পরিবার দাবি করেছে যে গত ৩১ মার্চ  শুক্রবার গভীর রাতে সান্থানুর থানা থেকে মাত্র একশো মিটার তাকে এই নির্যাতনে শিকার হতে হয়। রামানগরের পুলিশ সুপার কার্তিক রেড্ডি জানিয়েছিলেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ৩৪১ (অন্যায়ভাবে সংযম) এবং ৫০৪ (শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অবমাননা) সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় গরু ব্যবসায়ী পাশার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সান্থানুর পুলিশ কেরেহাল্লি সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গো-রক্ষকদের হাতে গণপিটুনিতে মৃত্যু রোযাদার ইদ্রিশ পাশার, অভিযুক্ত হিন্দুত্ববাদী নেতার কঠোর শাস্তির দাবি

আপডেট : ৬ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিজেপি সরকারের জমানায় চতুর্দিকেই বেড়েছে স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের অত্যাচার। বিশেষ করে গো মাংস বিক্রেতা অথবা মাংস বাড়িতে রাখার অপরাধে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনায় বহু মুসলিম যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর এই পাশবিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

 

আরও পড়ুন: লুকমন আনসারি ঘটনার পুনরাবৃত্তি মহারাষ্ট্রে, ‘গো-রক্ষক’দের হাতে পিটিয়ে খুন মুসলিম যুবক

কর্নাটকে এই রকমই নৃশংসতার শিকার হন ইদ্রিশ পাশা নামে এক গরু ব্যবসায়ী। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় তার। মৃতের ভাই জানিয়েছেন, ইদ্রিশকে নৃশংসভাবে মারা হয়েছে। সেই সময় তার ভাই রোযা রেখেছিলেন। ইদ্রিশের শরীরের বিভিন্ন অংশে বৈদ্যুতিক শকের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পুনীত কেরেহাল্লি এবং তার চার সহযোগীকে বুধবার রামনাগ্রা পুলিশ রাজস্থানের বনস্বরা থেকে গ্রেফতার করেছে। তার আগে পর্যন্ত পুলিশ কেরেহাল্লিকে পলাতক ঘোষণা করেছিল। এদিকে গ্রেফতারের আগে, কেরেহাল্লি পাশাকে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমি নিজে থেকে পুলিশের কাছে এসে তদন্তে সহযোগিতা করব। আমি কোনও কিছুতেই ভয় পাই না।’জানা গেছে, অভিযুক্ত পুনীত কেরেহাল্লি হিন্দুত্ববাদী দল আরআরপি দলের সভাপতি, এছাড়াও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটার। সেখানে তিনি গরু উদ্ধারের নানা ধরনের লাইভ ভিডিও শেয়ার করেন। কেরেহাল্লিকে বহু সময় বিজেপি নেতা তেজস্বী সূর্য, কপিল মিশ্র, কে আন্নামালাই ও সিটি রবির সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ভিডিওতে গো-রক্ষার নামে লোকেদের হয়রানি করতেও দেখা গেছে তাকে।

 

ইদ্রিশের ভাই ইউনুস পাশা এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পুনীত কেরেহাল্লির কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ইউনুস বলেছেন, ‘আমার ভাইকে আমরা আর ফিরে পাব না। ভাইয়ের খুনিদের শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না, সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ভাইয়ের মৃত্যুতে তার পরিবারটা পুরো অনাথ হয়ে গেছে। এমন শাস্তি দিতে হবে যা সকলের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। আইনের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে। আমার ভাইয়ের মৃত্যুতে তার বিধবা স্ত্রী ও তার অনাথ হয়ে যাওয়া সন্তানগুলির জন্য ন্যায্য বিচার চাই। ঘটনার দিন ইদ্রিশ গরু কিনতে হাটে গিয়েছিল, অন্যায় কিছু করেনি। ইদ্রিশের সঙ্গে তার ব্যবসার অপর দুই সঙ্গী জাহির ও ইরফানকেও মারধর করা হয়। ওরা পালিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচায়।’

৩৯ বছর ইদ্রিশ পাশা একজন বৈধ লাইসেন্সকারী গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। পাশার পরিবার দাবি করেছে যে গত ৩১ মার্চ  শুক্রবার গভীর রাতে সান্থানুর থানা থেকে মাত্র একশো মিটার তাকে এই নির্যাতনে শিকার হতে হয়। রামানগরের পুলিশ সুপার কার্তিক রেড্ডি জানিয়েছিলেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ৩৪১ (অন্যায়ভাবে সংযম) এবং ৫০৪ (শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অবমাননা) সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় গরু ব্যবসায়ী পাশার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সান্থানুর পুলিশ কেরেহাল্লি সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।