০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহানুভবতার বহিঃপ্রকাশ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার
  • / 62

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রোযা বা সিয়াম সাধনা মানুষের নিম্নস্তরের প্রবৃত্তিকে দমন করে। সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়ের অনুভূতি, তথা সৎ কাজের  আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয়। এভারে রোযা আত্মাকে করে বন্ধন-শৃঙ্খল থেকে মুক্ত। জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলো থেকে নিজেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য বঞ্চিত করে আমরা আত্মসংযমের শিক্ষা নিই। ক্রোধ, প্রতিহিংসা, মিথ্যাচার, চুরি বা পরস্বাপহরণ, যৌন-অনাচার প্রভৃতি মন্দ কাজ থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা লাভ করি। এ  কারণে রাসূল মুহাম্মদ সা. বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখো, অশ্লীল  ভাষা ব্যবহার কিংবা জোরে কথা বলা তার উচিত হবে না। কেউ যদি তাকে অপমান করে কিংবা তার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করার চেষ্টা করে, তার বলা উচিত, ‘আমি রোযা পালন করছি’।’’

রাসূলুল্লাহ্ সা. মুসলমানদের আরও সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে রোযা রাখা এমন প্রথায় পর্যবসিত না হয়, রোযাদারের চরিত্র ও স্বভাবের ওপর যার কোনও প্রভাব পড়ে না। তিনি সা. বলেছেন, ‘যদি রোযা রেখে মিথ্যাচার ও অসদাচরণ থেকে বিরত না হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকায় আল্লাহর কোনও প্রয়োজন নেই।’

ব্যক্তিচরিত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যেসব গুণের বিকাশ ঘটানো সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য, তার একটি হল আল্লাহ্তায়ালা এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিনয়। ক্ষুধা-তৃষ্ণার মাধ্যমে রোযাদার উপলব্ধি করে আল্লাহ্তায়ালার দয়া-দাক্ষিণ্য, অর্থাৎ রহমত ও রিযক ব্যতিরেকে মানুষকে চরম কঠিন ও দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হতো। রোযা রাখার মধ্য দিয়ে মানুষ বিনয়-নম্রতার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। আর এটা সৎকর্মশীলদের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। অহংকার ও ঔদ্ধত্য কখনও আন্তরিক খোদাভীতির সহযাত্রী হতে পারে না।

রোযা রেখে সমাজের সম্পদশালী, সৌভাগ্যবানরা লাখ লাখ মানুষের সেই বেদনা ও যাতনা, দুঃখ ও দুর্ভোগ উপলব্ধি করে, যা প্রতিদিন খাদ্য ও পানীয়সহ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারায় সৃষ্টি হয়। মাহে রমযানের রোযা ধনী ও দরিদ্র, স্বচ্ছল  ও নির্বিত্ত এবং প্রাচুর্যের অধিকারী ও অভাবীর মাঝে যোগসূত্র সৃষ্টি করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে দয়া ও সহমর্মিতা বাড়ানো উচিত। অভাবগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য সম্পদ ও সময় ব্যয়ের মতো মহানুভবতায় এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। বিশেষ করে এই রমযান মাসে মুসলমানের উৎসাহ দেওয়া হয় ক্ষুধার্তকে খাওয়াতে এবং ভালো কাজে সম্পদ ব্যয় করতে। শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, লঙ্গরখানা প্রভৃতি স্থাপন এই ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে বলা হয়েছে,  ‘রমযানে ভালো কাজের প্রতিদান বছরের অন্য সময়ের তুলনায় দশগুণ। এই বরকতময় মাসে সর্বপ্রকার সৎকর্ম ও বদান্যতার দশগুণ প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন আল্লাহ্তায়ালা। আর তা দেওয়া হবে ইহকাল ও পরকাল, উভয় ক্ষেত্রেই।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মহানুভবতার বহিঃপ্রকাশ

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রোযা বা সিয়াম সাধনা মানুষের নিম্নস্তরের প্রবৃত্তিকে দমন করে। সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়ের অনুভূতি, তথা সৎ কাজের  আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয়। এভারে রোযা আত্মাকে করে বন্ধন-শৃঙ্খল থেকে মুক্ত। জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলো থেকে নিজেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য বঞ্চিত করে আমরা আত্মসংযমের শিক্ষা নিই। ক্রোধ, প্রতিহিংসা, মিথ্যাচার, চুরি বা পরস্বাপহরণ, যৌন-অনাচার প্রভৃতি মন্দ কাজ থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা লাভ করি। এ  কারণে রাসূল মুহাম্মদ সা. বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখো, অশ্লীল  ভাষা ব্যবহার কিংবা জোরে কথা বলা তার উচিত হবে না। কেউ যদি তাকে অপমান করে কিংবা তার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করার চেষ্টা করে, তার বলা উচিত, ‘আমি রোযা পালন করছি’।’’

রাসূলুল্লাহ্ সা. মুসলমানদের আরও সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে রোযা রাখা এমন প্রথায় পর্যবসিত না হয়, রোযাদারের চরিত্র ও স্বভাবের ওপর যার কোনও প্রভাব পড়ে না। তিনি সা. বলেছেন, ‘যদি রোযা রেখে মিথ্যাচার ও অসদাচরণ থেকে বিরত না হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকায় আল্লাহর কোনও প্রয়োজন নেই।’

ব্যক্তিচরিত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যেসব গুণের বিকাশ ঘটানো সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য, তার একটি হল আল্লাহ্তায়ালা এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিনয়। ক্ষুধা-তৃষ্ণার মাধ্যমে রোযাদার উপলব্ধি করে আল্লাহ্তায়ালার দয়া-দাক্ষিণ্য, অর্থাৎ রহমত ও রিযক ব্যতিরেকে মানুষকে চরম কঠিন ও দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হতো। রোযা রাখার মধ্য দিয়ে মানুষ বিনয়-নম্রতার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। আর এটা সৎকর্মশীলদের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। অহংকার ও ঔদ্ধত্য কখনও আন্তরিক খোদাভীতির সহযাত্রী হতে পারে না।

রোযা রেখে সমাজের সম্পদশালী, সৌভাগ্যবানরা লাখ লাখ মানুষের সেই বেদনা ও যাতনা, দুঃখ ও দুর্ভোগ উপলব্ধি করে, যা প্রতিদিন খাদ্য ও পানীয়সহ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারায় সৃষ্টি হয়। মাহে রমযানের রোযা ধনী ও দরিদ্র, স্বচ্ছল  ও নির্বিত্ত এবং প্রাচুর্যের অধিকারী ও অভাবীর মাঝে যোগসূত্র সৃষ্টি করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে দয়া ও সহমর্মিতা বাড়ানো উচিত। অভাবগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য সম্পদ ও সময় ব্যয়ের মতো মহানুভবতায় এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। বিশেষ করে এই রমযান মাসে মুসলমানের উৎসাহ দেওয়া হয় ক্ষুধার্তকে খাওয়াতে এবং ভালো কাজে সম্পদ ব্যয় করতে। শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, লঙ্গরখানা প্রভৃতি স্থাপন এই ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে বলা হয়েছে,  ‘রমযানে ভালো কাজের প্রতিদান বছরের অন্য সময়ের তুলনায় দশগুণ। এই বরকতময় মাসে সর্বপ্রকার সৎকর্ম ও বদান্যতার দশগুণ প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন আল্লাহ্তায়ালা। আর তা দেওয়া হবে ইহকাল ও পরকাল, উভয় ক্ষেত্রেই।