‘ফর্মূলা আড়াই বছরের’, ‘দলের সিদ্ধান্তই মেনেই উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদ মেনে নিয়েছি’, মন্তব্য ডিকে শিবকুমারের

- আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার
- / 38
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অবশেষে দীর্ঘ চারদিনের জল্পনার অবসান। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া। উপ মুখ্যমন্ত্রী হবেন ডিকে শিবকুমার। দুই নেতা একটি রোটেশনাল সূত্রে সম্মত হওয়ায় কংগ্রেস দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে জানা গিয়েছে। সিদ্দারামাইয়া আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। এর পরে, শিবকুমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করবেন। দুই নেতাকেই ‘আড়াই বছরের’ ফর্মুলাতে রাজি করানো হয়েছে। অর্থাৎ, কংগ্রেস সরকারের মেয়াদের প্রথম আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন সিদ্দারামাইয়া, আগামী আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসবেন শিবকুমার। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে জল্পনার অবসানে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগে, রাহুল গান্ধি, দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপালের সঙ্গে বৈঠক করেন সিদ্দারামাইয়া ও ডিকে শিবকুমার। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শনিবার, ২০ মে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, আগেই ডিকে শিবকুমার জোর গলায় দাবি জানিয়ে এসেছিলেন যে, তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে, না হলে তিনি কোনও পদই গ্রহণ করবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে ‘আড়াই বছরের ফর্মুলায়’ রাজি করানো হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছেন দলের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধি। কর্নাটকের কংগ্রেস প্রধান ডিকে শিবকুমারকে উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদে রাজি করানোর পিছনে বড়সড় ভূমিকা নিলেন সেই সোনিয়া গান্ধিই। কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে কে বসবেন সেই নিয়ে দীর্ঘ দোলাচলে ছিল রাজ্য। এর জন্য গেরুয়া শিবিরও কংগ্রেসের পিছনে ঘোঁট পাকাতে শুরু করেছিল। কর্নাটকে ভোটের প্রচার চলাকালীন হিজাব, দ্য কেরালা স্টোরি, বজরংবলী নিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু কর্নাটকের নির্বাচনে ভোট বাক্সে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি।
ভোটের আগে জয়ে আশাবাদি সিদ্দারামাইয়া বলেছিলেন, কংগ্রেস নিজের ক্ষমতায় সরকার গঠন করবে। রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছেন না। কিন্তু, নির্বাচনে আর লড়বেন না। এটাই তার শেষ ভোট। অন্যদিকে, রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমারও দাবি করেছিলেন আমরাই সরকার গড়ব। সেই সময় শিবকুমার দাবি জানিয়েছিলেন, তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে, না হলে তিনি কোনও পদই গ্রহণ করবেন না।
বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে ডি কে শিবকুমারকে আপাতত উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। কর্নাটকের বর্তমান ডিজিপি প্রবীণ সুদকে সিবিআই ডিরেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে কিনা তা নিয়ে আপত্তি ওঠে কংগ্রেসের তরফে। প্রবীণ সুদের সঙ্গে কর্নাটকের কংগ্রেস নেতৃত্বের সম্পর্কে জটিলতা রয়েছে। দলের নেতা ডিকে শিবকুমার একসময় ওই পুলিশ আধিকারিক সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটেই প্রবীণ সুদের নাম নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন অধীর চৌধুরী। এদিকে কংগ্রেসকে সাংগঠিক দিক দিয়ে মজবুত করতে বড়সড় ভূমিকা পালন করেছেন ডি কে শিবকুমার।
দলের অন্দর থেকে সোনিয়া গান্ধি অভয় দিয়েছিলেন যে, কর্নাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলে ডিকে শিবকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে। বিগত চার দিন ধরে কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে কে বসবেন তা নিয়েই সব আকর্ষণ ধরে রেখেছিল মিডিয়া।
সেই জল্পনার মধ্যেই দুই নেতার মন রেখে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সিদ্ধান্ত মতো দুজনের জন্য আড়াই বছরের ফর্মুলাতেই শিলমোহর দিল কংগ্রেস হাইকমান্ড।
সোনিয়া গান্ধির হস্তক্ষেপের ফলেই দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন ডি কে শিবকুমার। এতদিন সোনিয়া গান্ধি দলের অন্দরে থেকে যে ভূমিকা পালন করছিলেন, তার সেই ভূমিকাই এবার প্রকাশ্যে এল। বুধবার সন্ধ্যায় ডি কে শিবকুমারের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেন সোনিয়া। সেখানে সোনিয়ার প্রস্তাবে সম্মতি জানান শিবকুমার। সূত্রের খবর, ডি কে শিবকুমার জানিয়েছেন, দলের স্বার্থেই এই ত্যাগ স্বীকার করেছেন তিনি।
শিবকুমার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে এখানে দলের আদেশই বড়, তাই দলের নির্দেশ মতোই তিনি কাজ করেছেন। দল যা আদেশ দেবেন, তাই মাথা পেতে নেবেন তিনি। এখানে অনেক তর্ক-বিতর্ক হবে। তবে দলের রায়ে শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে হয়’।
উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকে একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, সিদ্দারামাইয়া পরবর্তী কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন। সিদ্দারামাইয়াকেই শীর্ষ পদে দেখতে চেয়েছেন বিধায়কদের একাংশ।
কর্নাটক নির্বাচনে বিজেপি ৬৬টি আসন জিতেছে, এবং এইচডি কুমারস্বামীর জনতা দল-সেকুলার ১৯টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে, ২২৪ সদস্যের বিধানসভায় ১৩৫টি আসন নিয়েছে। সেখানে বিজেপি ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬৬টি আসন পেয়েছে, জনতা দল সেক্যুলার ১৩. ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৯টি আসনে জয়ী হয়েছে।