২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিমানবন্দর অঞ্চলে মেট্রোর কাজ নিয়ে সমস্যা, এলেন সমীক্ষকরা

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, সোমবার
  • / 23

অশোক সেনগুপ্ত: প্রস্তাবিত নিউ ব্যারাকপুর মেট্রো স্টেশনের নির্মাণকাজের ব্যাপারে একটা বড় অনিশ্চয়তা দেখা দিল। অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের সমীক্ষকরা দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে জানিয়ে দিলেন রেলের দুটি প্রস্তাব মানা যাবে না। সমাধানের প্রাথমিক পথ খুঁজতে ঘন ঘন বৈঠকে বসছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, রেল ও নির্মাণকারী সংস্থা ‘সেনবো’-র প্রতিনিধিরা। বুধবার সমীক্ষকদল তিন দিনের জন্য কলকাতায় এসেছেন। রাতে বিমানবন্দরে কম ফ্লাইট থাকে। রেল মন্ত্রক চেয়েছিল, প্রস্তাবিত নির্মাণকাজের জন্য দুই মাসের জন্য রাতে রানওয়ে আট ঘন্টা বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু ওই সময়ে কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ করে বিমানবন্দরের সীমানার কাছে রেলের নির্মাণকাজে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

 

আরও পড়ুন: ২ মাস বন্ধ থাকবে ইএম বাইপাসের জরুরি এলাকা

বিবেচনার দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল মেট্রো রেলওয়ের ক্রেনের উচ্চতা। আগের ৩০ মিটার উঁচু ক্রেন বসাতে চেয়েছিল রেল। তাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। ঠিক হয় রেল ১৮ মিটারে উঁচু ক্রেন বসাবে। কিন্তু রেলের এই প্রস্তাবেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সায় দিচ্ছে না। সমীক্ষকরা জানিয়েছেন, যেখানে নিউ ব্যারাকপুর স্টেশনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেখানে সর্বোচ্চ ১০ মিটার ক্রেন বসানোর অনুমতি দেবে। এমনকি বিমানবন্দরের ‘ফানেল জোন’ এড়াতে প্রস্তাবিত স্টেশনটি ১০০ মিটার স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৮শে ডিসেম্বর উদ্বোধন বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল

 

“বঙ্গোপসাগরের কাছে বিমানবন্দরের অবস্থানগত গুরুত্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উপসাগর, ইউরোপ এবং আমেরিকা সহ পশ্চিমে বিশ্বের বাকি অংশের মধ্যে প্রধান উড়ান পথ (ফ্লাইট রুট) রয়েছে এখানে। এই কারণে বিমানবন্দরটি রাতে ৮ ঘন্টা তো দূরের কথা, ২ ঘন্টার জন্য বন্ধ করাও সম্ভব নয়। এছাড়া, যদি রাতে কলকাতায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি বন্ধ হওয়ায় সময়সূচী বদল করতে বলা হয়, তবে তাদের পরে এখানে না ফেরার আশঙ্কা রয়েছে”।

 

এছাড়াও, দেড় হাজারেরও বেশি উড়ান ‘কলকাতা ফ্লাইট ইনফরমেশন’ অঞ্চলে ওড়ে। প্রযুক্তিগত, আপৎকালীন বা চিকিৎসার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরকে একটি জরুরী অবতরণের জন্য রাখা হয়েছে। মেট্রো টানেল-বোরিং মেশিনের বদলে ক্রেন ব্যবহার করে ‘কাট-এন্ড-কভার’ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিমানবন্দর-নিউ ব্যারাকপুর সেকশন নির্মাণের জন্য একটি টেন্ডার জারি করেছে। মেট্রোর বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পের ব্যয় কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের দাবি, কয়েক ঘণ্টার জন্যও রানওয়ে বন্ধ থাকলে অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে।

 

মেট্রো যুক্তি দিয়েছিল যে সুড়ঙ্গগুলির জন্য একটি বিকল্প নির্মাণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও, বিরাটী, মাইকেল নগর এবং নিউ ব্যারাকপুরের স্টেশনগুলি এখনও কাট-এন্ড-কভার পদ্ধতিতে তৈরি হবে। যার জন্য ক্রেন প্রয়োজন হবে। একজন প্রবীণ মেট্রো আধিকারিক বলেন, “প্রস্তাবিত নিউ ব্যারাকপুর মেট্রো স্টেশনের ডায়াফ্রাম দেয়াল তৈরির জন্য ছোট ক্রেন ব্যবহারের বিকল্প প্রস্তাবের অর্থ হল নির্মাণকাজকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা। এর জন্য সম্পূর্ণ মির্মাণকাজে বাড়তি সময় ও অর্থ লাগবে। আশা করা হচ্ছে এয়ারপোর্ট অথরিটি সমাধানযোগ্য একটা পথ খুঁজে পাবে। আমরা তাদের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।” মেট্রো রেলের ওই আধিকারিক এই সঙ্গে বলেন, “স্টেশনের প্রস্তাবিত স্থান বদল করা সম্ভব নয়। কারণ, সেটি মেট্রোর সারিবদ্ধকরণকে (অ্যালাইনমেন্ট) ব্যাহত করবে। আমরা হয় এখানে প্রস্তাবিত স্টেশন রাখতে না পারলে এটিকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিওয়ার পথ খুঁজতে হবে। স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং এটি দুটি স্টেশনের মধ্যে দূরত্বের নিয়মকেও লঙ্ঘন করবে”।

 

এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার বক্তব্য,
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) সুপারিশ অনুযায়ী ক্রেনের উচ্চতার ছাড়পত্রের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সেগুলি পরিবর্তন করা যাবে না। বিমানবন্দরের সীমানা বরাবর মেট্রো স্টেশন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনবো-কে। বিমানের প্রক্সিমিটি সেন্সর কাজ করছে না বলে গত মাসে পাইলটরা তিন বার অভিযোগ করেন। বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের অনুমান লম্বা ক্রেনগুলো অ্যালার্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরে ক্রেনগুলিকে নামাতে বলা হয় সেনবো-কে।

 

সেনবো-চেয়ারম্যান কাজল সেনগুপ্ত এই প্রতিবেদককে বলেন, “বামানবন্দর এলাকায় আমাদের তিনটি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। দুটি মেট্রো স্টেশন, দুটি সাবওয়ে এবং দু’কিলোমিটার সুড়ঙ্গ। মোট প্রকল্পব্যয় ৯০০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত স্টেশনের ব্যাপারে সমীক্ষকরা যে আপত্তি জানিয়েছেন, তার সমাধানে ‘টপ ডাউন’ পদ্ধতির বদলে ‘বটম আপ’ পদ্ধতিতে কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু এতে খরচ প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে যাবে। আলোচনা চলছে। দেখা যাক কী করা যায়!”

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিমানবন্দর অঞ্চলে মেট্রোর কাজ নিয়ে সমস্যা, এলেন সমীক্ষকরা

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, সোমবার

অশোক সেনগুপ্ত: প্রস্তাবিত নিউ ব্যারাকপুর মেট্রো স্টেশনের নির্মাণকাজের ব্যাপারে একটা বড় অনিশ্চয়তা দেখা দিল। অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের সমীক্ষকরা দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে জানিয়ে দিলেন রেলের দুটি প্রস্তাব মানা যাবে না। সমাধানের প্রাথমিক পথ খুঁজতে ঘন ঘন বৈঠকে বসছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, রেল ও নির্মাণকারী সংস্থা ‘সেনবো’-র প্রতিনিধিরা। বুধবার সমীক্ষকদল তিন দিনের জন্য কলকাতায় এসেছেন। রাতে বিমানবন্দরে কম ফ্লাইট থাকে। রেল মন্ত্রক চেয়েছিল, প্রস্তাবিত নির্মাণকাজের জন্য দুই মাসের জন্য রাতে রানওয়ে আট ঘন্টা বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু ওই সময়ে কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ করে বিমানবন্দরের সীমানার কাছে রেলের নির্মাণকাজে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

 

আরও পড়ুন: ২ মাস বন্ধ থাকবে ইএম বাইপাসের জরুরি এলাকা

বিবেচনার দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল মেট্রো রেলওয়ের ক্রেনের উচ্চতা। আগের ৩০ মিটার উঁচু ক্রেন বসাতে চেয়েছিল রেল। তাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। ঠিক হয় রেল ১৮ মিটারে উঁচু ক্রেন বসাবে। কিন্তু রেলের এই প্রস্তাবেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সায় দিচ্ছে না। সমীক্ষকরা জানিয়েছেন, যেখানে নিউ ব্যারাকপুর স্টেশনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেখানে সর্বোচ্চ ১০ মিটার ক্রেন বসানোর অনুমতি দেবে। এমনকি বিমানবন্দরের ‘ফানেল জোন’ এড়াতে প্রস্তাবিত স্টেশনটি ১০০ মিটার স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৮শে ডিসেম্বর উদ্বোধন বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল

 

“বঙ্গোপসাগরের কাছে বিমানবন্দরের অবস্থানগত গুরুত্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উপসাগর, ইউরোপ এবং আমেরিকা সহ পশ্চিমে বিশ্বের বাকি অংশের মধ্যে প্রধান উড়ান পথ (ফ্লাইট রুট) রয়েছে এখানে। এই কারণে বিমানবন্দরটি রাতে ৮ ঘন্টা তো দূরের কথা, ২ ঘন্টার জন্য বন্ধ করাও সম্ভব নয়। এছাড়া, যদি রাতে কলকাতায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি বন্ধ হওয়ায় সময়সূচী বদল করতে বলা হয়, তবে তাদের পরে এখানে না ফেরার আশঙ্কা রয়েছে”।

 

এছাড়াও, দেড় হাজারেরও বেশি উড়ান ‘কলকাতা ফ্লাইট ইনফরমেশন’ অঞ্চলে ওড়ে। প্রযুক্তিগত, আপৎকালীন বা চিকিৎসার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরকে একটি জরুরী অবতরণের জন্য রাখা হয়েছে। মেট্রো টানেল-বোরিং মেশিনের বদলে ক্রেন ব্যবহার করে ‘কাট-এন্ড-কভার’ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিমানবন্দর-নিউ ব্যারাকপুর সেকশন নির্মাণের জন্য একটি টেন্ডার জারি করেছে। মেট্রোর বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পের ব্যয় কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের দাবি, কয়েক ঘণ্টার জন্যও রানওয়ে বন্ধ থাকলে অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে।

 

মেট্রো যুক্তি দিয়েছিল যে সুড়ঙ্গগুলির জন্য একটি বিকল্প নির্মাণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও, বিরাটী, মাইকেল নগর এবং নিউ ব্যারাকপুরের স্টেশনগুলি এখনও কাট-এন্ড-কভার পদ্ধতিতে তৈরি হবে। যার জন্য ক্রেন প্রয়োজন হবে। একজন প্রবীণ মেট্রো আধিকারিক বলেন, “প্রস্তাবিত নিউ ব্যারাকপুর মেট্রো স্টেশনের ডায়াফ্রাম দেয়াল তৈরির জন্য ছোট ক্রেন ব্যবহারের বিকল্প প্রস্তাবের অর্থ হল নির্মাণকাজকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা। এর জন্য সম্পূর্ণ মির্মাণকাজে বাড়তি সময় ও অর্থ লাগবে। আশা করা হচ্ছে এয়ারপোর্ট অথরিটি সমাধানযোগ্য একটা পথ খুঁজে পাবে। আমরা তাদের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।” মেট্রো রেলের ওই আধিকারিক এই সঙ্গে বলেন, “স্টেশনের প্রস্তাবিত স্থান বদল করা সম্ভব নয়। কারণ, সেটি মেট্রোর সারিবদ্ধকরণকে (অ্যালাইনমেন্ট) ব্যাহত করবে। আমরা হয় এখানে প্রস্তাবিত স্টেশন রাখতে না পারলে এটিকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিওয়ার পথ খুঁজতে হবে। স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং এটি দুটি স্টেশনের মধ্যে দূরত্বের নিয়মকেও লঙ্ঘন করবে”।

 

এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার বক্তব্য,
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) সুপারিশ অনুযায়ী ক্রেনের উচ্চতার ছাড়পত্রের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সেগুলি পরিবর্তন করা যাবে না। বিমানবন্দরের সীমানা বরাবর মেট্রো স্টেশন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনবো-কে। বিমানের প্রক্সিমিটি সেন্সর কাজ করছে না বলে গত মাসে পাইলটরা তিন বার অভিযোগ করেন। বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের অনুমান লম্বা ক্রেনগুলো অ্যালার্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরে ক্রেনগুলিকে নামাতে বলা হয় সেনবো-কে।

 

সেনবো-চেয়ারম্যান কাজল সেনগুপ্ত এই প্রতিবেদককে বলেন, “বামানবন্দর এলাকায় আমাদের তিনটি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। দুটি মেট্রো স্টেশন, দুটি সাবওয়ে এবং দু’কিলোমিটার সুড়ঙ্গ। মোট প্রকল্পব্যয় ৯০০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত স্টেশনের ব্যাপারে সমীক্ষকরা যে আপত্তি জানিয়েছেন, তার সমাধানে ‘টপ ডাউন’ পদ্ধতির বদলে ‘বটম আপ’ পদ্ধতিতে কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু এতে খরচ প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে যাবে। আলোচনা চলছে। দেখা যাক কী করা যায়!”