পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মুসলিমদের বাড়িতে কারণে–অকারণে বুলডোজার চালিয়ে দেওয়ার বহু ঘটনার সাক্ষী দেশ। এবার এই ঘটনার তীব্র বিরোধীতা করল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বুধবার দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা। মুসলিমদের বাড়ি–ঘরে কিভাবে ছুতোয় নাতায় বুলডোজার চালিয়েছে বিজেপি সরকার, সেই ঘটনাগুলিই তুলে ধরা হয়েছে মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে। এই ঘটনা যাতে খুব শীঘ্র বন্ধ করা হয় তার জন্যেও আহ্বান জানানো হয়েছে।
দেশের ৫ টি রাজ্যে যেভাবে জেসিবি ব্র্যান্ডের বুলডোজার ব্যবহার করে মুসলিমদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে তাকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা অভিযান বলে ডেকেছে এই সংস্থা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ভারতীয় আধিকারিকরা মুললিমদের সম্পত্তি ধ্বংস করছে অবৈধভাবে। এই ‘বুলডোজার ন্যায়’ নিষ্ঠুর এবং ভয়ঙ্কর। এধরণের কাজ অন্যায়, বেআইনী ও বৈষম্যমূলক। পরিবার ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এই অন্যায় অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। সংগঠনটি একটি প্রেস নোট জারি করে ‘বিচারবহির্ভূত শাস্তি’ হিসেবে সাধারণ মানুষের বাড়ি ভাঙার এই অন্যায় প্রথা অবিলম্বে বন্ধ করতে বলেছে। জোর করে উচ্ছেদের ফলে কেউ যেন গৃহহীন না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে বলেছে সরকারকে।
তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ৫ রাজ্যে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য ‘সাজা’ হিসেবে বাড়ি ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এধরণের ঘটনা ঘটেছে ১২৮ টি। এর মধ্যে ৩৩ টি ঘটনায় জেসিবির বুলডোজারই ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই সবকটি ঘটনার জন্যে ৬১৭ জন মানুষের জীবন বিধ্বস্থ হয়েছে। এরা হয় গৃহহীন হয়েছে, আর তা না হলে নিজেদের জীবিকা হারিয়েছে। এধরণের ঘটনা সবথেকে বেশি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশে। সাজার নামে ৫৬ টি এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে। বলা হয়েছে, জাতীয় ও অন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে এই কাজ করা হয়েছে। অবৈধ নির্মাণ ভাঙার নামে খুঁজে খুঁজে মুসলিম মহল্লাগুলিকে টার্গেট করা হয়েছে। পাশেই কোনও হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি থাকলে তাতে অবশ্য কোনও আঁচড় কাটা হয়নি।
বলা হয়েছে এই ধরণের অনৈতিক কাজের জন্যে জেসিবি ব্র্যান্ডকেই বেছে নিচ্ছে আধিকারিকরা। সরকার ঘেঁষা মিডিয়া ও নেতারা গর্বের সঙ্গে জেসিবিকে ‘জিহাদি কন্ট্রোল বোর্ড’ বলেও ডাকছে।
জেসিবি কোম্পানিকে চিঠি লিখেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা জানিয়েছে, তাদের নির্মিত যন্ত্র কিভাবে কেউ ব্যবহার করছে, সেই বিষয় নিয়ন্ত্রণ বা মন্তব্য করার অধিকার তাদের নেই। যদিও অ্যামনেস্টির বক্তব্য, রাষ্ট্রসঙ্ঘের নির্দেশিকা অনুযায়ী জেসিবি কোম্পানিরও দায়িত্ব রয়েছে মানবাধিকারকে সম্মান করা এবং তাদের তৈরি পণ্যে মানুষের ক্ষতি হলে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করা। বারবার জেসিবিতে উঠে মুসলিম বিরোধী স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এই যন্ত্র দিয়েই গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলিমদের বাড়ি। অতএব নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না কোম্পানি।এই ঘটনায় সরব হওয়া তাদেরও কর্তব্য।
গোটা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে সরব হয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সরকারের মানবাধিকার হরণকারী এই ধরণের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা। সেই কারণেই ভারতে এই সংস্থার যে অফিস ছিল, তা তুলে নিতে বাধ্য করে বিজেপি সরকার।