২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেলেনি শবযান, মেয়ের নিথর দেহ কাঁধে নিয়ে ১০ কিলোমিটার হাঁটলেন এক হতভাগ্য পিতা  

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, শনিবার
  • / 74

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কাঁধে শোয়ানো মেয়ে, হাঁটছেন বাবা। না মেয়ে আর জীবিত নেই। নিথর দেহ নিয়েই হেঁটে চলেছেন বাবা। শবযান মেলেনি, তাই সদ্য কন্যাহারা বাবাকেই এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। কান্না বুকে চেপে নিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন হতভাগ্য বাবা। ভিডিও ভাইরাল হতেই সরব সোশ্যাল মিডিয়া। নড়েচড়ে বসেছে ছত্তিশগড় প্রশাসন। এই ঘটনায় লখনপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রেম সিং মার্কোকে অপসারণ করা হয়েছে। তদন্তের নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।

ছত্তিশগড়ের আমডালা গ্রামের ঘটনা। শুক্রবার হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নাগেশ্বর দাসের সাত বছরের মেয়ে সুরেখা। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে লখনপুর কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন: ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায়  নজরকাড়া সাফল্য কাশ্মীরি ইমাম কন্যাদের     

নাগেশ্বর দাস জানান, ‘আমি নার্সকে বলেছিলাম, আমার মেয়ে সারাদিন কিছু খায়নি, ও একটু দুধ খেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার কথা কেউ শোনেনি। নার্স আমার মেয়েকে ইনজেকশন দিয়ে চলে যায়। এর পরেই আমার মেয়ের শরীর আরও অবনতি হতে থাকে। আর নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। তার কিছুক্ষণ পরেই মারা যায় সুরেখা’।

চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার সময়ই মেয়েটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অক্সিজেন লেভেল ছিল ৬০-এর নীচে। গায়ে জ্বর, সেই সঙ্গে ছিল পেটে ব্যথা। মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সকাল সাড়ে সাতটার সময় মেয়েটি মারা যায়।

তবে হাসপাতালে কোনও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থাও নেই বলে এক চিকিৎসক জানান।

এর পরেই মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শবযানের খোঁজ করেন নাগেশ্বর দাস। তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অগত্যা কাঁধে  করেই মেয়ের দেহ নিয়ে গ্রামে ফেরেন এক হতভাগ্য বাবা। সুরগুজা জেলার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নাগেশ্বরের বাড়ি অন্তত ১০ কিলোমিটার। এতটা পথ এইভাবেই মেয়েকে কাঁধে নিয়ে পাড়ি এক অসহায় গরিব পিতার।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, ‘‌পরিবারের সদস্যদের আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ শবযান চলে এসেছিল। কিন্তু তাঁর আগেই ওনারা চলে যান।’‌

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেও ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা বিচার করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, এই অবস্থায় চলে যেতে না দিয়ে শবযানের জন্য মেয়েটির বাবাকে অপেক্ষা করার কথা বলার প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।

 

 

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মেলেনি শবযান, মেয়ের নিথর দেহ কাঁধে নিয়ে ১০ কিলোমিটার হাঁটলেন এক হতভাগ্য পিতা  

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, শনিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কাঁধে শোয়ানো মেয়ে, হাঁটছেন বাবা। না মেয়ে আর জীবিত নেই। নিথর দেহ নিয়েই হেঁটে চলেছেন বাবা। শবযান মেলেনি, তাই সদ্য কন্যাহারা বাবাকেই এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। কান্না বুকে চেপে নিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন হতভাগ্য বাবা। ভিডিও ভাইরাল হতেই সরব সোশ্যাল মিডিয়া। নড়েচড়ে বসেছে ছত্তিশগড় প্রশাসন। এই ঘটনায় লখনপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রেম সিং মার্কোকে অপসারণ করা হয়েছে। তদন্তের নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।

ছত্তিশগড়ের আমডালা গ্রামের ঘটনা। শুক্রবার হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নাগেশ্বর দাসের সাত বছরের মেয়ে সুরেখা। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে লখনপুর কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন: ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায়  নজরকাড়া সাফল্য কাশ্মীরি ইমাম কন্যাদের     

নাগেশ্বর দাস জানান, ‘আমি নার্সকে বলেছিলাম, আমার মেয়ে সারাদিন কিছু খায়নি, ও একটু দুধ খেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার কথা কেউ শোনেনি। নার্স আমার মেয়েকে ইনজেকশন দিয়ে চলে যায়। এর পরেই আমার মেয়ের শরীর আরও অবনতি হতে থাকে। আর নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। তার কিছুক্ষণ পরেই মারা যায় সুরেখা’।

চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার সময়ই মেয়েটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অক্সিজেন লেভেল ছিল ৬০-এর নীচে। গায়ে জ্বর, সেই সঙ্গে ছিল পেটে ব্যথা। মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সকাল সাড়ে সাতটার সময় মেয়েটি মারা যায়।

তবে হাসপাতালে কোনও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থাও নেই বলে এক চিকিৎসক জানান।

এর পরেই মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শবযানের খোঁজ করেন নাগেশ্বর দাস। তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অগত্যা কাঁধে  করেই মেয়ের দেহ নিয়ে গ্রামে ফেরেন এক হতভাগ্য বাবা। সুরগুজা জেলার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নাগেশ্বরের বাড়ি অন্তত ১০ কিলোমিটার। এতটা পথ এইভাবেই মেয়েকে কাঁধে নিয়ে পাড়ি এক অসহায় গরিব পিতার।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, ‘‌পরিবারের সদস্যদের আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ শবযান চলে এসেছিল। কিন্তু তাঁর আগেই ওনারা চলে যান।’‌

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেও ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা বিচার করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, এই অবস্থায় চলে যেতে না দিয়ে শবযানের জন্য মেয়েটির বাবাকে অপেক্ষা করার কথা বলার প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।