২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মমতার উদ্যোগে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তকমা পেতে চলেছে বাংলা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, রবিবার
  • / 51

পুবের কলম প্রতিবেদক: কিছুদিন আগে বাংলারই একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে বাংলার শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই বলে যে, বাংলা এখন বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। সেই ভাষায় আর কেউ নাকি পড়াশোনা করে না। তাই তাঁকে আর চাকরিতে রাখার প্রয়োজন নেই। আবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও ধেয়ে এসেছিল আক্রমণ, বাংলা নাকি ধ্রুপদী ভাষা নয়। দুটি ঘটনাতেই জড়িয়েছে গেরুয়া শিবির।

কার্যত তাঁরাই দেশজুড়ে হিন্দি ভাষা জোর করে সবার ওপর চাপিয়ে দিতে আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে প্রতি পদে পদে অপমান করছে। গায়ের জোরে সেই ভাষায় পঠনপাঠনও বন্ধ করে দিতে চাইছে। একইসঙ্গে হিন্দিকে দেশের রাষ্ট্রভাষা বলে চালাতে চাইছে। যদিও দেশের সংবিধানে কোথাও বলা নেই হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা। আদতে ভারতের কোনও রাষ্ট্রভাষাই নেই। এইসব মনোভাবের মানুষদের জন্যই এবার বড় ধাক্কা আসতে চলেছে। কেননা সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে খুব শীঘ্রই ‘ধ্রুপদী ভাষা’ তকমা পেতে চলেছে বাংলা ভাষা।

আরও পড়ুন: কাছাড় জেলায় সরকারি দফতরে বাংলা বাধ্যতামূলক

জানা গিয়েছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা ভাষার ওপর গেরুয়া ব্রিগেড যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছিল তার মক্ষোম জবাব দিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা আইএলএসআর-কে বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই গবেষণায় বাংলার প্রাচীনত্বের নমুনা মিলেছে। আগামী মে মাসে সেই গবেষণার রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়বে। তারপরেই কেন্দ্রের কাছে বাংলা ভাষার জন্য আবেদন জানানো হবে যাতে এই ভাষাও দেশের অন্যতম ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তকমা পায় তার জন্য। ইতিমধ্যে দেশের ছ’টি ভাষা কেন্দ্রের কাছ থেকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির দাবিও জোরালো হয়ে উঠেছিল। যুক্তি ছিল, ওড়িয়া এই তকমা পেলে বাংলারও পাওয়া উচিত। এখন নবান্ন সূত্রেই জানা গিয়েছে বাংলার ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তকমা পাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আরও পড়ুন: বাংলা শেখার ক্লাস শুরু রাজ্যপালের

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা ভাষাকে নিয়ে গবেষণা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। কিছু অফিসিয়াল কাজকর্ম বাকি রয়েছে মাত্র। তারপরে এটি রাজ্য সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রকে জমা পড়বে।

আরও পড়ুন: আঞ্চলিক ভাষাতেই সুপ্রিম কোর্টের রায়, তবে বাংলাতে এখন অনুবাদ হবে না এমনটাই মন্তব্য করলেন বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়

প্রসঙ্গত, একটি ভাষার ক্লাসিকাল বা ধ্রুপদী তকমা পাওয়ার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতামান বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভাষাটিকে ১৫০০ থেকে ২ হাজার বছর পুরনো হতে হবে। অন্য কোনও ভাষা থেকে সেই ভাষা এবং সংস্কৃতি উদ্ভূত না হওয়া আবশ্যিক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ওই ভাষাভাষীর মানুষ সংশ্লিষ্ট ভাষাটির প্রাচীন লিখিত রূপকে ঐতিহ্য হিসেবে দেখেছে কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ওই ভাষায় ১০০০ বছরের কোনও লিখিত প্রামাণ্য থাকার কথাও পরে জানিয়েছে কেন্দ্র।

এসব মাপকাঠিতে এখনও বাংলা সেই শিরোপা পায়নি। যদিও সাম্প্রতিকতম গবেষণায় যে মাপকাঠি ধার্য হয়েছে, তার চেয়ে অনেক পুরনো লিখিত নথির প্রমাণ মিলেছে। যে কোনও যোগ্যতামানের ঢের বেশি প্রমাণ এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত, তামিল সর্বপ্রথম দেশের মধ্যে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছিল। তারপর ধাপে ধাপে সংস্কৃত,  কন্নড়, তেলুগু, মালয়ালম এবং ওড়িয়া এই স্বীকৃতি পায়। মারাঠিকে এই স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও বেশ তুঙ্গে। এখন বাংলা ধ্রুপদী ভাষার তকমা পেলে, ইউনেস্কোর দুর্গাপুজোকে দেওয়া হেরিটেজ স্বীকৃতির চেয়ে সেটা কোনও অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ হবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মমতার উদ্যোগে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তকমা পেতে চলেছে বাংলা

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, রবিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: কিছুদিন আগে বাংলারই একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে বাংলার শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই বলে যে, বাংলা এখন বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। সেই ভাষায় আর কেউ নাকি পড়াশোনা করে না। তাই তাঁকে আর চাকরিতে রাখার প্রয়োজন নেই। আবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও ধেয়ে এসেছিল আক্রমণ, বাংলা নাকি ধ্রুপদী ভাষা নয়। দুটি ঘটনাতেই জড়িয়েছে গেরুয়া শিবির।

কার্যত তাঁরাই দেশজুড়ে হিন্দি ভাষা জোর করে সবার ওপর চাপিয়ে দিতে আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে প্রতি পদে পদে অপমান করছে। গায়ের জোরে সেই ভাষায় পঠনপাঠনও বন্ধ করে দিতে চাইছে। একইসঙ্গে হিন্দিকে দেশের রাষ্ট্রভাষা বলে চালাতে চাইছে। যদিও দেশের সংবিধানে কোথাও বলা নেই হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা। আদতে ভারতের কোনও রাষ্ট্রভাষাই নেই। এইসব মনোভাবের মানুষদের জন্যই এবার বড় ধাক্কা আসতে চলেছে। কেননা সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে খুব শীঘ্রই ‘ধ্রুপদী ভাষা’ তকমা পেতে চলেছে বাংলা ভাষা।

আরও পড়ুন: কাছাড় জেলায় সরকারি দফতরে বাংলা বাধ্যতামূলক

জানা গিয়েছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা ভাষার ওপর গেরুয়া ব্রিগেড যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছিল তার মক্ষোম জবাব দিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা আইএলএসআর-কে বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই গবেষণায় বাংলার প্রাচীনত্বের নমুনা মিলেছে। আগামী মে মাসে সেই গবেষণার রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়বে। তারপরেই কেন্দ্রের কাছে বাংলা ভাষার জন্য আবেদন জানানো হবে যাতে এই ভাষাও দেশের অন্যতম ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তকমা পায় তার জন্য। ইতিমধ্যে দেশের ছ’টি ভাষা কেন্দ্রের কাছ থেকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির দাবিও জোরালো হয়ে উঠেছিল। যুক্তি ছিল, ওড়িয়া এই তকমা পেলে বাংলারও পাওয়া উচিত। এখন নবান্ন সূত্রেই জানা গিয়েছে বাংলার ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তকমা পাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আরও পড়ুন: বাংলা শেখার ক্লাস শুরু রাজ্যপালের

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা ভাষাকে নিয়ে গবেষণা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। কিছু অফিসিয়াল কাজকর্ম বাকি রয়েছে মাত্র। তারপরে এটি রাজ্য সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রকে জমা পড়বে।

আরও পড়ুন: আঞ্চলিক ভাষাতেই সুপ্রিম কোর্টের রায়, তবে বাংলাতে এখন অনুবাদ হবে না এমনটাই মন্তব্য করলেন বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়

প্রসঙ্গত, একটি ভাষার ক্লাসিকাল বা ধ্রুপদী তকমা পাওয়ার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতামান বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভাষাটিকে ১৫০০ থেকে ২ হাজার বছর পুরনো হতে হবে। অন্য কোনও ভাষা থেকে সেই ভাষা এবং সংস্কৃতি উদ্ভূত না হওয়া আবশ্যিক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ওই ভাষাভাষীর মানুষ সংশ্লিষ্ট ভাষাটির প্রাচীন লিখিত রূপকে ঐতিহ্য হিসেবে দেখেছে কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ওই ভাষায় ১০০০ বছরের কোনও লিখিত প্রামাণ্য থাকার কথাও পরে জানিয়েছে কেন্দ্র।

এসব মাপকাঠিতে এখনও বাংলা সেই শিরোপা পায়নি। যদিও সাম্প্রতিকতম গবেষণায় যে মাপকাঠি ধার্য হয়েছে, তার চেয়ে অনেক পুরনো লিখিত নথির প্রমাণ মিলেছে। যে কোনও যোগ্যতামানের ঢের বেশি প্রমাণ এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত, তামিল সর্বপ্রথম দেশের মধ্যে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছিল। তারপর ধাপে ধাপে সংস্কৃত,  কন্নড়, তেলুগু, মালয়ালম এবং ওড়িয়া এই স্বীকৃতি পায়। মারাঠিকে এই স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও বেশ তুঙ্গে। এখন বাংলা ধ্রুপদী ভাষার তকমা পেলে, ইউনেস্কোর দুর্গাপুজোকে দেওয়া হেরিটেজ স্বীকৃতির চেয়ে সেটা কোনও অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ হবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।