পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: স্মৃতি ইরানির মদিনা সফর ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্রভূমি হিসেবে পরিচিত এই মক্কা-মদিনা। উল্লেখ্য, পবিত্র মদিনা নগরী ঘুরে দেখেলন সউদি আরব সফরে যাওয়া ভারতীয় প্রতিনিধিদল। সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির নেতৃত্বে জেদ্দায় হজ কনফারেন্সে অংশ নিতে সোমবার সে দেশে যায় দলটি। মদিনা সফর নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে একাধিক ছবি এবং তথ্য পোস্ট করেন স্মৃতি ইরানি।
ইরানি লেখেন, ‘মদিনায় ঐতিহাসিক যাত্রায় সামিল হয়েছিলাম। ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র শহরগুলির মধ্যে অন্যতম এই শহরে পয়গম্বর মসজিদ আল মসজিদ উল নববি, উহুদের পাহাড় এবং কুবা মসজিদে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। ইসলামের প্রথম এই মসজিদ দেখে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।’ এই সফর ভারত-সউদির সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করবে। তবে স্মৃতি ইরানির মদিনা ঘুরে দেখার এই খবর একদমই ভালো চোখে নেননি নেটিজেনরা।
সউদির পর্যটন ওয়েবসাইট “ভিজিট সউদি” তথ্য অনুযায়ী কোনও অমুসলিম ব্যক্তি মক্কা-মদিনা সংলগ্ন ঐতিহাসিক কিছু স্থান ঘুরতে পারলেও কোনও মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। অথচ দীর্ঘদিনের এই প্রথা ভেঙে মসজিদ-এ-নববী থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন ইবাদত খানা ঘুরে দেখলেন স্মৃতি ইরানি। মাথা ও চুল উন্মুক্ত। নিয়ম ও মুসলিম আবেগকে কোনও তোয়াক্কা না করেই নিজের রোয়াবে অমুসলিমদের নিষিদ্ধ স্থান ঘুরেছেন তিনি। সউদি আরব কী ভাবে একজন অ-মুসলিম মহিলাকে মদিনা শহরে সফর করার অনুমতি দিল? এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এই প্রথম কোনও অ-মুসলিম মহিলা এই ভাবে মদিনা সফরে গেলেন। তবে শুধু স্মৃতি ইরানি হয় দু’দিনের জেদ্দা সফরে রয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সি মুরালিধরন এবং একটি প্রতিনিধিদল। দলে রয়েছেন আরও এক মহিলা। সংখ্যালঘু দফতরের যুগ্ম সচিব নিরুপমা কত্রু। জেদ্দায় অবতরণের পর ভারতীয় প্রতিনিধি দল মদিনাও সফর করেন।
রবিবার ২০২৪ সালের দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত এবং সউদি আরব। যে চুক্তির মাধ্যমে ২০২৪ সালে নয়া দিল্লিকে ১,৭৫,০২৫ জন হজযাত্রীর কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। তারপর সোমবার মদিনায় নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের প্রতিনিধিদের।
এদিন ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় প্রতিনিধিদের মদিনায় যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সউদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রককে ধন্যবাদ জানাচ্ছে নয়া দিল্লি।
সউদি আরবে অমুসলিম প্রবেশ নিষিদ্ধ
সউদি আরবের পর্যটন বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ভিজিট সউদি’ পর্যটকদের জন্য একটি বার্তা প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘মক্কা ও মদিনার পবিত্র শহরগুলো শুধুমাত্র মুসলিম পর্যটকদের জন্য উন্মোচিত’। এই শহরগুলোতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসলিম হজ ও ওমরাহ পালন করতে আসেন।
তবে সংলগ্ন ঐতিহাসিক স্থান গুলিতে সফর করতে পারবেন ভিন ধর্মের মানুষরা।
সউদি আরবে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মক্কা ও মদিনার কেন্দ্রীয় শহরের ধর্মীয় স্থানগুলোতে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সউদি সরকার।
সউদি আরবের ভি ভিসা ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, অমুসলিমদের মদিনায় ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও, মসজিদ-এ-নববীর পবিত্রতা রক্ষায় মসজিদ ও তার প্রাঙ্গণে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাতে আরও বলা হয়েছে,অমুসলিমরা সাধারণত সউদি আরবের ধর্মীয় স্থানগুলো যেমন মসজিদগুলিতে প্রবেশ করতে পারবে না। এর জন্য একটি সীমানাও নির্দিষ্ট করা আছে।
সেক্ষেত্রে ধর্মীয় কোন স্থানে ভ্রমণ করার পরিকল্পনার আগে, সে স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও শর্তাদি আগে থেকে জেনে নেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের ৩০শে মে একজন ইসরাইলি ইহুদি সাংবাদিককে মক্কায় প্রবেশে সহায়তা করার জন্য এক স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছিল সে দেশের পুলিশ। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ওই সাংবাদিককে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় রায় দিয়ে সে দেশের আদালত বলে, ‘মক্কায় অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ইহুদি নাগরিকের পবিত্র নগরীতে এইভাবে অনুপ্রবেশ দেশের অভ্যন্তরীণ আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
এর আগে, ১৮ই জুলাই ইসরাইল সংবাদ মাধ্যম চ্যানেল থার্টিন নিউজ ১০ মিনিটের একটি ভিডিয়ো সম্প্রচার করে, তাতে দেখা যায় একজন সাংবাদিক মসজিদ আল-হারামের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন এবং তিনি আরাফাত পর্বত বেয়ে উঠছেন। যা দেখে মুসলিম এবং সউদি নাগরিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পবিত্র মসজিদ (মসজিদ আল-হারাম এবং মসজিদ এ-নববী) বিষয়ক সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান আবদুল রহমান আল-সুদাইস পবিত্র স্থানগুলোর মর্যাদা রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোন ধরণের লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না। আইন লঙ্ঘনকারী যে দেশের বা ধর্মেরই হোক না কেন। নিয়ম লঙ্ঘন কারীদের রেয়াত করা হবে না। কিন্তু স্মৃতি ইরানিকে সঙ্গে করে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো ও বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অফিসার নিয়োগ করা হয়। ভারতের প্রতিনিধি দলে দুই মহিলা মাথা অনাবৃত রেখে মদিনায় রেস্ট্রিকটেড বা অমুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখলেন, এই নিয়ে সউদি আরবের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ইরানির মদিনা যাওয়া নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সউদি আরবের প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে অনেকে বলেন, স্মৃতি ইরানি অ-মুসলিম। কী ভাবে আরও কয়েকজন ভিন ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে সউদি আরবের মদিনা শহরে পা রাখলেন তিনি? কেন তাঁকে এই অনুমতি দেওয়া হল? অন্য এক ইউজার বলেন, ‘একজন মুশরিককে কেন আমাদের পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে দেওয়া হল?
অপর এক ব্যক্তি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘পয়গম্বরের পবিত্র স্থানে মূর্তিপূজারীদের উপস্থিতিতে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তা সত্ত্বেও এমনটা কেন হল?’ তবে পাকিস্তানি একজন ব্যবহারকারী কিরণ ভাট এই বিষয়টিকে ভারত এবং সউদি আরবের মধ্যকার কূটনীতিক সম্পর্কের নতুন উচ্চতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।