২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ড. মুমতাজ নাইয়ারের হাত ধরে বিশ্ব ভ্যাকসিন গবেষণায় এক ভারতীয় অধ্যায়ের সূচনা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার
  • / 8

পাটনা : বিহারের কিশনগঞ্জ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে মুমতাজ। শৈশবেই বাবাকে হারিয়ে তাঁর পরিবার গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে। বড় ভাই জয়নুল আবেদীন নিজের পড়াশোনা ছাড়েন, যাতে ছোট ভাইয়ের শিক্ষার পথে কাঁটা না পড়ে। এই লড়াই থেকে জন্ম নেয় স্বপ্ন—ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে না পারা এবং প্রফেশনাল কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল ফি তাঁর সেই পথ রুদ্ধ করে দেয়। তবুও হাল না ছেড়ে, এক অভিনব ও বাস্তবিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মুমতাজ ভর্তি হন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন চালু হওয়া বায়োটেকনোলজি কোর্সে। এখান থেকেই শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়।

অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করে তিনি পেয়ে যান সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ডের বৃত্তি। এরপর জামিয়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে আরও একবার নজর কাড়েন, এইবার ‘তাসমিয়া মেরিট স্কলারশিপ’ পান। পরবর্তী গন্তব্য ছিল ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স (NCCS), পুনে, যেখানে তিনি দেশের অন্যতম খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট, শান্তি স্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. ভাস্কর সাহার তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ফ্ল্যাভিভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে মানবদেহের প্রাকৃতিক কিলার কোষের প্রতিরোধ ক্ষমতা।

আর এই গবেষণাই একদিন তাঁকে পৌঁছে দেয় যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি এখন বিশ্বের অন্যতম প্রগতিশীল ভ্যাকসিন গবেষণা ল্যাবে কাজ করছেন। মুমতাজ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “অগণিত দরিদ্র পরিবার আজও তাৎক্ষণিক লাভের জন্য শিশুদের শ্রমে ঠেলে দেয়। যদি আমার পরিবারও তাই করত, আমি হয়তো এখন কোনো গ্যারেজে কাজ করতাম।”

আজ যখন তিনি বিশ্ব বিজ্ঞানমঞ্চে আলো ছড়াচ্ছেন, তখনও তাঁর স্বপ্ন খুব স্পষ্ট—“একদিন দেশে ফিরে গিয়ে আমি গ্রামীণ ভারতের জন্য টিকা গবেষণা ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় অবদান রাখতে চাই।” তাঁর দৃষ্টিতে, বিজ্ঞান শুধু প্রযুক্তি নয়, এটা পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাঁর বিশ্বাস, “বৈচিত্র্য আমাদের দুর্বলতা নয়, আমাদের শক্তি।

ধর্ম, সংস্কৃতি যতই ভিন্ন হোক, আমরা যদি যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা আর মানবিকতাকে ধারণ করি—তবে ভারত এক অনন্য উদ্ভাবনের কেন্দ্র হতে পারে।” ড. মুমতাজ নাইয়ারের জীবনগাথা শুধু ভাইরাসবিরোধী ভ্যাকসিনের নয়, বরং দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও বাধাবিপত্তির বিরুদ্ধে মানুষের জয়ের গল্প। এই গল্প আমাদের শেখায়—সাহস, আত্মত্যাগ আর সংকল্প থাকলে কোনও বাধা শেষ কথা নয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ড. মুমতাজ নাইয়ারের হাত ধরে বিশ্ব ভ্যাকসিন গবেষণায় এক ভারতীয় অধ্যায়ের সূচনা

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার

পাটনা : বিহারের কিশনগঞ্জ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে মুমতাজ। শৈশবেই বাবাকে হারিয়ে তাঁর পরিবার গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে। বড় ভাই জয়নুল আবেদীন নিজের পড়াশোনা ছাড়েন, যাতে ছোট ভাইয়ের শিক্ষার পথে কাঁটা না পড়ে। এই লড়াই থেকে জন্ম নেয় স্বপ্ন—ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে না পারা এবং প্রফেশনাল কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল ফি তাঁর সেই পথ রুদ্ধ করে দেয়। তবুও হাল না ছেড়ে, এক অভিনব ও বাস্তবিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মুমতাজ ভর্তি হন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন চালু হওয়া বায়োটেকনোলজি কোর্সে। এখান থেকেই শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়।

অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করে তিনি পেয়ে যান সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ডের বৃত্তি। এরপর জামিয়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে আরও একবার নজর কাড়েন, এইবার ‘তাসমিয়া মেরিট স্কলারশিপ’ পান। পরবর্তী গন্তব্য ছিল ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স (NCCS), পুনে, যেখানে তিনি দেশের অন্যতম খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট, শান্তি স্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. ভাস্কর সাহার তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ফ্ল্যাভিভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে মানবদেহের প্রাকৃতিক কিলার কোষের প্রতিরোধ ক্ষমতা।

আর এই গবেষণাই একদিন তাঁকে পৌঁছে দেয় যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি এখন বিশ্বের অন্যতম প্রগতিশীল ভ্যাকসিন গবেষণা ল্যাবে কাজ করছেন। মুমতাজ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “অগণিত দরিদ্র পরিবার আজও তাৎক্ষণিক লাভের জন্য শিশুদের শ্রমে ঠেলে দেয়। যদি আমার পরিবারও তাই করত, আমি হয়তো এখন কোনো গ্যারেজে কাজ করতাম।”

আজ যখন তিনি বিশ্ব বিজ্ঞানমঞ্চে আলো ছড়াচ্ছেন, তখনও তাঁর স্বপ্ন খুব স্পষ্ট—“একদিন দেশে ফিরে গিয়ে আমি গ্রামীণ ভারতের জন্য টিকা গবেষণা ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় অবদান রাখতে চাই।” তাঁর দৃষ্টিতে, বিজ্ঞান শুধু প্রযুক্তি নয়, এটা পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাঁর বিশ্বাস, “বৈচিত্র্য আমাদের দুর্বলতা নয়, আমাদের শক্তি।

ধর্ম, সংস্কৃতি যতই ভিন্ন হোক, আমরা যদি যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা আর মানবিকতাকে ধারণ করি—তবে ভারত এক অনন্য উদ্ভাবনের কেন্দ্র হতে পারে।” ড. মুমতাজ নাইয়ারের জীবনগাথা শুধু ভাইরাসবিরোধী ভ্যাকসিনের নয়, বরং দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও বাধাবিপত্তির বিরুদ্ধে মানুষের জয়ের গল্প। এই গল্প আমাদের শেখায়—সাহস, আত্মত্যাগ আর সংকল্প থাকলে কোনও বাধা শেষ কথা নয়।