০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
  • / 60

জালালউদ্দিন মণ্ডল: বর্তমানে পিতা মাতার প্রতি অবহেলা-অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অন্যায়-অবিচার,তাদের ন্যূনতম প্রাপ্য পাওয়ার জন্য আইন আদালতের সাহায্য নেওয়া, এমনকি পুত্রের প্রহারে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে চলেছে। আসুন আজ সংক্ষিপ্ত পরিসয়ে পিতা-মাতার প্রতি আমাদের কর্তব্যকে  উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে পিতা-মাতার প্রতি যে মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন উচিত, তা উপলব্ধির চেষ্টা করি।

আব্বা-আম্মা, পিতা-মাতা, বাবা-মা ছোট্ট দুটি শব্দ; কিন্তু এর মধ্যে সুদীর্ঘ এক ইতিহাস থাকে, আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-স্বপ্ন, দুঃখ-কষ্ট, হতাশা-যন্ত্রণার ইতিহাস। বিবাহিত দম্পতির সুখ-স্বপ্নের মিলিতরূপ নিয়ে মায়ের গর্ভে আসে ভ্রূণরূপী ভাবী সুসন্তান। তাকে স্বপ্নময় স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা থেকে শুরু এ ইতিহাস। সেই ভ্রূণ মায়ের শরীর থেকে নাড়ি-সংযোগে প্রায় চল্লিশ সপ্তাহ ধরে খাদ্য, পুষ্টি,শক্তির সঙ্গে মায়া-মমতা-ভালোবাসা গ্রহণ করে, মায়ের কষ্ট-যন্ত্রণাকে ক্রমে বাড়িয়ে পরিণত হতে থাকে। অবশেষে অকল্পনীয়, অনির্ণেয় প্রসব-যন্ত্রণা দিয়ে মায়ের শরীরের সংযুক্ত নাড়ি-বন্ধন ছিন্ন করে, অসম্ভবরকম অসহায় অবস্থায় সন্তানরূপে ভূমিষ্ঠ হয়। সন্তানের মুখ দেখে মা সমস্ত কষ্ট-যন্ত্রণা ভুলে যায়।

তারপর সু-দীর্ঘ সময় ধরে বাবা-মাকে, সেই নবাগত সন্তানের লালন-পালনে যন্ত্রনাময় সংগ্রাম করতে হয়। অসহায় ছোট্ট সন্তানের সমস্ত চাহিদা  ও প্রয়োজনের দাবী পূরণে অধিকাংশ বাবা-মা তাদের ব্যক্তিজীবনের অধিকাংশ চাহিদা, ভোগবিলাস বিসর্জন দিয়ে সন্তানসুখে শান্তি ও আনন্দ খুঁজে নেয়। এ সমস্তই আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, বিশেষত আমরা যারা বাবা-মা হয়েছি। এই উপলব্ধির পর জানবো, উক্ত বিষয়ের কুরআনী নির্দেশিকাগুলিকে। কারণ পরিপূর্ণ জীবনবিধান নির্দেশিকাকে পরিপূর্ণভাবে পালন করা আমাদের কর্তব্য।

‘কষ্টের পর কষ্ট করে মা গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে থাকেন।’

 

‘গর্ভ ধারণ থেকে দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত ৩০ মাস  সময় লেগে যায়।’

 

আল্লাহ সন্তানের জন্য মায়েদের এই দুই বিশেষ কষ্টকর অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে, মাতা পিতার প্রতি সন্তানের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাদের একজন কিংবা দুইজন বার্ধক্যে পৌঁছালে, তাদের অবজ্ঞা না করতে ও বিরক্তিসূচক সামান্য ‘উহ্’ পর্যন্ত বলতে নিষেধ করেছেন। ধমক না দিয়ে নম্রভাবে, সন্মানজনকভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে ও শুকরিয়া জানিয়ে  আল্লাহ কাছে তাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে বলেছেন। (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত ২৩/সূরা লোকমান, আয়াত ১৪/সূরা আহকাফ, আয়াত ১৫)।

অনুগ্রহ প্রার্থনার ভাষাও নির্দিষ্ট করেছেন- তুমি অনুকম্পার  সঙ্গে বিনয়ের ডানা নামাবে, আর বলবে ‘হে আমার প্রতিপালক, ওদের উপর দয়া করো, যেভাবে ওরা ছেলেবেলায় আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত ২৪)

এখন পিতা-মাতার মর্যাদা ও হক সম্পর্কিত শেষ নবীর কিছু হাদিসের শিক্ষাকে উপলব্ধি করা আবশ্যক। আল্লাহর  নিকট অধিক পছন্দনীয় কাজ হিসেবে তিনি সময়মতো নামায পড়ার পর, পিতা-মাতার সহিত উত্তম ব্যবহার করা, তারপর আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করার কথা জানিয়েছেন। এজন্য জনৈক ব্যক্তির আল্লাহ্র রাস্তায় সংগ্রাম করে কিনা জিজ্ঞাসায়, তিনি তার বৃদ্ধ পিতা মাতার সেবা করার মাধ্যমে এহেন পুণ্য করতে পরামর্শ দিয়েছেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার কে জানাতে, তিনি পরপর তিনবার মায়ের কথা বলার পর বাবার কথা বলেছেন, অর্থাৎ মায়ের মর্যাদা বাবার তিনগুণ দিয়েছেন।

কবীরা গুনাহসমূয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বলেছেন নিজের পিতা-মাতাকে লানত করা কিংবা অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া। এজন্য তিনি মুশফিক পিতার সঙ্গেও সুসম্পর্ক ও ভালো ব্যবহার করতে বলেছেন। সেইসঙ্গে জানিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ব্যক্তির সঙ্গে, আল্লাহ সুসম্পর্ক রাখেন এবং পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহার কারীর দোওয়া আল্লাহ কবুল করেন। কারণ পিতা-মাতার সন্তোষেই আল্লাহর সন্তোষ এবং পিতা-মাতার অসন্তোষেই আল্লাহর অসন্তোষ।

তাই প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন পুত্রের উচিত, তাদের প্রতি পিতা-মাতার এই সুদীর্ঘ সাধনাকে মানবিক চেতনায় উপলব্ধি করে; পিতা-মাতার প্রতি কুরআন ও হাদিস নির্দেশিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের শিক্ষাকে পরিপূর্ণভাবে পালন করা।

নিজ পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ন হয়ে; বর্তমান সময়ের উক্ত লজ্জাজনক ঘটনা দূর করার মাধ্যমে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে আমাদের।

 

লেখক সহকারী শিক্ষক, কামদেবপুর স্নেহবালা মিলন বিদ্যাপীঠ

Tag :

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

আপডেট : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার

জালালউদ্দিন মণ্ডল: বর্তমানে পিতা মাতার প্রতি অবহেলা-অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অন্যায়-অবিচার,তাদের ন্যূনতম প্রাপ্য পাওয়ার জন্য আইন আদালতের সাহায্য নেওয়া, এমনকি পুত্রের প্রহারে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে চলেছে। আসুন আজ সংক্ষিপ্ত পরিসয়ে পিতা-মাতার প্রতি আমাদের কর্তব্যকে  উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে পিতা-মাতার প্রতি যে মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন উচিত, তা উপলব্ধির চেষ্টা করি।

আব্বা-আম্মা, পিতা-মাতা, বাবা-মা ছোট্ট দুটি শব্দ; কিন্তু এর মধ্যে সুদীর্ঘ এক ইতিহাস থাকে, আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-স্বপ্ন, দুঃখ-কষ্ট, হতাশা-যন্ত্রণার ইতিহাস। বিবাহিত দম্পতির সুখ-স্বপ্নের মিলিতরূপ নিয়ে মায়ের গর্ভে আসে ভ্রূণরূপী ভাবী সুসন্তান। তাকে স্বপ্নময় স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা থেকে শুরু এ ইতিহাস। সেই ভ্রূণ মায়ের শরীর থেকে নাড়ি-সংযোগে প্রায় চল্লিশ সপ্তাহ ধরে খাদ্য, পুষ্টি,শক্তির সঙ্গে মায়া-মমতা-ভালোবাসা গ্রহণ করে, মায়ের কষ্ট-যন্ত্রণাকে ক্রমে বাড়িয়ে পরিণত হতে থাকে। অবশেষে অকল্পনীয়, অনির্ণেয় প্রসব-যন্ত্রণা দিয়ে মায়ের শরীরের সংযুক্ত নাড়ি-বন্ধন ছিন্ন করে, অসম্ভবরকম অসহায় অবস্থায় সন্তানরূপে ভূমিষ্ঠ হয়। সন্তানের মুখ দেখে মা সমস্ত কষ্ট-যন্ত্রণা ভুলে যায়।

তারপর সু-দীর্ঘ সময় ধরে বাবা-মাকে, সেই নবাগত সন্তানের লালন-পালনে যন্ত্রনাময় সংগ্রাম করতে হয়। অসহায় ছোট্ট সন্তানের সমস্ত চাহিদা  ও প্রয়োজনের দাবী পূরণে অধিকাংশ বাবা-মা তাদের ব্যক্তিজীবনের অধিকাংশ চাহিদা, ভোগবিলাস বিসর্জন দিয়ে সন্তানসুখে শান্তি ও আনন্দ খুঁজে নেয়। এ সমস্তই আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, বিশেষত আমরা যারা বাবা-মা হয়েছি। এই উপলব্ধির পর জানবো, উক্ত বিষয়ের কুরআনী নির্দেশিকাগুলিকে। কারণ পরিপূর্ণ জীবনবিধান নির্দেশিকাকে পরিপূর্ণভাবে পালন করা আমাদের কর্তব্য।

‘কষ্টের পর কষ্ট করে মা গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে থাকেন।’

 

‘গর্ভ ধারণ থেকে দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত ৩০ মাস  সময় লেগে যায়।’

 

আল্লাহ সন্তানের জন্য মায়েদের এই দুই বিশেষ কষ্টকর অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে, মাতা পিতার প্রতি সন্তানের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাদের একজন কিংবা দুইজন বার্ধক্যে পৌঁছালে, তাদের অবজ্ঞা না করতে ও বিরক্তিসূচক সামান্য ‘উহ্’ পর্যন্ত বলতে নিষেধ করেছেন। ধমক না দিয়ে নম্রভাবে, সন্মানজনকভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে ও শুকরিয়া জানিয়ে  আল্লাহ কাছে তাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে বলেছেন। (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত ২৩/সূরা লোকমান, আয়াত ১৪/সূরা আহকাফ, আয়াত ১৫)।

অনুগ্রহ প্রার্থনার ভাষাও নির্দিষ্ট করেছেন- তুমি অনুকম্পার  সঙ্গে বিনয়ের ডানা নামাবে, আর বলবে ‘হে আমার প্রতিপালক, ওদের উপর দয়া করো, যেভাবে ওরা ছেলেবেলায় আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত ২৪)

এখন পিতা-মাতার মর্যাদা ও হক সম্পর্কিত শেষ নবীর কিছু হাদিসের শিক্ষাকে উপলব্ধি করা আবশ্যক। আল্লাহর  নিকট অধিক পছন্দনীয় কাজ হিসেবে তিনি সময়মতো নামায পড়ার পর, পিতা-মাতার সহিত উত্তম ব্যবহার করা, তারপর আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করার কথা জানিয়েছেন। এজন্য জনৈক ব্যক্তির আল্লাহ্র রাস্তায় সংগ্রাম করে কিনা জিজ্ঞাসায়, তিনি তার বৃদ্ধ পিতা মাতার সেবা করার মাধ্যমে এহেন পুণ্য করতে পরামর্শ দিয়েছেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার কে জানাতে, তিনি পরপর তিনবার মায়ের কথা বলার পর বাবার কথা বলেছেন, অর্থাৎ মায়ের মর্যাদা বাবার তিনগুণ দিয়েছেন।

কবীরা গুনাহসমূয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বলেছেন নিজের পিতা-মাতাকে লানত করা কিংবা অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া। এজন্য তিনি মুশফিক পিতার সঙ্গেও সুসম্পর্ক ও ভালো ব্যবহার করতে বলেছেন। সেইসঙ্গে জানিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ব্যক্তির সঙ্গে, আল্লাহ সুসম্পর্ক রাখেন এবং পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহার কারীর দোওয়া আল্লাহ কবুল করেন। কারণ পিতা-মাতার সন্তোষেই আল্লাহর সন্তোষ এবং পিতা-মাতার অসন্তোষেই আল্লাহর অসন্তোষ।

তাই প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন পুত্রের উচিত, তাদের প্রতি পিতা-মাতার এই সুদীর্ঘ সাধনাকে মানবিক চেতনায় উপলব্ধি করে; পিতা-মাতার প্রতি কুরআন ও হাদিস নির্দেশিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের শিক্ষাকে পরিপূর্ণভাবে পালন করা।

নিজ পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ন হয়ে; বর্তমান সময়ের উক্ত লজ্জাজনক ঘটনা দূর করার মাধ্যমে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে আমাদের।

 

লেখক সহকারী শিক্ষক, কামদেবপুর স্নেহবালা মিলন বিদ্যাপীঠ