২২ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৬২ বছরের যুদ্ধ-গৌরবের অবসান: সেপ্টেম্বরে শেষবারের মতো উড়বে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 35

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার দীর্ঘ ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। ৬২ বছরের সেবা শেষে চিরবিদায় নিতে চলেছে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ চণ্ডীগড় বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে শেষবারের মতো আকাশে উড়বে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধবিমান। তারপর থেকে আর কোনও সামরিক বা অসামরিক কাজে ব্যবহৃত হবে না মিগ-২১।

১৯৬৩ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হয় সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১। ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে, ওই বছরই এই বিমান তৈরির প্রযুক্তি ভারতের হাতে তুলে দেয় মস্কো। সেই থেকে শুরু, মিগ-২১ একের পর এক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—১৯৬৫ ও ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কার্গিল সংঘাত, ২০১۹-এর বালাকোট অভিযান এবং সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ।

মিগ-২১-এর বীরত্বের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিতর্ক ও দুর্ঘটনার ইতিহাসও। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান গুলি করে নামায় মিগ-২১ বাইসন, এবং ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে।

আরও পড়ুন: তেহরানের কাছে ইসরায়েলের সর্বাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি ইরানের

যদিও প্রথমদিকে এটি ছিল আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রতীক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি দুর্ঘটনার সমার্থক হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের পর থেকে মিগ-২১ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ১৭০ জন পাইলট এবং ৪০ জন সাধারণ নাগরিক। শুধু ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বার দুর্ঘটনার মুখে পড়ে মিগ-২১, যার জেরে এটির নাম হয়ে ওঠে ‘Flying Coffin’ বা উড়ন্ত কফিন।

বলিউড সিনেমা ‘রং দে বসন্তী’ (২০০৬)-তে তুলে ধরা হয় এই বাস্তবতা। প্রয়াত বায়ুসেনা আধিকারিক অভিজিৎ গ্যাডগিলের জীবনের অনুপ্রেরণায় নির্মিত এই ছবিতে মাধবন অভিনয় করেছিলেন এক মিগ-২১ পাইলটের চরিত্রে, যাঁর মৃত্যুর পেছনেও ছিল এই যুদ্ধবিমানের ত্রুটি।

ষাটের দশক থেকে ২০২০ দশক পর্যন্ত ভারতীয় বায়ুসেনায় ১২০০টির বেশি মিগ-২১ ছিল। এক সময় ১৯টি স্কোয়াড্রনের হাতে ছিল ৪০০টি সক্রিয় মিগ-২১। কিন্তু প্রযুক্তির অভাব এবং বারংবার দুর্ঘটনার কারণে এদের ধাপে ধাপে অবসর দেওয়া শুরু হয়। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বায়ুসেনায় মাত্র ৪০টি মিগ-২১ ব্যবহৃত হতো।

২০২২ সালে তৎকালীন বায়ুসেনা প্রধান বিআর চৌধরি ঘোষণা করেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই মিগ-২১ সম্পূর্ণভাবে অবসরপ্রাপ্ত হবে এবং তার পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এলসিএ মার্ক-১এ (Tejas)। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরেই মিগের চূড়ান্ত বিদায় ঘোষণা হতে চলেছে।

মিগ-২১ শুধু একটি যুদ্ধবিমান নয়, এটি ছিল এক যুগের প্রতীক। তার হাত ধরেই ভারত আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষার যাত্রা শুরু করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতা এবং অসংখ্য ত্যাগের স্মারক এই বিমান চিরবিদায় জানাবে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ, চণ্ডীগড়ের আকাশে শেষবার উড়ে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

৬২ বছরের যুদ্ধ-গৌরবের অবসান: সেপ্টেম্বরে শেষবারের মতো উড়বে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার দীর্ঘ ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। ৬২ বছরের সেবা শেষে চিরবিদায় নিতে চলেছে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ চণ্ডীগড় বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে শেষবারের মতো আকাশে উড়বে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধবিমান। তারপর থেকে আর কোনও সামরিক বা অসামরিক কাজে ব্যবহৃত হবে না মিগ-২১।

১৯৬৩ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হয় সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১। ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে, ওই বছরই এই বিমান তৈরির প্রযুক্তি ভারতের হাতে তুলে দেয় মস্কো। সেই থেকে শুরু, মিগ-২১ একের পর এক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—১৯৬৫ ও ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কার্গিল সংঘাত, ২০১۹-এর বালাকোট অভিযান এবং সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ।

মিগ-২১-এর বীরত্বের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিতর্ক ও দুর্ঘটনার ইতিহাসও। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান গুলি করে নামায় মিগ-২১ বাইসন, এবং ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে।

আরও পড়ুন: তেহরানের কাছে ইসরায়েলের সর্বাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি ইরানের

যদিও প্রথমদিকে এটি ছিল আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রতীক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি দুর্ঘটনার সমার্থক হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের পর থেকে মিগ-২১ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ১৭০ জন পাইলট এবং ৪০ জন সাধারণ নাগরিক। শুধু ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বার দুর্ঘটনার মুখে পড়ে মিগ-২১, যার জেরে এটির নাম হয়ে ওঠে ‘Flying Coffin’ বা উড়ন্ত কফিন।

বলিউড সিনেমা ‘রং দে বসন্তী’ (২০০৬)-তে তুলে ধরা হয় এই বাস্তবতা। প্রয়াত বায়ুসেনা আধিকারিক অভিজিৎ গ্যাডগিলের জীবনের অনুপ্রেরণায় নির্মিত এই ছবিতে মাধবন অভিনয় করেছিলেন এক মিগ-২১ পাইলটের চরিত্রে, যাঁর মৃত্যুর পেছনেও ছিল এই যুদ্ধবিমানের ত্রুটি।

ষাটের দশক থেকে ২০২০ দশক পর্যন্ত ভারতীয় বায়ুসেনায় ১২০০টির বেশি মিগ-২১ ছিল। এক সময় ১৯টি স্কোয়াড্রনের হাতে ছিল ৪০০টি সক্রিয় মিগ-২১। কিন্তু প্রযুক্তির অভাব এবং বারংবার দুর্ঘটনার কারণে এদের ধাপে ধাপে অবসর দেওয়া শুরু হয়। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বায়ুসেনায় মাত্র ৪০টি মিগ-২১ ব্যবহৃত হতো।

২০২২ সালে তৎকালীন বায়ুসেনা প্রধান বিআর চৌধরি ঘোষণা করেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই মিগ-২১ সম্পূর্ণভাবে অবসরপ্রাপ্ত হবে এবং তার পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এলসিএ মার্ক-১এ (Tejas)। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরেই মিগের চূড়ান্ত বিদায় ঘোষণা হতে চলেছে।

মিগ-২১ শুধু একটি যুদ্ধবিমান নয়, এটি ছিল এক যুগের প্রতীক। তার হাত ধরেই ভারত আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষার যাত্রা শুরু করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতা এবং অসংখ্য ত্যাগের স্মারক এই বিমান চিরবিদায় জানাবে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ, চণ্ডীগড়ের আকাশে শেষবার উড়ে।