১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দিল্লি থেকে তাড়ানো, মুর্শিদাবাদের বাড়ি ফিরেই হৃদরোগে মৃত্যু বাংলার শ্রমিক সন্তোষ দাসের

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন মুর্শিদাবাদের এক পরিবার। বাংলায় কথা বলার অপরাধেই তাঁদের “বাংলাদেশি” তকমা দিয়ে রাজধানী থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রাণভয়ে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরেছিলেন স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের একমাত্র সন্তান। কিন্তু ফিরে এসে মানসিক চাপে ভেঙে পড়লেন প্রৌঢ় সন্তোষ দাস (৫৫), শেষ পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তাঁর।

ঘটনাটি মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের দয়ানগর শিবনগর রোডের। পরিবার জানিয়েছে, প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে দিল্লিতে রঙের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন সন্তোষ দাস। তাঁর স্ত্রী পাতা দাস ছিলেন গৃহপরিচারিকা, আর ছেলে মিঠুন দাস কাজ করতেন হাউসকিপিং বিভাগে। তাঁরা দিল্লির যমুনা বিহার এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

আরও পড়ুন: Migrant worker: অন্ধ্রপ্রদেশে গিয়ে রহস্যমৃত্যু মুর্শিদাবাদের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের

পরিবারের অভিযোগ, আড়াই মাস আগে স্থানীয় পুলিশ তাঁদের হেনস্তা শুরু করে। পুলিশ দাবি করে, তাঁরা নাকি বাংলাদেশি, এবং এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনজনেই বহরমপুরে ফিরে আসেন।

আরও পড়ুন: হাজারও মুসল্লির ঢল, উৎসবের আবহে ঈদ-উল-আযহা’র নামায সম্পন্ন লোহরপুর ঈদগাহ ময়দানে

বাড়ি ফেরার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সন্তোষ দাস। সংসার চলবে কীভাবে — এই চিন্তায় কাবু হয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রায় ১০ দিন আগে বুকে ব্যথা নিয়ে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে কোহিতুর, নবাবপাসন্দ, রানিপাসন্দ আমে মাতবে ১ মাসব্যাপী আম উৎসব

স্ত্রী পাতা দাস অভিযোগ করেন, “আমাদের সব বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি বলা হয়েছে। শুধু বাংলায় কথা বলতাম বলেই এই আচরণ। দিল্লিতে কাজ করতাম অভাবের তাড়নায়, আর এখন স্বামীকেও হারালাম।”

এই ঘটনার পর ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বহরমপুর পুরসভা। পুরসভার পক্ষ থেকে শ্রাদ্ধের খরচে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকার আশ্বাস জানানো হয়েছে।

পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন,“বিজেপি বলে তারা মুসলিমবিরোধী দল, অথচ দিল্লিতে হিন্দু সন্তোষ দাসের মতো একজন বাঙালি শ্রমিককে অবাঙালিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। মানুষ এর জবাব দেবে।”

রাজ্যের শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন ক্রমশ বাড়ছে, যা এখন উদ্বেগজনক সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.
সর্বধিক পাঠিত

মহারাষ্ট্রে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, গাড়ির ভেতরে বস্তায় বাঁধা অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার ব্যাঙ্ক কর্মীর

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দিল্লি থেকে তাড়ানো, মুর্শিদাবাদের বাড়ি ফিরেই হৃদরোগে মৃত্যু বাংলার শ্রমিক সন্তোষ দাসের

আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন মুর্শিদাবাদের এক পরিবার। বাংলায় কথা বলার অপরাধেই তাঁদের “বাংলাদেশি” তকমা দিয়ে রাজধানী থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রাণভয়ে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরেছিলেন স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের একমাত্র সন্তান। কিন্তু ফিরে এসে মানসিক চাপে ভেঙে পড়লেন প্রৌঢ় সন্তোষ দাস (৫৫), শেষ পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তাঁর।

ঘটনাটি মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের দয়ানগর শিবনগর রোডের। পরিবার জানিয়েছে, প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে দিল্লিতে রঙের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন সন্তোষ দাস। তাঁর স্ত্রী পাতা দাস ছিলেন গৃহপরিচারিকা, আর ছেলে মিঠুন দাস কাজ করতেন হাউসকিপিং বিভাগে। তাঁরা দিল্লির যমুনা বিহার এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

আরও পড়ুন: Migrant worker: অন্ধ্রপ্রদেশে গিয়ে রহস্যমৃত্যু মুর্শিদাবাদের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের

পরিবারের অভিযোগ, আড়াই মাস আগে স্থানীয় পুলিশ তাঁদের হেনস্তা শুরু করে। পুলিশ দাবি করে, তাঁরা নাকি বাংলাদেশি, এবং এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনজনেই বহরমপুরে ফিরে আসেন।

আরও পড়ুন: হাজারও মুসল্লির ঢল, উৎসবের আবহে ঈদ-উল-আযহা’র নামায সম্পন্ন লোহরপুর ঈদগাহ ময়দানে

বাড়ি ফেরার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সন্তোষ দাস। সংসার চলবে কীভাবে — এই চিন্তায় কাবু হয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রায় ১০ দিন আগে বুকে ব্যথা নিয়ে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে কোহিতুর, নবাবপাসন্দ, রানিপাসন্দ আমে মাতবে ১ মাসব্যাপী আম উৎসব

স্ত্রী পাতা দাস অভিযোগ করেন, “আমাদের সব বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি বলা হয়েছে। শুধু বাংলায় কথা বলতাম বলেই এই আচরণ। দিল্লিতে কাজ করতাম অভাবের তাড়নায়, আর এখন স্বামীকেও হারালাম।”

এই ঘটনার পর ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বহরমপুর পুরসভা। পুরসভার পক্ষ থেকে শ্রাদ্ধের খরচে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকার আশ্বাস জানানো হয়েছে।

পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন,“বিজেপি বলে তারা মুসলিমবিরোধী দল, অথচ দিল্লিতে হিন্দু সন্তোষ দাসের মতো একজন বাঙালি শ্রমিককে অবাঙালিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। মানুষ এর জবাব দেবে।”

রাজ্যের শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন ক্রমশ বাড়ছে, যা এখন উদ্বেগজনক সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে।