প্রাসাদসম অফিস-দামি গাড়ির বহর, উত্তরপ্রদেশে ভুয়া দূতাবাসের পর্দা ফাঁস

- আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, বুধবার
- / 8
পুবের কলম, লখনউ: প্রাসাদসম অফিস, বাইরে সাজানো দামি দামি গাড়ির বহর। সেই গাড়িতে লাগানো কূটনৈতিক নম্বর প্লেট। অফিসে একাধিক কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং বিদেশি মুদ্রা নিয়ে চালানো হচ্ছিল একটি দেশের দূতাবাস। তবে সবটাই যে ভুয়ো তা দেখে চমকে গিয়েছেন খোদ পুলিশ আধিকারিকরা। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে দীর্ঘদিন ধরে দূতাবাস হিসেবে চালানো হচ্ছিল ওই অফিস। মঙ্গলবার ভুয়ো দূতাবাসের পর্দাফাঁস করল উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ)।
পুলিশ সূত্রে খবর, হর্ষবর্ধন জৈন নামের এক ব্যক্তি একটি বিলাসবহুল দ্বিতল ভবন ভাড়া নিয়েছিলেন। সেটিকে ‘ওয়েস্টার্কটিকা’র দূতাবাস বলে চালাচ্ছিলেন তিনি। একাধিক কূটনৈতিক নম্বর প্লেট লাগানো দামি গাড়ি ব্যবহার করতেন জৈন। এমনকি তার ভুয়ো কূটনৈতিক পাসপোর্টও ছিল। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে এভাবেই গোটা র্যাকেট সাজিয়ে তুলেছিলেন তিনি। জৈনের বিরুদ্ধে বিদেশে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে চাকরির এবং বিদেশে অর্থ পাচারের র্যাকেট চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে হর্ষবর্ধন জৈনকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ।
এসটিএফ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে অভিযুক্ত বিদেশে চাকরির টোপ দিয়ে প্রতারণা করতেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতানোর মত চক্রে জড়িত ছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে তার বিকৃত ছবি অফিসে লাগিয়ে রেখেছিলেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর ওই ভুয়ো অফিস থেকে চারটি গাড়ির ভুয়ো কূটনৈতিক নম্বর প্লেট, তথাকথিত রাষ্ট্রের ১২টি জাল কূটনৈতিক পাসপোর্ট, বিদেশ মন্ত্রকের সিল লাগানো ভুয়ো নথি, দুটি জাল প্যান কার্ড, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ৩৪টি রাবার স্ট্যাম্প এবং দুটি ভুয়ো প্রেস কার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মার্কিন নৌবাহিনীর এক অফিসার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ওয়েস্টার্কটিকা। তবে দেশটি কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত নয়। সেই দেশের ভুয়ো দূতাবাস খুলে অবৈধ র্যাকেট চালাচ্ছিলেন অভিযুক্ত। গাজিয়াবাদের কবি নগরের বাসিন্দা হর্ষবর্ধন জৈনকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ অমিতাভ যশ জানিয়েছেন, অভিযুক্ত একটি ভাড়া বাড়ি থেকে ভুয়ো দূতাবাস চালাচ্ছিল। নিজেকে পশ্চিম আর্কটিকা, সাবোরগা, পলভিয়া এবং লোডোনিয়ার মতো অস্তিত্বহীন দেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে পরিচয় দিচ্ছিল এবং জাল কূটনৈতিক নম্বর প্লেট লাগানো গাড়িতে ঘুরে বেড়াত।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের সঙ্গে অতীতে বিতর্কিত গডম্যান চন্দ্রস্বামী ও আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির যোগাযোগ ছিল। ২০১১ সালে জৈনের বিরুদ্ধে বেআইনি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধারের মামলা রুজু হয়েছিল। পুলিশের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিক বলেছেন, নগদ ৪৪.৭ লক্ষ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, একাধিক সংস্থার নথি এবং ১৮টি ভুয়ো কূটনৈতিক নম্বর প্লেট বাজেয়াপ্ত করেছে এসটিএফ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কবি নগর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।