গাজায় ইসরাইলি হামলায় পাঁচ সাংবাদিকের মৃত্যু : ঠান্ডা মাথার খুন, নিন্দায় সোচ্চার প্রিয়াঙ্কা

- আপডেট : ১২ অগাস্ট ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 33
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : অতি সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় আল জাজিরার পাঁচ জন সাংবাদিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। প্রিয়াঙ্কা এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস দেখায়, ইসরাইলি রাষ্ট্রের হিংসা ও ঘৃণা তাদের সেই সাহসকে কখনো দুর্বল করতে পারবে না।
সাংবাদিকরা গাজার আল-শিফা হাসপাতালের কাছে একটি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যা সাংবাদিকদের একটি দীর্ঘদিনের পরিচিত আশ্রয়স্থল ছিল। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আল জাজিরার সুপরিচিত সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফ এবং মুহাম্মদ কোরকেহ। সেই সঙ্গে ছিলেন ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মুহাম্মদ নওফল এবং মোমেন আলিউয়া। ইসরাইলি হানাদার বাহিনী এই হামলার কথা স্বীকার করেছে।
যায়নবাদীরা দাবি করছে যে আনাস আল-শরিফ হামাসের একজন ‘জঙ্গি’। তিনি নাকি একটি সেলের প্রধান ছিলেন। তাদের মতে, সাংবাদিকতার আড়ালে তিনি হামাসের হয়ে রকেট হামলার পরিকল্পনা করতেন। তারা আরও বলেছে, একটি প্রেস ব্যাজ সন্ত্রাসবাদের ঢাল হতে পারে না। আল জাজিরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই হামলাকে প্রেসের স্বাধীনতার ওপর সুপরিকল্পিত ও নির্লজ্জ হামলা হিসেবে অভিহিত করেছে।
তারা জানিয়েছে, নিহত সাংবাদিকরা গাজার সবচেয়ে সাহসী সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তারা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিরলসভাবে ফ্রন্টলাইন থেকে রিপোর্ট করছিলেন। সারা বিশ্ব ইসরাইলের এই নৃশংসতায় হতবাক। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশের অন্যতম প্রতিবাদী রাজনৈতিক নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা আবারও গাজার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতার সমালোচনা করেছেন।
প্রিয়াঙ্কা এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস দেখায়, ইসরাইলি রাষ্ট্রের হিংসা ও ঘৃণা তাদের সেই সাহসকে কখনো টলাতে পারবে না। এর আগেও প্রিয়াঙ্কা গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে বর্বর ও অমানবিক বলে বর্ণনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতাকে লজ্জাজনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কা নিহত সাংবাদিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন এক বিশ্ব যেখানে বেশিরভাগ মিডিয়া ক্ষমতা ও বাণিজ্যের দাস, সেখানে এই সাহসী মানুষেরা আমাদের প্রকৃত সাংবাদিকতা কী তা মনে করিয়ে দিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা বঢরা একটি টুইটে বলেছেন যে, ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন যে ইসরাইলের হামলায় ৬০,০০০-এরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ১৮,৪৩০ জন শিশু।
এছাড়াও শত শত মানুষকে (যার মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে) অনাহারে মারা হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষকে অনাহারে রাখার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে নীরব থাকা এবং কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াটাও একটি অপরাধ। প্রিয়াঙ্কা মোদি সরকারের নীরবতারও সমালোচনা করে বলেছেন যে, ইসরায়েল যখন ফিলিস্তিনের মানুষের উপর এমন ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে, তখন ভারতীয় সরকারের চুপ করে থাকাটা লজ্জাজনক।
তবে ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত আজার গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যদি কোনো একটি স্থানে গণহত্যা চলতে থাকে, তাহলে সেখানকার জনসংখ্যা সাধারণত কমে যায় বা একই থাকে। গাজার জনসংখ্যা গত ৫০ বছরে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তার মতে, গণহত্যার ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়! তিনি যে চোখে ঠুলি পরে রয়েছেন তা তার মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট।
এই ঘটনা আবারও গাজায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং প্রেস স্বাধীনতার সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছে।