১২ অগাস্ট ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির সংশোধন চায় কেন্দ্র জলচুক্তি নিয়ে মমতার দাবি শুনবে মোদি সরকার

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 256

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্র সরকার ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি সংশোধনের কথা বিবেচনা করছে। এই চুক্তিটি ২০২৬ সালে শেষ হতে চলেছে এবং এর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য উভয় দেশের পারস্পরিক সম্মতি প্রয়োজন। তবে, মোদি সরকার চাইছে একটি নতুন চুক্তি, যা তাদের বর্তমান উন্নয়নমূলক চাহিদাগুলো পূরণ করবে। তবে ইউনূস সরকার তা মেনে নেবে না বলেই মনে করছে অভিজ্ঞমহল। ১৯৯৬ সালের এই চুক্তিটি বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে ফরাক্কা ব্যারেজে গঙ্গার জলের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা।

ওয়াকিফহাল মহলের মত, ™হেলগাঁও ঘটনার জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি বাতিলের পরে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার জলবন্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী বছর গঙ্গার জল বন্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণের আগে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার। এবং এই সিদ্ধান্তে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবিকে মান্যতা দিয়ে ভারতের জন্য আরো বেশি জল চাইছে নয়াদিল্লি। শুক্রবার সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার জল বন্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন চুক্তি নবীকরণের সময় আরও অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক জল চাইবে ভারত। কারণ কৃষির প্রসার ঘটায় আরও বেশি জলের প্রয়োজন। এছাড়া সেচ, বন্দর রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আগের থেকে বেশি জল দরকার। গত বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গার জল বন্টন চুক্তি নিয়ে বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকের সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন। এবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই গঙ্গার জল চুক্তি পুনর্নবীকরণের মডেল তৈরি হবে।

ফরাক্কা ব্যারেজটি ১৯৭৫ সালে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে হুগলি নদীতে জল প্রবাহিত করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। এটি গঙ্গার জলপ্রবাহ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি করে। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী, ফরাক্কা ব্যারেজে গঙ্গার জল ভাগ করা হয়। এটি একটি বাঁধ যা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ভাগীরথী নদীর উপর নির্মিত। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের জন্য ফিডার খালে ৪০,০০০ কিউসেক জল প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান ব্যবস্থায়, মার্চ মাসের ১১ তারিখ থেকে মে মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে উভয় দেশ পালাক্রমে ১০ দিনের জন্য ৩৫,০০০ কিউসেক জল পায়।

আরও পড়ুন: ট্যুরিস্ট ভিসা চালুর অপেক্ষায় পেট্রাপোল সীমান্তের ব্যবসায়ীরা

ভারত এখন এই চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চাইছে, যাতে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে জল বণ্টনে একটি সর্বোত্তম ভারসাম্য বজায় থাকে। ভারতের পক্ষ থেকে সেচ, বন্দর রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে চুক্তির সংশোধনের প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, কেন্দ্র একই সময়ে আরও ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ কিউসেক জল চাইছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও কেন্দ্রের এই অবস্থানকে সমর্থন করছে। তাদের মতে, চুক্তির বর্তমান নীতিগুলো তাদের নিজস্ব চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। এর আগে, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার কথাও বিবেচনা করেছিল, যা আঞ্চলিক জলবণ্টন নীতিতে ভারতের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করে। গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি সংশোধনের এই পদক্ষেপ ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়, কারণ গঙ্গার জল তাদের কৃষি ও জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য চুক্তি স্থাপন করা জরুরি, যা দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুশইন করুন, জোরালো দাবি নাহিদ ইসলামের

আরও পড়ুন: নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা করছে পতিত শক্তি, অভিযোগ মুহাম্মদ ইউনুসের

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির সংশোধন চায় কেন্দ্র জলচুক্তি নিয়ে মমতার দাবি শুনবে মোদি সরকার

আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্র সরকার ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি সংশোধনের কথা বিবেচনা করছে। এই চুক্তিটি ২০২৬ সালে শেষ হতে চলেছে এবং এর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য উভয় দেশের পারস্পরিক সম্মতি প্রয়োজন। তবে, মোদি সরকার চাইছে একটি নতুন চুক্তি, যা তাদের বর্তমান উন্নয়নমূলক চাহিদাগুলো পূরণ করবে। তবে ইউনূস সরকার তা মেনে নেবে না বলেই মনে করছে অভিজ্ঞমহল। ১৯৯৬ সালের এই চুক্তিটি বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে ফরাক্কা ব্যারেজে গঙ্গার জলের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা।

ওয়াকিফহাল মহলের মত, ™হেলগাঁও ঘটনার জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি বাতিলের পরে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার জলবন্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী বছর গঙ্গার জল বন্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণের আগে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার। এবং এই সিদ্ধান্তে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবিকে মান্যতা দিয়ে ভারতের জন্য আরো বেশি জল চাইছে নয়াদিল্লি। শুক্রবার সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার জল বন্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন চুক্তি নবীকরণের সময় আরও অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক জল চাইবে ভারত। কারণ কৃষির প্রসার ঘটায় আরও বেশি জলের প্রয়োজন। এছাড়া সেচ, বন্দর রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আগের থেকে বেশি জল দরকার। গত বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গার জল বন্টন চুক্তি নিয়ে বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকের সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন। এবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই গঙ্গার জল চুক্তি পুনর্নবীকরণের মডেল তৈরি হবে।

ফরাক্কা ব্যারেজটি ১৯৭৫ সালে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে হুগলি নদীতে জল প্রবাহিত করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। এটি গঙ্গার জলপ্রবাহ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি করে। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী, ফরাক্কা ব্যারেজে গঙ্গার জল ভাগ করা হয়। এটি একটি বাঁধ যা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ভাগীরথী নদীর উপর নির্মিত। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের জন্য ফিডার খালে ৪০,০০০ কিউসেক জল প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান ব্যবস্থায়, মার্চ মাসের ১১ তারিখ থেকে মে মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে উভয় দেশ পালাক্রমে ১০ দিনের জন্য ৩৫,০০০ কিউসেক জল পায়।

আরও পড়ুন: ট্যুরিস্ট ভিসা চালুর অপেক্ষায় পেট্রাপোল সীমান্তের ব্যবসায়ীরা

ভারত এখন এই চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চাইছে, যাতে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে জল বণ্টনে একটি সর্বোত্তম ভারসাম্য বজায় থাকে। ভারতের পক্ষ থেকে সেচ, বন্দর রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে চুক্তির সংশোধনের প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, কেন্দ্র একই সময়ে আরও ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ কিউসেক জল চাইছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও কেন্দ্রের এই অবস্থানকে সমর্থন করছে। তাদের মতে, চুক্তির বর্তমান নীতিগুলো তাদের নিজস্ব চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। এর আগে, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার কথাও বিবেচনা করেছিল, যা আঞ্চলিক জলবণ্টন নীতিতে ভারতের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করে। গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি সংশোধনের এই পদক্ষেপ ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়, কারণ গঙ্গার জল তাদের কৃষি ও জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য চুক্তি স্থাপন করা জরুরি, যা দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুশইন করুন, জোরালো দাবি নাহিদ ইসলামের

আরও পড়ুন: নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা করছে পতিত শক্তি, অভিযোগ মুহাম্মদ ইউনুসের