২৯ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজা যুদ্ধ ‘নেতানিয়াহুর টিকে থাকার লড়াই’, বিদ্রোহ ৪১ ইসরাইলি সেনার

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 207

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজায় চলমান হামলার প্রতিবাদে ৪১ জন ইসরাইলি সেনা তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই যুদ্ধ কোনও নিরাপত্তাজনিত সিদ্ধান্ত নয়; বরং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নিজের ক্ষমতা রক্ষার রাজনৈতিক চাল।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, এই সেনারা মূলত ইসরাইলের সাইবার যুদ্ধ এবং গোয়েন্দা শাখার সদস্য। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাপ্রধান এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে একটি স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা এই যুদ্ধকে সমর্থন করেন না।

আরও পড়ুন: গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪১, মোট প্রাণহানি ৫৮ হাজার ৬৬০ ছাড়াল

চিঠিতে তাঁরা লেখেন, গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া হামলা কোনও সুরক্ষা নয়, একান্তই রাজনৈতিক স্বার্থে নেওয়া পদক্ষেপ। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য নাগরিকদের রক্ষা নয়, বরং সরকারের টিকে থাকা নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুন: ইসরাইলকে ৪৩৬৫ কোটি টাকার অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা, দেওয়া হবে ‘বম্ব গাইডেন্স কিট’ও

সেনারা স্পষ্ট জানিয়েছেন; ‘আমরা নেতানিয়াহুর ক্ষমতা রক্ষার যুদ্ধে অংশ নেব না।’ কেউ কেউ সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে এসেছেন, আবার কেউ নীরব কিন্তু সচেতনভাবে প্রতিরোধের পথ বেছে নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধ থামিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে আনুন, ট্রাম্পের কাছে কাতর আর্জি এক বন্দি ইসরায়েলি নাগরিকের মায়ের

সরকারি হিসেবে বলা হচ্ছে, এখনও গাজায় প্রায় ৫৬ জন ইসরাইলি জিম্মি রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই জীবিত আছেন বলে ধারণা। বিপরীতে, ইসরাইলি কারাগারে প্রায় ১০,০০০-র বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন, যাঁদের অনেকে চরম অবহেলার শিকার; অভিযোগ আছে অত্যাচার, অনাহার এবং চিকিৎসার অপ্রতুলতা নিয়ে।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে হামাস একাধিকবার প্রস্তাব দিয়েছে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার, সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দি বিনিময়ের। কিন্তু নেতানিয়াহু এই শর্ত মানতে রাজি নন। তিনি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।

অনেকের মতে, নেতানিয়াহু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন নিজের ডানপন্থী রাজনৈতিক সঙ্গীদের খুশি রাখতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু এবং তাঁর তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলছে গণহত্যার মামলাও।

যখন নিজ দেশের সেনারাই আর নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না, তখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে; ইসরাইলের ভিতরেই সৃষ্টি হয়েছে গভীর বিভক্তি। গাজার যুদ্ধ এখন আর শুধুই সীমান্তের লড়াই নয়, এটা ইসরাইলের ভবিষ্যৎ রাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজা যুদ্ধ ‘নেতানিয়াহুর টিকে থাকার লড়াই’, বিদ্রোহ ৪১ ইসরাইলি সেনার

আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজায় চলমান হামলার প্রতিবাদে ৪১ জন ইসরাইলি সেনা তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই যুদ্ধ কোনও নিরাপত্তাজনিত সিদ্ধান্ত নয়; বরং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নিজের ক্ষমতা রক্ষার রাজনৈতিক চাল।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, এই সেনারা মূলত ইসরাইলের সাইবার যুদ্ধ এবং গোয়েন্দা শাখার সদস্য। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাপ্রধান এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে একটি স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা এই যুদ্ধকে সমর্থন করেন না।

আরও পড়ুন: গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪১, মোট প্রাণহানি ৫৮ হাজার ৬৬০ ছাড়াল

চিঠিতে তাঁরা লেখেন, গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া হামলা কোনও সুরক্ষা নয়, একান্তই রাজনৈতিক স্বার্থে নেওয়া পদক্ষেপ। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য নাগরিকদের রক্ষা নয়, বরং সরকারের টিকে থাকা নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুন: ইসরাইলকে ৪৩৬৫ কোটি টাকার অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা, দেওয়া হবে ‘বম্ব গাইডেন্স কিট’ও

সেনারা স্পষ্ট জানিয়েছেন; ‘আমরা নেতানিয়াহুর ক্ষমতা রক্ষার যুদ্ধে অংশ নেব না।’ কেউ কেউ সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে এসেছেন, আবার কেউ নীরব কিন্তু সচেতনভাবে প্রতিরোধের পথ বেছে নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধ থামিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে আনুন, ট্রাম্পের কাছে কাতর আর্জি এক বন্দি ইসরায়েলি নাগরিকের মায়ের

সরকারি হিসেবে বলা হচ্ছে, এখনও গাজায় প্রায় ৫৬ জন ইসরাইলি জিম্মি রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই জীবিত আছেন বলে ধারণা। বিপরীতে, ইসরাইলি কারাগারে প্রায় ১০,০০০-র বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন, যাঁদের অনেকে চরম অবহেলার শিকার; অভিযোগ আছে অত্যাচার, অনাহার এবং চিকিৎসার অপ্রতুলতা নিয়ে।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে হামাস একাধিকবার প্রস্তাব দিয়েছে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার, সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দি বিনিময়ের। কিন্তু নেতানিয়াহু এই শর্ত মানতে রাজি নন। তিনি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।

অনেকের মতে, নেতানিয়াহু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন নিজের ডানপন্থী রাজনৈতিক সঙ্গীদের খুশি রাখতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু এবং তাঁর তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলছে গণহত্যার মামলাও।

যখন নিজ দেশের সেনারাই আর নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না, তখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে; ইসরাইলের ভিতরেই সৃষ্টি হয়েছে গভীর বিভক্তি। গাজার যুদ্ধ এখন আর শুধুই সীমান্তের লড়াই নয়, এটা ইসরাইলের ভবিষ্যৎ রাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ মোড়।