২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘গোয়াদা নেগেটিভ’: পৃথিবীর ৪৮তম ও একমাত্র রক্তের নতুন গ্রুপের সন্ধান, বাহক মাত্র একজন

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার
  • / 25

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে রক্তের গ্রুপ নিয়ে গবেষণায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার সামনে এল। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের গুয়াদেলুপের বাসিন্দা এক ফরাসি মহিলার দেহে পাওয়া গেল এক সম্পূর্ণ নতুন রক্তের গ্রুপ, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোয়াদা নেগেটিভ’। ফ্রান্সের জাতীয় রক্ত পরিষেবা সংস্থা ‘EFS’ (Etablissement Français du Sang) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এই মহিলা বর্তমানে গোয়াদা নেগেটিভ রক্তের একমাত্র বাহক বা রক্ত গ্রুপ ক্যারিয়ার। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে যখন মহিলার বয়স ছিল ৫৪, তখন তাঁর অস্ত্রোপচারের আগে প্যারিসে রক্ত পরীক্ষা হয়। তখনই অস্বাভাবিক অ্যান্টিবডি ধরা পড়ে, যা প্রচলিত ৪৭টি রক্ত গ্রুপ সিস্টেমের সঙ্গে মেলেনি।

তবে ২০১১ সালে সেই রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি কারণ তখন গবেষণার পরিকাঠামো ছিল সীমিত। অবশেষে ২০১৯ সালে DNA sequencing-এর মাধ্যমে নতুন গ্রুপটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায় এবং ২০২৪ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক রক্ত সংস্থা ‘ISBT’ (International Society of Blood Transfusion) একে পৃথিবীর ৪৮তম রক্ত গ্রুপ সিস্টেম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

আরও পড়ুন: ৩০ বছরের বিভ্রান্তি কাটিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের নোবেলে পুরস্কৃত বাঙালি গবেষক  

বিশেষজ্ঞ থিয়েরি পেয়রার্ড জানিয়েছেন, এই রক্ত গ্রুপের অস্তিত্ব একটি বিশেষ জিন মিউটেশনের কারণে। ওই মহিলা এই বিরল গ্রুপটি পেয়েছেন নিজের বাবা-মায়ের থেকেই, যাঁদের শরীরেও এই জিনের পরিবর্তন ঘটেছিল।

আরও পড়ুন: রাজস্থান: ভুল রক্তে প্রাণ হারাল যুবক

এই রক্ত গ্রুপের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল, বিশ্বে শুধুমাত্র একজনের শরীরেই এটি পাওয়া গেছে, তাই যেকোনো মেডিক্যাল ইমারজেন্সিতে রক্তদানের ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল হতে পারে। গবেষকেরা এখন চেষ্টা করছেন পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মধ্যে এই গ্রুপের উপস্থিতি রয়েছে কি না তা চিহ্নিত করতে।

উল্লেখযোগ্য যে, বিংশ শতকের শুরুতে ABO রক্ত গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষের রক্তে অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে গ্রুপ নির্ধারণ হতো। তবে আধুনিক জিনতাত্ত্বিক গবেষণা ও DNA বিশ্লেষণ নতুন নতুন জটিল রক্ত গ্রুপ উন্মোচনে সক্ষম হচ্ছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক বিপুল সম্ভাবনার দিক খুলে দিচ্ছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘গোয়াদা নেগেটিভ’: পৃথিবীর ৪৮তম ও একমাত্র রক্তের নতুন গ্রুপের সন্ধান, বাহক মাত্র একজন

আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে রক্তের গ্রুপ নিয়ে গবেষণায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার সামনে এল। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের গুয়াদেলুপের বাসিন্দা এক ফরাসি মহিলার দেহে পাওয়া গেল এক সম্পূর্ণ নতুন রক্তের গ্রুপ, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোয়াদা নেগেটিভ’। ফ্রান্সের জাতীয় রক্ত পরিষেবা সংস্থা ‘EFS’ (Etablissement Français du Sang) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এই মহিলা বর্তমানে গোয়াদা নেগেটিভ রক্তের একমাত্র বাহক বা রক্ত গ্রুপ ক্যারিয়ার। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে যখন মহিলার বয়স ছিল ৫৪, তখন তাঁর অস্ত্রোপচারের আগে প্যারিসে রক্ত পরীক্ষা হয়। তখনই অস্বাভাবিক অ্যান্টিবডি ধরা পড়ে, যা প্রচলিত ৪৭টি রক্ত গ্রুপ সিস্টেমের সঙ্গে মেলেনি।

তবে ২০১১ সালে সেই রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি কারণ তখন গবেষণার পরিকাঠামো ছিল সীমিত। অবশেষে ২০১৯ সালে DNA sequencing-এর মাধ্যমে নতুন গ্রুপটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায় এবং ২০২৪ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক রক্ত সংস্থা ‘ISBT’ (International Society of Blood Transfusion) একে পৃথিবীর ৪৮তম রক্ত গ্রুপ সিস্টেম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

আরও পড়ুন: ৩০ বছরের বিভ্রান্তি কাটিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের নোবেলে পুরস্কৃত বাঙালি গবেষক  

বিশেষজ্ঞ থিয়েরি পেয়রার্ড জানিয়েছেন, এই রক্ত গ্রুপের অস্তিত্ব একটি বিশেষ জিন মিউটেশনের কারণে। ওই মহিলা এই বিরল গ্রুপটি পেয়েছেন নিজের বাবা-মায়ের থেকেই, যাঁদের শরীরেও এই জিনের পরিবর্তন ঘটেছিল।

আরও পড়ুন: রাজস্থান: ভুল রক্তে প্রাণ হারাল যুবক

এই রক্ত গ্রুপের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল, বিশ্বে শুধুমাত্র একজনের শরীরেই এটি পাওয়া গেছে, তাই যেকোনো মেডিক্যাল ইমারজেন্সিতে রক্তদানের ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল হতে পারে। গবেষকেরা এখন চেষ্টা করছেন পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মধ্যে এই গ্রুপের উপস্থিতি রয়েছে কি না তা চিহ্নিত করতে।

উল্লেখযোগ্য যে, বিংশ শতকের শুরুতে ABO রক্ত গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষের রক্তে অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে গ্রুপ নির্ধারণ হতো। তবে আধুনিক জিনতাত্ত্বিক গবেষণা ও DNA বিশ্লেষণ নতুন নতুন জটিল রক্ত গ্রুপ উন্মোচনে সক্ষম হচ্ছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক বিপুল সম্ভাবনার দিক খুলে দিচ্ছে।