২৬ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থা: হরিয়ানা ও তামিলনাড়ুতে বাংলাদেশি সন্দেহে নিপীড়নের অভিযোগ

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
  • / 66

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: হরিয়ানার গুরুগ্রামে বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলাভাষী যুবকদের জামাকাপড় খুলিয়ে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ এবং ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হরিয়ানায় কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে এক জন অসমের চিরাং এবং অপর জন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা।

 

‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই শ্রমিকরা ঝাড়সার একটি বস্তিতে থাকেন। তাঁদের দাবি, ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ গুরুগ্রামের সেক্টর ১০এ থানার পুলিশ পরিচয়পত্র যাচাইয়ের নামে চার জনকে থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ, থানায় তাঁদের জামাকাপড় খুলিয়ে কেবল অন্তর্বাস পরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। পরে তাঁদের পাঠানো হয় বাদশাপুরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে।

আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যে হেনস্থা! বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য হেল্পলাইন চালু রাজ্যের 

 

আরও পড়ুন: বাংলা ও বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল তৃণমূল কংগ্রেসের

শ্রমিকদের অভিযোগ, সেই ডিটেনশন সেন্টারে আরও ১২ জনকে আটকে রাখা হয়েছিল। চার দিন পরে, ২৪ জুলাই তাঁদের মধ্যে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটক এক যুবক বলেন, “আমরা ভারতীয় নাগরিক, আমাদের কাছে বৈধ পরিচয়পত্রও ছিল। তবুও পুলিশ বার বার আমাদের বাংলাদেশি বলে অপমান করেছে এবং জামাকাপড় খুলে পরীক্ষা করেছে। প্রায় ১২ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয়েছিল।”

আরও পড়ুন: হরিয়ানার নব নির্বাচিত রাজ্যপাল হলেন হাওড়ার অসীম ঘোষ

 

তবে, হরিয়ানা পুলিশের তরফে অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, কেবল পরিচয়পত্র যাচাইয়ের জন্য যুবকদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, জামাকাপড় খোলার কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

 

বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্থার আরেকটি ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে। অভিযোগ, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা সুজন শেখ ও তাঁর তিন ভাই—মিলন শেখ, সাহিল শেখ এবং বাবু শেখ—নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের তিরুভাল্লুর এলাকায়।

 

অভিযোগ, ১৫ জুলাই কয়েক জন স্থানীয় ব্যক্তি তাঁদের নাম ও পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। তাঁরা বাংলায় কথা বলায় সন্দেহ জাগে। এরপর তাঁদের লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনায় চার জনই আহত হন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁরা মুর্শিদাবাদে ফিরে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ ।

 

হরিয়ানায় পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানির ঘটনায় মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, হরিয়ানা সরকার বাংলার ৫২ জন শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে তালিকাভুক্ত করে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এভাবে রাজ্যের শ্রমিকদের চিহ্নিত করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

 

সম্প্রতি হরিয়ানাজুড়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে তল্লাশি অভিযান চলছে। তবে একইসঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশের নাম করে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

 

এই দুই ঘটনায় স্পষ্ট, ভাষার ভিত্তিতে পরিচয় সন্দেহ করে যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে, তা সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ এবং নির্দোষ ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।

 

এই ঘটনা ঘিরে দেশজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। মানবাধিকার কর্মীরা বিষয়টির দ্রুত তদন্ত ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থা: হরিয়ানা ও তামিলনাড়ুতে বাংলাদেশি সন্দেহে নিপীড়নের অভিযোগ

আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: হরিয়ানার গুরুগ্রামে বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলাভাষী যুবকদের জামাকাপড় খুলিয়ে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ এবং ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হরিয়ানায় কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে এক জন অসমের চিরাং এবং অপর জন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা।

 

‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই শ্রমিকরা ঝাড়সার একটি বস্তিতে থাকেন। তাঁদের দাবি, ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ গুরুগ্রামের সেক্টর ১০এ থানার পুলিশ পরিচয়পত্র যাচাইয়ের নামে চার জনকে থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ, থানায় তাঁদের জামাকাপড় খুলিয়ে কেবল অন্তর্বাস পরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। পরে তাঁদের পাঠানো হয় বাদশাপুরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে।

আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যে হেনস্থা! বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য হেল্পলাইন চালু রাজ্যের 

 

আরও পড়ুন: বাংলা ও বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল তৃণমূল কংগ্রেসের

শ্রমিকদের অভিযোগ, সেই ডিটেনশন সেন্টারে আরও ১২ জনকে আটকে রাখা হয়েছিল। চার দিন পরে, ২৪ জুলাই তাঁদের মধ্যে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটক এক যুবক বলেন, “আমরা ভারতীয় নাগরিক, আমাদের কাছে বৈধ পরিচয়পত্রও ছিল। তবুও পুলিশ বার বার আমাদের বাংলাদেশি বলে অপমান করেছে এবং জামাকাপড় খুলে পরীক্ষা করেছে। প্রায় ১২ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয়েছিল।”

আরও পড়ুন: হরিয়ানার নব নির্বাচিত রাজ্যপাল হলেন হাওড়ার অসীম ঘোষ

 

তবে, হরিয়ানা পুলিশের তরফে অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, কেবল পরিচয়পত্র যাচাইয়ের জন্য যুবকদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, জামাকাপড় খোলার কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

 

বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্থার আরেকটি ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে। অভিযোগ, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা সুজন শেখ ও তাঁর তিন ভাই—মিলন শেখ, সাহিল শেখ এবং বাবু শেখ—নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের তিরুভাল্লুর এলাকায়।

 

অভিযোগ, ১৫ জুলাই কয়েক জন স্থানীয় ব্যক্তি তাঁদের নাম ও পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। তাঁরা বাংলায় কথা বলায় সন্দেহ জাগে। এরপর তাঁদের লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনায় চার জনই আহত হন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁরা মুর্শিদাবাদে ফিরে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ ।

 

হরিয়ানায় পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানির ঘটনায় মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, হরিয়ানা সরকার বাংলার ৫২ জন শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে তালিকাভুক্ত করে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এভাবে রাজ্যের শ্রমিকদের চিহ্নিত করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

 

সম্প্রতি হরিয়ানাজুড়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে তল্লাশি অভিযান চলছে। তবে একইসঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশের নাম করে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

 

এই দুই ঘটনায় স্পষ্ট, ভাষার ভিত্তিতে পরিচয় সন্দেহ করে যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে, তা সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ এবং নির্দোষ ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।

 

এই ঘটনা ঘিরে দেশজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। মানবাধিকার কর্মীরা বিষয়টির দ্রুত তদন্ত ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।