২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১০ বছরে ১৬২বার বিদেশ ভ্রমণ, ৩০০ কোটির দুর্নীতি

গাজিয়াবাদে ভুয়ো দূতাবাস খুলে গ্রেফতার হর্ষবর্ধন জৈন

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার
  • / 99

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: সাত বছর ধরে চালাচ্ছিলেন ভুয়ো দূতাবাস। গত ১০ বছরে ১৬২বার বিদেশ ভ্রমণও করে ফেলেছেন। ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দিব্যি সবার চোখে ধুলো দিয়ে চালাচ্ছিলেন প্রতারণার ব্যবসা। তবে শেষরক্ষা হল না। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন তিনি। গুণধরের নাম হর্ষবর্ধন জৈন। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স তাঁকে গ্রেফতার করেছে।

দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদে খুলে ছিলেন ভুয়ো দূতাবাস ব্যবসা। বেছে বেছে যে দেশের দূতাবাস খুলেছিলেন তিনি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে সেই দেশ আদৌ কোনও বড় দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সেই ‘গ্র্যান্ড ডাচ অব ওয়েস্টার্কটিকা’র নামে এই ভুয়ো দূতাবাস খুলেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, ওয়েস্টার্কটিকা হচ্ছে আন্টার্কটিকা মহাদেশের একটি ক্ষুদ্র দেশ। এখনও পর্যন্ত কোনও বড় দেশের স্বীকৃতি পায়নি এই ওয়েস্টার্কটিকা। যদিও ওই দেশ দাবি করে, তাদের জনসংখ্যা দু’হাজারের বেশি।

আরও পড়ুন: গাজিয়াবাদে কাঁওড় যাত্রার দোহাই দিয়ে কেএফসি ও নাজির ফুডস বন্ধ করল হিন্দু রক্ষা দল

 

আরও পড়ুন: ‘যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি সেখানে যাবেন না’,বিতর্কিত মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীর

তবে বাসিন্দাদের কেউই সে দেশে থাকেন না। আর এই দেশেরই নামে ভুয়ো দূতাবাস খুলেছিলেন জৈন। এককথায়, বিশ্ব মানচিত্রে যে দেশের স্বীকৃতি ও উল্লেখ নেই সেই দেশের নামেই দূতাবাস খুলে ছিলেন তিনি। আর সেখান থেকে হাওয়ালা ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। পুলিশের দাবি, তারা অভিযুক্তর থেকে ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। গত ১০ বছরে ১৬২বার বিদেশযাত্রাও করেন হর্ষবর্ধন জৈন। বিদেশি ব্যাঙ্কে তাঁর একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ভারত-পাক সংঘাত: ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ বিভিন্ন দেশের

গাজিয়াবাদে উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্তে একটি বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে নকল দূতাবাস খুলেছিলেন জৈন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নকল দূতাবাসের আড়ালে প্রতারণা চক্র চালাতেন হর্ষবর্ধন। বিদেশি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে মোটা টাকা তুলতেন। ২০১৭ সাল থেকে ওই প্রতারণা চক্র চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিগত আট বছর ধরেই নকল দূতাবাস চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কারও যাতে কোনও সন্দেহ না হয় সেজন্য ভুয়ো দূতাবাসের বাইরে সারি দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতেন জৈন। প্রত্যেক গাড়িতে কূটনীতিক-নম্বর প্লেট লাগান থাকত। এই ধরনের নম্বর প্লেট কূটনীতিকদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে।

 

সেইসব লাগানো থাকতো ওই গাড়িগুলিতে। অফিসে তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে নিজের ছবি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন হর্ষবর্ধন। রাষ্ট্রনেতাদের ছবি সুপার ইম্পোজ করে তারসঙ্গে নিজের ছবি জুড়েছিলেন জৈন। সেই সব ছবি দেখিয়ে বিত্তশালীদের মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। ওই বাড়ি থেকে ১২টি পাসপোর্ট, বিদেশমন্ত্রকের স্ট্যাম্প লাগানো নথি, ৩৪টি দেশের স্ট্যাম্প, নগদ ৪৪ লক্ষ টাকা, কূটনীতিকদের জন্য বরাদ্দ ১৮টি নম্বর প্লেট এবং বিদেশি মুদ্রাও পুলিশ উদ্ধার করেছে। জৈনের সঙ্গে বিতর্কিত ‘ধর্মগুরু’ চন্দ্রস্বামীর যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। একটি ছবি হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেখানে একই ফ্রেমে চন্দ্রস্বামীর সঙ্গে হর্ষবর্ধনকে দেখা যাচ্ছে।

ওয়েস্টার্কটিকার অস্তিত্ব থাকলেও কোনও দেশের সরকার বা আন্তর্জাতিক সংগঠন সেটিকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০০১ সালে ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি নামের আমেরিকার এক নাগরিক নিজেকে ওয়েস্ট আর্কটিকার গ্র্যান্ড ডিউক ঘোষণা করেন। নিজস্ব জাতীয় পতাকা, মুদ্রাও চালু করেন তিনি। ওয়েস্টার্কটিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একসময় তাদেরকে কিছু অনুদান দিয়েছিলেন হর্ষবর্ধন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কনসাল হিসেবে সম্মান জানায় হর্ষবর্ধনকে।

 

কিন্তু তাকে কোনওভাবেই আর্কটিকার দূত নিযুক্ত করা হয়নি। এদিকে, শুধুমাত্র কনসাল সম্মান পাওয়া এক ব্যক্তি যেভাবে সরাসরি তাদের ‘দেশ’-এর নাম ভাঙিয়ে দূতাবাস খুলে ফেলেছিলেন তাতে চটে লাল হয়েছেন গ্রান্ড ডিউক। ওয়েস্ট আর্কটিকা জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আর কোনও ভূমিকা থাকবে না হর্ষবর্ধনের। অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। হর্ষবর্ধনের হাতে যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন তাঁদের প্রতিও সমবেদনা ব্যক্ত করেছে ওয়েস্টার্কটিকা।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

১০ বছরে ১৬২বার বিদেশ ভ্রমণ, ৩০০ কোটির দুর্নীতি

গাজিয়াবাদে ভুয়ো দূতাবাস খুলে গ্রেফতার হর্ষবর্ধন জৈন

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: সাত বছর ধরে চালাচ্ছিলেন ভুয়ো দূতাবাস। গত ১০ বছরে ১৬২বার বিদেশ ভ্রমণও করে ফেলেছেন। ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দিব্যি সবার চোখে ধুলো দিয়ে চালাচ্ছিলেন প্রতারণার ব্যবসা। তবে শেষরক্ষা হল না। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন তিনি। গুণধরের নাম হর্ষবর্ধন জৈন। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স তাঁকে গ্রেফতার করেছে।

দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদে খুলে ছিলেন ভুয়ো দূতাবাস ব্যবসা। বেছে বেছে যে দেশের দূতাবাস খুলেছিলেন তিনি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে সেই দেশ আদৌ কোনও বড় দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সেই ‘গ্র্যান্ড ডাচ অব ওয়েস্টার্কটিকা’র নামে এই ভুয়ো দূতাবাস খুলেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, ওয়েস্টার্কটিকা হচ্ছে আন্টার্কটিকা মহাদেশের একটি ক্ষুদ্র দেশ। এখনও পর্যন্ত কোনও বড় দেশের স্বীকৃতি পায়নি এই ওয়েস্টার্কটিকা। যদিও ওই দেশ দাবি করে, তাদের জনসংখ্যা দু’হাজারের বেশি।

আরও পড়ুন: গাজিয়াবাদে কাঁওড় যাত্রার দোহাই দিয়ে কেএফসি ও নাজির ফুডস বন্ধ করল হিন্দু রক্ষা দল

 

আরও পড়ুন: ‘যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি সেখানে যাবেন না’,বিতর্কিত মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীর

তবে বাসিন্দাদের কেউই সে দেশে থাকেন না। আর এই দেশেরই নামে ভুয়ো দূতাবাস খুলেছিলেন জৈন। এককথায়, বিশ্ব মানচিত্রে যে দেশের স্বীকৃতি ও উল্লেখ নেই সেই দেশের নামেই দূতাবাস খুলে ছিলেন তিনি। আর সেখান থেকে হাওয়ালা ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। পুলিশের দাবি, তারা অভিযুক্তর থেকে ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। গত ১০ বছরে ১৬২বার বিদেশযাত্রাও করেন হর্ষবর্ধন জৈন। বিদেশি ব্যাঙ্কে তাঁর একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ভারত-পাক সংঘাত: ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ বিভিন্ন দেশের

গাজিয়াবাদে উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্তে একটি বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে নকল দূতাবাস খুলেছিলেন জৈন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নকল দূতাবাসের আড়ালে প্রতারণা চক্র চালাতেন হর্ষবর্ধন। বিদেশি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে মোটা টাকা তুলতেন। ২০১৭ সাল থেকে ওই প্রতারণা চক্র চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিগত আট বছর ধরেই নকল দূতাবাস চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কারও যাতে কোনও সন্দেহ না হয় সেজন্য ভুয়ো দূতাবাসের বাইরে সারি দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতেন জৈন। প্রত্যেক গাড়িতে কূটনীতিক-নম্বর প্লেট লাগান থাকত। এই ধরনের নম্বর প্লেট কূটনীতিকদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে।

 

সেইসব লাগানো থাকতো ওই গাড়িগুলিতে। অফিসে তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে নিজের ছবি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন হর্ষবর্ধন। রাষ্ট্রনেতাদের ছবি সুপার ইম্পোজ করে তারসঙ্গে নিজের ছবি জুড়েছিলেন জৈন। সেই সব ছবি দেখিয়ে বিত্তশালীদের মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। ওই বাড়ি থেকে ১২টি পাসপোর্ট, বিদেশমন্ত্রকের স্ট্যাম্প লাগানো নথি, ৩৪টি দেশের স্ট্যাম্প, নগদ ৪৪ লক্ষ টাকা, কূটনীতিকদের জন্য বরাদ্দ ১৮টি নম্বর প্লেট এবং বিদেশি মুদ্রাও পুলিশ উদ্ধার করেছে। জৈনের সঙ্গে বিতর্কিত ‘ধর্মগুরু’ চন্দ্রস্বামীর যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। একটি ছবি হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেখানে একই ফ্রেমে চন্দ্রস্বামীর সঙ্গে হর্ষবর্ধনকে দেখা যাচ্ছে।

ওয়েস্টার্কটিকার অস্তিত্ব থাকলেও কোনও দেশের সরকার বা আন্তর্জাতিক সংগঠন সেটিকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০০১ সালে ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি নামের আমেরিকার এক নাগরিক নিজেকে ওয়েস্ট আর্কটিকার গ্র্যান্ড ডিউক ঘোষণা করেন। নিজস্ব জাতীয় পতাকা, মুদ্রাও চালু করেন তিনি। ওয়েস্টার্কটিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একসময় তাদেরকে কিছু অনুদান দিয়েছিলেন হর্ষবর্ধন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কনসাল হিসেবে সম্মান জানায় হর্ষবর্ধনকে।

 

কিন্তু তাকে কোনওভাবেই আর্কটিকার দূত নিযুক্ত করা হয়নি। এদিকে, শুধুমাত্র কনসাল সম্মান পাওয়া এক ব্যক্তি যেভাবে সরাসরি তাদের ‘দেশ’-এর নাম ভাঙিয়ে দূতাবাস খুলে ফেলেছিলেন তাতে চটে লাল হয়েছেন গ্রান্ড ডিউক। ওয়েস্ট আর্কটিকা জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আর কোনও ভূমিকা থাকবে না হর্ষবর্ধনের। অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। হর্ষবর্ধনের হাতে যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন তাঁদের প্রতিও সমবেদনা ব্যক্ত করেছে ওয়েস্টার্কটিকা।