রক্ত দেব, কলিজা দেব, বিনাযুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না, স্লোগান বেঁধে দিলেন মমতা

- আপডেট : ৭ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 24
পুবের কলম প্রতিবেদক : ভাষা সন্ত্রাস আর এসআইআর — বিজেপির বাংলাকে আক্রমণ চলছে দোনলা বন্দুক দিয়ে। প্রথমটা দিয়ে বাংলার আবেগে ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়টি দিয়ে বাংলার বাসিন্দাদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাপোড়েন করা হচ্ছে। বুধবার ঝাড়গ্রামে গিয়ে ভাষা সন্ত্রাস মিছিলের শেষে ঝাড়গ্রামের সভা থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ভাষার সম্মানে বাঁধলেন গান, এনআরসি ইস্যুতে বেঁধে দিলেন স্লোগান। রক্ত দেব, কলিজা দেব, এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। কমিশনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে সরাসরি অভিযোগ করলেন, অমিত শাহর দালালি করছে নির্বাচন কমিশন। স্পষ্ট হুংকার দিয়ে বলেন, নাম বাদ দিতে হলে আমার দেহ পেরিয়ে যেতে হবে। বাংলাকে বাঁচাতে রাজনৈতিক রং নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যের ডাক দিলেন।
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে শহর থেকে জেলায় জেলায় ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। বীরভূমের পরে বুধবার ভাষা আন্দোলনের জন্য তাঁর দ্বিতীয় সভা সিধু কানহুর মাটি ঝাড়গ্রামে। এদিনএকলব্য মোড় থেকে পাঁচমাথার মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পথ হাঁটলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। একহাতে রবীন্দ্রনাথ আরেক হাতে বীরসামুণ্ডার ছবির সঙ্গে জয় জোহার লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসিনীরা, বীরবাহা হাঁসদা, শিউলি সাহা, মানস ভুঁইয়্যা, ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। প্রতিবাদ মিছিলের শেষে বাজানো হল বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর লেখা গান। আমার ভূমি ঐক্যবদ্ধ, বঙ্গভূমি। এদিন বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণ নিয়ে বললেন, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকান¨ কোন ভাষায় কথা বলতেন? দেশের জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় স্তোত্র কোন ভাষায় রচিত? মমতা এদিন বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল বাংলাতে। বাংলা ছাড়া ভারত হয় না। পাশাপাশি অন্য রাজ্যে কেউ বাংলা বললে, তাদের বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলা বললে জেলে ঢোকানো হচ্ছে। এই অসম্মান মানব না, তীব্র প্রতিবাদ জানালেন মমতা।
ভাষার জন্য মিছিল শেষে ঝাড়গ্রামের পাঁচমাথার মোড়ের ঝাড়গ্রামের সভামঞ্চ থেকে এনআরসি নিয়ে ফুঁসে উঠলেন মমতা। বললেন, এসআইআর -এর নেপথ্যে রয়েছে এনআরসি। মানুষ ভয়ে আত্মহত্যা করছে। মমতা এদিন আশ্বস্ত করে বলেন, কেউ ভয় পাবেন না। মানুষের অধিকার কাড়তে দেব না। এদিন বিজেপি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েü মমতা বলেন, আসল ভোটারের নাম বাদ গেলে সকলের মুখোশ খুলে দেব। এদিন অমিত শাহকে আক্রমণ করে বলেন, আপনি জন্মের শংসাপত্র দেখাতে পারবেন?
উল্লেখ্য, ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগে ইআরও এবং এইআরও মিলিয়ে চারজনকে সাসপেন্ড করেছে নির্বাতন কমিশন। ওই চারজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিবকে। এই ইস্যুতেও গর্জে উঠলেন মমতা। বললেন, নির্বাচনের দিন ঘোষণার কমিশনের অধীনে নয প্রশাসন। তাহলে কমিশন কোন অধিকারে প্রশাসনের কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়? মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে জিততে চাইছে গেরুয়া শিবির। মমতার কথায়, নির্বাচন কমিশন বিজেপির ক্রীতদাস ।
মমতার এদিন ঝাড়গ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রত্যয়ের সুরে বলেন, কেউ তাঁকে হারাতে পারবে না। যারা বিজেপিকে সমর্থন করে, তারাও তৃণমূলকেই ভোট দেবেন। কারণ, তাদেরও রোটি কাপড়া মকান দরকার। মমতার বিশ্বাস, তৃণমূল সরকারের যা নিশ্চিত করেছে বিশেষত প্রান্তিক মানুষদের ক্ষেত্রে।