১০ মে ২০২৫, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইভরি ইন-এ ‘দোস্তি কি ইফতারি’-তে বুদ্ধিজীবী-সমাজকর্মীদের সমাবেশ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৫, রবিবার
  • / 61

‘বাংলা কোন দিকে” সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছে’? আলোচনা অনুষ্ঠান

পুবের কলম প্রতিবেদক: শনিবার পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট সংলগ্ন হোটেল আইভরি ইন-এ ‘দোস্তি কি ইফতারি’ নামে এক আলোচনাচক্র ও ইফতার মজলিশের আয়োজন করা হয়। ‘নো ইয়োর নেবার’ এবং দৈনিক ‘পুবের কলম’ আয়োজিত এই মজলিশে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, গবেষক, মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক  ব্যক্তিত্ব। ‘বাংলা কোন দিকে’ সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছে’— শীর্ষক আলোচনা সভায় হাজির ছিলেন বেশ কয়েকজন মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের গুনিজন।

আমাদের দেশে বিগত এক দশকে যেভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ, বিভাজন ছড়িয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা ভারতে যেভাবে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন, চলছে বুলডোজার, বিপন্ন হচ্ছে তাদের উপাসনাস্থল মসজিদ, চার্চ এবং বৌদ্ধ মন্দির  আর মুসলিমদের পরিচিতিসূচক সমস্ত কিছুর নাম এবং পরিচয় বিলুপ্ত করার প্রয়াস শুরু হয়েছে, তাতে ভারতে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব এবং নাগরিকত্বের ভবিষ্যত মানদন্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: হাতিয়াড়া জামে মসজিদে Eid ul-Fitr-এর নামাজ

সম্প্রতি সংখ্যালঘু নির্যাতনে বাংলাদেশের নামে ভারতের মিডিয়ায় এসেছে। তবে সেখানে যদি আক্রমণ হয়ে থাকে, সেটা হচ্ছে কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর দ্বারা। আর ভারতে হচ্ছে সম্পূর্ণ সরকারি মদদ ও পরিকল্পনা।তাই এ নিয়ে ব্যাপক উদ্যোগের সৃষ্টি হয়েছে দেশের ভিতর এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর প্রমাণ্য রিপোর্ট বিদেশ দফতর অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন: মোথাবাড়িতে খুশির আবহে ঈদের নামাজ

বিদেশ দফতরের ভাষায়, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপর যেসব আক্রমণের ঘটনা ঘটছে তা ভারতের ‘কমন কোনও ঘটনা’ নয়, বরং ব্যতিক্রম ধর্মী ও বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনামাত্র। তবে দেশ-বিদেশের গবেষক বৃন্দর  এবং ভারতের সংখ্যালঘুদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইদানিং বাংলাতেও এই বিভাজন প্রচেষ্টাকে তীব্র করে পারস্পরিক বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হল ‘দোস্তি কি ইফতারি’-তে এই আলোচনা অনুষ্ঠান যার শিরোনাম ছিল ‘বাংলা কোন দিকেn সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছে’?

আরও পড়ুন: বিভাজনের রাজনীতিকে নিশানা, সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

এদিনের এই আলোচনাচক্রে উপস্থিত ছিলেন পুবের কলম-এর সম্পাদক এবং পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, নো ইয়োর নেবারের কর্ণধার সাবির আহমেসংখ্যালঘু  দফতরের আধিকারিক ওবাইদুর রহমান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মানস ঘোষ, ‘বেঙ্গল অ্যা স্যাফরন এক্সপেরিমেন্ট’ গ্রন্থের লেখক, প্রাক্তন আইপিএস শ্রীবাস্তব বৈদ্য, বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়ন্ত সিনহা, সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য, বাংলা সাহিত্য কেন্দ্রের সাদিয়া আজিম, অল্ট নিউজের প্রতীক সিনহা, অধ্যাপিকা, লেখিকা   তানভীর নাসরিন, লেখিকা সুব্রতা ঘোষ রায়, প্রবীর ঘোষ, ইন্দ্রনীল বড়ুয়া, শ্রাবস্তী সরকার, অধ্যাপক মুহাম্মদ রিয়াজ প্রমুখ।

এদিনের এই আলোচনা সভায় ইফতার যে ধর্মীয় অনুসঙ্গের বাইরেও মুহাব্বত প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তুলে ধরেন এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবির আহমেদ। এরপরই এই বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন, যে দেশকে আমরা চিনতাম, আমাদের সেই দেশ গত দশ বছরে প্রবলভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। আমাদের এই বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সুনাম আছে। ইতিহাস ঘাঁটলে  দেখা  যায় , দেশভাগের সময়ে বেলেঘাটার হায়দারি মঞ্জিলে গান্ধিজীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন শহীদ হুসেন সোহরাওয়ার্দি। যার ফলে স্বাধীনতার সময়ে পাঞ্জাবে যে দাঙ্গা হয়েছিল, তা কলকাতা ও বাংলায় হতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাংলা একটু অন্যরকম। কিন্তু  বর্তমাে  কিছু বিদ্বেষকামী মানুষ বিষ ছড়াচ্ছে। তবে সংখ্যাগুরু মানুষদের বেশিরভাগই সম্প্রীতির পক্ষে। এখানে আটশো থেকে হাজার বছর ধরে বাঙালি হিন্দু-মুসলাম একসঙ্গে পথ হাঁটছে। বর্তমানে প্রক্ষিপ্তভাবে বিদ্বেষের বিষ মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছেন, আজকের এই আলোচনায় আমরা তা জানতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ের কিছু রাজনৈতিক নেতা সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে কূকথা বলছেন। ‘পাকিস্তানিদের বাচ্চা’ বলেও তাদের উল্লে’ করছেন বিরোধী দলনেতা। শুধু তাই নয়, প্রসঙ্গক্রমে ইমরান মোথাবাড়ির সাম্প্রতিক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। আশঙ্কা প্রকাশ তিনি বলেন, বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ততই এই বিভাজনের রাজনীতি বাড়বে। এই পরিস্থিতে আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কী, আমাদের বাংলাকে এভাবেই চলতে দেব? আজকে ভারতে শুধুমাত্র মুসলমানরা আক্রান্ত হচ্ছে এমন নয়, খ্রিস্টানরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান একটি রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে উপেক্ষা করে মসজিদ ও বাড়ির উপর বুলডোজার চালানোর প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন।

এই পরিস্থিতিতে বাঙালিরা জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিরোধ করতে না পারলে পশ্চিমবঙ্গেও উত্তরপ্রদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা। বাংলাদেশে ইউনূস সরকার আসার পর কিছু টিভি চ্যানেল বিদ্বেষমূলক খবর ছড়াতে থাকে। তবুও বাংলার সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে পারেনি। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলায় এখনও ঐক্য ও ইনসাফ রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই বাংলাতেও সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্নভাবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন বিদ্বেষ ও বিভাজনকে এই বাংলায় পরাজিত করতে পারি।

অনুষ্ঠানে লেখক ও সাংবাদিক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশে হিন্দু -মুসলমানের যে লড়াই দেখনো  হচ্ছে, আসলে তা মোটেই ধর্মীয় লড়াই নয়, তা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক দক্ষিণপন্থার উত্থান হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তা ধর্মকে আশ্রয় করে দেশের উপর মনুবাদী ধ্যানধারণাকে চাপিয়ে দিতে চাইছে।

সভায় ঊর্মীমালা বসু বলেন, আসলে আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। বিরোধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর আমরাও একে অপরকে তেমনভাবে জানি না। তিনি বলেন, এই ধরণের ইফতারের অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রথম যোগ দিলেন।

তানভীর নাসরিন বলেন, হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক মানে শুধু ‘বীফ-পর্ক’- এর দ্বন্দ্ব নয়। তার বাইরেও এই বাংলায় দুই জাতির মানবিক বন্ধন আছে। সুব্রতা ঘোষ রায় বলেন, ধর্ম হচ্ছে রাজনীতির তাস। তাকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির মানুষ লাভবান হচ্ছে। সচেতন মানুষকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। বর্তমান সময়ে ‘থ্রেট নিউজ’ মারাত্মকভাবে বিষ ছড়াচ্ছে। এটা একটা ব্যবসা। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে।এদিনের অনুষ্ঠানে সাংবাদিক সেখ কুতুবউদ্দিনের কুরআন তিলাওয়াত ও তরজমার মাধ্যমে আলোচনাচক্র শুরু হয়। ইফতারের আগে দোয়া করেন সিরাতের আবু সিদ্দিক  খান। এদিনের অনুষ্ঠানে সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলে শ্রাবস্তী সরকারের কুরআন তিলাওয়াত।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শেহনাজ কাদরী, মনিরুল ইসলাম, সমাজকর্মী আলাউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। এই সভার মুখ্য বার্তা ছিল, বাংলায় একই ভাষাভাষী হিন্দু -মুসলিম সকলে মিলে সর্বস্তরে বিভাজনকে রুখতে হবে এই দৃঢ় প্রত্যয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আইভরি ইন-এ ‘দোস্তি কি ইফতারি’-তে বুদ্ধিজীবী-সমাজকর্মীদের সমাবেশ

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৫, রবিবার

‘বাংলা কোন দিকে” সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছে’? আলোচনা অনুষ্ঠান

পুবের কলম প্রতিবেদক: শনিবার পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট সংলগ্ন হোটেল আইভরি ইন-এ ‘দোস্তি কি ইফতারি’ নামে এক আলোচনাচক্র ও ইফতার মজলিশের আয়োজন করা হয়। ‘নো ইয়োর নেবার’ এবং দৈনিক ‘পুবের কলম’ আয়োজিত এই মজলিশে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, গবেষক, মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক  ব্যক্তিত্ব। ‘বাংলা কোন দিকে’ সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছে’— শীর্ষক আলোচনা সভায় হাজির ছিলেন বেশ কয়েকজন মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের গুনিজন।

আমাদের দেশে বিগত এক দশকে যেভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ, বিভাজন ছড়িয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা ভারতে যেভাবে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন, চলছে বুলডোজার, বিপন্ন হচ্ছে তাদের উপাসনাস্থল মসজিদ, চার্চ এবং বৌদ্ধ মন্দির  আর মুসলিমদের পরিচিতিসূচক সমস্ত কিছুর নাম এবং পরিচয় বিলুপ্ত করার প্রয়াস শুরু হয়েছে, তাতে ভারতে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব এবং নাগরিকত্বের ভবিষ্যত মানদন্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: হাতিয়াড়া জামে মসজিদে Eid ul-Fitr-এর নামাজ

সম্প্রতি সংখ্যালঘু নির্যাতনে বাংলাদেশের নামে ভারতের মিডিয়ায় এসেছে। তবে সেখানে যদি আক্রমণ হয়ে থাকে, সেটা হচ্ছে কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর দ্বারা। আর ভারতে হচ্ছে সম্পূর্ণ সরকারি মদদ ও পরিকল্পনা।তাই এ নিয়ে ব্যাপক উদ্যোগের সৃষ্টি হয়েছে দেশের ভিতর এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর প্রমাণ্য রিপোর্ট বিদেশ দফতর অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন: মোথাবাড়িতে খুশির আবহে ঈদের নামাজ

বিদেশ দফতরের ভাষায়, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপর যেসব আক্রমণের ঘটনা ঘটছে তা ভারতের ‘কমন কোনও ঘটনা’ নয়, বরং ব্যতিক্রম ধর্মী ও বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনামাত্র। তবে দেশ-বিদেশের গবেষক বৃন্দর  এবং ভারতের সংখ্যালঘুদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইদানিং বাংলাতেও এই বিভাজন প্রচেষ্টাকে তীব্র করে পারস্পরিক বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হল ‘দোস্তি কি ইফতারি’-তে এই আলোচনা অনুষ্ঠান যার শিরোনাম ছিল ‘বাংলা কোন দিকেn সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছে’?

আরও পড়ুন: বিভাজনের রাজনীতিকে নিশানা, সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

এদিনের এই আলোচনাচক্রে উপস্থিত ছিলেন পুবের কলম-এর সম্পাদক এবং পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, নো ইয়োর নেবারের কর্ণধার সাবির আহমেসংখ্যালঘু  দফতরের আধিকারিক ওবাইদুর রহমান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মানস ঘোষ, ‘বেঙ্গল অ্যা স্যাফরন এক্সপেরিমেন্ট’ গ্রন্থের লেখক, প্রাক্তন আইপিএস শ্রীবাস্তব বৈদ্য, বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়ন্ত সিনহা, সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য, বাংলা সাহিত্য কেন্দ্রের সাদিয়া আজিম, অল্ট নিউজের প্রতীক সিনহা, অধ্যাপিকা, লেখিকা   তানভীর নাসরিন, লেখিকা সুব্রতা ঘোষ রায়, প্রবীর ঘোষ, ইন্দ্রনীল বড়ুয়া, শ্রাবস্তী সরকার, অধ্যাপক মুহাম্মদ রিয়াজ প্রমুখ।

এদিনের এই আলোচনা সভায় ইফতার যে ধর্মীয় অনুসঙ্গের বাইরেও মুহাব্বত প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তুলে ধরেন এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবির আহমেদ। এরপরই এই বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন, যে দেশকে আমরা চিনতাম, আমাদের সেই দেশ গত দশ বছরে প্রবলভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। আমাদের এই বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সুনাম আছে। ইতিহাস ঘাঁটলে  দেখা  যায় , দেশভাগের সময়ে বেলেঘাটার হায়দারি মঞ্জিলে গান্ধিজীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন শহীদ হুসেন সোহরাওয়ার্দি। যার ফলে স্বাধীনতার সময়ে পাঞ্জাবে যে দাঙ্গা হয়েছিল, তা কলকাতা ও বাংলায় হতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাংলা একটু অন্যরকম। কিন্তু  বর্তমাে  কিছু বিদ্বেষকামী মানুষ বিষ ছড়াচ্ছে। তবে সংখ্যাগুরু মানুষদের বেশিরভাগই সম্প্রীতির পক্ষে। এখানে আটশো থেকে হাজার বছর ধরে বাঙালি হিন্দু-মুসলাম একসঙ্গে পথ হাঁটছে। বর্তমানে প্রক্ষিপ্তভাবে বিদ্বেষের বিষ মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যাগুরুরা কী ভাবছেন, আজকের এই আলোচনায় আমরা তা জানতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ের কিছু রাজনৈতিক নেতা সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে কূকথা বলছেন। ‘পাকিস্তানিদের বাচ্চা’ বলেও তাদের উল্লে’ করছেন বিরোধী দলনেতা। শুধু তাই নয়, প্রসঙ্গক্রমে ইমরান মোথাবাড়ির সাম্প্রতিক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। আশঙ্কা প্রকাশ তিনি বলেন, বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ততই এই বিভাজনের রাজনীতি বাড়বে। এই পরিস্থিতে আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কী, আমাদের বাংলাকে এভাবেই চলতে দেব? আজকে ভারতে শুধুমাত্র মুসলমানরা আক্রান্ত হচ্ছে এমন নয়, খ্রিস্টানরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান একটি রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে উপেক্ষা করে মসজিদ ও বাড়ির উপর বুলডোজার চালানোর প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন।

এই পরিস্থিতিতে বাঙালিরা জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিরোধ করতে না পারলে পশ্চিমবঙ্গেও উত্তরপ্রদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা। বাংলাদেশে ইউনূস সরকার আসার পর কিছু টিভি চ্যানেল বিদ্বেষমূলক খবর ছড়াতে থাকে। তবুও বাংলার সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে পারেনি। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলায় এখনও ঐক্য ও ইনসাফ রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই বাংলাতেও সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্নভাবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন বিদ্বেষ ও বিভাজনকে এই বাংলায় পরাজিত করতে পারি।

অনুষ্ঠানে লেখক ও সাংবাদিক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশে হিন্দু -মুসলমানের যে লড়াই দেখনো  হচ্ছে, আসলে তা মোটেই ধর্মীয় লড়াই নয়, তা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক দক্ষিণপন্থার উত্থান হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তা ধর্মকে আশ্রয় করে দেশের উপর মনুবাদী ধ্যানধারণাকে চাপিয়ে দিতে চাইছে।

সভায় ঊর্মীমালা বসু বলেন, আসলে আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। বিরোধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর আমরাও একে অপরকে তেমনভাবে জানি না। তিনি বলেন, এই ধরণের ইফতারের অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রথম যোগ দিলেন।

তানভীর নাসরিন বলেন, হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক মানে শুধু ‘বীফ-পর্ক’- এর দ্বন্দ্ব নয়। তার বাইরেও এই বাংলায় দুই জাতির মানবিক বন্ধন আছে। সুব্রতা ঘোষ রায় বলেন, ধর্ম হচ্ছে রাজনীতির তাস। তাকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির মানুষ লাভবান হচ্ছে। সচেতন মানুষকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। বর্তমান সময়ে ‘থ্রেট নিউজ’ মারাত্মকভাবে বিষ ছড়াচ্ছে। এটা একটা ব্যবসা। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে।এদিনের অনুষ্ঠানে সাংবাদিক সেখ কুতুবউদ্দিনের কুরআন তিলাওয়াত ও তরজমার মাধ্যমে আলোচনাচক্র শুরু হয়। ইফতারের আগে দোয়া করেন সিরাতের আবু সিদ্দিক  খান। এদিনের অনুষ্ঠানে সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলে শ্রাবস্তী সরকারের কুরআন তিলাওয়াত।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শেহনাজ কাদরী, মনিরুল ইসলাম, সমাজকর্মী আলাউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। এই সভার মুখ্য বার্তা ছিল, বাংলায় একই ভাষাভাষী হিন্দু -মুসলিম সকলে মিলে সর্বস্তরে বিভাজনকে রুখতে হবে এই দৃঢ় প্রত্যয়।