০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুকে ব্যথা ছাড়াও আছে হার্ট অ্যাটাকের নানান লক্ষণ, বুঝবেন কীভাবে ?

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 8
বুকে ব্যথা ছাড়াও আছে হার্ট অ্যাটাকের নানান লক্ষণ, বুঝবেন কীভাবে ?
চিকিৎসক অজয় মণ্ডল

প্রায় দিনই আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিনিয়ত এই সমস্যায় প্রাণ হারাচ্ছেন। আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাক ক্রমবর্ধমান। এর মূল কারণ- এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ রোগটি সম্পর্কে বিশদে জানেন না, তাই  দিনের পর দিন শরীরে লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও প্রচণ্ড সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। আজ হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে লিখছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক অজয় মণ্ডল।

বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টেরল প্রধানত উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড, অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ; এগুলি মূলত হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হিসাবে ধরা হয়। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হলেও রোগী বুঝতে পারে না। যেমন সুগার থাকলে হার্ট অ্যাটাকে বুকে ব্যথা হয় না।

 সমস্যা হল- কখনও কখনও বুকে ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা তা খুব ভালো করে বোঝা যায় না। তাই বুকে ব্যথা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের আরও অনেক লক্ষণ আছে। সেগুলি সম্বন্ধেও জানা জরুরি। এখন জেনে নেওয়া যাক হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণগুলি।

১. বুকে ব্যথা: সাধারণত বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড চাপ চাপ ব্যথা অনুভূত হয়।  মনে হয় বুকের মাঝে ভারী কোনও জিনিস চেপে বসে আছে। আস্তে আস্তে সেই ব্যথা চোয়ালে, পিঠে অথবা বাম কাঁধ ও বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। বাম হাত চোয়াল অবশ হতে পারে। বিশ্রাম নিলেও ব্যথা না কমা। অনেক সময় বুকে অস্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ছোট হয়। এগুলি হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ।

২. শ্বাসকষ্ট ও দম বন্ধ হয়ে যাওয়া: যদি আপনার শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও সমস্যা না থাকে এবং হঠাৎ করে বুকে ব্যথা সঙ্গে দম নিতে অসুবিধা ও দমবন্ধ ভাব অনুভূত হয়, তবে সেটা খারাপ লক্ষণ। অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ।

৩. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: বুকে ব্যথার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। পরিশ্রমের মাত্রা বা আবহাওয়ার কারণ ছাড়াই, অনুপাতের বাইরে ঘাম হওয়া। হাঁটার মতো সাধারণ কাজেই দুর্বলতা আসে। সঙ্গে ঘাম হতে পারে। ঘাম দিয়েই শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। যখন হার্ট ব্লক হয় তখন রক্ত সঞ্চালনে হৃদপিণ্ডের অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এই অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ঘামের সৃষ্টি হয় এবং এই ঘাম সাধারণত অনেক ঠান্ডা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হয় না কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড় হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ।

৪. হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া: যদি বুকে ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান, তা হলে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

৫. প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব ও হাঁফিয়ে যাওয়া: অ্যাটাকের পূর্বে প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব  আসে, কারণ হৃদপিণ্ডের ধমনীতে ব্লকেজের ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলিতে অক্সিজেনের অভাব হয়, যার ফলে শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। তখন শরীরের অন্যান্য অংশের পেশিগুলি অবসন্ন হয়ে পড়ে।

৬. বুকে ব্যথা সঙ্গে বমি: কিছু ক্ষেত্রে, অনেক কম পরিশ্রমে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টের পরে গ্যাস্ট্রোলজিকাল অস্বস্তির লক্ষণ দেখা দেয়, যার ফলে বমি ভাব এবং বমি হয়। বমি হওয়ার পর ও যদি বুকে চাপ চাপ ও অস্বস্তি ভাব না কমে তাহলে বুঝবেন এটা গ্যাসের ব্যথা নয়, এটা হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা ।

পরিশেষে এটাই বলার, যদি বুকে ব্যথা হয় নিজে ডাক্তারি করে গ্যাস বলে ওষুধ না খেয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন। কারন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসা করাতে পারলে রোগীর জীবনহানির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব যে কোনও হাসপাতালে আপদকালীন বিভাগে নিয়ে যাবেন।

চিকিৎসক, এমবিবিএস ক্যাল, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন কার্ডিওলজি, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ডায়াবেটলজি

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বুকে ব্যথা ছাড়াও আছে হার্ট অ্যাটাকের নানান লক্ষণ, বুঝবেন কীভাবে ?

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বৃহস্পতিবার
বুকে ব্যথা ছাড়াও আছে হার্ট অ্যাটাকের নানান লক্ষণ, বুঝবেন কীভাবে ?
চিকিৎসক অজয় মণ্ডল

প্রায় দিনই আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিনিয়ত এই সমস্যায় প্রাণ হারাচ্ছেন। আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাক ক্রমবর্ধমান। এর মূল কারণ- এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ রোগটি সম্পর্কে বিশদে জানেন না, তাই  দিনের পর দিন শরীরে লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও প্রচণ্ড সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। আজ হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে লিখছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক অজয় মণ্ডল।

বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টেরল প্রধানত উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড, অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ; এগুলি মূলত হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হিসাবে ধরা হয়। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হলেও রোগী বুঝতে পারে না। যেমন সুগার থাকলে হার্ট অ্যাটাকে বুকে ব্যথা হয় না।

 সমস্যা হল- কখনও কখনও বুকে ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা তা খুব ভালো করে বোঝা যায় না। তাই বুকে ব্যথা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের আরও অনেক লক্ষণ আছে। সেগুলি সম্বন্ধেও জানা জরুরি। এখন জেনে নেওয়া যাক হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণগুলি।

১. বুকে ব্যথা: সাধারণত বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড চাপ চাপ ব্যথা অনুভূত হয়।  মনে হয় বুকের মাঝে ভারী কোনও জিনিস চেপে বসে আছে। আস্তে আস্তে সেই ব্যথা চোয়ালে, পিঠে অথবা বাম কাঁধ ও বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। বাম হাত চোয়াল অবশ হতে পারে। বিশ্রাম নিলেও ব্যথা না কমা। অনেক সময় বুকে অস্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ছোট হয়। এগুলি হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ।

২. শ্বাসকষ্ট ও দম বন্ধ হয়ে যাওয়া: যদি আপনার শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও সমস্যা না থাকে এবং হঠাৎ করে বুকে ব্যথা সঙ্গে দম নিতে অসুবিধা ও দমবন্ধ ভাব অনুভূত হয়, তবে সেটা খারাপ লক্ষণ। অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ।

৩. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: বুকে ব্যথার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। পরিশ্রমের মাত্রা বা আবহাওয়ার কারণ ছাড়াই, অনুপাতের বাইরে ঘাম হওয়া। হাঁটার মতো সাধারণ কাজেই দুর্বলতা আসে। সঙ্গে ঘাম হতে পারে। ঘাম দিয়েই শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। যখন হার্ট ব্লক হয় তখন রক্ত সঞ্চালনে হৃদপিণ্ডের অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এই অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ঘামের সৃষ্টি হয় এবং এই ঘাম সাধারণত অনেক ঠান্ডা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হয় না কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড় হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ।

৪. হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া: যদি বুকে ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান, তা হলে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

৫. প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব ও হাঁফিয়ে যাওয়া: অ্যাটাকের পূর্বে প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব  আসে, কারণ হৃদপিণ্ডের ধমনীতে ব্লকেজের ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলিতে অক্সিজেনের অভাব হয়, যার ফলে শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। তখন শরীরের অন্যান্য অংশের পেশিগুলি অবসন্ন হয়ে পড়ে।

৬. বুকে ব্যথা সঙ্গে বমি: কিছু ক্ষেত্রে, অনেক কম পরিশ্রমে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টের পরে গ্যাস্ট্রোলজিকাল অস্বস্তির লক্ষণ দেখা দেয়, যার ফলে বমি ভাব এবং বমি হয়। বমি হওয়ার পর ও যদি বুকে চাপ চাপ ও অস্বস্তি ভাব না কমে তাহলে বুঝবেন এটা গ্যাসের ব্যথা নয়, এটা হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা ।

পরিশেষে এটাই বলার, যদি বুকে ব্যথা হয় নিজে ডাক্তারি করে গ্যাস বলে ওষুধ না খেয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন। কারন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসা করাতে পারলে রোগীর জীবনহানির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব যে কোনও হাসপাতালে আপদকালীন বিভাগে নিয়ে যাবেন।

চিকিৎসক, এমবিবিএস ক্যাল, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন কার্ডিওলজি, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ডায়াবেটলজি