০৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অসমে এবার খ্রিষ্টানদের নিশানা, হিমন্ত বললেন কিছুই জানি না!

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার
  • / 151

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ এবার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অসমে টার্গেট সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানরাও। অসমে সবথেকে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমরা যেভাবে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে নির্যাতিত হচ্ছেন, তা যোগীরাজ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। মুসলিমদের জিহাদি আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ধর্মস্থান ও মাদ্রাসা।

 

আরও পড়ুন: আসামে জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের সফর, নজরদারিতে পুলিশ, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

শত শত মাদ্রাসা, যা থেকে পিছিয়ে পড়া মুসলিম মেয়ে ও দরিদ্র ছাত্ররা পড়াশোনা করত, তা জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর মুসলিমদের আর শত শত গ্রাম থেকেও ৭০-৮০ বছর ধরে বসবাস করা মুসলিমদের উচ্ছেদ করে খোলা আকাশের নিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, এই প্রবল শীতের মধ্যে। আর এছাড়া হিমন্ত মুসলিমদের নিশানা করে যে বাক্যবাণ প্রয়োগ করছেন, তা শুধু বিদ্বেষমূলক নয়, পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারা অধিকার হরণের জন্য যথেষ্ট।

আরও পড়ুন: অসমে উপজাতি জেলায় ৩০০০ বিঘা জমি সিমেন্ট সংস্থাকে, ক্ষুব্ধ কোর্ট

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সম্পর্কেও বিজেপি ও সংঘ পরিবারের আচরণ মোটেই ভালো নয়। তাঁরা ধর্মান্তর করছেন, এই অযুহাতে বহু পাদ্রি এবং খ্রিষ্টানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে চার্চে হামলা চালানোরও বহু ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের দেশে।

আরও পড়ুন: ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দে আপত্তি হিমন্তের

বিজেপির নয়া ‘পোস্টার বয়’ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে অসমে মুসলিমদের মানসিকভাবে হতমান ও নানাভাবে তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করে চলেছেন।

এবার তাঁর পুলিশ-প্রশাসন অসমের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কেও নিশানা করেছে। সম্প্রতি অসমের সমস্ত জেলার এসপি অর্থাৎ সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশকে একটি নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে অসমে কতগুলি চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছে তার রিপোর্ট ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে হবে। এছাড়া ওই রিপোর্টে (খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে) কি ধরনের counter measure বা পালটা ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তারও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।

অসম খ্রিষ্টান ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, তাঁরা এই সরকারি সার্কুলারের কথা জেনে খুবই ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন। খ্রিষ্টান ফোরামের মুখপাত্র অ্যালেন ব্রুক মিডিয়াকে বলেছেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অসমীয়া সমাজে ব্যাপক অবদান রেখেছে। আমাদের অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে হাজার হাজার স্কুল রয়েছে। আমরা দেশ গড়ার কাজে সম্মুখসারিতে রয়েছি।

 

অসমের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল ডনবক্স স্কুলের ছাত্র। তিনি আরও বলেন, এই খবরটি জানাজানি হতেই বহু খ্রিষ্টান নেতা বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁকে ফোন করে প্রকৃত অবস্থা জানতে চেয়েছেন। অ্যালেন ব্রুক আরও জানিয়েছেন, বড়দিনের ঠিক আগে এই সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে। বড়দিনের উৎসব শেষ হলে আমরা বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

এদিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্ভবত উপলব্ধি করেছেন, এই সার্কুলারটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় নর্থ-ইস্টের খ্রিষ্টান রাজ্য মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি প্রদেশে প্রতিক্রিয়া হবে। প্রতিক্রিয়া হবে ভারতের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় থেকে এবং বিশ্বের খ্রিষ্টান রাষ্ট্রগুলিও বিষয়টিকে ভালোর চোখে দেখবে না। এর আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের প্রতি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বহু ঘটনার উল্লেখ করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এবং ভারত সরকারের কাছে ধর্মীয় নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।

চাপের মুখে সংখ্যালঘু বিদ্বেষী বলে পরিচিত হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি নাকি এ বিষয়ে কিচ্ছুটি জানেন না! তিনি আরও অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, কি প্রেক্ষাপটে এই সার্কুলার ইস্যু হল তা আমি বুঝতে পারছি না। কারণ, এই ধরনের সার্কুলার কোনও এক বিশেষ সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে। আমরা অসমে শান্তিতে মিলেমিশে থাকতে চাই। এই সার্কুলার থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে আলাদা করছি। কেন এই সার্কুলার ইস্যু করা হল, তা খতিয়ে দেখা হবে।

মুখ্যমন্ত্রীকে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে সাধুবাদ। তিনি এত ভালো কথা বললেন। কিন্তু আর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমদের বেশকিছু মাদ্রাসা স্বয়ং তাঁর নির্দেশে বুলডোজার দিয়ে ধূলিস্যাৎ করা হয়েছে। আর তিনি তা বুক ফুলিয়ে ও গলাবাজি করে স্বীকার করেছেন।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

অসমে এবার খ্রিষ্টানদের নিশানা, হিমন্ত বললেন কিছুই জানি না!

আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ এবার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অসমে টার্গেট সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানরাও। অসমে সবথেকে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমরা যেভাবে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে নির্যাতিত হচ্ছেন, তা যোগীরাজ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। মুসলিমদের জিহাদি আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ধর্মস্থান ও মাদ্রাসা।

 

আরও পড়ুন: আসামে জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের সফর, নজরদারিতে পুলিশ, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

শত শত মাদ্রাসা, যা থেকে পিছিয়ে পড়া মুসলিম মেয়ে ও দরিদ্র ছাত্ররা পড়াশোনা করত, তা জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর মুসলিমদের আর শত শত গ্রাম থেকেও ৭০-৮০ বছর ধরে বসবাস করা মুসলিমদের উচ্ছেদ করে খোলা আকাশের নিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, এই প্রবল শীতের মধ্যে। আর এছাড়া হিমন্ত মুসলিমদের নিশানা করে যে বাক্যবাণ প্রয়োগ করছেন, তা শুধু বিদ্বেষমূলক নয়, পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারা অধিকার হরণের জন্য যথেষ্ট।

আরও পড়ুন: অসমে উপজাতি জেলায় ৩০০০ বিঘা জমি সিমেন্ট সংস্থাকে, ক্ষুব্ধ কোর্ট

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সম্পর্কেও বিজেপি ও সংঘ পরিবারের আচরণ মোটেই ভালো নয়। তাঁরা ধর্মান্তর করছেন, এই অযুহাতে বহু পাদ্রি এবং খ্রিষ্টানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে চার্চে হামলা চালানোরও বহু ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের দেশে।

আরও পড়ুন: ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দে আপত্তি হিমন্তের

বিজেপির নয়া ‘পোস্টার বয়’ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে অসমে মুসলিমদের মানসিকভাবে হতমান ও নানাভাবে তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করে চলেছেন।

এবার তাঁর পুলিশ-প্রশাসন অসমের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কেও নিশানা করেছে। সম্প্রতি অসমের সমস্ত জেলার এসপি অর্থাৎ সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশকে একটি নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে অসমে কতগুলি চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছে তার রিপোর্ট ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে হবে। এছাড়া ওই রিপোর্টে (খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে) কি ধরনের counter measure বা পালটা ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তারও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।

অসম খ্রিষ্টান ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, তাঁরা এই সরকারি সার্কুলারের কথা জেনে খুবই ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন। খ্রিষ্টান ফোরামের মুখপাত্র অ্যালেন ব্রুক মিডিয়াকে বলেছেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অসমীয়া সমাজে ব্যাপক অবদান রেখেছে। আমাদের অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে হাজার হাজার স্কুল রয়েছে। আমরা দেশ গড়ার কাজে সম্মুখসারিতে রয়েছি।

 

অসমের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল ডনবক্স স্কুলের ছাত্র। তিনি আরও বলেন, এই খবরটি জানাজানি হতেই বহু খ্রিষ্টান নেতা বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁকে ফোন করে প্রকৃত অবস্থা জানতে চেয়েছেন। অ্যালেন ব্রুক আরও জানিয়েছেন, বড়দিনের ঠিক আগে এই সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে। বড়দিনের উৎসব শেষ হলে আমরা বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

এদিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্ভবত উপলব্ধি করেছেন, এই সার্কুলারটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় নর্থ-ইস্টের খ্রিষ্টান রাজ্য মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি প্রদেশে প্রতিক্রিয়া হবে। প্রতিক্রিয়া হবে ভারতের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় থেকে এবং বিশ্বের খ্রিষ্টান রাষ্ট্রগুলিও বিষয়টিকে ভালোর চোখে দেখবে না। এর আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের প্রতি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বহু ঘটনার উল্লেখ করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এবং ভারত সরকারের কাছে ধর্মীয় নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।

চাপের মুখে সংখ্যালঘু বিদ্বেষী বলে পরিচিত হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি নাকি এ বিষয়ে কিচ্ছুটি জানেন না! তিনি আরও অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, কি প্রেক্ষাপটে এই সার্কুলার ইস্যু হল তা আমি বুঝতে পারছি না। কারণ, এই ধরনের সার্কুলার কোনও এক বিশেষ সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে। আমরা অসমে শান্তিতে মিলেমিশে থাকতে চাই। এই সার্কুলার থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে আলাদা করছি। কেন এই সার্কুলার ইস্যু করা হল, তা খতিয়ে দেখা হবে।

মুখ্যমন্ত্রীকে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে সাধুবাদ। তিনি এত ভালো কথা বললেন। কিন্তু আর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমদের বেশকিছু মাদ্রাসা স্বয়ং তাঁর নির্দেশে বুলডোজার দিয়ে ধূলিস্যাৎ করা হয়েছে। আর তিনি তা বুক ফুলিয়ে ও গলাবাজি করে স্বীকার করেছেন।