১৬ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮১ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির সমতা নিশ্চিত করতে ভারতের বহুমুখী অভিযান

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 57

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সকল মানুষ, সব সময় যেন সক্রিয় ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য তাদের খাদ্যের চাহিদা ও পছন্দের সঙ্গে মানানসই পর্যাপ্ত নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যে শারীরিক ও আর্থিকভাবে অধিকার পায়।
এটি অর্জন করতে হলে শুধুমাত্র খাদ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদনই যথেষ্ট নয়, বরং এর ন্যায়সঙ্গত বন্টনও অপরিহার্য। উৎপাদনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে লা সরকার ২০০৭–০৮ সালে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা (NFSM) মিশনের সূচনা হয়।

এর উদ্দেশ্য ছিল – এলাকা সম্প্রসারণ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ধান, গম ও ডালের উৎপাদন বাড়ানো। মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। খামার স্তরের অর্থনীতিকে উন্নত করা।
২০১৪–১৫ সালে, এনএফ এসএম -এর (NFSM) আওতা বাড়িয়ে মোট দানাশস্যকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে উৎপাদনশীলতা, মাটির স্বাস্থ্য এবং কৃষকের আয়ের উপর জোর দেওয়া হয়।২০২৪–২৫ সালে, এটির নতুন নামকরণ করা হয় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি মিশন, যেখানে খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি – উভয়ের ওপরই জোর দেওয়া হয়। এন এফএসএম -এর (NFSNM) অধীনে, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে। যেমন: শস্য উৎপাদন ও সুরক্ষা প্রযুক্তি, শস্য বিন্যাস ভিত্তিক প্রদর্শন, সদ্য প্রকাশিত উন্নত জাত/হাইব্রিডের প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদন ও বিতরণ, সমন্বিত পুষ্টি ও কীট নিয়ন্ত্রণ কৌশল এবং ফসলের মরসুমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: Israel’s Supreme Court : ফিলিস্তিনি বন্দিদের খেতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন/পুষ্টি মিশন (NFSM/NFSNM) যেখানে কেন্দ্রীয় মজুতের জন্য বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন নিশ্চিত করে, সেখানে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন (NFSA), ২০১৩ সেগুলির ন্যায়সঙ্গত বন্টন নিশ্চিত করে। এনএফ এসএ (NFSA) আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ মানুষ লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে ভর্তুকিযুক্ত (বর্তমানে বিনামূল্যে) খাদ্যশস্য পাওয়ার আইনি অধিকার পায়। এর মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলি পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারে।

আরও পড়ুন: কাঁটা-চামচ নয়, হাত দিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল

একসাথে, এনএফএসএম/এনএফএসএনএম (NFSM/NFSNM) এবং এনএফএসএ (NFSA) ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা কাঠামোর মূল ভিত্তি তৈরি করেছে। একটি উৎপাদন বাড়ায় আর অন্যটি বন্টন নিশ্চিত করে, ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি, স্থায়িত্ব এবং পুষ্টি সুরক্ষাও নিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুন: ব্রণর হাতে থেকে রেহাই পেতে খান এই ৩ খাবার

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন (NFSA) এবং লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা (TPDS)

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন (NFSA)

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩-এর লক্ষ্য হল গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫% পর্যন্ত এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫০% পর্যন্ত মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই সংখ্যাটি হল ৮১.৩৫ কোটি মানুষ।
এই আইনের অধীনে, অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার অন্তর্গত পরিবারগুলি, যারা সবচেয়ে দরিদ্র, তারা প্রতি মাসে প্রতি পরিবার পিছু ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী। অন্যদিকে, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারগুলি আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে প্রতি ব্যক্তি পিছু ৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী। এই খাদ্যশস্য ভর্তুকিযুক্ত দামে (বর্তমানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে) দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে।

এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য আনুমানিক ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, ৭৮.৯০ কোটি সুবিধাভোগী এই আইনের অধীনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পাচ্ছেন।

এনএফএসএ অনুসারে, এই যোগ্য পরিবারগুলি লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী।
এই আইনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে মানুষ সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে। এটি কম দামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো মানের খাদ্য দিয়ে মানুষের জীবনের বিভিন্ন ধাপে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আইনটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশকে (গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫% পর্যন্ত এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫০% পর্যন্ত) খাদ্যশস্য (চাল, গম, মোটা দানাশস্য) পাওয়ার সুযোগ দেয়। এই শস্যগুলি আইনে নির্দিষ্ট করা মূল্যে (Schedule-I) পাওয়া যায়।এছাড়াও, এই আইন অনুসারে, গর্ভবতী মহিলা, সন্তানকে দুধ খাওয়ানো মা এবং ৬ মাস থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা ‘সমন্বিত শিশু বিকাশ পরিষেবা (ICDS)’ এবং ‘পিএম-পোষণ’ প্রকল্পের অধীনে নির্দিষ্ট পুষ্টির মান অনুযায়ী খাবার পাওয়ার অধিকারী। ৬ বছর পর্যন্ত অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য আরও বেশি পুষ্টির মান ধার্য করা হয়েছে। পাশাপাশি, গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদানকারী মায়েরা কমপক্ষে ৬,০০০ টাকা নগদ মাতৃত্বকালীন সুবিধা পাবেন। এই অর্থ গর্ভাবস্থায় মজুরি হারানোর ক্ষতি কিছুটা পূরণ করে এবং পুষ্টির জন্য সহায়তা করে। সুবিধাভোগীদের পুষ্টির মান বাড়ানোর জন্য সরকার ২৫.০১.২০২৩ তারিখের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইনের তফসিল-২ (Schedule-II)-এ থাকা পুষ্টির মানগুলি সংশোধন করেছে।

লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার:

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের সুবিধা যাতে যোগ্য মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করার জন্য লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা হল প্রধান মাধ্যম। ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য বিতরণের কাজটি এটি কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলির যৌথ দায়িত্বে করে থাকে:
কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্যশস্য সংগ্রহ, বরাদ্দ এবং ভারতীয় খাদ্য কর্পোরেশনের (ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া) নির্দিষ্ট গুদাম পর্যন্ত পরিবহন করে থাকে।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার রাজ্যের মধ্যে বরাদ্দ ও বিতরণ পরিচালনা করে, যোগ্য সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে, রেশন কার্ড ইস্যু করে, এবং দক্ষতার সঙ্গে বিতরণ নিশ্চিত করতে ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলির কাজ তদারকি করে।

এই কাঠামোটি লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগ্য পরিবার, বিশেষ করে দরিদ্র ও দুর্বল মানুষের জন্য খুব কম দামে ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্যের সুবিধা নিশ্চিত করে।

আইনটি খাদ্য পাওয়ার জন্য পরিবারগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করে:

অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা পরিবার: এই পরিবারগুলি সবচেয়ে দরিদ্রতম মানুষের নিয়ে গঠিত। এই পরিবারগুলি প্রতি মাসে প্রতি পরিবার পিছু ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী।

অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবার: এই পরিবারগুলি প্রতি মাসে প্রতি ব্যক্তি পিছু ৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী।

কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে।

এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য আনুমানিক ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

সুবিধাভোগী কারা?

অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা পরিবারসমূহ
শনাক্তকরণ: এই পরিবারগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনে রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি বেছে নেয়, যারা সবচেয়ে দরিদ্র।

যেসব পরিবারের প্রধান হলেন বিধবা, মারাত্মক অসুস্থ ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অথবা ৬০ বছরের বেশি বয়সী বয়স্ক ব্যক্তি, যাদের জীবনধারণের কোনো নিশ্চিত উপায় বা সামাজিক সাহায্য নেই।

বিধবা, মারাত্মক অসুস্থ ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অথবা ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী একক মহিলা বা একক পুরুষ, যাদের পরিবার বা সমাজের কোনো সাহায্য নেই কিংবা জীবনধারণের নিশ্চিত উপায় নেই।

সকল জনজাতি পরিবার।
ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক, প্রান্তিক চাষি, গ্রামীণ কারিগর/শিল্পী, বস্তিবাসী এবং গ্রামীণ ও শহুরে উভয় এলাকার অন্যান্য ক্ষেত্রে দৈনিক রোজগার করা মানুষ এবং একই ধরনের অন্যান্য শ্রেণী।

এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের সমস্ত যোগ্য দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবার।

অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারসমূহ

শনাক্তকরণ: এই পরিবারগুলিকে রাজ্য সরকার/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনগুলি তাদের নিজস্ব মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন করে।

লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার অধীনে সুবিধাভোগী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া

লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ আদেশ, ২০১৫ অনুযায়ী, এনএফএসএ সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করার কাজটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সরকার নিয়মিতভাবে করে থাকে।এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অযোগ্য, ভুয়ো বা নকল রেশন কার্ড বাতিল করা, যাতে শুধুমাত্র প্রকৃত যোগ্য পরিবারগুলিই সুবিধা পায়। একটি সুবিধাভোগীর তালিকা বজায় রাখা এবং খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে, এনএফএসএ (NFSA) নিশ্চিত করে যে দুর্বল ও অভাবী মানুষকে কার্যকরভাবে সাহায্য করা হচ্ছে।এই প্রক্রিয়াটি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করে, বাজারের দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং যোগ্য সুবিধাভোগীদের কাছে সুবিধা পৌঁছানোকে আরও উন্নত করে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সরকারি উদ্যোগ

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা
দেশে কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হওয়ায় গরীব ও প্রান্তিক মানুষেরা যে কষ্ট পাচ্ছিলেন, তা কমানোর জন্যই বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পটি সাতটি ধাপে চালু ছিল। এই যোজনার সপ্তম ধাপটি ৩১.১২.২০২২ তারিখ পর্যন্ত চলেছিল।

দরিদ্র মানুষদের ওপর আর্থিক চাপ কমাতে এবং সারা দেশে গরিবদের সাহায্যের জন্য এই কর্মসূচি যাতে সঠিকভাবে ও একই নিয়মে চলে, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই যোজনার আওতায় অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া শুরু হয়।এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য আনুমানিক ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

চালের পুষ্টি সংবর্ধন উদ্যোগ

দেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পুষ্টির অভাব দূর করা ভারত সরকারের সবসময়ই একটি জরুরি কাজ। খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর এই বিষয়ে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সামগ্রিক পুষ্টি পরিস্থিতি ভালো করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দপ্তরের পক্ষ থেকে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি হল চালের পুষ্টি সংবর্ধন উদ্যোগ।

প্রধান খাদ্যশস্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মেশানো একটি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত, নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং গবেষণালব্ধ পদ্ধতি। এটি পুষ্টির অভাব কমানোর জন্য একটি সহায়ক কৌশল।

যেহেতু ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশের প্রধান খাবার হল ভাত (চাল), তাই ভারত সরকার ২০১৯ সালে চালের পুষ্টি সংবর্ধনের উপর একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চালু করে।

২০২১ সালে ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে, ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারের খাদ্য প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের সবচেয়ে গরিব ও দুর্বল মানুষের জন্য পুষ্টি সংবর্ধিত চাল সরবরাহ করা হবে।

ভারতে চালের পুষ্টি সংবর্ধন চালু করার সিদ্ধান্তটি একটি সম্পূর্ণ প্রকল্প জীবনচক্রের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে ছিল পরীক্ষামূলক প্রয়োগ, মান নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি, কার্যকর করা এবং তারপর এর সম্প্রসারণ।
এই প্রকল্পটি বিভিন্ন পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে:
প্রথম পর্যায় (২০২১-২২): এর আওতায় ছিল আইসিডিএস এবং পিএম পোষণ প্রকল্প। দ্বিতীয় পর্যায় (২০২২-২৩): এর আওতায় ছিল আইসিডিএস, পিএম পোষণ এবং লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা – মোট ২৬৯টি আশাবাদীও গুরুতর অপুষ্টি কবলিত জেলায়।
তৃতীয় পর্যায় (২০২৩-২৪):
টিডিপিএস-এর অধীনে থাকা বাকি জেলাগুলিকেও এর আওতায় আনা হয়।২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে, সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পিএমজেকেওয়াই, আইসিডিএস, পিএম – পোষণ স্কীম সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা ১০০% চালেই পুষ্টি সংবর্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
সম্প্রতি মন্ত্রীসভা ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের অধীনে পুষ্টি সংবর্ধিত চালের সার্বজনীন সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এই পুরো খরচের (১৭,০৮২ কোটি টাকা) ১০০% -ই
পিএমজেকেওয়াই -এর অংশ হিসেবে ভারত সরকার বহন করবে।

সরাসরি সুবিধাভোগী স্থানান্তর –
জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে একটি হল খাদ্য সুবিধার জন্য সরাসরি সুবিধাভোগী স্থানান্তর চালু করা।

সরকার ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ‘খাদ্য ভর্তুকির নগদ স্থানান্তরের নিয়ম, ২০১৫’ ঘোষণা করে। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল খাদ্যশস্যের স্থানান্তর কমানো। সুবিধাভোগীদের খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা দেওয়া। খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের খাবার যোগ করা।চুরি ও দুর্নীতি কমানো। যোগ্য সুবিধাভোগীকে আরও সঠিকভাবে চিহ্নিত করা।
মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ বাড়ানো।

খাদ্য ভর্তুকি নগদ স্থানান্তর বিধি, ২০১৫’-এর বাস্তবায়ন
এই প্রকল্পটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য ঐচ্ছিক।

এটি রাজ্য সরকারের লিখিত সম্মতিক্রমে “চিহ্নিত এলাকাগুলিতে” শুরু করা হয়।

যে এলাকাগুলিতে এটি শুরু হয়নি, সেখানে ঐতিহ্যবাহী গণবন্টন ব্যবস্থা পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য বিতরণ চলতে থাকে।

খাদ্যে সরাসরি নগদ অর্থ স্থানান্তরের বাস্তবায়ন
সেপ্টেম্বর ২০১৫: চণ্ডীগড় এবং পুদুচেরিতে (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল) চালু হয়।

মার্চ ২০১৬: দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ- এর কিছু অংশে চালু হয়।

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এনএফএসএ নগদ অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে কাজ করে:

ভর্তুকির সমতুল্য নগদ অর্থ সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।

এর ফলে যোগ্য পরিবারগুলি খোলা বাজার থেকে খাদ্যশস্য কিনতে পারে।

সমন্বিত শিশু বিকাশ প্রকল্প – (আইসিডিএস)
এই প্রকল্পটি নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে গম-ভিত্তিক পুষ্টি কর্মসূচি এবং
কিশোরী প্রকল্পের মাধ্যমে চালানো হয়।এর মাধ্যমে ৬ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরীদের অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। এই খাবারগুলি রান্না করা খাবার অথবা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার উপযোগী রেশনের আকারে দেওয়া হয়।

খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর থেকে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ: ২৬.৪৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল, গম ও মোট দানাশস্য।

পিএম পোষণ (পোষণ শক্তি নির্মাণ স্কীম)

এই প্রকল্পটি খুবই প্রয়োজনীয় জাতীয় উদ্যোগ। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল সরকারী ও সরকার পোষিত স্কুলের শিশুদের পুষ্টির মান ভালো করা এবং ক্ষুধা দূর করা, যাতে তাদের পড়াশোনার উন্নতি হয়। এর ফলে গরিব ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত স্কুলে আসতে উৎসাহ পায়। এই প্রকল্পের অধীনে, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীকে পুষ্টিকর, মিড ডে মিল দেওয়া হয়। এই খাবারগুলি পুষ্টির মান বজায় রেখে তৈ রি করা হয়। এর ফলে শিশুদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, স্কুলে উপস্থিতি বাড়ে এবং পড়াশোনার ফলও উন্নত হয়। পাশাপাশি, এটি সমাজে সমতা আনে এবং মানুষের অংশগ্রহণকেও উৎসাহিত করে। খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর থেকে ২০২৪-২৫ সালের জন্য বরাদ্দ: ২২.৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল ও গম।

এক দেশ, এক রেশন কার্ড (ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড)

এক দেশ, এক রেশন কার্ড প্রকল্পটি ভারতের সব ৩৬টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সফলভাবে চালু হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৮১ কোটি সুবিধাভোগী তাঁদের পুরোনো রেশন কার্ড বা আধার কার্ড ব্যবহার করে, যেকোনো ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে বায়োমেট্রিক দিয়ে তাঁদের প্রাপ্য খাদ্যশস্য তুলতে পারছেন।এই প্রকল্পটি বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খুবই সুবিধার এবং এটি নকল বা ডুপ্লিকেট রেশন কার্ড হওয়াও আটকায়।

শুরু থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, প্রায় ১৯১ কোটি রেশন তোলার ঘটনা (যা রাজ্য থেকে রাজ্য বা রাজ্যের মধ্যে হয়েছে) এই পদ্ধতিতে রেকর্ড করা হয়েছে।

গণবন্টন ব্যবস্থা এবং খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্প (স্থানীয়)
গণবন্টন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল কম দামে খাদ্যশস্য বিলি করে খাদ্যের অভাব মোকাবিলার একটি ব্যবস্থা হিসেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিডিএস দেশের খাদ্য অর্থনীতি পরিচালনার জন্য সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হয়ে উঠেছে।প্রযুক্তি-ভিত্তিক সংস্কারের কারণে পিডিএস-এর কাজ এখন অনেক বেশি দক্ষ, স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল হয়েছে। এর ফলে রেশন কার্ড/সুবিধাভোগীর তথ্যভান্ডার ১০০% ডিজিটাল হয়েছে।
৯৯.৯% রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করা হয়েছে। প্রায় ৯৯.৬% ন্যায্য মূল্যের দোকানে (৫.৪৩ লক্ষের মধ্যে ৫.৪১ লক্ষ দোকানে) ই-পিওএস ডিভাইস লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আধার যাচাই করে স্বচ্ছভাবে ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও, খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্পের (স্থানীয়) মাধ্যমে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য (গম ও চাল) বিক্রি করা হয়। এর ফলে বাজারে খাদ্যশস্যের সরবরাহ বাড়ে, দাম স্থিতিশীল রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য সহজলভ্য হয়।

এই প্রকল্পের সুবিধা:
বাজারে খাদ্যশস্যের যোগান বাড়ে।
দাম স্থির রেখে বাজারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যশস্যকে আরও সাশ্রয়ী করা যায়।

এছাড়াও, খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্পের (স্থানীয়) নীতির অধীনে ভর্তুকিযুক্ত দামে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে আটা ও চাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারত আটা এবং ভারত চাল চালু করা হয়েছে।

এনএফএস-এর অধীনে খাদ্যশস্য সংগ্রহ, মজুত এবং বরাদ্দ

গম ও চাল সংগ্রহ করা হয় রাজ্য সরকারি সংস্থা এবং ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে । নিশ্চিত করা হয় যে এই শস্যগুলি ন্যায্য গুণমান বজায় রাখে। এই সংগৃহীত খাদ্যশস্যগুলি কেন্দ্রীয় মজুতে রাখা হয় এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্পের অধীনে বিতরণ করা হয়।

প্রতিটি বিপণন মরসুমের আগে, দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়:

খাদ্যশস্য সংগ্রহের পদ্ধতি
বিকেন্দ্রীকৃত সংগ্রহ ব্যবস্থা – এই পদ্ধতিতে রাজ্য সরকারগুলি নিজেরাই ধান/চাল এবং গম কেনা, মজুত করা এবং এনএফএসএ ও অন্যান্য প্রকল্পের অধীনে বিতরণ করার কাজ করে। রাজ্যের বরাদ্দের চেয়ে বেশি যে পরিমাণ শস্য মজুত হয়, তা ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কেন্দ্রীয় সংগ্রহ ব্যবস্থা –
এই পদ্ধতিতে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা রাজ্য সংস্থাগুলি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে। সংগৃহীত শস্যগুলি ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে দেওয়া হয়, যা পরে রাজ্যের মধ্যে বিতরণ করা হয় অথবা অন্যান্য রাজ্যে পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

এই দুটি ব্যবস্থাই কৃষকদের আয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি, গণবন্টনের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের জোগান নিশ্চিত করে।সারা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা এবং কার্যকর বন্টন নিশ্চিত করার জন্য সরকার খাদ্যশস্যের একটি কেন্দ্রীয় মজুত বজায় রাখে, যা গণবন্টন ব্যবস্থার প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত, কেন্দ্রীয় মজুতে ৩৭৭.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাল এবং ৩৫৮.৭৮ লক্ষ মেট্রিক টন গম মজুত ছিল। এর বিপরীতে মজুতের যে সাধারণ নিয়ম আছে, তা হলো যথাক্রমে ১৩৫.৪০ লক্ষ মেট্রিক টন চাল এবং ২৭৫.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন গম। এই মজুত করা শস্য প্রথমে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা, অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্প, এবং দুর্যোগ বা উৎসবের জন্য অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হয়।

এরপর অতিরিক্ত খাদ্যশস্যগুলি খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্পের (স্থানীয়) মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে, যোগ্য দেশগুলিকে মানবিক সাহায্য হিসেবে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনুদান হিসেবে সরবরাহ করা হয়।

ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থার অধীনে প্রধান খাদ্যশস্য – ধান এবং গম – সংগ্রহ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এর মাধ্যমে মূলত খাদ্যশস্যের শারীরিক জোগান নিশ্চিত করা হয় এবং কৃষক ও ভোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ে।

২০২৫ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী:

খারিফ বিপণন মরসুমে ২০২৪-২৫-এ ৮১৩.৮৮ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মূল্য ছিল ১.৯ লক্ষ কোটি টাকা (এমএসপি অনুযায়ী), যার ফলে, ১.১৫ কোটি কৃষক উপকৃত হয়েছেন।রবি বিপণন মরসুমে ২০২৪-২৫-এ ২৬৬.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মূল্য ছিল ৬০,৫২৬.৮০ কোটি টাকা, যার ফলে ২২.৪৯ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
রবি বিপণন মরসুমে ২০২৫-২৬ (১১.০৮.২০২৫ পর্যন্ত)-এ ৩০০.৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মূল্য ছিল ৭২,৮৩৪.১৫ কোটি টাকা, যার ফলে ২৫.১৩ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন।

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন ভালোভাবে কার্যকর করতে এবং সময়মতো খাদ্যশস্য পৌঁছে দিতে, এনএফএস-এর অধীনে মোট বার্ষিক খাদ্যশস্যের বরাদ্দ ছিল:

২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের জন্য (জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত): ১৮,৪৯৮.৯৪ হাজার টন।

২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য: ৫৫,৪৯৩.০৪৪ হাজার টন।

গণবন্টন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দক্ষতার জন্য প্রধান পদক্ষেপসমূহ

গণবন্টন ব্যবস্থার সংস্কারকে আরও উন্নত করতে সরকার আরও একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ডিজিটাইজেশান: সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে রেশন কার্ড এবং সুবিধাভোগীদের তথ্যভান্ডার সম্পূর্ণভাবে (১০০%) ডিজিটাল করা হয়েছে।

স্বচ্ছতা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি: দেশজুড়ে একটি স্বচ্ছতা পোর্টাল, অনলাইন অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে।

অনলাইন বরাদ্দ ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থা:

চণ্ডীগড়, পুদুচেরি এবং দাদরা ও নগর হাভেলির শহুরে এলাকাগুলি (যেখানে সরাসরি নগদ অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে) ছাড়া বাকি সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অনলাইন বরাদ্দ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ৩১-টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা কম্পিউটারাইজড করা হয়েছে।

আধার সংযুক্তি: জাতীয় স্তরে প্রায় ৯৯.৯% রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করা হয়েছে।

ন্যায্য মূল্যের দোকানে যন্ত্র বসানো : এখন প্রায় সব ন্যায্য মূল্যের দোকানেই ই-পিওএস যন্ত্র লাগানো হয়েছে। এর ফলে বায়োমেট্রিক বা আধার কার্ডের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করে এনএফএস-এর অধীনে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়, যা এই কাজকে স্বচ্ছ ও ইলেকট্রনিক করেছে।

এক দেশ, এক রেশন কার্ড :

এই সুবিধার কারণে উপভোক্তারা দেশের যেকোনো জায়গা থেকে গণবন্টন ব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারেন। এটি সুবিধাভোগীদের জন্য অন্যত্র যাওয়ার এবং সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।

অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা: গণবন্টন ব্যবস্থার যেকোনো অভিযোগ জানাতে এবং সেগুলির সমাধান পেতে সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১৯৬৭/১৮০০-স্টেট সিরিজ নম্বর (টোল-ফ্রি নম্বর) চালু আছে। এই দপ্তরে গণবণ্টন ব্যবস্থায় দুর্নীতি বা অর্থ আত্মসাৎ সহ যেকোনো অভিযোগ এলে, তা তদন্ত এবং সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সরকারের কাছে পাঠানো হয়।

গণবন্টন ব্যবস্থার ডিজিটাল সংস্কার
‘মেরা রেশন ২.০’

প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার সুবিধাভোগীদের জন্য স্বচ্ছতা এবং সুবিধা বাড়াতে, খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট ‘মেরা রেশন ২.০’ মোবাইল অ্যাপটি চালু করেছে।

এই উন্নত অ্যাপটি সুবিধাভোগীদের তাঁদের প্রাপ্য খাদ্যশস্য, কতটুকু তোলা হয়েছে তার তথ্য এবং সবচেয়ে কাছের ন্যায্য মূল্যের দোকানের অবস্থান সম্পর্কে সময়মতো সঠিক তথ্য দেয়। এর সঙ্গে অ্যাপটিতে আরও কিছু নতুন সুবিধা যোগ করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা সহজ এবং ভাল হয়। ইতিমধ্যেই এই অ্যাপটি ১ কোটিরও বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে।

অন্ন মিত্র’ মোবাইল অ্যাপ
‘অন্ন মিত্র’ অ্যাপটি গণবন্টন ব্যবস্থার তৃণমূল স্তরের কর্মীদের জরুরি কাজের তথ্যে সুরক্ষিতভাবে প্রবেশাধিকার দিয়ে তাদের ক্ষমতা বাড়ায়। ন্যায্য মূল্যের দোকানের ডিলার, ফুড ইন্সপেক্টর এবং জেলা খাদ্য সরবরাহ কর্মকর্তাদের জন্য এটি প্রাথমিক স্তরের কাজ তদারকি, মজুত ব্যবস্থা এবং নিয়ম মানার রিপোর্ট তৈরি করার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

‘অন্ন মিত্র’-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য:

তৃণমূল স্তরের কাজ, মজুত নজরদারি এবং নিয়ম মানার রিপোর্ট তৈরি করাকে সহজ করে।

রেশন কার্ডের লেনদেনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, সুবিধাভোগী ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের তথ্য সরবরাহ করে।

পরিদর্শন মডিউল, মতামত এবং রেটিং দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।

জেলার স্তর থেকে ন্যায্য মূল্যের দোকান পর্যন্ত মজুতের ব্যবস্থাপনা সহজ করে।

সুবিধা:
বাধা দূর করা এবং কাগজপত্র ব্যবহারের ঝক্কি কমানো।

সময়মতো তথ্য পাওয়ার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

গণবন্টন ব্যবস্থার সমস্ত প্রধান অংশীদারদের একটি নিরাপদ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এনে স্বচ্ছতা, গতি এবং দক্ষতা উন্নত করা।

বর্তমানে, ‘অন্ন মিত্র’ অ্যাপটি ১৫-টি রাজ্যে চালু আছে – অসম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, নাগাল্যান্ড, গোয়া, জম্মু ও কাশ্মীর, দমন ও দিউ, লাদাখ, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব এবং ত্রিপুরা। অ্যাপটি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এটি পর্যায়ক্রমে চালু করার কাজ চলছে।

স্মার্ট-পিডিএস

এই সংস্কারগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, ভারত সরকার ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে SMART-PDS (Scheme for Modernisation and Reforms through Technology in PDS) প্রকল্পটি চালু করতে চলেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল, গণবন্টন ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত ভিত্তি আরও শক্তিশালী করা এবং চারটি প্রধান মডিউলের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন আনা:

১.খাদ্যশস্য সংগ্রহ

২.সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থা এবং শস্য বরাদ্দ

৩.রেশন কার্ড এবং ন্যায্য মূল্যের দোকান ব্যবস্থা

৪.বায়োমেট্রিক-ভিত্তিক শস্য বিতরণ মডিউল (ই-কেওয়াইসি)

ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি কৃষি উৎপাদন শক্তিশালী করা এবং তার সাথে ন্যায়সঙ্গত বন্টন নিশ্চিত করা – এই দুটি কৌশলের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। একই সময়ে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা, বিকেন্দ্রীকৃত সংগ্রহ ব্যবস্থা, এবং খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্প – স্থানীয়র মত প্রধান প্রকল্পগুলি মিলে প্রায় ৮১ কোটি মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও সকলের জন্য সহজলভ্য বন্টন নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে:
এই মানুষজন কম দামে খাদ্যশস্য পাবেন। বাজারে দামের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। দুর্বল পরিবারগুলি ক্ষুধা ও অপুষ্টি থেকে রক্ষা পাবে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

৮১ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির সমতা নিশ্চিত করতে ভারতের বহুমুখী অভিযান

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সকল মানুষ, সব সময় যেন সক্রিয় ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য তাদের খাদ্যের চাহিদা ও পছন্দের সঙ্গে মানানসই পর্যাপ্ত নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যে শারীরিক ও আর্থিকভাবে অধিকার পায়।
এটি অর্জন করতে হলে শুধুমাত্র খাদ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদনই যথেষ্ট নয়, বরং এর ন্যায়সঙ্গত বন্টনও অপরিহার্য। উৎপাদনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে লা সরকার ২০০৭–০৮ সালে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা (NFSM) মিশনের সূচনা হয়।

এর উদ্দেশ্য ছিল – এলাকা সম্প্রসারণ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ধান, গম ও ডালের উৎপাদন বাড়ানো। মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। খামার স্তরের অর্থনীতিকে উন্নত করা।
২০১৪–১৫ সালে, এনএফ এসএম -এর (NFSM) আওতা বাড়িয়ে মোট দানাশস্যকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে উৎপাদনশীলতা, মাটির স্বাস্থ্য এবং কৃষকের আয়ের উপর জোর দেওয়া হয়।২০২৪–২৫ সালে, এটির নতুন নামকরণ করা হয় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি মিশন, যেখানে খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি – উভয়ের ওপরই জোর দেওয়া হয়। এন এফএসএম -এর (NFSNM) অধীনে, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে। যেমন: শস্য উৎপাদন ও সুরক্ষা প্রযুক্তি, শস্য বিন্যাস ভিত্তিক প্রদর্শন, সদ্য প্রকাশিত উন্নত জাত/হাইব্রিডের প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদন ও বিতরণ, সমন্বিত পুষ্টি ও কীট নিয়ন্ত্রণ কৌশল এবং ফসলের মরসুমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: Israel’s Supreme Court : ফিলিস্তিনি বন্দিদের খেতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন/পুষ্টি মিশন (NFSM/NFSNM) যেখানে কেন্দ্রীয় মজুতের জন্য বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন নিশ্চিত করে, সেখানে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন (NFSA), ২০১৩ সেগুলির ন্যায়সঙ্গত বন্টন নিশ্চিত করে। এনএফ এসএ (NFSA) আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ মানুষ লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে ভর্তুকিযুক্ত (বর্তমানে বিনামূল্যে) খাদ্যশস্য পাওয়ার আইনি অধিকার পায়। এর মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলি পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারে।

আরও পড়ুন: কাঁটা-চামচ নয়, হাত দিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল

একসাথে, এনএফএসএম/এনএফএসএনএম (NFSM/NFSNM) এবং এনএফএসএ (NFSA) ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা কাঠামোর মূল ভিত্তি তৈরি করেছে। একটি উৎপাদন বাড়ায় আর অন্যটি বন্টন নিশ্চিত করে, ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি, স্থায়িত্ব এবং পুষ্টি সুরক্ষাও নিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুন: ব্রণর হাতে থেকে রেহাই পেতে খান এই ৩ খাবার

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন (NFSA) এবং লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা (TPDS)

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন (NFSA)

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩-এর লক্ষ্য হল গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫% পর্যন্ত এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫০% পর্যন্ত মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই সংখ্যাটি হল ৮১.৩৫ কোটি মানুষ।
এই আইনের অধীনে, অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার অন্তর্গত পরিবারগুলি, যারা সবচেয়ে দরিদ্র, তারা প্রতি মাসে প্রতি পরিবার পিছু ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী। অন্যদিকে, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারগুলি আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে প্রতি ব্যক্তি পিছু ৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী। এই খাদ্যশস্য ভর্তুকিযুক্ত দামে (বর্তমানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে) দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে।

এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য আনুমানিক ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, ৭৮.৯০ কোটি সুবিধাভোগী এই আইনের অধীনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পাচ্ছেন।

এনএফএসএ অনুসারে, এই যোগ্য পরিবারগুলি লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী।
এই আইনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে মানুষ সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে। এটি কম দামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো মানের খাদ্য দিয়ে মানুষের জীবনের বিভিন্ন ধাপে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আইনটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশকে (গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫% পর্যন্ত এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫০% পর্যন্ত) খাদ্যশস্য (চাল, গম, মোটা দানাশস্য) পাওয়ার সুযোগ দেয়। এই শস্যগুলি আইনে নির্দিষ্ট করা মূল্যে (Schedule-I) পাওয়া যায়।এছাড়াও, এই আইন অনুসারে, গর্ভবতী মহিলা, সন্তানকে দুধ খাওয়ানো মা এবং ৬ মাস থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা ‘সমন্বিত শিশু বিকাশ পরিষেবা (ICDS)’ এবং ‘পিএম-পোষণ’ প্রকল্পের অধীনে নির্দিষ্ট পুষ্টির মান অনুযায়ী খাবার পাওয়ার অধিকারী। ৬ বছর পর্যন্ত অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য আরও বেশি পুষ্টির মান ধার্য করা হয়েছে। পাশাপাশি, গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদানকারী মায়েরা কমপক্ষে ৬,০০০ টাকা নগদ মাতৃত্বকালীন সুবিধা পাবেন। এই অর্থ গর্ভাবস্থায় মজুরি হারানোর ক্ষতি কিছুটা পূরণ করে এবং পুষ্টির জন্য সহায়তা করে। সুবিধাভোগীদের পুষ্টির মান বাড়ানোর জন্য সরকার ২৫.০১.২০২৩ তারিখের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইনের তফসিল-২ (Schedule-II)-এ থাকা পুষ্টির মানগুলি সংশোধন করেছে।

লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার:

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের সুবিধা যাতে যোগ্য মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করার জন্য লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা হল প্রধান মাধ্যম। ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য বিতরণের কাজটি এটি কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলির যৌথ দায়িত্বে করে থাকে:
কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্যশস্য সংগ্রহ, বরাদ্দ এবং ভারতীয় খাদ্য কর্পোরেশনের (ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া) নির্দিষ্ট গুদাম পর্যন্ত পরিবহন করে থাকে।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার রাজ্যের মধ্যে বরাদ্দ ও বিতরণ পরিচালনা করে, যোগ্য সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে, রেশন কার্ড ইস্যু করে, এবং দক্ষতার সঙ্গে বিতরণ নিশ্চিত করতে ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলির কাজ তদারকি করে।

এই কাঠামোটি লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগ্য পরিবার, বিশেষ করে দরিদ্র ও দুর্বল মানুষের জন্য খুব কম দামে ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্যের সুবিধা নিশ্চিত করে।

আইনটি খাদ্য পাওয়ার জন্য পরিবারগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করে:

অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা পরিবার: এই পরিবারগুলি সবচেয়ে দরিদ্রতম মানুষের নিয়ে গঠিত। এই পরিবারগুলি প্রতি মাসে প্রতি পরিবার পিছু ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী।

অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবার: এই পরিবারগুলি প্রতি মাসে প্রতি ব্যক্তি পিছু ৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী।

কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে।

এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য আনুমানিক ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

সুবিধাভোগী কারা?

অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা পরিবারসমূহ
শনাক্তকরণ: এই পরিবারগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনে রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি বেছে নেয়, যারা সবচেয়ে দরিদ্র।

যেসব পরিবারের প্রধান হলেন বিধবা, মারাত্মক অসুস্থ ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অথবা ৬০ বছরের বেশি বয়সী বয়স্ক ব্যক্তি, যাদের জীবনধারণের কোনো নিশ্চিত উপায় বা সামাজিক সাহায্য নেই।

বিধবা, মারাত্মক অসুস্থ ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অথবা ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী একক মহিলা বা একক পুরুষ, যাদের পরিবার বা সমাজের কোনো সাহায্য নেই কিংবা জীবনধারণের নিশ্চিত উপায় নেই।

সকল জনজাতি পরিবার।
ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক, প্রান্তিক চাষি, গ্রামীণ কারিগর/শিল্পী, বস্তিবাসী এবং গ্রামীণ ও শহুরে উভয় এলাকার অন্যান্য ক্ষেত্রে দৈনিক রোজগার করা মানুষ এবং একই ধরনের অন্যান্য শ্রেণী।

এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের সমস্ত যোগ্য দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবার।

অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারসমূহ

শনাক্তকরণ: এই পরিবারগুলিকে রাজ্য সরকার/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনগুলি তাদের নিজস্ব মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন করে।

লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার অধীনে সুবিধাভোগী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া

লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ আদেশ, ২০১৫ অনুযায়ী, এনএফএসএ সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করার কাজটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সরকার নিয়মিতভাবে করে থাকে।এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অযোগ্য, ভুয়ো বা নকল রেশন কার্ড বাতিল করা, যাতে শুধুমাত্র প্রকৃত যোগ্য পরিবারগুলিই সুবিধা পায়। একটি সুবিধাভোগীর তালিকা বজায় রাখা এবং খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে, এনএফএসএ (NFSA) নিশ্চিত করে যে দুর্বল ও অভাবী মানুষকে কার্যকরভাবে সাহায্য করা হচ্ছে।এই প্রক্রিয়াটি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করে, বাজারের দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং যোগ্য সুবিধাভোগীদের কাছে সুবিধা পৌঁছানোকে আরও উন্নত করে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সরকারি উদ্যোগ

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা
দেশে কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হওয়ায় গরীব ও প্রান্তিক মানুষেরা যে কষ্ট পাচ্ছিলেন, তা কমানোর জন্যই বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পটি সাতটি ধাপে চালু ছিল। এই যোজনার সপ্তম ধাপটি ৩১.১২.২০২২ তারিখ পর্যন্ত চলেছিল।

দরিদ্র মানুষদের ওপর আর্থিক চাপ কমাতে এবং সারা দেশে গরিবদের সাহায্যের জন্য এই কর্মসূচি যাতে সঠিকভাবে ও একই নিয়মে চলে, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই যোজনার আওতায় অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া শুরু হয়।এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য আনুমানিক ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

চালের পুষ্টি সংবর্ধন উদ্যোগ

দেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পুষ্টির অভাব দূর করা ভারত সরকারের সবসময়ই একটি জরুরি কাজ। খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর এই বিষয়ে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সামগ্রিক পুষ্টি পরিস্থিতি ভালো করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দপ্তরের পক্ষ থেকে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি হল চালের পুষ্টি সংবর্ধন উদ্যোগ।

প্রধান খাদ্যশস্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মেশানো একটি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত, নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং গবেষণালব্ধ পদ্ধতি। এটি পুষ্টির অভাব কমানোর জন্য একটি সহায়ক কৌশল।

যেহেতু ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশের প্রধান খাবার হল ভাত (চাল), তাই ভারত সরকার ২০১৯ সালে চালের পুষ্টি সংবর্ধনের উপর একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চালু করে।

২০২১ সালে ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে, ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারের খাদ্য প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের সবচেয়ে গরিব ও দুর্বল মানুষের জন্য পুষ্টি সংবর্ধিত চাল সরবরাহ করা হবে।

ভারতে চালের পুষ্টি সংবর্ধন চালু করার সিদ্ধান্তটি একটি সম্পূর্ণ প্রকল্প জীবনচক্রের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে ছিল পরীক্ষামূলক প্রয়োগ, মান নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি, কার্যকর করা এবং তারপর এর সম্প্রসারণ।
এই প্রকল্পটি বিভিন্ন পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে:
প্রথম পর্যায় (২০২১-২২): এর আওতায় ছিল আইসিডিএস এবং পিএম পোষণ প্রকল্প। দ্বিতীয় পর্যায় (২০২২-২৩): এর আওতায় ছিল আইসিডিএস, পিএম পোষণ এবং লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা – মোট ২৬৯টি আশাবাদীও গুরুতর অপুষ্টি কবলিত জেলায়।
তৃতীয় পর্যায় (২০২৩-২৪):
টিডিপিএস-এর অধীনে থাকা বাকি জেলাগুলিকেও এর আওতায় আনা হয়।২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে, সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পিএমজেকেওয়াই, আইসিডিএস, পিএম – পোষণ স্কীম সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা ১০০% চালেই পুষ্টি সংবর্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
সম্প্রতি মন্ত্রীসভা ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের অধীনে পুষ্টি সংবর্ধিত চালের সার্বজনীন সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এই পুরো খরচের (১৭,০৮২ কোটি টাকা) ১০০% -ই
পিএমজেকেওয়াই -এর অংশ হিসেবে ভারত সরকার বহন করবে।

সরাসরি সুবিধাভোগী স্থানান্তর –
জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন লক্ষ্যযুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে একটি হল খাদ্য সুবিধার জন্য সরাসরি সুবিধাভোগী স্থানান্তর চালু করা।

সরকার ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ‘খাদ্য ভর্তুকির নগদ স্থানান্তরের নিয়ম, ২০১৫’ ঘোষণা করে। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল খাদ্যশস্যের স্থানান্তর কমানো। সুবিধাভোগীদের খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা দেওয়া। খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের খাবার যোগ করা।চুরি ও দুর্নীতি কমানো। যোগ্য সুবিধাভোগীকে আরও সঠিকভাবে চিহ্নিত করা।
মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ বাড়ানো।

খাদ্য ভর্তুকি নগদ স্থানান্তর বিধি, ২০১৫’-এর বাস্তবায়ন
এই প্রকল্পটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য ঐচ্ছিক।

এটি রাজ্য সরকারের লিখিত সম্মতিক্রমে “চিহ্নিত এলাকাগুলিতে” শুরু করা হয়।

যে এলাকাগুলিতে এটি শুরু হয়নি, সেখানে ঐতিহ্যবাহী গণবন্টন ব্যবস্থা পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য বিতরণ চলতে থাকে।

খাদ্যে সরাসরি নগদ অর্থ স্থানান্তরের বাস্তবায়ন
সেপ্টেম্বর ২০১৫: চণ্ডীগড় এবং পুদুচেরিতে (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল) চালু হয়।

মার্চ ২০১৬: দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ- এর কিছু অংশে চালু হয়।

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এনএফএসএ নগদ অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে কাজ করে:

ভর্তুকির সমতুল্য নগদ অর্থ সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।

এর ফলে যোগ্য পরিবারগুলি খোলা বাজার থেকে খাদ্যশস্য কিনতে পারে।

সমন্বিত শিশু বিকাশ প্রকল্প – (আইসিডিএস)
এই প্রকল্পটি নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে গম-ভিত্তিক পুষ্টি কর্মসূচি এবং
কিশোরী প্রকল্পের মাধ্যমে চালানো হয়।এর মাধ্যমে ৬ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরীদের অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। এই খাবারগুলি রান্না করা খাবার অথবা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার উপযোগী রেশনের আকারে দেওয়া হয়।

খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর থেকে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ: ২৬.৪৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল, গম ও মোট দানাশস্য।

পিএম পোষণ (পোষণ শক্তি নির্মাণ স্কীম)

এই প্রকল্পটি খুবই প্রয়োজনীয় জাতীয় উদ্যোগ। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল সরকারী ও সরকার পোষিত স্কুলের শিশুদের পুষ্টির মান ভালো করা এবং ক্ষুধা দূর করা, যাতে তাদের পড়াশোনার উন্নতি হয়। এর ফলে গরিব ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত স্কুলে আসতে উৎসাহ পায়। এই প্রকল্পের অধীনে, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীকে পুষ্টিকর, মিড ডে মিল দেওয়া হয়। এই খাবারগুলি পুষ্টির মান বজায় রেখে তৈ রি করা হয়। এর ফলে শিশুদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, স্কুলে উপস্থিতি বাড়ে এবং পড়াশোনার ফলও উন্নত হয়। পাশাপাশি, এটি সমাজে সমতা আনে এবং মানুষের অংশগ্রহণকেও উৎসাহিত করে। খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর থেকে ২০২৪-২৫ সালের জন্য বরাদ্দ: ২২.৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল ও গম।

এক দেশ, এক রেশন কার্ড (ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড)

এক দেশ, এক রেশন কার্ড প্রকল্পটি ভারতের সব ৩৬টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সফলভাবে চালু হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৮১ কোটি সুবিধাভোগী তাঁদের পুরোনো রেশন কার্ড বা আধার কার্ড ব্যবহার করে, যেকোনো ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে বায়োমেট্রিক দিয়ে তাঁদের প্রাপ্য খাদ্যশস্য তুলতে পারছেন।এই প্রকল্পটি বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খুবই সুবিধার এবং এটি নকল বা ডুপ্লিকেট রেশন কার্ড হওয়াও আটকায়।

শুরু থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, প্রায় ১৯১ কোটি রেশন তোলার ঘটনা (যা রাজ্য থেকে রাজ্য বা রাজ্যের মধ্যে হয়েছে) এই পদ্ধতিতে রেকর্ড করা হয়েছে।

গণবন্টন ব্যবস্থা এবং খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্প (স্থানীয়)
গণবন্টন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল কম দামে খাদ্যশস্য বিলি করে খাদ্যের অভাব মোকাবিলার একটি ব্যবস্থা হিসেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিডিএস দেশের খাদ্য অর্থনীতি পরিচালনার জন্য সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হয়ে উঠেছে।প্রযুক্তি-ভিত্তিক সংস্কারের কারণে পিডিএস-এর কাজ এখন অনেক বেশি দক্ষ, স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল হয়েছে। এর ফলে রেশন কার্ড/সুবিধাভোগীর তথ্যভান্ডার ১০০% ডিজিটাল হয়েছে।
৯৯.৯% রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করা হয়েছে। প্রায় ৯৯.৬% ন্যায্য মূল্যের দোকানে (৫.৪৩ লক্ষের মধ্যে ৫.৪১ লক্ষ দোকানে) ই-পিওএস ডিভাইস লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আধার যাচাই করে স্বচ্ছভাবে ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও, খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্পের (স্থানীয়) মাধ্যমে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য (গম ও চাল) বিক্রি করা হয়। এর ফলে বাজারে খাদ্যশস্যের সরবরাহ বাড়ে, দাম স্থিতিশীল রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য সহজলভ্য হয়।

এই প্রকল্পের সুবিধা:
বাজারে খাদ্যশস্যের যোগান বাড়ে।
দাম স্থির রেখে বাজারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যশস্যকে আরও সাশ্রয়ী করা যায়।

এছাড়াও, খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্পের (স্থানীয়) নীতির অধীনে ভর্তুকিযুক্ত দামে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে আটা ও চাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারত আটা এবং ভারত চাল চালু করা হয়েছে।

এনএফএস-এর অধীনে খাদ্যশস্য সংগ্রহ, মজুত এবং বরাদ্দ

গম ও চাল সংগ্রহ করা হয় রাজ্য সরকারি সংস্থা এবং ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে । নিশ্চিত করা হয় যে এই শস্যগুলি ন্যায্য গুণমান বজায় রাখে। এই সংগৃহীত খাদ্যশস্যগুলি কেন্দ্রীয় মজুতে রাখা হয় এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্পের অধীনে বিতরণ করা হয়।

প্রতিটি বিপণন মরসুমের আগে, দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়:

খাদ্যশস্য সংগ্রহের পদ্ধতি
বিকেন্দ্রীকৃত সংগ্রহ ব্যবস্থা – এই পদ্ধতিতে রাজ্য সরকারগুলি নিজেরাই ধান/চাল এবং গম কেনা, মজুত করা এবং এনএফএসএ ও অন্যান্য প্রকল্পের অধীনে বিতরণ করার কাজ করে। রাজ্যের বরাদ্দের চেয়ে বেশি যে পরিমাণ শস্য মজুত হয়, তা ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কেন্দ্রীয় সংগ্রহ ব্যবস্থা –
এই পদ্ধতিতে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা রাজ্য সংস্থাগুলি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে। সংগৃহীত শস্যগুলি ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে দেওয়া হয়, যা পরে রাজ্যের মধ্যে বিতরণ করা হয় অথবা অন্যান্য রাজ্যে পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

এই দুটি ব্যবস্থাই কৃষকদের আয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি, গণবন্টনের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের জোগান নিশ্চিত করে।সারা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা এবং কার্যকর বন্টন নিশ্চিত করার জন্য সরকার খাদ্যশস্যের একটি কেন্দ্রীয় মজুত বজায় রাখে, যা গণবন্টন ব্যবস্থার প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত, কেন্দ্রীয় মজুতে ৩৭৭.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাল এবং ৩৫৮.৭৮ লক্ষ মেট্রিক টন গম মজুত ছিল। এর বিপরীতে মজুতের যে সাধারণ নিয়ম আছে, তা হলো যথাক্রমে ১৩৫.৪০ লক্ষ মেট্রিক টন চাল এবং ২৭৫.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন গম। এই মজুত করা শস্য প্রথমে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা, অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্প, এবং দুর্যোগ বা উৎসবের জন্য অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হয়।

এরপর অতিরিক্ত খাদ্যশস্যগুলি খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্পের (স্থানীয়) মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে, যোগ্য দেশগুলিকে মানবিক সাহায্য হিসেবে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনুদান হিসেবে সরবরাহ করা হয়।

ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থার অধীনে প্রধান খাদ্যশস্য – ধান এবং গম – সংগ্রহ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এর মাধ্যমে মূলত খাদ্যশস্যের শারীরিক জোগান নিশ্চিত করা হয় এবং কৃষক ও ভোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ে।

২০২৫ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী:

খারিফ বিপণন মরসুমে ২০২৪-২৫-এ ৮১৩.৮৮ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মূল্য ছিল ১.৯ লক্ষ কোটি টাকা (এমএসপি অনুযায়ী), যার ফলে, ১.১৫ কোটি কৃষক উপকৃত হয়েছেন।রবি বিপণন মরসুমে ২০২৪-২৫-এ ২৬৬.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মূল্য ছিল ৬০,৫২৬.৮০ কোটি টাকা, যার ফলে ২২.৪৯ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
রবি বিপণন মরসুমে ২০২৫-২৬ (১১.০৮.২০২৫ পর্যন্ত)-এ ৩০০.৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মূল্য ছিল ৭২,৮৩৪.১৫ কোটি টাকা, যার ফলে ২৫.১৩ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন।

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন ভালোভাবে কার্যকর করতে এবং সময়মতো খাদ্যশস্য পৌঁছে দিতে, এনএফএস-এর অধীনে মোট বার্ষিক খাদ্যশস্যের বরাদ্দ ছিল:

২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের জন্য (জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত): ১৮,৪৯৮.৯৪ হাজার টন।

২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য: ৫৫,৪৯৩.০৪৪ হাজার টন।

গণবন্টন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দক্ষতার জন্য প্রধান পদক্ষেপসমূহ

গণবন্টন ব্যবস্থার সংস্কারকে আরও উন্নত করতে সরকার আরও একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ডিজিটাইজেশান: সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে রেশন কার্ড এবং সুবিধাভোগীদের তথ্যভান্ডার সম্পূর্ণভাবে (১০০%) ডিজিটাল করা হয়েছে।

স্বচ্ছতা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি: দেশজুড়ে একটি স্বচ্ছতা পোর্টাল, অনলাইন অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে।

অনলাইন বরাদ্দ ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থা:

চণ্ডীগড়, পুদুচেরি এবং দাদরা ও নগর হাভেলির শহুরে এলাকাগুলি (যেখানে সরাসরি নগদ অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে) ছাড়া বাকি সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অনলাইন বরাদ্দ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ৩১-টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা কম্পিউটারাইজড করা হয়েছে।

আধার সংযুক্তি: জাতীয় স্তরে প্রায় ৯৯.৯% রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করা হয়েছে।

ন্যায্য মূল্যের দোকানে যন্ত্র বসানো : এখন প্রায় সব ন্যায্য মূল্যের দোকানেই ই-পিওএস যন্ত্র লাগানো হয়েছে। এর ফলে বায়োমেট্রিক বা আধার কার্ডের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করে এনএফএস-এর অধীনে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়, যা এই কাজকে স্বচ্ছ ও ইলেকট্রনিক করেছে।

এক দেশ, এক রেশন কার্ড :

এই সুবিধার কারণে উপভোক্তারা দেশের যেকোনো জায়গা থেকে গণবন্টন ব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারেন। এটি সুবিধাভোগীদের জন্য অন্যত্র যাওয়ার এবং সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।

অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা: গণবন্টন ব্যবস্থার যেকোনো অভিযোগ জানাতে এবং সেগুলির সমাধান পেতে সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১৯৬৭/১৮০০-স্টেট সিরিজ নম্বর (টোল-ফ্রি নম্বর) চালু আছে। এই দপ্তরে গণবণ্টন ব্যবস্থায় দুর্নীতি বা অর্থ আত্মসাৎ সহ যেকোনো অভিযোগ এলে, তা তদন্ত এবং সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সরকারের কাছে পাঠানো হয়।

গণবন্টন ব্যবস্থার ডিজিটাল সংস্কার
‘মেরা রেশন ২.০’

প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার সুবিধাভোগীদের জন্য স্বচ্ছতা এবং সুবিধা বাড়াতে, খাদ্য ও গণবন্টন দপ্তর ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট ‘মেরা রেশন ২.০’ মোবাইল অ্যাপটি চালু করেছে।

এই উন্নত অ্যাপটি সুবিধাভোগীদের তাঁদের প্রাপ্য খাদ্যশস্য, কতটুকু তোলা হয়েছে তার তথ্য এবং সবচেয়ে কাছের ন্যায্য মূল্যের দোকানের অবস্থান সম্পর্কে সময়মতো সঠিক তথ্য দেয়। এর সঙ্গে অ্যাপটিতে আরও কিছু নতুন সুবিধা যোগ করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা সহজ এবং ভাল হয়। ইতিমধ্যেই এই অ্যাপটি ১ কোটিরও বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে।

অন্ন মিত্র’ মোবাইল অ্যাপ
‘অন্ন মিত্র’ অ্যাপটি গণবন্টন ব্যবস্থার তৃণমূল স্তরের কর্মীদের জরুরি কাজের তথ্যে সুরক্ষিতভাবে প্রবেশাধিকার দিয়ে তাদের ক্ষমতা বাড়ায়। ন্যায্য মূল্যের দোকানের ডিলার, ফুড ইন্সপেক্টর এবং জেলা খাদ্য সরবরাহ কর্মকর্তাদের জন্য এটি প্রাথমিক স্তরের কাজ তদারকি, মজুত ব্যবস্থা এবং নিয়ম মানার রিপোর্ট তৈরি করার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

‘অন্ন মিত্র’-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য:

তৃণমূল স্তরের কাজ, মজুত নজরদারি এবং নিয়ম মানার রিপোর্ট তৈরি করাকে সহজ করে।

রেশন কার্ডের লেনদেনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, সুবিধাভোগী ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের তথ্য সরবরাহ করে।

পরিদর্শন মডিউল, মতামত এবং রেটিং দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।

জেলার স্তর থেকে ন্যায্য মূল্যের দোকান পর্যন্ত মজুতের ব্যবস্থাপনা সহজ করে।

সুবিধা:
বাধা দূর করা এবং কাগজপত্র ব্যবহারের ঝক্কি কমানো।

সময়মতো তথ্য পাওয়ার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

গণবন্টন ব্যবস্থার সমস্ত প্রধান অংশীদারদের একটি নিরাপদ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এনে স্বচ্ছতা, গতি এবং দক্ষতা উন্নত করা।

বর্তমানে, ‘অন্ন মিত্র’ অ্যাপটি ১৫-টি রাজ্যে চালু আছে – অসম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, নাগাল্যান্ড, গোয়া, জম্মু ও কাশ্মীর, দমন ও দিউ, লাদাখ, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব এবং ত্রিপুরা। অ্যাপটি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এটি পর্যায়ক্রমে চালু করার কাজ চলছে।

স্মার্ট-পিডিএস

এই সংস্কারগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, ভারত সরকার ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে SMART-PDS (Scheme for Modernisation and Reforms through Technology in PDS) প্রকল্পটি চালু করতে চলেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল, গণবন্টন ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত ভিত্তি আরও শক্তিশালী করা এবং চারটি প্রধান মডিউলের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন আনা:

১.খাদ্যশস্য সংগ্রহ

২.সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থা এবং শস্য বরাদ্দ

৩.রেশন কার্ড এবং ন্যায্য মূল্যের দোকান ব্যবস্থা

৪.বায়োমেট্রিক-ভিত্তিক শস্য বিতরণ মডিউল (ই-কেওয়াইসি)

ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি কৃষি উৎপাদন শক্তিশালী করা এবং তার সাথে ন্যায়সঙ্গত বন্টন নিশ্চিত করা – এই দুটি কৌশলের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। একই সময়ে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা, বিকেন্দ্রীকৃত সংগ্রহ ব্যবস্থা, এবং খোলা বাজার বিক্রয় প্রকল্প – স্থানীয়র মত প্রধান প্রকল্পগুলি মিলে প্রায় ৮১ কোটি মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও সকলের জন্য সহজলভ্য বন্টন নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে:
এই মানুষজন কম দামে খাদ্যশস্য পাবেন। বাজারে দামের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। দুর্বল পরিবারগুলি ক্ষুধা ও অপুষ্টি থেকে রক্ষা পাবে।