দু'দেশের মধ্যে বাড়ছে যুদ্ধের দামামা!
পহেলগাঁও হামলার পাল্টা ‘প্রত্যাঘাত’ ভারতের, কি বলছে বিশ্বনেতারা

- আপডেট : ৭ মে ২০২৫, বুধবার
- / 56
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঠিক ১৫ দিনের মাথায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে ভয়াবহ প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত। বুধবার রাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯ জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একের পর এক পাক জঙ্গিঘাঁটি। হামলার জেরে একাধিক জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। ভারতের প্রত্যাঘাতের পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ। স্বাভাবিক ভাবেই পড়শি দু’দেশের মধ্যে বাড়ছে যুদ্ধের দামামা। ভারত-পাকিস্তান ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ। কি বলছে বিশ্বনেতারা!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA): ভারত-পাকিস্তান ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, “এটি লজ্জাজনক, আমরা ভারতের প্রত্যাঘাতের বিষয়টি জেনেছি। আমি মনে করি, অতীতের বেশকিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে মানুষ জানত যে কিছু ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে।” মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, “আমি আশা করি দু’দেশের উত্তেজনা খুব দ্রুত শেষ হবে।”
অন্যদিকে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্স বার্তায় বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ওয়াশিংটন পারমাণবিক-সশস্ত্র এশীয় প্রতিবেশীদের সাথে ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ জন্য চেষ্টা করছে।
রাশিয়া (Russia): দুই প্রতিবেশী দেশকে ‘সংযম’ থাকার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো। এই হামলা দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সামরিক সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উত্তেজনা কমাতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। আশা করছি এই উত্তেজনা শান্তিপূর্ণ, কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান হবে।
চিন (China): ভারত-পাকিস্তান ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেইজিং। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা নিয়ে উভয় পক্ষকে সংযম থাকার আহ্বান জানিয়েছে জিংপিংয়ের দেশ। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজাই আখার আহ্বান জানাচ্ছি। পরিস্থিতি যাতে আরও জটিল না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।” বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে তারা ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ পালন করতে ইচ্ছুক।
ব্রিটেন (UK): ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমাতে উভয়কেই সমর্থন করতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য। বুধবার দেশটির বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেনল্ডস বলেছেন, “আমরা বলতে চাই, উভয় দেশের বন্ধু। আমরা উভয় দেশকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সংলাপ, উত্তেজনা কমাতে উভয়েরই বিশাল আগ্রহ রয়েছে এবং এটি সমর্থন করার জন্য যা করণীয় তা করতে প্রস্তুত।”
ফ্রান্স (France): দেশটির বিদেশমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার ভারতের আকাঙ্ক্ষা আমরা বুঝতে পারি। তবে আমরা স্পষ্টতই ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই। যাতে উত্তেজনা বৃদ্ধি না পায় এবং অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা যায়।”
ইসরাইল (Israel): ভারতের প্রত্যাঘাতকে পূর্ণ সমর্থন করেছে নেতানিয়াহুর দেশ। ভারতের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ রয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব। ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার এক্স-এ বলেন, ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত যে নিরপরাধদের বিরুদ্ধে তাদের জঘন্য অপরাধ থেকে লুকানোর কোনও জায়গা নেই।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE): ভারত ও পাকিস্তানকে “সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা হ্রাস এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে এমন উত্তেজনা এড়াতে” আহ্বান জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইউএই-র উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের এক বিবৃতিতে বলেছেন, “কূটনীতি এবং সংলাপই শান্তিপূর্ণভাবে সংকট সমাধানের এবং শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য জাতিগুলির অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।”
রাষ্ট্রসংঘ (United Nations): পাকিস্তানে ভারতীয় সামরিক অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউএন-এর মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মঙ্গলবার মহাসচিব মুখপাত্র বলেন, “মহাসচিব নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সামরিক অভিযান নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সামরিক সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত বিশ্ব বহন করতে পারে না।”