বাঘ বাঁচানোর বার্তা দিয়ে ঝড়খালিতে পালিত হল আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস

- আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 20
কুতুব উদ্দিন মোল্লা, ক্যানিং : দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের উদ্যোগে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে ঝড়খালির হেড়োভাঙ্গা বিদ্যাসাগর বিদ্যামন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস ও এক বিশেষ সচেতনতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনভর চলা এই কর্মসূচিতে পরিবেশ সচেতনতা, বাঘ সংরক্ষণ ও স্থানীয় সংস্কৃতির এক অনন্য সংমিশ্রণ দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের ডিএফও নিশা গোস্বামী,জেলা সভাধিপতি নিলীমা মিস্ত্রী বিশাল,সমাজসেবী মন্টু গাজী সহ স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক নেতৃত্ব ও স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী। আলোচনা পর্বে বনবিভাগের আধিকারিকরা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, “জলবায়ু পরিবর্তন, বনাঞ্চলের সংকোচন এবং খাদ্যের অভাবে বাঘ আজ বিপন্ন। তাই মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এখন জরুরী।”
এদিন আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয় একটি সচেতনতামূলক র্যালি। ছাত্রছাত্রীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে “বাঘ বাঁচাও, সুন্দরবন বাঁচাও” স্লোগানে মুখরিত করে তোলে ঝড়খালির পথঘাট। পাশাপাশি, বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় অঙ্কন প্রতিযোগিতা। যেখানে তারা তাদের চিন্তা ও কল্পনাশক্তির মাধ্যমে বাঘ সংরক্ষণের বার্তা তুলে ধরে। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল আদিবাসী সম্প্রদায়ের পরিবেশিত ঝুমুর নৃত্য, যা সুন্দরবনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে উপস্থিত দর্শকদের গভীরভাবে সংযুক্ত করে। এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র সচেতনতার পরিসরেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা সুন্দরবনের প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতির মধ্যে এক মেলবন্ধনের বার্তা দিয়েছিল। এই দিনের মূল বার্তা ছিল “বাঘ বাঁচলে বন বাঁচবে, বন বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।”
উল্লেখ্য নদীনালা,গাছপালার জঙ্গলে ঘেরা রোমহর্ষক পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। দক্ষিণ ২৪ পরগণা ১৩ টি এবং উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ৬ টি ব্লক নিয়ে গঠিত সুন্দরবন। ৩৫০০ কিমি নদী বাঁধ সহ বিভিন্ন নদীনালা বেষ্টিত ৪০০ প্রজাতির গাছগাছালি সহ বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তুর বসবাস রহস্যময় ঘেরা সুন্দরবনে। যা সুন্দরবন ছাড়া সারা বিশ্বে বিরল।রহস্যময়ী সুন্দরবনের জঙ্গলে একছত্র ভাবে রাজত্ব করে আসছে পৃথিবী বিখ্যাত হিংস্র “রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার”।
বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়,খাদ্যের সংকট ও মনুষ্যকুলের সৌজন্যে বাঘের উপর অত্যাচারের চাপে সুন্দরবন জঙ্গলের বাঘের সংখ্যা নিত্যান্ত ভাবে কমেই গেছে। আর যাতে করে বাঘের বংশ বৃদ্ধি এবং জঙ্গলে খাদ্যের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হয় তার জন্য সরকারী ভাবে চলছে নানান কর্মযঞ্জ।ইতিমধ্যে একটি সমীক্ষায় দাবী করা হয়েছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০১।সমীক্ষার নিরীক্ষে বাঘের সংখ্যা বাড়ায় মূলত খুশি পর্যটক থেকে সুন্দরবন এলাকার মানুষজন।
সুন্দরবনের সেই বিখ্যাত বাঘকে বাঁচানোর তাগিদে পালিত হল “আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস”। উল্লেখ্য বিগত ২০১০ সালের ২৯ জুলাই থেকে এই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালিত হয়ে আসছে সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে। আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষ্যে জেলা সভাধিপতি নিলীমা মিস্ত্রী বিশাল জানিয়েছেন,‘সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘ ছাড়া যেমন অন্য কিছুই বোঝায় না,ঠিক তেমনই বাঘ কে বাঁচানোর তাগিদে জঙ্গল লাগোয়া সুন্দরবন বাসী সহ প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দাদের কর্তব্য ও কি করনীয় সেই সম্পর্কিত আলোচনা হয়। স্থানীয় বাাসিন্দার যাতে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের সাথে সর্বদা সহযোগিতা করেন সেদিকটাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়।কারণ বাঘ বাঁচলে বাঁচবে সুন্দরবন এবং সুন্দরবন বাঁচলে বাঁচবে মনুষ্যসমাজ।’