ইসরাইল বনাম হামাস গোষ্ঠী একটি নয়, চলছে দুটি যুদ্ধ!

- আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার
- / 14
আহমদ হাসান ইমরান: একসঙ্গে দুটি যুদ্ধ চলছে। একটি হচ্ছে, বিশ্বের অন্যতম সেরা সামরিক শক্তি ইসরাইল ও তার বিরুদ্ধে গাজা নামক ছোট্ট অবরুদ্ধ জনপদের সশস্ত্র এক গোষ্ঠীর লড়াই। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ‘গণমাধ্যমের যুদ্ধ’। গাজাকে শুধুমাত্র বোমা, মিসাইল, বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারাই ধ্বংস করা হচ্ছে না, ব্যাপক আক্রমণ শানানো হচ্ছে বিখ্যাত সব গণমাধ্যমের ‘আঁখো দেখা’ রিপোর্টে। তাও আবার ছবি ও ভিডিয়ো সমেত।
অধিকাংশ মানুষই জানেন না, ফিলিস্তিন কীভাবে ব্রিটেন ও পাশ্চাত্য দেশগুলির মদদে এবং নৃশংস সহিংসতার দ্বারা জায়নবাদী ইহুদিদের কবলে এলো। কীভাবে দখলদার ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনের ভূমি থেকে দেড় হাজার বছর ধরে বসবাসকারী আরব বাসিন্দাদের উদ্বাস্তুতে পরিণত করে মানবেতর রিফিউজি ক্যাম্পে পাঠানো হল। আর তারা ৮০-৮৫ বছর ধরে সেখানেই অমানবিক জিন্দেগি যাপন করছে। বড় হয়েছে কম করে ৩টি প্রজন্ম।
আর ফিলিস্তিনের এই জমিনে জার্মানি, রাশিয়া, পোল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে ইহুদিদের এনে বসানো হয়েছে। এই বসতি আজও চলছে। এখনও ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে তাদের ঘর দখল করে, জমি ও ব্যবসা দখল করে বসানো হচ্ছে সেটলারদের। অর্থাৎ ওরা এখানে সেটেল করবে। আর ফিলিস্তিনিরা সামান্য বাধা দিলেই চলছে নাজিবাদী ইহুদি সেনাদের গুলি। এই দখলদারীর বিরুদ্ধে কোনও মুখ খোলা যাবে না। প্রতিবাদ জানানো যাবে না। প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করলেই ফিলিস্তিনিদের বলা হচ্ছে টেররিস্ট বা সন্ত্রাসবাদী!
এএফপি, রয়টার্স, এপি, বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা একেবারে প্রমাণ করে ছাড়ে, দায়ী বাপু ওই ঘরহারা ফিলিস্তিনিরা। ইহুদিরা তো সেটেল করবেই। সেজন্যই তো ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সৃষ্টি হয়েছে। তারা তো ঠিক কাজই করছে। ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের সঙ্গে যে অসম লড়াই চলছে, তাতেও প্রায় সারা পশ্চিমা দুনিয়া এবং আমাদের প্রিয় দেশ হিন্দুস্থানের বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব ধরনের সহায়তা নিয়ে ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নরেন্দ্র-নেতানিয়াহু এক সুরে এক কণ্ঠে কথা বলছেন। আর এ্ত দ্রুত গাজা জনপদকে গণকবরস্থানে পরিণত করার নানান খবর আসছে যে, বহু সাংবাদিকই তাল রাখতে পারছেন না।
ইউএসএ টুডে পত্রিকায় গাজার ধ্বংস কাণ্ডের ছবি দিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তার শিরোনাম হল ‘ইসরাইলn প্রতিশোধমূলক হামলা,’ তবে এ শুধু শুরুর মাত্র’। অর্থাৎ ইসরাইল যে ব্যাপক নরসংহার ও জীবনহানী ঘটাচ্ছে তা কিছুই নয়। আধুনিক ভাষায় বলতে গেলে ‘ইয়ে তো স্রিফ ট্রেলার হ্যায়। আসল পিকচার বাকি হ্যায়’।
সকলেই জানেন, ইউএসএ টুডে পত্রিকা যুদ্ধবাজ মার্কিন রণনীতি ও নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদের ঘোরতর সমর্থক। তাদের কলম থেকে এ কথার অর্থ হল, তারা মার্কিন শাসকদেরই বক্তব্য ও রণনীতির প্রতিধ্বনি করল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে হচ্ছে চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ জনপদ গাজার শিশু, নারী বৃদ্ধ-সহ ২৩ লক্ষ বাসিন্দাকে গণকবর দিতে ইসরাইলের থেকেও বেশি বদ্ধপরিকর ও আগ্রহী।
আর কীভাবে ‘বিশ্ব গণমাধ্যম’ ইসরাইলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে তার কিছু কিছু আসল চিত্র সামনে আসছে। একটি হল, প্রচার করা হয়েছিল এবং এখনও হচ্ছে যে, হামাস ৪০ জন ইসরাইলি শিশুকে গলা কেটে ও অন্যান্যভাবে হত্যা করে পুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে খোদ ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই। আর চাপের মুখে হোয়াইট হাউসকেও বলতে হয়েছে, প্রেডিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে এমন কোনও ছবি বা ভিডিয়ো ছিল না। তিনি শুধু পশ্চিমা ও ইসরাইলের মিডিয়া থেকে এই খবর সংগ্রহ করেছিলেন। তবে বোধহয় আজকের দুনিয়ায় ‘সব চলতা হ্যায়’।