০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাশোগি হত্যা ­: সউদির সন্দেহভাজনরাই গরহাজির!

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার
  • / 14

পুবের কলম প্রতিবেদক : জামাল খাশোগি হত্যার বিচার চলছিল। ঠিক সেই সময় তুরস্কের আইনজীবী বলেন, অবিলম্বে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা হোক। তিনি বলেন জামাল খাশোগি হত্যায় যে ২৬ জন সউদি সন্দেহভাজনের নাম রয়েছে তারা কেউ হাজিরা দেননি। তাহলে বিচার চালানোর অর্থ কি ? ইস্তানবুলের সউদি দূতাবাসে খুন করা হয় সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে। অন্তত তেমনটাই অভিযোগ। তুর্কি আইনজীবী মনে করেন এমন মামলা সউদির কাছে থেকে সরিয়ে আনা উচিত।

 

আদালত বৃহস্পতিবার বলেছে যে তারা এই অনুরোধের বিষয়ে বিচার মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাইবে এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ এপ্রিল দিন ধার্য করবে। প্রসিকিউটর বলেছেন, মামলাটি ‘আদালতের আদেশ কার্যকর করা যায় না কারণ সন্দেহভাজনরা বিদেশী নাগরিক’। ডিএইচএ নিউজ এজেন্সি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।

 

৫৯ বছর বয়সী খাশোগিকে শেষবার ২ অক্টোবর, ২০১৮ -এ ইস্তাম্বুলের সউদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল। তুর্কি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে তার লাশ টুকরো টুকরো করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি। সউদি কর্মকর্তারা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডটি “দুর্বৃত্তরা ” ঘটিয়েছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, এক সউদি আদালত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আট জনকে সাত থেকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। সমালোচকরা বলেছেন, এতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এতে আসামিদের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

 

বিবাহ বিচ্ছেদের একটি সনদ নেওয়ার জন্য ২০১৮ এর ২ অক্টোবর সউদি আরবের ইস্তানবুল কনস্যুলেটে প্রবেশে করেছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তুরস্কের পুলিশ জানিয়েছে, তিনি এরপর আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেননি। ইস্তানবুলের পুলিশের স্থির বিশ্বাস কনস্যুলেটের ভেতরেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সউদি সরকারের দাবি যে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ।

 

১৯৫৮ সালে মদিনায় জামাল খাশোগি জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় এবং প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি স্থায়ীভাবে সউদি আরবে ফিরে আসেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সংবাদপত্র আরব নিউজে উপ-সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০০৩ সালে আল ওয়াতান সংবাদপত্রের সম্পাদক নিযুক্ত হন।

 

এরপর তিনি লন্ডনে এবং ওয়াশিংটনে সউদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স তুর্কি বিন, ফয়সালের মিডিয়া উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন। এই প্রিন্স একসময় সউদি আরবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন।২০০৭ সালে আল ওয়াতানে তিনি আবার ফিরে আসেন। কিন্তু তিন বছর পর নতুন এক বিতর্কের মুখে তাকে ফের দেশ ছাড়তে হয়। ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় তিনি ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোর প্রতি সমর্থন জানান। ২০১২ তিনি সউদি আরবের সমর্থনপুষ্ট আরব নিউজ চ্যানেলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে সউদি আরব ত্যাগ করেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি ।

 

 

ওয়াশিংটন পোস্টে জামাল লেখেন, তিনি এবং আরও কয়েকজন স্বেচ্ছা নির্বাসনে এসেছেন। কারণ তারা গ্রেফতার হওয়ার আশংকা করছেন। তিনি লিখেছিলেন ‘আমি বাড়ি ছেড়েছি, আবার পরিবার আর চাকরি হারিয়েছি এবং আমার কণ্ঠ তুলে ধরেছি। এটা না করলে যারা কারাগারে রয়েছে, তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। যখন অনেকেই কোন কথা বলতে পারছে না, তখন আমি বলছি। আমি সবাইকে জানাতে চাই, সউদি আরব কখনোই এমন ছিল না, যা এখন হচ্ছে। সউদিদের আরো ভালো কিছু প্রাপ্য ছিল ।’ তুরস্কের কর্মকর্তারাদের আজও বিশ্বাস, কনস্যুলেটের ভেতরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সউদি কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

খাশোগি হত্যা ­: সউদির সন্দেহভাজনরাই গরহাজির!

আপডেট : ১ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম প্রতিবেদক : জামাল খাশোগি হত্যার বিচার চলছিল। ঠিক সেই সময় তুরস্কের আইনজীবী বলেন, অবিলম্বে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা হোক। তিনি বলেন জামাল খাশোগি হত্যায় যে ২৬ জন সউদি সন্দেহভাজনের নাম রয়েছে তারা কেউ হাজিরা দেননি। তাহলে বিচার চালানোর অর্থ কি ? ইস্তানবুলের সউদি দূতাবাসে খুন করা হয় সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে। অন্তত তেমনটাই অভিযোগ। তুর্কি আইনজীবী মনে করেন এমন মামলা সউদির কাছে থেকে সরিয়ে আনা উচিত।

 

আদালত বৃহস্পতিবার বলেছে যে তারা এই অনুরোধের বিষয়ে বিচার মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাইবে এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ এপ্রিল দিন ধার্য করবে। প্রসিকিউটর বলেছেন, মামলাটি ‘আদালতের আদেশ কার্যকর করা যায় না কারণ সন্দেহভাজনরা বিদেশী নাগরিক’। ডিএইচএ নিউজ এজেন্সি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।

 

৫৯ বছর বয়সী খাশোগিকে শেষবার ২ অক্টোবর, ২০১৮ -এ ইস্তাম্বুলের সউদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল। তুর্কি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে তার লাশ টুকরো টুকরো করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি। সউদি কর্মকর্তারা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডটি “দুর্বৃত্তরা ” ঘটিয়েছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, এক সউদি আদালত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আট জনকে সাত থেকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। সমালোচকরা বলেছেন, এতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এতে আসামিদের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

 

বিবাহ বিচ্ছেদের একটি সনদ নেওয়ার জন্য ২০১৮ এর ২ অক্টোবর সউদি আরবের ইস্তানবুল কনস্যুলেটে প্রবেশে করেছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তুরস্কের পুলিশ জানিয়েছে, তিনি এরপর আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেননি। ইস্তানবুলের পুলিশের স্থির বিশ্বাস কনস্যুলেটের ভেতরেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সউদি সরকারের দাবি যে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ।

 

১৯৫৮ সালে মদিনায় জামাল খাশোগি জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় এবং প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি স্থায়ীভাবে সউদি আরবে ফিরে আসেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সংবাদপত্র আরব নিউজে উপ-সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০০৩ সালে আল ওয়াতান সংবাদপত্রের সম্পাদক নিযুক্ত হন।

 

এরপর তিনি লন্ডনে এবং ওয়াশিংটনে সউদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স তুর্কি বিন, ফয়সালের মিডিয়া উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন। এই প্রিন্স একসময় সউদি আরবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন।২০০৭ সালে আল ওয়াতানে তিনি আবার ফিরে আসেন। কিন্তু তিন বছর পর নতুন এক বিতর্কের মুখে তাকে ফের দেশ ছাড়তে হয়। ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় তিনি ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোর প্রতি সমর্থন জানান। ২০১২ তিনি সউদি আরবের সমর্থনপুষ্ট আরব নিউজ চ্যানেলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে সউদি আরব ত্যাগ করেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি ।

 

 

ওয়াশিংটন পোস্টে জামাল লেখেন, তিনি এবং আরও কয়েকজন স্বেচ্ছা নির্বাসনে এসেছেন। কারণ তারা গ্রেফতার হওয়ার আশংকা করছেন। তিনি লিখেছিলেন ‘আমি বাড়ি ছেড়েছি, আবার পরিবার আর চাকরি হারিয়েছি এবং আমার কণ্ঠ তুলে ধরেছি। এটা না করলে যারা কারাগারে রয়েছে, তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। যখন অনেকেই কোন কথা বলতে পারছে না, তখন আমি বলছি। আমি সবাইকে জানাতে চাই, সউদি আরব কখনোই এমন ছিল না, যা এখন হচ্ছে। সউদিদের আরো ভালো কিছু প্রাপ্য ছিল ।’ তুরস্কের কর্মকর্তারাদের আজও বিশ্বাস, কনস্যুলেটের ভেতরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সউদি কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই।